মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বিবেচনায় এযাবৎকালে বাংলাদেশের রেকর্ড প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ অর্জন হয়েছিল ২০১৯ সালে। তখন অর্থবছরটি ছিল ২০১৮-১৯। এরপর প্রবৃদ্ধির চলমান এই ধারাবাহিকতা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। করোনা মহামারির ধকলে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির হিসাবে পাঁচ বছর পিছিয়ে গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪-এ এমন তথ্যই দেয়া হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির দুই দফা উপর্যুপরি ধাক্কায় বাংলাদেশের অর্থনীতির এই ধরাশায়ী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্লাবে আবার প্রবেশ করতে হলে দেশকে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত। তাছাড়া যেখানে ২০২৪ সালের পরই ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্লাবে প্রবেশের আভাস ছিল, সেখানে ওই ক্লাবে ঢুকতে হলে এখন বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত।
অর্থশাস্ত্রের মতে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটা দেশের কতটা উন্নতি-অবনতি হলো, জিডিপি প্রবৃদ্ধি পরিমাপ করলে তা অনেকটা জানা যায়।
অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-সংক্রান্ত এই সর্বশেষ প্রতিবেদনে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, করোনা মহামারি সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর লক্ষ্যগুলোয় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে।
নতুন প্রক্ষেপণ অনুসারে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে সংশোধন করে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ, যার ওপর ভিত্তি ধরে ২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়।
মধ্যমেয়াদের এই নতুন প্রক্ষেপণ অনুসারে ৬ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করে তা ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যথাক্রমে ৭.২ শতাংশ, ৭.৬ শতাংশ এবং ৮.০ শতাংশ হারে অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে নতুন এই প্রক্ষেপণ অনুযায়ী নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হওয়ার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে জানান, ‘আমরা যে গতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছিলাম, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বাস্তবতায় সরকারের সংশোধিত ও প্রাক্কলিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সঠিক ও সময়োপযোগী। তবে অপেক্ষাকৃত কম জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনও প্রস্তাবিত বছরে অর্জিত হবে কি না তাতে ঘোরতর সংশয় রয়েছে।’
কারণ উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বৈশ্বিক বাস্তবতা একে তো মোটেও অনুকূলে নেই, তার ওপর আমাদের অর্থনীতির সক্ষমতাও মারাত্মকভাবে কমে গেছে। যদিও এর থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষকে সম্পূর্ণভাবে করোনার ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখা। কিন্তু সেটা প্রত্যাশিত হারে আমরা করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর অনেকেই যেখানে তাদের জনগোষ্ঠীর শতভাগ করোনা টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন হয়েছে, উন্নয়নশীল অনেক দেশও এই উদ্যোগে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে, আমরা সেখানে এত বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র অল্প কিছু (প্রায় ৬০ লাখ) লোককে টিকার আওতায় আনতে পেরেছি। অথচ ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি লোককে টিকার আওতায় আনা না গেলে দেশ করোনার ঝুঁকিমুক্ত হবে না। আর করোনামুক্ত না হলে যা কিছুই করা হোক না কেন, অর্থনৈতিকভাবে দেশ খুব একটা আগাতে পারবে না। ফলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধিও হবে না।’
মাত্র দুই বছর আগেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগোচ্ছিল বীরদর্পে, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার পথে। তখন মূল্যস্ফীতি ছিল স্থিতিশীল। সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের দায়ও ছিল সহনীয়।
এ দুইয়ের ওপর ভর করে বাংলাদেশ সহজেই বহিস্থ অভিঘাত মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে টানা এক দশক ধরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক মানদণ্ডের সবগুলো সূচকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ফলে প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান ও উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধিও পাচ্ছিল। করোনা শুরুর আগে ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশ গড়ে ৭.৪ শতাংশ হারে স্থিতিশীল ও উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, যা বাংলাদেশকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্লাবে তুলে দেয়।
জিডিপির এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মূলত শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা, বিশেষত বেসরকারি ভোগ, বিনিয়োগ এবং নিট রপ্তানি। অন্যদিকে জোগানের দিক থেকে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাত।
গত ৫ বছরে (অর্থবছর ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯) গড়ে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত ১০.৫ শতাংশ, সেবা খাত ৬.৩ শতাংশ এবং কৃষি খাতে ৩.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
তবে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্লাবে বাংলাদেশের বসবাস বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেনি। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে পাল্টে যায় দেশের স্থিতিশীল অর্থনীতির দৃশ্যপট। রাতারাতি নাজুক হয়ে যায় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি। এর সঙ্গে বৈশ্বিক অভিঘাত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে এক ধাক্কায় অনেকখানি নামিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিমাপ উল্লেখ করে সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে দাবি করা হয়, করোনা মহামারির প্রভাবে ২০২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার কমে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে এসে দাঁড়ায়।
এরপরও সরকার আশা করছিল, শিগগিরই অর্থনীতির উত্তরণ ঘটবে। কেটে যাবে করোনার নেতিবাচক প্রভাব। এ কারণে চলতি বিদায়ী ২০২১ অর্থবছরের বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়। সবকিছু পরিকল্পিতভাবেই চলছিল।
কিন্তু চলতি বছর এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দুই দফা সংশোধন করে ৬.১ শতাংশে নামিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
একই কারণে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে সরকারকে অতি সতর্ক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। নতুন লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হয় মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
কম হারে জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়, চাহিদার দিক থেকে ব্যক্তিগত ভোগব্যয়, আমদানি-রপ্তানি এবং সরকারি বিনিয়োগ করোনার কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
অন্যদিকে, সরবরাহের দিক থেকে কৃষি উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় শিল্প (ম্যানুফ্যাকচারিং), নির্মাণ এবং সেবা খাত।
তাছাড়া অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির সৃষ্ট এই নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে বুঝতে পারে সরকার। ফলে উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধির চিন্তা থেকে সরে আসে।
সরকারের এই দাবির প্রমাণ মেলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমি, এপ্রিল ২০২১ পর্যালোচনা থেকে। যেখানে বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বল্পমেয়াদি প্রক্ষেপণে বলা হয়, এই মহামারির কারণে সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানবজীবনের ক্ষতি হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বন্ধ থাকায় বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে বিশ্বজুড়েই দেশে দেশে কমছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি।
আরও পড়ুন:জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম বন্দরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাহাজে বহন করা ৫৫ হাজার টন কয়লা খালাস ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এটি এখন দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দর থেকে আমিরাতের আরেক বন্দর মিনা সাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছে। সেখানে পণ্য লোড করার পর জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা করবে।
মে মাসের মাঝামাঝিতে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি চট্টগ্রামে পৌঁছবে বলে ধারণা করছে মালিক পক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ।
২৩ নাবিকসহ জাহাজটি ২১ এপ্রিল বিকেলে আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর করে। জেটিতে নোঙর ফেলে ২২ এপ্রিল। এরপর শুরু হয় কয়লা খালাসের প্রক্রিয়া।
কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আল হামরিয়া বন্দরে পণ্য খালাস করে শনিবার রাতে জাহাজটি মিনা সাকার নামে আরেকটি বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। সেখান থেকে নতুন পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে এমভি আবদুল্লাহ। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি চট্টগ্রামে নোঙর করবে বলে আমরা আশা করছি।’
প্রসঙ্গত, ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে। পরে মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ১৩ এপ্রিল রাতে ছাড়া পায়। অর্থাৎ জিম্মি করার ৩২ দিন পর জাহাজটি মুক্তি পায়।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকলে হাত, দাঁত ও চাপার হাড্ডি ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপের হুমকিদাতা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে (আনারস) শো-কজ করেছেন জেলা রিটার্ননিং কর্মকর্তা।
শনিবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আটককৃতরা হলেন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও সুজাত আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়।
লিখিত বক্তব্যে শানিয়াজ্জামান তালুকদার জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে তার দুই কর্মী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা উস্কানিমূলক ও হুমকিস্বরূপ। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে হুমকিদাতা দু’জনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন সরিষাবাড়ী থানায় মামলা করেন।
মামলা হওয়ার পর শনিবার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশ সাইদুল হাসান সাইদ ও খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়কে গ্রেপ্তার করে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের নির্বাচনী পথসভায় অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের জবান আমরা বন্ধ করে দেব। আমরা আগামী ৮ মে'র নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আমরা অন্য কোনো মার্কার কোনো এজেন্ট দিতে দেবো না। রফিক সাহেবকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আজকেই ঘোষণা দিলাম।’
প্রতিপক্ষের লোকদের হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাবধান হয়ে যান, আমাদের মাঝে অসন্তোষ ও হানাহানির চেষ্টা করবেন না। আপনাদের দাঁত ভেঙে দেয়া হবে। যাদের দাঁত নেই, তাদের চাপার হাড্ডি ভেঙে দেয়া হবে।’
এরপর পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয় একই সভায় বলেন, ‘অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট কোনো কেন্দ্রে দিতে দেব না। এজেন্ট দিলে তার হাত বাড়ি দিয়ে ভেঙে আমরা যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করবো।’
এ সময় সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আগামী ৮ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে রফিকুল ইসলাম (আনারস) ও তালেব উদ্দিন (দোয়াত-কলম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে শনিবার দুপুরে জানান অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার আবু জাফর ও ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পুরো বিষয়টির তদন্ত করছে। দলটির প্রধান হলেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের শুক্রবার বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, ‘তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করেছিল। আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শনিবার জাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে।
‘নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেয়া হয়েছিল। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কী না সন্দেহ ছিল। তাই নির্বাচনে গিয়েছি।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিল।
‘আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল, তারা সফল হবে না। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে- এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বিএনপি এক কিংবা ১০ লাখ বা এক কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও তাদের আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসেবে দেখতে চায়। তবে তা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল ছিল না এবং আমরা গৃহপালিত বিরোধী দল হতে রাজি নই।’
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
চলমান তাপপ্রবাহে সারা দেশের সঙ্গে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাও। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ নগর জীবন। এ অবস্থায় রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে পানি ছিটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বায়ু দূষণ রোধ ও তীব্র দাবদাহে শহরকে ঠাণ্ডা রাখতে ডিএনসিসির ওয়াটার স্প্রে (পানি ছিটানো) কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘দুটি স্প্রে ক্যানন প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠাণ্ডা রাখা হবে।
‘এছাড়াও ডিএনসিসির পার্কগুলোতে স্প্রে ক্যাননের মতো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে পার্কগুলোতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে চলমান তীব্র দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে সড়কে পানি ছিটানো এবং ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সংবলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করতে পারে।’
চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। তিনি তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কাজগুলো আমাদের সবাইকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন যে চিফ হিট অফিসার সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন। বাস্তবে সিটি করপোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি করপোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই।
‘হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে সাতজন চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করেছে এবং তারা সবাই নারী।’
ওয়াটার স্প্রে পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য