পুঁজিবাজারে বিমা খাতের মতো এবার বস্ত্র খাতেও যাচাই বাছাই ছাড়া ঢালাও দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
জুনে অর্থবছর শেষ হবে। এই পরিস্থিতিতে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে, এমন কোম্পানির দাম বাড়া অস্বাভাবিক না হলেও সেসব কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ আসবে না, বরং অস্তিত্ব সংকটে আছে, এমন কোম্পানির দামও বাড়ছে।
এটির পেছনে কোনো কারসাজি থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুঁজিবাজারে নিয়মিত লভ্যাংশ দেয়, আয় ভালো, শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য বেশ আকর্ষণীয়, এমন মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানিই অভিহিত মূল্যের আশেপাশে রয়েছে।
কিন্তু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এগুলোর বদলে শেয়ার সংখ্যা কম- এমন কোম্পানির প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। প্রায়ই দেখা যায়, এসব লোকসানি কোম্পানির দাম একদিনে যত বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়ে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে যাচ্ছে।
পুঁজিবাজারে কোনো শেয়ার এক দিনে কী পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে, তাকে বলে সার্কিট ব্রেকার। লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়া, এই সার্কিট ব্রেকার থাকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। তবে ১০ পয়সা করে বাড়া বা কমার সুযোগ থাকায়, তখনও কখনও শতকরা হিসেবে কিছুটা কম বাড়তে বা কমতে পারে।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে বন্ধ হয়ে যায় পুঁজিবাজারের লেনদেন। ৬৬ দিন পর জুলাইয়ে লেনদেন চালু হলে বিমা খাতে দেখা যায় ঢালাও দর বৃদ্ধির প্রবণতা। চালু থাকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত।
এরপর ৫ এপ্রিল লকডাউন থেকে বিমায় দ্বিতীয় দফা দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দেয়। গত এক বছরে একটি কোম্পানির শেয়ার দর ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। তিন থেকে আট গুণ পর্যন্ত বেড়েছে বাকিগুলোর।
বিমার শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত সপ্তাহের শেষে বস্ত্র খাতেও বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এই খাতে মোট ৫৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত পুঁজিবাজারে। এর মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিক ঘোষণা করেছে, এমন ২০টি কোম্পানি ব্যাপক লোকসানে আছে। দ্বিতীয় প্রান্তিক ঘোষণা করা আছে, এমন আরও দুটি কোম্পানিও লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মুনাফায় থাকা কোম্পানির পাশাপাশি ঢালাও দাম বাড়ছে এসব লোকসানি কোম্পানিরও।
পুঁজিবাজারে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একক কোনো খাত নিয়ে বলা কঠিন। তবে বস্ত্র ও বিমা খাতে যেভাবে ঢালাও দাম বাড়ছে, সেটা ঠিক নয়। যারা শেয়ার কিনছে, তাদের ভাবা উচিত।’
এখানে আইনত কী করার আছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যিনি কিনছেন, তিনি তো তার নিজের টাকায় কিনছেন। এটা ঝুঁকিপূর্ণ। বিনিয়োগকারীরা সচেতন না হলে আপনি তো আটকাতে পারবেন না।’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোনো খাতে ঢালাও দাম বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য না। বিমার ক্ষেত্রে তাও কিছু ঘোষণা ও কারণ ছিল। কিন্তু বস্ত্রের কী হলো তার তো কারণ বুঝতে পারছি না।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু আইনি সংস্কার হয়েছে। কারসাজির অভিযোগে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বড় অংকের জরিমানাও করা হয়েছে। তবে বিমা খাতে অস্বাভাবিক উত্থান নিয়ে কোনো তদন্তের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি সংস্থাটিকে।
বস্ত্র খাতেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেই অনুসন্ধানের।
সংস্থাটির মুখপাত্র রেজাউল করিম একাধিকবার নিউজবাংলাকে বলেছেন, শেয়ারের দাম বাড়বে কি কমবে, এটা দেখা তাদের দায়িত্ব নয়। তারা কেবল দেখবেন, কোনো গুজব ছড়িয়ে বা অনিয়ম করে দাম বাড়ানো হয়েছে কি না, এমন কোনো অভিযোগ এখনও তারা পাননি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, ভুল শেয়ারে বিনিয়োগ করলে সে দায়িত্ব বিএসইসি নেবে না।
গত ৩১ মে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘কমিশন কখনও নির্ধারণ করতে পারে না কোন শেয়ারের দর বাড়বে, কোনটির দর কমবে। তাই ভুলে শেয়ার কেনার দায় কমিশনের না।’
লোকসানি কোম্পানির দামে লাফ
ঢাকা ডায়িং
সবচেয়ে বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে এই কোম্পানিটির । ২০১৫ সালের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটি ২০১৮ সালের পর আর কোনো হিসাবও দেয়নি। কিন্তু গত ১১ এপ্রিল থেকে আকাশে উঠে যেতে চাইছে দাম।
সেদিন দাম ছিল ৭ টাকা ৪০ পয়সা। এখন দাম ১৭ টাকা ৩০ পয়সা। দাম বেড়েছে ১৩৩ শতাংশের বেশি।
রিং সাইন টেক্সটাইল
২০১৯ সালের পর আর্থিক হিসাব না দেয়া কোম্পানিটি বন্ধ করে দিয়ে মালিকপক্ষ দেশ ছেড়ে তাইওয়ানে চলে গেছে। তবে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে সেটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। আর নতুন করে উৎপাদন শুরুর পর্যায়ে চলে এসেছে সেটি।
কিন্তু উৎপাদন শুরু হওয়ার আগেই শেয়ার দামে দিয়েছে লাফ। গত ১২ মে দাম ছিল ৬ টাকা ২০ পয়সা। সেখান থেকে লাফ দিয়ে এখন দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৯০ পয়সা। শতকরা হিসেবে এক মাসে দাম বেড়েছে ৭৫.৮০ শতাংশ।
জেনারেশন নেক্সট
সামান্য কিছু মুনাফা করার পর গত দুই বছর ধরে লভ্যাংশ দিতে না পারা চলতি বছর তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৩ পয়সা।
গত ২৯ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩ টাকা। সেখান থেকে ৭০ শতাংশ বেড়ে বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ১০ পয়সা। বুধবার দাম ছিল ৪ টাকা ৭০ পয়সা। এক দিনে বাড়া সম্ভব ছিল ৪০ পয়সা, তাই বেড়েছে বৃহস্পতিবার।
ইভেন্স টেক্সটাইল
তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ১৪ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির দাম গত ৪ মে ছিল ৬ টাকা ৭০ পয়সা। সেখান থেকে এক মাসে ৫৫ শতাংশ বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৪০ পয়সা।
সাফকো স্পিনিং
মিলে লোকসান যত বাড়ছে, শেয়ার মূল্য বাড়ছে তত।
গত ২৯ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য ছিল ৯ টাকা ৭০ পয়সা। সেখান থেকে হঠাৎ করেই বাড়তে বাড়তে দাম পৌঁছে ১৬ টাকা ৪০ পয়সা।
এই দাম বাড়ার পেছনে দৃশ্যত কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। উল্টো যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, তাতে শেয়ার দামে এমন উত্থান হওয়ার কথা ছিল না।
কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি দুই টাকা ৯ পয়সা আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে দুই টাকা ৪৩ পয়সা লোকসান দিয়েছিল। তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি সাড়ে পাঁচ পয়সা মুনাফা করার পরেও জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে লোকসান দাঁড়িয়েছে চার টাকা ৪৩ পয়সা।
চতুর্থ প্রান্তিকে অভাবনীয় কিছু না ঘটলে এই কোম্পানি থেকে এবার মুনাফার আশা না করাই ভালো।
বৃহস্পতিবার এক লাফে ১০ শতাংশ দাম বাড়া জাহিন স্পিনিং মিলও বছরের তিন প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ার প্রতি লোকসানে আছে এক টাকা ৩৭ পয়সা।
ডুবন্ত এই কোম্পানিতে আগ্রহ থাকার কথা ছিল না কারও। কিন্তু গত ২৮ এপ্রিল থেকে দাম বেড়ে প্রায় দেড়গুণ হয়ে গেছে। সেদিন দাম ছিল শেয়ার প্রতি ৫ টাকা। আর সেখান থেকে বেড়েছে ৫৪ শতাংশ।
রিজেন্ট টেক্সটাইল
তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৯২ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির শেয়ার দরও গত বৃহস্পতিবার মূল্য বৃদ্ধির প্রান্তসীমা ছুঁয়েছে।
গত ২৮ এপ্রিল শেয়ার দাম ছিল ৭ টাকা ২০ পয়সা। এখন দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৪০ পয়সা। এই কয় দিনে বেড়েছে ৪৪.৪৫ শতাংশ।
তাল্লু স্পিনিং মিলস
২০১৫ সালের পর থেকে লভ্যাংশ না দেয়া ২০১৯ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে হিসাব দেয়ার পর দুই বছর আর কোনো হিসাবও দিচ্ছে না।
দাম বেড়েছে এই কোম্পানিটিরও। গত ৪ মে থেকে কোম্পানির শেয়ার মূল্য বেড়েছে ৩৩.৩৩ শতাংশ।
৪ মে শেয়ারের দাম ছিল ৩ টাকা ৯০ পয়সা। বর্তমান দাম ৫ টাকা ২০ পয়সা। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ৪০ পয়সা বেড়েছে। সেদিন এর চেয়ে বেশি বাড়ার সুযোগ ছিল না সার্কিট ব্রেকার অনুযায়ী।
সোনারগাঁও টেক্সটাইল
২০১২ সালের পরে কেবল ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ৩০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিটি চলতি বছর লভ্যাংশ দিতে পারবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, বন্ধ থাকা কোম্পানিটি নয় মাসে শেয়ার প্রতি লোকসান করেছে এক টাকা ২৯ পয়সা।
কিন্তু গত ৬ মে থেকে এই কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ২৫.৪৫ শতাংশ।
৬ মে শেয়ার মূল্য ছিল ১৬ টাকা ৯০ পয়সা, আর বৃহস্পতিবার দাঁড়ায় ২১ টাকা ২০ পয়সা। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশের কাছাকাছি।
শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ
চলতি বছর প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৭৯ পয়সা। কিন্তু শেয়ার দামে হঠাৎ আগ্রহ দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটির লভ্যাংশ অনিশ্চিত।
গত ১ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ১২ টাকা ৩০ পয়সা। সেখান থেকে ২১.১৩ শতাংশ বেড়ে গেছে সাত কার্যদিবসে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দাম বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ
গত নয় মাসে এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৪ টাকা ১১ পয়সা। কিন্তু গত ৪ মের পর দাম বেড়েছে ১৮.৫১ শতাংশ। লোকসানি এই কোম্পানিটি সব শেষ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০১৫ সালে।
মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং
সবশেষ ২০১৬ সালে লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির মালিকরা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে চাইছেন বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে। বন্ধ থাকা কোম্পানিটি চলতি বছর তিন প্রান্তিক শেষে লোকসানে আছে এক টাকা ২৩ পয়সা।
কিন্তু গত ২০ মে থেকে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ১৮.৮২ শতাংশ। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এক দিনে দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ১০ পয়সা।
আর এন স্পিনিং মিল
২০১৮ সালের পর লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিটি চলতি বছরও লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলেই ধারণা করা যায় এর ব্যালান্সি শিট দেখলে।
বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ১৬ পয়সা। ৪ মে শেয়ার মূল্য ছিল ৪ টাকা ২০ পয়সা। সেখান থেকে ১৭ শতাংশ বেড়ে এখন দাম দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ১০ পয়সা।
জাহিন টেক্সটাইল
সবশেষ ২০১৮ সালে লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিটি এবারও কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না, এটা বলাই যায়। বছরের তিন প্রান্তিক শেষে শেয়ার প্রতি এখন লোকসান দুই টাকা ৫২ পয়সা।
কিন্তু শেয়ার মূল্যে যে লাফ তাতে এই অনিশ্চয়তার কোনো নমুনাই নেই। গত ১ জুন কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ৫ টাকা ৯০ পয়সা। সেখান থেকে দাম বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। আর এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এক দিনেই বাড়ে প্রায় ১০ শতাংশ।
হামিদ ফেব্রিক্স
লোকসানি এই কোম্পানিটি ফ্লোর প্রাইস ১৫ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হতো না বললেই চলে। গত ৭ এপ্রিল ফ্লোর প্রত্যাহারের পর দাম কমতে কমতে ১৩ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে আসে।
কিন্তু ২১ এপ্রিল থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দাম। গত বৃহস্পতিবার শেয়ার মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৭০ পয়সা।
এর মধ্যে কোম্পানিটির বছরের তিন প্রান্তিকের আয়ের তথ্য চলে এসেছে। নয় মাসে শেয়ার প্রতি এক টাকা ৩১ পয়সা লোকসান দেয়া এই কোম্পানিটিরও লভ্যাংশ দেয়া প্রায় অসম্ভবই বলা যায়।
তার পরেও বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশের কিছুটা কম দাম বাড়ে কোম্পানিটির।
স্টাইল ক্রাফট
বছর পাঁচেক আগে তুমুল আলোচিত কোম্পানিটি কয়েক গুণ শেয়ার বাড়িয়ে লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ফ্লোর প্রাইস ১৪৬ টাকা ৩০ পয়সাতে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হতো না বললেই চলে। কিন্তু গত ৩ জুন ফ্লোর প্রত্যাহারের পর এই কোম্পানির দাম প্রথম দুই কার্যদিবসে কমলেও পরের দুই দিনে বেড়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সা।
তিন প্রান্তিকে এই কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ৫৬ পয়সা।
প্রাইম টেক্সটাইল
শেয়ার প্রতি ২ টাকা ১২ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির দাম গত দুই কার্যদিবসে বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল
২০১৭ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে একে বাঁচাতে চাইছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। কিন্তু বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানিয়েছেন, এই কোম্পানিটি চালু করা যাবে না বলেই তারা ভাবছেন। কোম্পানির উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে তারা মামলা করবেন।
কিন্তু বস্ত্র খাতে সাম্প্রতিক উত্থানের মধ্যে দাম বেড়ে গেছে এই কোম্পানিরও। গত ৬ জুন থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে কোম্পানিটির। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বেড়ে ছুঁয়েছে সার্কিট ব্রেকারও।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে, যা আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির পথে জাতিকে এগিয়ে নেবে এবং গত ১৬ বছরের নৃশংসতার অবসান ঘটাবে।
তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের নতুন জন্মের দিন। এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করছি।’১৭ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ–সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ঐক্যের সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়েই নির্বাচনে যাব। যারা স্বাক্ষর করলেন, তারা প্রয়োজনে আবার বসেন। ঠিক করেন কীভাবে নির্বাচন সুন্দর করা যায়। যেনতেন নির্বাচন করে কোনও লাভ নেই।
রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মানুষ যেন মনে রাখে এই সনদে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে। পুলিশ এসে কেন ধাক্কাধাক্কি করবে। নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করবো। কারও এসে আমাদের সোজা করতে হবে না, দেখিয়ে দিতে হবে না, ধাক্কাধাক্কি করতে হবে না।
সনদে স্বাক্ষর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকের দিনটি বিশেষ। আজ সমস্ত জাতি, রাজনৈতিক নেতা একত্রিত হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এরকম ঘটনা আমরা চিন্তাও করতে পারিনি। যখন ঐকমত্য কমিশন গঠন করলাম, তখন মনে হয়েছিল হয়তো দুই-একটি বিষয়ে একমত করতে পারব। তাই ভয়ে ভয়ে এটা শুরু হয়েছিল। আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তিনি যদি বুঝিয়ে কিছু করতে পারেন। অবাক হয়ে দেখলাম, সব রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হলো। সবাই আলোচনা করলেন। এটা না দেখলে বিশ্বাস হতো না।
ঐকমত্য কমিশন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সনদের মধ্য দিয়ে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় এলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম। যেখানে কোনও আইন-কানুন ছিল না। এখন আমরা সভ্যতায় এলাম। এমন সভ্যতা গড়ে তুলবো যে মানুষ ঈর্ষার চোখে দেখবে। আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত চমৎকার। শুধু মানুষ নিয়ে সমাজ গঠন করতে হবে।
জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্মরণ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই কমিশন ও সনদ করার সুযোগ যারা দিয়েছে আজ তাদের স্মরণ করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের কথা মনে রাখতে হবে। যারা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়ে বেঁচে আছেন তাদের কাছে জাতি চির কৃতজ্ঞ।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকে এই দিনটি যে পেলাম, এটা মহান দিন। এটার কথা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে। এমন একটি দিন, সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায়, যেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে, সেটার ক্লাসরুমে আলোচনা হবে। রাজনৈতিকদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বলল, আমরা কী চাই। তারা সেটা পারে কি না, সেটা চেষ্টা করে দেখবে—তাদের দেশে এটা সম্ভব কি না। যেই উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনৈতিকবৃন্দ সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যে বৃহৎ জনগোষ্ঠী হিসেবে তরুণদের সম্ভাবনা, সমুদ্র বন্দরের উপযুক্ত ব্যবহারের প্রসঙ্গও উঠে আসে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের অংশ। একটি নিয়মের মধ্যে চললে এই সম্পদের ব্যবহার করতে পারব। যদি গভীর সমুদ্র বন্দর করে দেই তাহলে দুনিয়ার অনেক জাহাজ আমাদের বন্দরে ভিড়তে পারবে। আমাদের জাহাজ সিঙ্গাপুরে আটকে থাকবে না। এটি একটি বিরাট সুযোগ।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, অন্য দেশের জেলেরা এসে বঙ্গোপসাগরের মাছ নিয়ে যায়। আমরা হা করে তাকিয়ে থাকি। কক্সবাজার, মাতারবাড়ি ও মহেশখালী মিলিয়ে যদি একযোগে বন্দর উন্নত করি, তাহলে পুরো এলাকা নতুন সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে। সকল দেশের মানুষ এখানে আসবে। আমরা নেপাল, ভূটান ও সেভেন-সিস্টার্সের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারবো এসব বন্দরের কারণে।
এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক স্রোত, কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হলো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। সেই স্বপ্ন, প্রত্যাশার স্মারক যতটুকু অর্জিত হয়েছে- জুলাই জাতীয় সনদ সেটির প্রথম পদক্ষেপ।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, এই অগ্রসরমানতায় বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের ভূমিকা আছে। প্রত্যাশা থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো মত ও পথের পার্থক্য থাকা স্বত্ত্বেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
রাজনৈতিক দল ও শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ মোট ২৫টি দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠান মঞ্চে দলীয় প্রতিনিধিদের পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম মঞ্চে উপস্থিত হয়ে এই সনদের প্রতি সমর্থন জানান।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাসদ (মার্কসবাদী) আগেই এই সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দল ও জোটের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন:
১। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি): মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
২। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী: কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এবং সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
৩। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
৪। গণসংহতি আন্দোলন: প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
৫। নাগরিক ঐক্য: সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।
৬। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) : সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি মিসেস তানিয়া রব।
৭। গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) : সভাপতি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন।
৮। খেলাফত মজলিস: আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ এবং মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
৯। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস: সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ এবং মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
১০। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) : মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামূল বশির।
১১। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন: প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম এবং মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন।
১২। আমার বাংলাদেশ পাটি (এবি পার্টি) : চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
১৩। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) : চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এবং মহাসচিব মোমিনুল আমিন।
১৪। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি: সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী।
১৫। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট: জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান।
১৬। ১২ দলীয় জোট: জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপি’র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম।
১৭। গণফোরাম: জ্যেষ্ঠ এডভোকেট ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান।
১৮। জাকের পাটি: ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শহীদুল ইসলাম ভুইয়া এবং গাজীপুর জেলা ছাত্রফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ।
১৯। জাতীয় গণফ্রন্ট: কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস।
২০। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি: সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী এবং মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার।
২১। বাংলাদেশ লেবার পার্টি: চেয়্যারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম।
২২। ভাসানী জনশক্তি পার্টি: চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) এবং মহাসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)।
২৩। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ: সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী এবং মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
২৪। ইসলামী ঐক্যজোট: চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের এবং মহাসচিব মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।
২৫। আমজনতার দল: সভাপতি কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান (অব.) এবং সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান।
আমাগো কষ্ট দেহনের কেউ নাই। জীবনডা কষ্ট করেই পার করলাম। বেশ আক্ষেপ ও চাপা কষ্ট নিয়ে প্রায় বছর দুয়েক আগে কথাগুলো বলেছিলেন মাঝি সুজন শেখসহ মজলিশপুর চরাঞ্চলের মানুষ।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের শেষ সীমনা ৯ নং ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত দূর্গম চরাঞ্চল মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর যাত্রী পারাপারে পদ্মার মাঝি সুজন শেখ, স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান শেখ, জহিরুল শেখসহ অনেকেই খুব কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন।
তারা বলেন, বছরের প্রায় ছয়মাস পানিতে ভরে থাকে মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রামটি। সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। তবে অনেকেই আবার নানান পেশার সাথে জড়িত। কেউ পদ্মার বুকে মাছ ধরে সংসার চালান। শহরের সাথে তেমন ভালো যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই গ্রামটির। রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা। এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য আনা-নেয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল ঘোড়ার গাড়ি। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার চিপা রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয় এলাকার প্রায় ৮-১০ হাজার মানুষের। শুকনা মৌসুমে ওই রাস্তায় কম-বেশি ভ্যান-রিক্সা চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে চলাচল তো দূরের কথা ঘোড়ার গাড়ী চলাচলেও বড় মুশকিল হয়ে পরতো। সবচেয়ে বড় অসুবিধায় পরতে হয় বর্ষা মৌসুমে। তখন ওই চিপা রাস্তা দিয়ে খালি পায়ে হাঁটায় মুশকিল। শহরের সাথে একমাত্র যোগাযোগের জন্য যে রাস্তাটা রয়েছে সেখানে একটা জায়গায় প্রায় হাফ কিলোমিটার রাস্তা নিচু থাকায় বর্ষা মৌসুমে ওই রাস্তা দিয়ে পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। তবে এবার ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় কষ্ট লাঘব হয়েছে চরবাসীর।
এলাকার বেশ কয়েকজন লোকের সাথে কথা হলে তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বলেন, বছর দুয়েক আগেও বর্ষা মৌসুমে আমাদের অনেক কষ্ট করে নদী পার হওয়া লাগতো। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা বছরের প্রায় অর্ধেক মাস পানিতে ভরে থাকে। ফসল আনা-নেওয়া করতে নৌকা ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। এই হাফ কিলোমিটার জায়গায় চলাচলের জন্য সুন্দর একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে সরকার। আমরা এখন খুব খুশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মজলিশপুর ও চরমহিদাপুর গ্রামে প্রবেশ করতে হাফ কিলোমিটার রাস্তায় চওড়া একটা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজ হওয়ায় এখন আর আগের মতো ভোগান্তি পোহাতে হয় না।
স্থানীয় চর দৌলতদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনাময় চর এটি। এ চরে মৌসুমীভিত্তিক সব ধরনের ফসল খুব ভালোই উৎপাদন হয় কিন্তু যাতায়াতের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পেত না। এর আগে ব্রিজের জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে ব্রিজটি নির্মাণ করেন সরকার। এখন কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই খুব সহজে এলাকার মানুষ চলাচল করতে পারছে।
উজানচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য শেখ রাসেল আহম্মেদ জানান, এ অঞ্চলের মানুষের নদীর সাথে যুদ্ধ করেই চলতে হয়। এখন চরাঞ্চলের মানুষ রিকশা, ভ্যান, অটো এমনকি বড় বড় যানবাহনে তাদের কৃষি পন্য খুব সহজেই আনা নেয়া করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ব্রিজটি নির্মাণ হওয়াতে স্বস্তির নিঃশ্বাস পেয়েছে চরবাসী।
মধুপুর গড়ের শাল বনের লাল মাটিতে ছিল হরেক জাতের বন আলু বুনো খাদ্যের বিশাল ভাণ্ডার। এ খাদ্যই ছিল এ জনপদের গারো সম্প্রদায়ের প্রিয় খাদ্যের অন্যতম উৎস। জীবন-জীবিকার অনন্য উপাদান। স্বাদ-পুষ্টিগুণের এ আলু তোলা তেমন আনন্দের তেমনি স্থানীয়দের কাছে ঐতিহ্যের একটা অংশ হিসেবেও মনে করে তারা। তবে সেই ঐতিহ্যে ভরা স্বাদ গুণেমানের এ আলুর আর সেদিন নেই। নানাভাবে নান কারণে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হওয়ায় বিলীন হচ্ছে অফুরন্ত এ খাদ্য ভাণ্ডার। অবশিষ্ট যে বন টিকে আছে, তাতেও আগের মতো নেই হরেক জাতের বন আলু। এমনটাই জানা গেছে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে।
জানা গেছে, ইতিহাস ঐতিহ্য খ্যাত মধুপুর শাল বন ছিল গভীর অরণ্যে ঘেরা। বনের চারপাশে ছিল গারো মান্দিদের বসবাস। গারো সম্প্রদায়ের খামালরা বনের নানা গাছগাছরা দিয়ে তাদের চিকিৎসা করত। স্থানীয় বসতিরাও ভেষজ চিকিৎসা নিত। অরণ্যচারী গারো সম্প্রদায়ের লোকের ভক্ষণ করত বাহারি বুনো খাবার। বনের বিশাল খাদ্য ভাণ্ডারে হতো তাদের বাড়তি অন্নের জোগান। খারি গপ্পার নানা উপকরণ আহরণ হতো বন থেকেই। পুষ্টিগুণে ভরা বন আলু ছিল তাদের খাদ্যের মধ্যে অন্যতম। গারোরা তাদের ভাষায় বন আলুকে ‘থামান্দি বা থাজং’ বলে থাকে। থামান্দি আচিক শব্দ। এর অর্থ বন আলু।
মধুপুরের গায়ড়া, পীরগাছা, ধরাটি, মমিনপুর, জলছত্র, গাছাবাড়ি, ভুটিয়া ও চুনিয়াসহ বিভিন্ন গারোপল্লীতে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবিমা অঞ্চলের গারোরা বন আলুকে তাদের গারো বা আচিক ভাষায় ‘থামান্দি বা থাজং’ বলে থাকে। তাদের মতে, গারো সম্প্রদায়ের লোকেরাই মধুপুর শালবনে প্রথম বন আলুর সন্ধান পান বলে জানা গেছে। প্রাকৃতিক শালবনের মধুপুর, ঘাটাইল, শেরপুর, নেত্রকোনা, হালুয়াঘাটে এ আলু পাওয়া যেত। লালমাটির শালবনে প্রাকৃতিকভাবে এসব আলু জন্মায়। এ আলু ছাড়াও বনের অভ্যন্তরে পাওয়া যেত বাহারি রকমের নাম জানা-অজানা অনেক ধরনের আলু। অরণ্যচারী গারোরা বনের চারপাশে বাস করার কারণে তারা এর সন্ধান পান। এক সময় জুম চাষের কারণে এসব আলুর সন্ধান পেতে সহজ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ওই সময় ছনের ছোট ঘর বা মাচাং তুলে তারা থাকার জায়গা করতেন। ছাউনিতে বনের ছন আর বনের তারাই বাঁশ কিংবা ছোট ছোট সরু আকারের ছোট গাছ দিয়ে সুন্দরভাবে বানাতেন ঘর। আগের দিনে খাবার সংকট হলেই ছুটে যেতেন বনে। আধাবেলা আলু সংগ্রহ করলেই পরিবারের অন্নের জোগান হতো কয়েক দিনের এমনটাই জানান তারা।
বন আলু সংগ্রহ যেন সংস্কৃতির একটা অংশ। মনের আনন্দে বা স্বাচ্ছন্দ্যে তারা তাদের দ্বিতীয় প্রধান বনোখাদ্য আলু সংগ্রহ করত। এসব আলু সিদ্ধ করে খেত। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ছিল ভরপুর। তাদের অন্যতম উৎসব ওয়ানগালায় সালজং দেবতা বা শস্য দেবতাকে উৎসর্গ করে থাকে বন আলু। কৃষ্টি-কালচার-ঐতিহ্যে বন আলুর জুড়ি ছিল না। অতিথি কিংবা আত্মীয়-স্বজন এলে আপ্যায়নের জন্য দেওয়া হতো বন আলু। এখনো বনে বিভিন্ন জাতের যত বন আলু সামান্য পাওয়া যায়।
বন এলাকার আদিবাসী গারোদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, এক সময় মধুপুরের এই বনে গাতি আলু, গারো আলু, পান আলু, গইজা আলু, দুধ আলু, শিমুল আলু, কাসাবা, ধারমচআলুসহ বিভিন্ন ধরনের বন আলু পাওয়া যেত। এসব আলু তাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও প্রিয় খাবারের তালিকায় অন্যতম।
অর্চনা নকরেক (৫০) বলেন, অনেকেই আবার স্থানীয়ভাবে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করত। এই আলু দূরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও পাঠানো হতো। বন আলুর বংশবিস্তারের জন্য আলু সংগ্রহের পর গাছগুলো আবার মাটিতে পুঁতে দিতেন আদিবাসীরা। আবার গাছ বেড়ে উঠত। শাল-গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সঙ্গে লতার মতো জড়িয়ে থাকত। এ আলু ফাল্গুন-চৈত্রমাসে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ করা হতো। রোদে শুকিয়ে ঘরে তুলে রাখা হতো। প্রাকৃতিক বন কমে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো আলু পাওয়া যায় না।
বৃহত্তর ময়মনসিহ ডেভেলপমেন্ট কালচারাল ফোরামের সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, প্রাকৃতিক বন উজাড়ের ফলে বন আলু কমে গেছে। সামজিক বনায়ন ও অন্যান্য প্রকল্পের ফলে বন ও বনের ঝোঁপঝার উজাড় হওয়ায় বন আলু জীব বৈচিত্র্য পশুপাখিও কমে যাচ্ছে। আদিবাসী ছাড়া অন্য যারা আলু তোলে বিক্রি করে তারা আলু তোলার পর গাছ লাগিয়ে দেয় না। ফলে কমছে বন আলু। তিনি বলেন সামাজিক বনায়ন বন্ধ করে প্রাকৃতিক বন বাড়াতে হবে, আলু তোলার পর আবার গাছ লাগিয়ে দিতে হবে জনসচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।
মানবিক ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর। কখনও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে মানুষকে সচেতন করছেন, কখনও ছুটে যাচ্ছেন হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের কাছে। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি চার চারটি দপ্তরের কাজ করে যাচ্ছেন। তার প্রথম পরিচয় তিনি জনবান্ধব ও মানবিক। তিনি জনপ্রতিনিধি নন, তবে জনপ্রতিনিধির মতোই জনপ্রিয়। উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বের পাশাপাশি একাধারে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার প্রশাসক এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কাজ পাগল মানুষ বলতে যা বোঝায় এ যেন ঠিক তাই! সকাল নয়টা থেকে শুরু করে কখনো রাত বারোটা পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজ করা এটা যেন তার প্রতিদিনের রুটিন। দাপ্তরিক কাজের স্বার্থে কোনো কোনো দিন রাত বারোটার পরেও অফিস করতে দেখা যায়।
তিন দপ্তরের কাজের পাশাপাশিও তিনি উপজেলার বিভিন্ন হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রতিদিনের রুটিনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাখন চন্দ্র সূত্রধর। ২০২৫ সালে দেশের পটপরিবর্তনের পর ৮ জানুয়ারি তিনি কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। সেসময়ে কমলগঞ্জ প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে নিজ হাতে স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরান। এতে অল্পদিনেই তিনি সফল হন। দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় ও মানবিক একজন ব্যক্তি হিসেবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কর্মদক্ষতা, মানবিকতা ও জনবান্ধব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের কাছের মানুষ ও একজন জনপ্রিয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি উন্নয়ন ও জনসেবাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন। গত এক বছরে উপজেলা ও পৌরসভাজুড়ে কয়েক কোটির টাকার উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করেছেন।
জানা গেছে, মাখন চন্দ্র সূত্রধর এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে উপজেলায় অবৈধভাবে বালু মজুত রাখা, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ইভটিজিং, মাদক, খাবার হোটেল, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ার, অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করার জন্য তার রয়েছে বিশেষ নজরদারি। রাস্তাঘাট নির্মাণ, সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দ্রুতাতার সাথে সেবাপ্রার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় উপজেলার জনগণের মনে ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রদর এর প্রতি একটা আস্তা জমেছে।
স্থানীয়রা জানান, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, উপজেলার রাস্তাঘাট সংস্কার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, মসজিদ, মন্দির ও মাদরাসায় সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। উপজেলা অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পরামর্শ বা প্রয়োজনীয় দাবি দ্রুত সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এতে একদিকে যেমন মানুষের ভোগান্তি কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে প্রশাসনের প্রতি আস্থা।
ইউএনও মাখন চন্দ্র সুত্রধর, জুলাই আগস্ট মাসের ভূমি ব্যবস্থাপনা পারফরম্যান্স এর উপরে জেলার শ্রেষ্ঠ এসিল্যান্ড। যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮টি মোবাইল কোর্টে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার উপরে জরিমানা করা হয়েছে। যা সরকারের কোষাগারে জমা হয়।
ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ায়ই আমার কাজ। আর এই চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার শেষাংশে মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের নওদা বহলবাড়ীয়ার বিলপাড়া গ্রামে ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল চাষ করছেন মহিউদ্দিন বিশ্বাস। প্রায় ৫ বছর পূর্বে মহিউদ্দিন ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল গাছের চারা রোপন করেছিলেন। বর্তমানে গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করেছে। নিজ জমিতে নিজ আবাদকৃত ফসলের কুড়িতে মহিউদ্দিনের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক আর আনন্দের বন্যা দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় সোয়া বিঘা জমির উপর আবাদকৃত মহিউদ্দিনের নারিকেল বাগানে ৮২টি ভিয়েতনামী নারিকেল গাছ সগৌরবে ফুল ফল আর শোভাবর্ধনের খোরাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। নিজ এলাকায় বিদেশি জাতের নারিকেল গাছ দখার অভিপ্রায়ে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়ছে। তার এই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সরেজমিনে গিয়ে ও তা প্রত্যক্ষ করা গেছে।
বাগান মালিক মহিউদ্দিন জানান, গাছ লাগানোর পরে তিনি খুব দুশ্চিন্তা ও হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। কেননা ৫ বছরে সময় অতিক্রান্ত হলেও নারিকেল গাছে ফল ধরছে না তাছাড়া ও নানাজনে নানা কটু কথা বলতে থাকে। অবশেষে চলতি বছরের চলতি অক্টোবরের শুরুতে ৭টি গাছে নারিকেলের কুঁড়ি চোখে পড়ে। এখন তার মনে সাহস জন্মেছে। এখন তিনি বেজায় খুশি। যেখানে সারাদেশ থেকে অভিযোগ রয়েছে ভিয়েতনামী নারিকেল গাছ লাগিয়ে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু কুষ্টিয়ার মহিউদ্দিন প্রমাণ করেছেন যথাযথ পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে অবশ্যই সুফল পাওয়া যায়।
২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে মহিউদ্দিন টেলিভিশনে প্রতিবেদন দেখে কুষ্টিয়া বিএডিসি নার্সারী থেকে ৬২০ টাকা দরে ভিয়েতনামের খাটো জাতের ৪৭টি চারা সংগ্রহ করে তার নিজ গ্রাম নওদা বহলবাড়ীয়ার বিলপাড়াতে ২ ভাইয়ের মোট সোয়া বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন এই নারিকেল বাগান। এখন এই জমিতে নারিকেল গাছের সংখ্যা সর্বমোট ৮২টি। এর মধ্যে কিছু দেশি জাতের নারিকেল গাছও রয়েছে। এ বছরই প্রথম ৭টি ভিয়েতনামী জাতের নারিকেল গাছে নারিকেল ধরেছে, এরমধ্যে একটি গাছে সবচেয়ে বেশি ১৮টি নারিকেল ধরেছে। বাগানে অন্যান্য ফলজ গাছের চারাও রোপন করা হয়েছে। নারিকেল বাগানে নারিকেল গাছ ছাড়াও ৩টা মাল্টা, ১টা চায়না কমলা, ১টা মিষ্টি আমড়া, ১টা মিষ্টি কামরাঙ্গা, ১টি ত্বীন ফলের গাছ, ১১০টা লেবু গাছ সহ, কচু, পেঁপে, বেগুনসহ ২০০টা সুপারি গাছও রয়েছে।
মিরপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম রাজীব জানান, আমাদের এই অঞ্চলের মধ্যে প্রথম ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেলের গাছ রোপণ করেছে মহিউদ্দিন ও মতিয়ার বিশ্বাস। ইতোমধ্যে গাছে নারিকেল ধরতে শুরু করেছে। আশা করি আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে এগুলো বিক্রির উপযোগী হবে। এই বাগান দেখে অনেকে নতুন করে বাগান করতে শুরু করেছে।
বাগান মালিক হাজী মহিউদ্দিন বলেন, আমার বাগানে এই প্রথম দীর্ঘ ৫ বছর পরে নারিকেল ধরেছে। এই বাগানটিকে মাতৃবাগান হিসেবে স্বীকৃতি দিলে কম মূল্যে নারিকেল বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এতে এই অঞ্চলের চাষিরা উপকৃত হবে। উচ্চ ফলনশীল এ জাতীয় নারিকেলের আবাদ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০১৩ সালে ভিয়েতনাম থেকে খাটো জাতের নারিকেলের চারা দেশে আনা হয়। তিন বছরের মধ্যে ফল আসার কথা বলা হয়। কিন্তু গাছ লাগিয়ে বহু কৃষকের সর্বস্বান্ত হওয়ার গল্প উঠে আসে গণমাধ্যমে। ছয় বছরেও ফল না আসায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ জাতের নারিকেল চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন অনেক কৃষক। তবে আমাদের মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের দুই চাষি মহিউদ্দিন ও মতিয়ার এ নারিকেল চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন। ৫ বছর পরে এই প্রথম তাদের বাগানের ৭টি গাছে নারিকেল ধরা শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ এ বাগানটিকে মাতৃবাগান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ব্যাপারে জন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা প্রাচীন জেলা পাবনা, এ জেলায় জন্ম নিয়েছেন বহুগণীজন, ব্রিটিশ শাসিত থেকে শুরু করে এ জেলায় রয়েছে শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি নানা জেলার নামকরা সব প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই শতাব্দীর ইতিহাস বয়ে চলা পাবনা জেলা তার ১৯৭তম জন্মদিন উদযাপন করেছে।
১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ অক্টোবর সরকারের ৩১২৪ স্মারকে জেলা হিসেবে পাবনা গঠিত হয়। কিছু ইতিহাসবিদের মতে, পাবনা নামটি পদুম্বা থেকে এসেছে। কালক্রমে পদুম্বা শব্দটির স্বরসঙ্গতি হয়ে পাবনা হয়েছে। পাবনা নামকরণ নিয়ে কারও মতে, পবন বা পাবনা নামে একজন দস্যুর আড্ডাস্থল থেকেই একসময় পাবনা নামের উদ্ভব হয়।
২৩৭১.৫০ বর্গকিমি আয়তন বিশিষ্ট পাবনা জেলায় ৯টি উপজেলা ও ৭৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। পাবনায় আদমশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ২৯,০৯,৬২৪ জন। ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতিতে পাবনা জেলার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ভাষা সংগ্রাম আর সুমহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এই জেলার মানুষদের বীরত্বপূর্ণ অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বিশ্ব বরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিক সাংবাদিক, শিল্পোদ্যোক্তা, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, বিজ্ঞানী, অভিনেতা-অভিনেত্রী পাবনা তথা গোটা দেশকে বিশ্ব দরবারে স্বগৌরবে তুলে ধরেছে। ব্রিটিশ স্থাপত্যের টেকসই নিদর্শন দেশের একমাত্র বৃহত্তর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেল সেতু, লালন শাহ সেতু ও দেশের একমাত্র পারমাণবিক প্লান্ট পাবনায় অবস্থিত। পাবনায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব দর্শনীয় স্থান। পাবনার হেমায়েতপুরে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতাল, সনাতন ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান শ্রী শ্রী অনুকূল ঠাকুরের জন্মভুমি। গত বৃহস্পতিবার পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনার আয়োজনে প্রেসক্লাব মিলনায়তনের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিশিষ্টজন, সাংবাদিক, সুধী সমাজ ও জনপ্রতিনিধিরা। সভাপতিত্ব করেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা অ্যাড. শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। এছাড়া অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. মফিজুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. গোলাম মর্তুজা, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিৎ নাগ, এবিএম ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলামসহ প্রেসক্লাবের সকল সদস্য, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, স্বেচ্ছাসেবী ও সুধিজনরা যোগ দেন।
বক্তারা তাদের আলোচনায় তুলে ধরেন পাবনা শহরের কাঠামোগত দুর্দশা, অবকাঠামোগত ঘাটতি ও নাগরিক সমস্যার নানা চিত্র। কীভাবে এই ঐতিহ্যবাহী শহরকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গড়ে তোলা যায়- সেই বিষয়ে করণীয় নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। তারা আশা প্রকাশ করেন, জেলার ২০০তম জন্মদিনে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ পাবনা উপহার দিতে পারলে সেটি হবে ইতিহাসের মাইলফলক।
অনুষ্ঠানের শেষে কেক কেটে ও মিষ্টি মুখের মাধ্যমে এক আনন্দঘন পরিবেশে জেলা প্রতিষ্ঠা দিবসের এই বিশেষ আয়োজন সম্পন্ন হয়।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সেই দুই শিক্ষার্থী এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট সব পরীক্ষাকেন্দ্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এসএমএসের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের গত ৩ জুলাই সকালে সায়মা ও লাবনী নামের দুই পরীক্ষার্থী মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নেয়। পৃথক দুটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে গত ২ জুলাই দিবাগত রাতে।
সায়মা আক্তার হাতিয়া গ্রামের মো. রায়হান খানের মেয়ে এবং লাবনী আক্তার কচুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নান মিয়ার মেয়ে। তারা দুজনই মায়ের মৃত্যুর শোক নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
সায়মা আক্তার হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী এবং সখীপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে লাবনী আক্তার সানস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের শিক্ষার্থী, পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজ কেন্দ্রে।
জানা গেছে, গত ২ জুলাই রাত ৩টার দিকে সায়মার মা শিল্পী আক্তার (৪০) নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। অপরদিকে, ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান লাবনীর মা সফিরন বেগম (৪৫)।
সায়মা ও লাবনী দুজনই পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান। শোকের এমন সময়ে ভেঙে পড়লেও আত্মীয়-স্বজন ও শিক্ষকদের সাহচর্যে পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে আসেন তারা।
হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, সায়মার মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ঘটনাটি সত্যিই হৃদয়বিদারক। আল্লাহ যেন তাকে শক্তি দেন। সে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৭৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
সানস্টার ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ নাছির উদ্দিন বলেন, মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেক কঠিন। তবুও লাবনী সাহস দেখিয়েছে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৪.৫৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
মন্তব্য