মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।
৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে ১২৭ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার (প্রায় ১.২৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি।
এটি বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে চলে এসেছে নরেন্দ্র মোদির ভারত। অথচ, তিন বছর আগেও শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল না।
তবে রপ্তানি বাড়লেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি এখনও বিশাল। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া না গেলেও আগের কয়েক বছর সেটি পাঁচ থেকে ছয়শ কোটি ডলারের ঘরে ছিল।
মহামারির ছোবল না লাগলে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি থেকে আরও বেশি বিদেশি মুদ্রা আসত বলে রপ্তানিকারক ও অর্থনীতির গবেষকরা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, দুই সপ্তাহ আগেও ভারতের করোনা পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। সে কারণে গত অর্থবছরের শেষ দিকে দুই দেশেরই আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে।
তবে এখন একটা বেশ ভালো পরিবেশ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের সরকারের মধ্যেও বেশ ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। আমরা কিছু উদ্যোগ নিলে এখন ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল; যা ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।
করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।
কোন কোন পণ্য রপ্তানি
এই আর্থিক বছরে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ৪২ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এরমধ্যে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ২৫ কোটি ৩৫ লাখ ডলার; আর নিট থেকে এসেছে ১৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।
পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ১৩ কোটি ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার, সুতা ও সুতা জাতীয় পণ্য থেকে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ডলার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ ডলার এবং প্লাস্টিক দ্রব্য থেকে ১ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
ভারত সরকারের যে সুবিধায় রপ্তানিতে উল্লম্ফন
২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দক্ষিণ এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ভারতের স্পর্শকাতর পণ্যতালিকা ৪৮০টি থেকে কমিয়ে মাত্র ২৫টিতে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়েই কার্যত বাংলাদেশকে ভারতের বাজারে প্রায় শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রদান করা হয়।
প্রতিবেশী হওয়ায় বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় এখানে কম খরচে পণ্য রপ্তানি হওয়ার কথা। স্বাভাবিক নিয়মেই এই বিপুল পরিমাণ শুল্ক সুবিধায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ার কথা।
এই সম্ভাবনা দেখে ২০১৮ সালের এক গবেষণায় বিশ্বব্যাংক বলেছিল, বাণিজ্য সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে।
কিন্তু বাস্তবে তা বাড়ছে না, উল্টো আমদানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রপ্তানির গতি ও চাহিদা প্রত্যাশিত হারে না বাড়াসহ নানারকম অশুল্ক বাধার বেড়াজালে এখনও দুই দেশের বাণিজ্যে যোজন-যোজন দূরত্ব। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও ৯ বিলিয়ন ডলারের বৃত্ত অতিক্রম করতে পারছে না।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্য, স্থান ও কালভেদে অশুল্ক বাধার ধরণ বিশদভাবে পর্যালোচনা করেছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেকই হয় স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ায় নো ম্যানস ল্যান্ডে পণ্য খালাস ও উত্তোলন করতে হয়। এতে একদিকে বিলম্ব ঘটে, অন্যদিকে পণ্যের দাম চড়ে যায়।
‘আবার মিউচ্যুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্ট না থাকায় দূরবর্তী টেস্টিং সেন্টার থেকে পরীক্ষণ-সমীক্ষণের ফলাফল না আসা পর্যন্ত পণ্য বন্দরেই পড়ে থাকে। অন্যদিকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা দিলেও বাংলাদেশ তা কাজে লাগাতে পারছে না পরিবহন, বিনিয়োগ ও লজিস্টিকস কানেক্টিভিটির উন্নতি না হওয়ার কারণে। সেখানে অনেক ঘাটতি আছে।
‘ফলে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা সত্বেও ঢাকা-দিল্লি পণ্য পরিবহন খরচ ঢাকা থেকে ইউরোপীয় বা মার্কিন বন্দরে পরিবহন খরচের চেয়ে অনেক বেশি।’
এসব কারণেই যতটা আশা করা হয়েছিল, ততটা সুবিধা ভারতের বাজারে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ পাচ্ছে না বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর।
তবু বাণিজ্য ঘাটতি বিরাট
রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির ফারাক এখনো বেশ বড়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানির তথ্য পাওয়া গেলেও দেশটি থেকে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়েছে তার পুরো তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি দুই দেশের কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ।
ফলে চলতি বছর বাণিজ্য ঘাটতি কত, সেটি এখনও জানা যাচ্ছে না।
আগের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ১০৯ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। আর বিপরীতে আমদানি করা হয় ৫৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পণ্য। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৬৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। বিপরীতে রপ্তানি করেছিল ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য। বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬৪০ কোটি ডলার।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৪৫ কোটি ২৯ হাজার ডলার। রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৬৯ লাখ ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৭৬ কোটি টাকা।
‘নতুন ও বৈচিত্র্যময় পণ্য রপ্তানি করতে হবে’
এক সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভারত কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি (সিভিডি) আরোপ করেছিল। ২০১৪ সালে তা প্রত্যাহার করা হয়। এখন পাটজাত পণ্যে ধার্য করা হয়েছে অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি। ফলে ভারতের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে ইন্দোবাংলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক সুবিধা নেই। সেখানে বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য পাঠানো সত্ত্বেও প্রতিবছর আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। অথচ ভারতের বাজারে আমরা প্রায় শতভাগ শুল্ক সুবিধা পেয়েও পোশাক রপ্তানি একটা কাউন্টেবল জায়গায় নিতে পারছি না।
‘উল্টো কমানো হচ্ছে পোশাকের দাম। বুঝতে হবে সেখানে চাহিদা সৃষ্টিতে কোথায় আমাদের দুর্বলতা। শুধু পোশাক নয়, সব রপ্তানি পণ্যেরই একই অবস্থা। আর অশুল্ক বাধার কথা নাই-ই বললাম।
‘বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুরোপুরি ভারতের অনুকূলে। তবে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩৭ গুণ। কিন্তু তাতেও ঘাটতি কমেনি।’
মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘ভারতে রপ্তানি আশানুরূপ বাড়বে না, যদি আমরা ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা তৈরি করতে না পারি। তা করতে হলে সবার আগে দরকার গতানুগতিক বা সমজাতীয় পণ্যের রপ্তানির ধারাবাহিকতা থেকে বেরিয়ে আসা এবং নতুন ও বৈচিত্র্যময় পণ্য সেখানে নিয়ে যাওয়া।’
তিনি বলেন, ‘পণ্যভিত্তিক বাজারের সঠিক পর্যালোচনারও দরকার হবে। যার মাধ্যমে চাহিদা আছে এমন পণ্য রপ্তানির জন্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে। এতে স্বাভাবিক নিয়মেই বাড়বে বাজার। কিন্তু এর জন্য নিজেদেরও কিছু কাজ করতে হবে। রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা, উৎপাদিত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও গুণগত মান বাড়ানোতেও নজর থাকা জরুরি। এতে রপ্তানি পণ্যের ন্যায্য দামও মিলবে।
‘তবে এখন একটা বেশ ভালো পরিবেশ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দু’দেশের সরকারের মধ্যেও বেশ ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। আমার মনে হয়, আমরা কিছু উদ্যোগ নিলে এখন ভারতে আমাদের রপ্তানি বাড়বে। করোনা না থাকলে গত অর্থবছরে রপ্তানি আরেকটু বাড়ত,’ বলেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশে ৯৯ হাজার ১৫০ টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। অন্য দেশগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভুটান, বাহরাইন, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া দুই হাজার টন সাদা পেঁয়াজ রপ্তানিরও অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার।
দেশটির ভোক্তা বিষয়ক, খাদ্য ও জন বিতরণ মন্ত্রণালয় শনিবার এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি ও আগের বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ মৌসুমে নিম্ন খরিপ ও রবি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রপ্তানির জন্য দেশীয় উৎপাদনকারীরাই পেঁয়াজ সরবরাহ করবেন এবং এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আসবে বৃহৎ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্র থেকে।
ভারত সরকারের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ সালে নিম্ন খরিপ ও রবি মৌসুমে দেশের ভেতরে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এসব দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করে ভারতীয় এজেন্সি ন্যাশনাল কো-অপারেশন এক্সপোর্টস লিমিটেড (এনসিইএল)।
সর্বনিম্ন দর (এল১) মূল্যে ই-প্লাটফর্মের মাধ্যমে তারা অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে। তারপর শতভাগ আগাম মূল্য পরিশোধ ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে রেট নির্ধারণ করে গন্তব্য দেশগুলোতে এজেন্সি বা সরকার মনোনীত এজেন্সিকে সরবরাহ দিয়ে থাকে।
যেসব দেশ পেঁয়াজ কিনছে সেখানকার দাম, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দাম বিবেচনায় নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দর নির্ধারণ করে এনসিইএল।
বর্তমানে যে দেশগুলোতে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছে সেখানকার চাহিদা অনুযায়ী কোটা বরাদ্দ করা হয়েছে। ভারতে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্র। তারাই এনসিইএল-কে রপ্তানির জন্য সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ সরবরাহ দিয়ে থাকে।
এ ছাড়া দুই হাজার টন সাদা পেঁয়াজ রপ্তানিরও অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। এসব পেঁয়াজ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কিছু দেশে রপ্তানি করা হয়। সাধারণ পেঁয়াজের চেয়ে এই পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ বেশি। কারণ এর বীজের দাম অনেক বেশি হয়। প্রয়োজন হয় উন্নত কৃষি রক্ষণাবেক্ষণের। দামেও এর প্রভাব থাকে।
ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত ১ মার্চ ভোক্তা পর্যায়ে দেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম উঠেছিল ১২০ টাকা। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৩৫ টাকা।
অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়াতে এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গত বছরের ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। এতে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। পরে ৮ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞার সময়কাল ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।এর মধ্যে ১ মার্চ বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল প্রতিবেশী দেশটি।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে পাঁচ দিনে চতুর্থবারের মতো কমল স্বর্ণের দাম। শনিবার ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমানো হয়েছে। সে হিসাবে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরি দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ১২ হাজার ৯৩১ টাকা।
জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বাজুস এর আগে ২৩, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ২৩ এপ্রিল তিন হাজার ১৩৮ টাকা, ২৪ এপ্রিল দুই হাজার ৯৯ টাকা এবং ২৫ এপ্রিল ৬৩০ টাকা কমানো হয় প্রতি ভরিতে।
এর আগে টানা তিন দফা স্বর্ণের দাম বাড়ায় বাজুস। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল এক হাজার ৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল এক হাজার ৭৫০ টাকা এবং ১৮ এপ্রিল দুই হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নির্ধারিত এই দাম শনিবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট থেকেই কার্যকর হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ এক লাখ ১২ হাজার ৯৩১ টাকা, ২১ ক্যারেট এক লাখ সাত হাজার ৭৯৯ টাকা ও ১৮ ক্যারেট ৯২ হাজার ৪০২ টাকা। তবে সব ধরনের স্বর্ণের দাম কমলেও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম বাড়িয়ে প্রতি ভরি ৭৬ হাজার ৮৪২ টাকা করা হয়েছে।
স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে রুপার দাম। ক্যাটাগরি অনুযায়ী বর্তমানে ২২ ক্যারেটে প্রতি ভরি রুপার দাম দুই হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের দাম দুই হাজার ছয় টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম দুই হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম এক হাজার ২৮৩ টাকা।
আরও পড়ুন:অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিভিন্ন শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি ও গুজব রটিয়ে মার্কেটকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
রাজধানীতে শুক্রবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আমির হোসাইন ওরফে নুরনুরানী (৩৭), নুরুল হক হারুন (৫২) ও আবদুল কাইয়ুম (৩৯)।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি ডিবির প্রধান হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা; দেশের অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী তাদের সর্বস্ব নিয়ে এসে বিনিয়োগ করে থাকেন। অল্পতেই এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে। একটি স্বার্থান্বেষী চক্র দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কমিশনের চেয়্যারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামে গোপনীয় গ্রুপ খুলে বিভিন্ন মিথ্যা, ভুয়া এবং প্রতারণামূলক তথ্য সরবরাহ করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে আসছে। ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আসছে। এ বিষয়ে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় উক্ত মামলায় তদন্ত করে মামলা সংশ্লিষ্ট তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে।’
হারুন বলেন, ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন রমনা মডেল থানায় মামলা করার পর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ এই চক্রটির সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করতে থাকে। গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামে গোপনীয় গ্রুপ ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রুপগুলোতে আসামিরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কমিশনের চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ও পুঁজিবাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার নামে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য প্রদান করে বিভিন্ন প্রকার প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন (মূল্য সংবেদনশীল তথ্য) আগেভাগে প্রকাশ করে দেয়, যা বেশির ভাগ সময় বানোয়াট ও মিথ্যা, যার ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন সময় আন্দোলনের নামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে রাস্তা দখল করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে।
‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিভিন্ন ইস্যুতে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে ওইসব কোম্পানি সম্পর্কে অনলাইনে অপপ্রচার শুরু করে। এমনকি কোম্পানির অফিসগুলোতেও হামলা করে।’
ডিবির আইসিটি বিভাগের উপকমিশনার শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, ডিএমপি ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সর্বদা কাজ করে চলেছে। এ বিষয়ে নিয়মিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো মনিটরিং এবং সাইবার পেট্রলিং পরিচালনা হচ্ছে। পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উসকানি দিয়ে কেউ যাতে স্বার্থ হাসিল করতে না পারে, সে বিষয়ে অভিযান চলছে।
ডিএমপি ডিবিপ্রধান বলেন, ‘পুঁজিবাজার ও দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য দেশের চার থেকে পাঁচজন ব্যক্তি জড়িত, যারা এই চক্রের বিভিন্ন গ্রুপে সক্রিয়।
‘চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে চাঁদাবাজি করে আসছে। এদের সঙ্গে যুক্ত আট থেকে ১০টি গ্রুপ শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন চেয়ারপারসন নির্বাচিত হলেন ফারুক আহমেদ।
ট্রাস্টি বোর্ডের ৬৬তম সভায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফারুক আহমেদ ২৭ এপ্রিল থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত ফারুক আহমেদের উন্নয়ন খাতে রয়েছে বিস্তৃত অভিজ্ঞতা।
তিনি এক সময় ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন এবং ঢাকায় বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেনেভাভিত্তিক গ্যাভি, দ্যা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (এঅঠও)-এর বোর্ড সদস্য ছিলেন, এছাড়া তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ফারুক আহমেদ সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি) এন্টারপ্রাইজের পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ওয়ার্কিং গ্রুপেরও একজন সদস্য।
ফারুক আহমেদ ২০২০ সালের ১৬ মার্চ থেকে আরডিআরএস-এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আরডিআরএস বিশ্বাস করে, ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে সংস্থাটি দেশজুড়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখতে এবং এ সম্পর্কিত কার্যক্রমকে বেগবান করতে সক্ষম হবে। প্রেস রিলিজ
দেশের বাজারে টানা তৃতীয় দিনের মতো কমেছে স্বর্ণের দাম। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে ৬৩০ টাকা। সে হিসাবে স্বর্ণের ভরি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা। আগের দিন বুধবার তা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট থেকে স্বর্ণের নতুন নির্ধারিত দাম কার্যকর হবে।
বাজুস এর আগে চলতি এপ্রিল মাসের ৬, ৮ ও ১৮ তারিখ তিন দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ভালো মানের স্বর্ণের ভরিতে ৬ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা ও ১৮ এপ্রিল দুই হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়। মাঝে ২০ এপ্রিল ভরিতে ৮৪০ টাকা দাম কমানোর পরদিন ২১ এপ্রিল আবার ৬৩০ টাকা বাড়ায় বাজুস।
এবার শুরু হয় দাম কমানোর পালা। সবশেষ দাম বাড়ানোর দু’দিন পর ২৩ এপ্রিল ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে তিন হাজার ১৩৮ টাকা ও ২৪ এপ্রিল দু’হাজার ৯৯ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। আর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ভরিতে ৬৩০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ টানা তিন দিনে স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে পাঁচ হাজার ৮৬৮ টাকা।
সোনার দামে এমন উত্থান-পতনের কারণ জানতে চাইলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন নতুন পদ্ধতি বা পলিসি অনুসরণ করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করি। সেটি হচ্ছে বিশ্ব স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি।
‘এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমত তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত তখন বাড়াতাম।’
তিরি আরও বলেন, ‘এখন আমরা আমাদের স্বর্ণের সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে স্বর্ণের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় উঠা-নামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করে থাকি। সেক্ষেত্রে দিনে দু’বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।’
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে।
ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে এ ডিভিডেন্ড প্রদান করা হবে।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলমের সভাপতিত্বে বুধবার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদসহ অন্যান্য পরিচালক, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এবং অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারি জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, এফসিএস উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২৫ জুন ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। লভ্যাংশ প্রাপ্তি এবং সাধারণ সভায় যোগদানের ক্ষেত্রে রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৬ মে।
সভায় অন্যান্য আলোচ্যসূচির সঙ্গে ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়।
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সমগ্র বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।
যদিও একটি শ্রেণি বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তবে দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে বারবার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেননি অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গতকাল ফ্লোর প্রাইসমুক্ত সব শেয়ারে একদিনের দর কমার নিম্নসীমা (সার্কিট ব্রেকার) ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপ বাজারকে আবারও টেনে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেহভাজন বেশকিছু লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে। এতে বিশেষ একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও এতে জড়িত রয়েছে। বাজারে অবাঞ্ছিত বিক্রির আদেশ দিয়ে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে একটা শ্রেণি স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু ট্রেডার নিজেদের মধ্যে যোগশাজসের মাধ্যমে প্রথমে কম দরে শেয়ার বিক্রি করত। পরে তাদের দেখাদেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করত তখন তারা আবার কম দরে শেয়ারগুলো কিনে নিত। এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করে প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে ভালো শেয়ারগুলোর দাম কমাত। এই কাজে তাদের বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও সহযোগিতা করত।’
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর কমার কথা নয়। গুটি কয়েক অসাধু ট্রেডারের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী চাচ্ছেন বর্তমান কমিশন বিদায় হয়ে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক, যাতে তারা নতুন করে আরও সুযোগ নিতে পারেন। তারাই বিভিন্ন দুর্বল শেয়ারে কারসাজি করে সুবিধা নিচ্ছেন।
‘ফোর্সড সেলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার তারা কম দরে কিনে নিচ্ছেন। কমিশনের উচিত হবে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, যাতে তারা বারবার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার সাহস না পায়।’
এদিকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দরভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আদেশে জানানো হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের এ সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকের এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ বাজারে কারসাজি রোধ করবে। এটি সন্দেহভাজন লেনদেন বন্ধ করবে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো শেয়ার বর্তমানে আন্ডারভ্যালুতে আছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
সার্কিট ব্রেকার বাজারের দরপতন ফেরাতে ব্যর্থ হলে আবারও ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করছি, আমাদের বাজারে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস দিতে হবে না। শিগগিরই বাজার একটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য