মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বিবেচনায় এযাবৎকালে বাংলাদেশের রেকর্ড প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ অর্জন হয়েছিল ২০১৯ সালে। তখন অর্থবছরটি ছিল ২০১৮-১৯। এরপর প্রবৃদ্ধির চলমান এই ধারাবাহিকতা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। করোনা মহামারির ধকলে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির হিসাবে পাঁচ বছর পিছিয়ে গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪-এ এমন তথ্যই দেয়া হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির দুই দফা উপর্যুপরি ধাক্কায় বাংলাদেশের অর্থনীতির এই ধরাশায়ী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্লাবে আবার প্রবেশ করতে হলে দেশকে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত। তাছাড়া যেখানে ২০২৪ সালের পরই ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্লাবে প্রবেশের আভাস ছিল, সেখানে ওই ক্লাবে ঢুকতে হলে এখন বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত।
অর্থশাস্ত্রের মতে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটা দেশের কতটা উন্নতি-অবনতি হলো, জিডিপি প্রবৃদ্ধি পরিমাপ করলে তা অনেকটা জানা যায়।
অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-সংক্রান্ত এই সর্বশেষ প্রতিবেদনে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, করোনা মহামারি সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর লক্ষ্যগুলোয় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে।
নতুন প্রক্ষেপণ অনুসারে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে সংশোধন করে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ, যার ওপর ভিত্তি ধরে ২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়।
মধ্যমেয়াদের এই নতুন প্রক্ষেপণ অনুসারে ৬ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করে তা ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যথাক্রমে ৭.২ শতাংশ, ৭.৬ শতাংশ এবং ৮.০ শতাংশ হারে অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে নতুন এই প্রক্ষেপণ অনুযায়ী নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হওয়ার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে জানান, ‘আমরা যে গতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছিলাম, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বাস্তবতায় সরকারের সংশোধিত ও প্রাক্কলিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সঠিক ও সময়োপযোগী। তবে অপেক্ষাকৃত কম জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনও প্রস্তাবিত বছরে অর্জিত হবে কি না তাতে ঘোরতর সংশয় রয়েছে।’
কারণ উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বৈশ্বিক বাস্তবতা একে তো মোটেও অনুকূলে নেই, তার ওপর আমাদের অর্থনীতির সক্ষমতাও মারাত্মকভাবে কমে গেছে। যদিও এর থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষকে সম্পূর্ণভাবে করোনার ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখা। কিন্তু সেটা প্রত্যাশিত হারে আমরা করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর অনেকেই যেখানে তাদের জনগোষ্ঠীর শতভাগ করোনা টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন হয়েছে, উন্নয়নশীল অনেক দেশও এই উদ্যোগে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে, আমরা সেখানে এত বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র অল্প কিছু (প্রায় ৬০ লাখ) লোককে টিকার আওতায় আনতে পেরেছি। অথচ ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি লোককে টিকার আওতায় আনা না গেলে দেশ করোনার ঝুঁকিমুক্ত হবে না। আর করোনামুক্ত না হলে যা কিছুই করা হোক না কেন, অর্থনৈতিকভাবে দেশ খুব একটা আগাতে পারবে না। ফলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধিও হবে না।’
মাত্র দুই বছর আগেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগোচ্ছিল বীরদর্পে, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার পথে। তখন মূল্যস্ফীতি ছিল স্থিতিশীল। সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের দায়ও ছিল সহনীয়।
এ দুইয়ের ওপর ভর করে বাংলাদেশ সহজেই বহিস্থ অভিঘাত মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে টানা এক দশক ধরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক মানদণ্ডের সবগুলো সূচকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ফলে প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান ও উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধিও পাচ্ছিল। করোনা শুরুর আগে ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশ গড়ে ৭.৪ শতাংশ হারে স্থিতিশীল ও উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, যা বাংলাদেশকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্লাবে তুলে দেয়।
জিডিপির এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মূলত শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা, বিশেষত বেসরকারি ভোগ, বিনিয়োগ এবং নিট রপ্তানি। অন্যদিকে জোগানের দিক থেকে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাত।
গত ৫ বছরে (অর্থবছর ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯) গড়ে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত ১০.৫ শতাংশ, সেবা খাত ৬.৩ শতাংশ এবং কৃষি খাতে ৩.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
তবে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্লাবে বাংলাদেশের বসবাস বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেনি। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে পাল্টে যায় দেশের স্থিতিশীল অর্থনীতির দৃশ্যপট। রাতারাতি নাজুক হয়ে যায় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি। এর সঙ্গে বৈশ্বিক অভিঘাত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে এক ধাক্কায় অনেকখানি নামিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিমাপ উল্লেখ করে সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে দাবি করা হয়, করোনা মহামারির প্রভাবে ২০২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার কমে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে এসে দাঁড়ায়।
এরপরও সরকার আশা করছিল, শিগগিরই অর্থনীতির উত্তরণ ঘটবে। কেটে যাবে করোনার নেতিবাচক প্রভাব। এ কারণে চলতি বিদায়ী ২০২১ অর্থবছরের বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়। সবকিছু পরিকল্পিতভাবেই চলছিল।
কিন্তু চলতি বছর এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দুই দফা সংশোধন করে ৬.১ শতাংশে নামিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
একই কারণে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে সরকারকে অতি সতর্ক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। নতুন লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হয় মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
কম হারে জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়, চাহিদার দিক থেকে ব্যক্তিগত ভোগব্যয়, আমদানি-রপ্তানি এবং সরকারি বিনিয়োগ করোনার কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
অন্যদিকে, সরবরাহের দিক থেকে কৃষি উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় শিল্প (ম্যানুফ্যাকচারিং), নির্মাণ এবং সেবা খাত।
তাছাড়া অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির সৃষ্ট এই নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে বুঝতে পারে সরকার। ফলে উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধির চিন্তা থেকে সরে আসে।
সরকারের এই দাবির প্রমাণ মেলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমি, এপ্রিল ২০২১ পর্যালোচনা থেকে। যেখানে বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বল্পমেয়াদি প্রক্ষেপণে বলা হয়, এই মহামারির কারণে সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানবজীবনের ক্ষতি হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বন্ধ থাকায় বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে বিশ্বজুড়েই দেশে দেশে কমছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি।
আরও পড়ুন:পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটতে গিয়ে অসাবধানতাবশত শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
শনিবার(৭ জুন) সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জেলা সদরসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে আসা আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ধারালো ছুরি, চাপাতি বা দা ব্যবহারে অদক্ষ থাকায় হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে যায়। যদিও অধিকাংশ আহতের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন—ফুলবাড়িয়া এলাকার পাবেল মিয়া (২৭), ঘাটুরা গ্রামের সেলিম (৪৫), চাঁনপুরের আরস মিয়া (২৬), জহিরুল হক (৫০), মো. মিলন (২৩), আজিজুল (২১), শাকিব (২৮), জীবন (৪০), সুমন (২৬), রামরাইলের আলামিন (২৩), আক্কাস (৪৫), উবায়দুল (৩৩), ইউবিন (২২), রহমত আলী (৫৫), সুলতানপুর এলাকার আবু সুফিয়ান (১৫), সাদেক (১৮) সহ অনেকেই। কারও হাতে, কারও বা পায়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
আহত সুফিয়ান বলেন, পায়ের নিচে রাখা মাংস কাটতে গিয়ে অসতর্কভাবে ছুরির কোপ পায়ে লাগে। পরে হাসপাতালে এসে সেলাই নিতে হয়।
আরেকজন, রিকশাচালক আরস মিয়া বলেন, মাংস কাটার সময় হাত ফসকে ছুরি লেগে যায়। হাসপাতালে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শুভ্র রায় বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন রোগী আমাদের এখানে এসেছেন। এদের প্রায় সবাই কোরবানির পশুর মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। গুরুতর কেউ নয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শন করার জন্য কলাবাগান শিশু পার্ক সংলগ্ন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মানিত সচিব জনাব মো: রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বলেন, শহরে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না হলে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এমনকি রোগ-জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ১২ ঘন্টা সময়ের মধ্যেই সকল বর্জ্য অপসারণ করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন এ বছর কোরবানির বর্জ্যের কারণে নগরবাসীর ঈদ আনন্দ বাঁধাগ্রস্ত হবে না।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১০০০০ হাজারের অধিক জনবল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডারসহ বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে ৭৫টি ওয়ার্ডে মোট ২০৭৯টি যানবাহন নিয়োজিত রয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপিত হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার একান্ত সচিব জনাব মো: আবুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মোঃ মাহাবুবুর রহমান তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া পাচার রোধে সীমান্ত এলাকাগুলোতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) শরীফুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কাঁচা চামড়া পাচার ও ভারতে পুশ-ইনের যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ঈদ মৌসুমে কাঁচা চামড়া পাচার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন বাস্তবতায় সীমান্তজুড়ে নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ভারতের দিক থেকে যেকোনো পুশ-ইন ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে সীমান্তরক্ষী এই বাহিনী।
বিজিবির পিআরও আরও জানান, ঈদের দিনেও ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবির সদস্যরা। টহল ও নজরদারি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া যাতে বৈধ বাণিজ্য চ্যানেলের মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করছে বিজিবি।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে বিজিবি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ঈদ মৌসুমজুড়েই তারা সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে বলে জানানো হয়।
ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে প্রস্তুত করা হয়েছে সিলেটের সাতটি প্রধান পর্যটন স্পট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলের টিলা, চা-বাগান, ঝরনা ও স্বচ্ছ জলের ধারায় মুগ্ধ হতে ছুটে আসছেন সারা দেশের ভ্রমণপিপাসুরা।
সিলেট মহানগরীর আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি, শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মাজার, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, শাহী ঈদগাহ ও গৌর গোবিন্দের টিলা। তবে নগরীর বাইরে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলোই সবচেয়ে বেশি পর্যটকের মনোযোগ কাড়ছে।
সাদাপাথর (ভোলাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ): সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাদাপাথরে চোখে পড়ে দিগন্তজোড়া সাদা পাথরের মেলা, স্বচ্ছ নীল জল, আর পাহাড়ের কোলে ঝরনার ধারা। ধলাই নদীর জলে মিশে প্রকৃতি এখানে যেন তার রঙের খেলায় ব্যস্ত।
রাতারগুল: দেশের একমাত্র স্বীকৃত জলাবন রাতারগুল বর্ষায় ২০ থেকে ৩০ ফুট পানিতে ডুবে থাকে। ৭৩ প্রজাতির গাছগাছালিতে ঘেরা এ বনাঞ্চলে নৌকাভ্রমণ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।
জাফলং: মেঘালয়ের পাদদেশে পিয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত জাফলং পর্যটকদের কাছে বছরের পর বছর ধরে প্রিয় গন্তব্য। পাথরের স্তূপ, ঝরনা ও খাসিয়া সংস্কৃতির পাশাপাশি শ্রীপুর চা-বাগান ও ইকোপার্কের সৌন্দর্য জাফলং সফরকে স্মরণীয় করে তোলে।
রাংপানি (গোয়াইনঘাট): সাদা পাথর ও পাহাড়ি ঝরনার মিলনস্থল রাংপানির পাশে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম মোকামপুঞ্জি অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫৪ কিলোমিটার।
উৎমাছড়া (কোম্পানীগঞ্জ): ঝরনার স্বচ্ছ জলের ধারা, সবুজ পাহাড় এবং বিশাল পাথরের বিছানায় ঘেরা উৎমাছড়ায় ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে।
লালাখাল (কানাইঘাট): নীলজলের লালাখাল ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। আঁকাবাঁকা নদীপথ, পাশের পাহাড়ি বন ও চা-বাগান লালাখালকে করেছে ছবির মতো সুন্দর।
লোভাছড়া (কানাইঘাট): ঐতিহাসিক লোভাছড়া চা-বাগান ও তার আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝুলন্ত সেতু, ঝরনা, খাসিয়া গ্রাম এবং ব্রিটিশ আমলের স্থাপনাগুলো একসঙ্গে দেখতে পাওয়া যায় এখানে। সুরমা ও লোভা নদীর মিলনস্থলও এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সহায়তাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে এ্যামি বেগম নামে এক গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
শনিবার (৭ জুন) সকালে উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী হাসিবুল পলাতক রয়েছেন।
নিহত এ্যামি বেগম একই ইউনিয়নের ইসরাক হোসেনের মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। এর জেরে শনিবার ঈদের দিন সকালে হাসিবুল ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রী এ্যামি বেগমের গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে পাটগ্রাম থানা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের কারণেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত হাসিবুলকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে।
বিচার, সংস্কার, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ভোটের সমতল মাঠ তৈরি হলে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে নিজ গ্রাম তুলাপুর পাঁচগাঁও ঈদগাহে নামাজ আদায় শেষে তিনি এসব বলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতি যেনতেন নির্বাচন চায় না। বিচার, সংস্কার, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ভোটের সমতল মাঠ তৈরি হলে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন সম্ভব হবে। পরপর তিনবার মানুষ ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ পাননি। এবার নতুন ভোটার যুব সমাজকে ভোটের সুযোগ করে দিতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা কোনো সহযোগিতা চাইলে তারা সহযোগিতা করবেন বলেও জানান জামায়াতের এই নেতা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশের সংকট দূর করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে, ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ঈদুল আজহা ত্যাগ, কুরবানি ও আল্লাহর সন্তুষ্টির পরীক্ষা। এই মহিমান্বিত দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক অন্যায়, জুলুম-নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। দেশের চলমান সংকট উত্তরণে জাতিকে সত্য, ন্যায় ও ইসলামি আদর্শের পথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
নামাজ শেষে এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন তিনি।
তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার পৌর আমীর হাফেজ তাজুল ইসলাম, ছাত্রশিবির জেলা সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন, ভাটেরা ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা আব্দুল করিম ও ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল লতিফ প্রমুখ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
মন্তব্য