নতুন করে যে ৩০টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর বা তুলে নেয়া হয়েছে, তার প্রতিটিই দর হারিয়েছে। এসব কোম্পানির দর হারানোর প্রান্তসীমা ছিল দুই শতাংশ। আর একটি ছাড়া সবগুলোই এই পরিমাণ দর হারিয়েছে।
এর আগে ফ্লোর তুলে দেয়া ৬৬ কোম্পানির মতোই এই কোম্পানির ক্ষেত্রেও একটি প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। আর তা হলে ফ্লোর প্রাইসে কোনো কোনোদিন একটি শেয়ারও হাতবদল না হলেও ‘মুক্ত’ হয়ে যাওয়ার পর সব কটি কোম্পানিই লেনদেন হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এরপর প্রথম লেনদেন হয়েছে রোববার।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার পর শেয়ার মূল্যে দেখা দেয়া ধস ঠেকাতে এই ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়া হয় সবগুলো শেয়ারের। কিন্তু শেয়ারের আয়, মৌলভিত্তি বিবেচনায় না এনে কেবল বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এই সর্বনিম্ন দাম দেয়া হয়।
পরে দেখা যায়, বহু কোম্পানি বিপুল পরিমাণ লোকসান দিচ্ছে। আর এ কারণে বেঁধে দেয়া সেই মূল্য অযৌক্তিক হয়ে যায় আর সেই দামে শেয়ার হাতবদল হচ্ছিল না বললেই চলে।
এই পরিস্থিতিতে প্রথমে ৭ এপ্রিল ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয়। সেই কোম্পানিগুলোর প্রায় অর্ধেক এখন বেঁধে দেয়া ফ্লোর প্রাইসের ওপরে উঠে গেছে। আর প্রতিদিনই বেশ ভালো পরিমাণে লেনদেন হচ্ছে।
এর পরেও আরও বেশ কিছু কোম্পানি থেকে যায়, যেগুলো লেনদেন হচ্ছিল না বললেই চলে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে তোলা হয় ৩০টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারে কোনো ফ্লোর প্রাইস রাখা হবে না। কিন্তু একদিনে সবগুলো তুলে দিলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় তারা ধাপে ধাপে এই সিদ্ধান্ত নেবেন।
যেসব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস কমানো হয়েছে, সেগুলোর একটি বিশেষ সুবিধা আছে। তা হলো অন্যগুলোর মতোই এগুলোর দাম ১০ শতাংশ বাড়তে পারবে, কিন্তু কমতে পারবে দুই শতাংশ।
কিন্তু শতকরা হিসাবের কারণে কোনো কোনো কোম্পানির দাম কমতে পারে দুই শতাংশের কম।
বিএসইসি চেয়ারম্যান নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছিলেন, হঠাৎ করে এই সুবিধা উঠিয়ে দেয়া হলে তা পুঁজিবাজারের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। এজন্য পুঁজিবাজার যখন স্বাভাবিক হবে, বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থাশীল হবে তখন আস্তে আস্তে এসব সুযোগ উঠিয়ে দেয়া হবে।
কোনটার দাম কত কমল
রেনউইক যগেশ্বর ফ্লোর প্রাইস ছিল ৯০০ টাকা। রোববার কোম্পানিটির শেয়ার দর দিনের সর্বোচ্চ ২ শতাংশ কমে হয়েছে ৮৮২ টাকা।
ফ্লোর উঠানোর আগে বৃহস্পতিবার লেনদেন ছিল আটটি। সেটি বেড়ে হয়েছে ২১টি।
মুন্নু এগ্রোর দর ফ্লোর প্রাইস ৭৯৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে দুই শতাংশ কমে হয়েছে ৭৭৮ টাকা ৯০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন কোনো শেয়ার হাতবদল না হলেও আজ লেনদেন হয়েছে ৩১টি।
নর্দার্ন জুট কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস ছিল ৩২৪ টাকা ৯০ পয়সা। এটিও দর হারিয়েছে ২ শতাংশ। আজ ৩০৭টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৩১৮ দশমিক ৪০ পয়সায়। ফ্লোর উঠার আগে লেনদেন ছিল ১৮টি।
ইস্টার্ন কেবলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৪০ টাকা ১০ পয়সা। দুই টাকা ৮০ পয়সা বা দুই শতাংশ কমে এখন দাম হয়েছে ১৩৭ টাকা ৩০ পয়সা।
ফ্লোর উঠার আগের দিন ১১৬টি শেয়ার হাতবদল হলেও সেটি এখন বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৫৪৫টি
গত অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়া বাটা শুর ফ্লোর প্রাইস ৬৯৩ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছিল না বললেই চলে।
ফ্লোর মুক্ত দিনে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে দাম হয়েছে ৬৭৯ দশমিক ৪০ পয়সা। লেনদেনও হয়েছে প্রায় তিন গুণ।
বৃহস্পতিবার হাতবদল হয়েছেল ৭৯৯টি। আর রোববার হয়েছে দুই হাজার ১৯৭টি।
কোহিনুর ক্যামিকেলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৪৭২ টাকা ৮০ পয়সা। এর দরও ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে হয়েছে ৪৬৩ টাকা ৪০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন কোনো লেনদেন না হওয়া কোম্পানিটির জট খুলেছে। ৫১৬টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
ওয়াটা ক্যামিকেল ফ্লোর প্রাইস ছিল ৩০৬ টাকা ৮০ পয়সা। ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে দাম হয়েছে ৩০০ টাকা ৭০ পয়সা।
আগের দিন ১১৬টি শেয়ার হাতবদল হলেও এর লেনদেন বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৫৪৮টি।
এপেক্স স্পিনিং এর দর ১৩০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে হয়েছে ১২৮ টাকা ১০ পয়সা।
ফ্লোরের শেষ দিন কোনো লেনদেন না হওয়া কোম্পানিটিরও জট খুলেছে। দাম কমার পর হাতবদল হয়েছে ৪০০টি।
সিভিও পেট্রো ক্যামিকেলের দাম ১১৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে হয়েছে ১১৩ টাকা ১০ পয়সা।
আগের দিন মাত্র তিনটি শেয়ার হাতবদল হলেও ফ্লোর থেকে মুক্ত হওয়ার পর হাতবদল হয়েছে ৪১১টি।
স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের দর ৩০৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে হয়েছে ৩০১ টাকা ৮০ পয়সা।
তবে এটির লেনদেন কমেছে। আগের দিন ১২০টি শেয়া হাতবদল হলেও আজ হয়েছে ৯২টি।
সোনালী পেপারের দাম ২৭৩ টাকা থেকে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে হয়েছে ২৬৭ টাকা ৬০ পয়সা।
এটিরও লেনদেন কমেছে। আগের দিন ২০টি হাতবদল হলেও আজ হয়েছে দুটি।
কে অ্যান্ড এর দর ২০৭ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে হয়েছে ২০৩ টাকা ৩০ পয়সা।
এটিরও লেনদেন কমেছে। আগের দিন লেনদেন হয় ৮৬৯টি। আজ হয়েছে একটি।
স্টাইলক্রাফটের দর ১৪৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে হয়েছে ১৪৩ টাকা ৩০ পয়সা।
আগের দিন ফ্লোর প্রাইসে দুই হাজার ৯৩টি শেয়ার লেনদেন হলেও এটি আজ হাতবদল হয়েছে দ্বিগুণ। লেনদেন হয়েছে চার হাজার ২৯২টি।
বিডিঅটোকারের দর ১৪৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে হয়েছে ১৪৪ টাকা ৪০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইসের শেষ দিন তিনটি শেয়ার হাতবদল হলেও মুক্ত হওয়ার পর হাতবদল হয়েছে ৩৩৫টি।
মুন্নু সিরামিকের দর ১২৬ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে হয়েছে ১২৪ টাকা ৩০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইসের শেষ দিন ৭৪ শেয়ার হাতবদল হলেও মুক্ত হওয়ার পর হাতবদল হয়েছে এক হাজার ২৫১টি।
বঙ্গজের দাম ফ্লোর প্রাইস ১১৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে হয়েছে ১১৪ টাকা ৬০ পয়সা।
এই কোম্পানিরও লেনদেন বেড়েছে। আগের দিন ফ্লোর প্রাইসে এক হাজার ৭২৬টি শেয়ার লেনদেন হলেও এটি আজ হাতবদল হয়েছে দুই হাজার ৪০৬টি।
এপেক্স ট্যানারির দাম ফ্লোর প্রাইস ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে হয়েছে ১০৪ টাকা ৮০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইসের শেষ দিন ১০০টি শেয়ার হাতবদল হলেও মুক্ত হওয়ার পর হাতবদল হয়েছে দুই হাজার ২২৯টি।
সমতা লেদারের দর ফ্লোর প্রাইস ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে হয়েছে ১০৪ টাকা ৮০ পয়সা।
আগের দিন ফ্লোর প্রাইসে একটি শেয়ার লেনদেন হলেও এটি আজ হাতবদল হয়েছে ১৭টি।
এপেক্স ফুটওয়্যারের দর ফ্লোর প্রাইস ২১৯ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে হয়েছে ২১৫ টাকা।
এই কোম্পানির এটিরও লেনদেন কমেছে। আগের দিন তিন হাজার ৩৫১টি শেয়ার হাতবদল হলেও আজ হয়েছে দুই হাজার ৪৬৭টি।
আজিজ পাইপের দর ফ্লোর প্রাইস ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে হয়েছে ৯৫ টাকা ৬০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন ৭১০ শেয়ার হাতবদল হলেও মুক্ত হওয়ার পর লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৪৯৫টি।
ন্যাশনাল টিউবের দর ১০৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে হয়েছে ১০১ টাকা ১০ পয়সা।
আগের দিন ১৪১টি শেয়ার হাতবদল হলেও আজ লেনদেন হয়েছে ৭০৮টি।
ওরিয়ন ইনফিউশনের দর ৭২ টাকা ১০ পয়সা থকে ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৭০ টাকা ৭০ পয়সা।
এটির লেনদেনও কমেছে। ফ্লোরে থাকার শেষ দিন ১০ হাজার শেয়ার হাতবদল হলেও দর কমার দিন লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৩৭৪টি।
ন্যাশনাল পলিমারের দর ৫৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৫৫ টাকা ৫০ পয়সা।
লেনদেন কমেছে এটিরও। ফ্লোরে থাকার শেষ দিন হাতবদল হয়েছে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৩৫১টি। তবে আজ হাতবদল হয়েছে ৩৮ হাজার ১০৯টি।
জেমিনি সি ফুডের দর ফ্লোর প্রাইস ১৪৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে হয়েছে ১৪১ টাকা ৫০ পয়সা।
এটির লেনদেনও কমেছে। ফ্লোরে থাকার শেষ দিন ৭১৮টি শেয়ার হাতবদল হলেও দর কমার দিন লেনদেন হয়েছে ৪৪৭টি।
এসকে ট্রিমসের দর ৬২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ কমে হয়েছে ৬১ টাকা।
ফ্লোরের শেষ দিন একটি শেয়ারও লেনদেন না হওয়া কোম্পানিটির ১৬টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
লিগ্যাসি ফুটওয়ারের দর ৬২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯১ শতাংশ কমে হয়েছে ৬১ টাকা ৭০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন এটিরও কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি। তবে আজ হাতবদল হয়েছে আট হাজার ১১৯টি।
সিপার্লের দর ফ্লোর প্রাইস ৭৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ কমে হয়েছে ৭৭ টাকা ৭০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন এটিরও কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি। তবে আজ হাতবদল হয়েছে ১১টি।
হাক্কানি পাল্পের দর ফ্লোর প্রাইস ৭৪ টাকা থেকে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমে হয়েছে ৭২ টাকা ৬০ পয়সা।
এটির লেনদেনও কমেছে। ফ্লোরে থাকার শেষ দিন এক হাজার ১০১টি শেয়ার হাতবদল হলেও দর কমার দিন লেনদেন হয়েছে ২২টি।
ডেফোডিল কম্পিউটারের দর ফ্লোর প্রাইস ৫৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমে হয়েছে ৫২ টাকা ৪০ পয়সা।
এটির লেনদেনও কমেছে। ফ্লোরে থাকার শেষ দিন ২৯ হাজার ৯০টি শেয়ার হাতবদল হলেও দর কমার দিন লেনদেন হয়েছে ১৭ হাজার ২১টি।
একমাত্র শেয়ার হিসেবে এটলাসের দর সর্বনিম্ন সীমা থেকে কম কমেছে। কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস ছিল ১০৯ টাকা ৪০ পয়সা। দাম কমতে পারত ১০৭ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত। কিন্তু দিন শেষে দাম হয়েছে ১০৮ টাকা ৯০ পয়সা।
তবে এর লেনদেন হয়েছে ন্যূনতম। আগের দিন দুটি শেয়ার হাতবদল হওয়া কোম্পানিটির তিনটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে এটি।
‘দাম কমাই স্বাভাবিক’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধন গবেষণা কমর্কতা দেবব্রত সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এতদিন লেনদেন না হওয়ার কারণ কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস ছিল অতিমূল্যায়িত। এখন দর কমবে, বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনবে।’
আরও পড়ুন:আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের মর্যাদা, শ্রমের মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে শ্রমিকেরা যে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাদের সে আত্মত্যাগের সম্মানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে সকল গণমাধ্যম বিভিন্ন লেখা প্রকাশ ও অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
এবারের মহান মে দিবসের প্রতিপাদ্য-‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’।
মহান মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।
দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে শ্রমিক শ্রেণির মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে এই দিবসের তাৎপর্য ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর ফলে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় নেমে আসে আট ঘণ্টায়।
সারা বিশ্বের শ্রমিকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করেন। নিজেদের অধিকার আদায়ে সফল হয়েছেন। বিশ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় সামাজিক পরিবর্তনের নতুন অধ্যায়। মে দিবসের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়, তার ফলে ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করে সামাজিক শ্রেণি-বৈষম্য।
তবে শ্রেণি-বৈষম্য এখনও পুরোপুরি দূর না হলেও মে দিবসের সেই আত্মত্যাগ নিপীড়িত শ্রমজীবী মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে অনেকটাই মুক্ত করেছে।
এদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রম অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ণে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে। গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন শ্রম বিষয়ে অংশীজন ও বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন ২১ এপ্রিল তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করে তারা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম শাখার এক স্মারকে শ্রমিককে চাকুরিচ্যুতি, ছাঁটাই এবং মহান মে দিবসে কারখানা বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে :
গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আরএমজি বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (আরএমজি বিষয়ক টিসিসি) এর ২০তম সভার বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তসমূহ প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন করার জন্য নির্দেশক্রমে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়। সিদ্ধান্তসমূহ হচ্ছে- ‘যৌক্তিক কারণ এবং শ্রম আইনের প্রতিপালন ব্যতীত শ্রমিক চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করা যাবে না। এক্ষেত্রে শ্রমিক চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করার পূর্বে স্থানীয় প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্পাঞ্চল পুলিশ এবং বিজিএমইএ এর ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। শ্রম আইন মেনে শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করা না হলে-মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্মারকে বলা হয়, মহান মে দিবসে সকল কারখানা/প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কোন কারখানা কর্তৃপক্ষ মে দিবসে কারখানা খোলা রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শ্রম শাখার উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ স্মারক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম কমিয়েছে সরকার। সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে এক টাকা কমিয়ে আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নতুন এ দাম বুধবার দিনগত মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, ডিজেলের বিক্রয়মূল্য প্রতি লিটার ১০৫ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১০৪ টাকা, কেরোসিন ১০৫ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১০৪ টাকা এবং অকটেন ১২৬ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১২৫ টাকা, পেট্রোল ১২২ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১২১ টাকায় পুনঃনির্ধারণ/সমন্বয় করা হয়েছে। যা ১ মে ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমা-বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
এ জন্য ‘জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকা’র আলোকে মে মাসের জন্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিতে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে এক টাকা বাড়িয়ে বর্তমান দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ মূল্য মার্চ ও এপ্রিল মাসেও বহাল ছিল।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে একটি সিম্পোজিয়াম আয়োজন করছে বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম)। এতে অংশ নেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক ও গবেষকরা। আগামী শনিবার (৩ মে) বিকাল ৩টায় ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার অডিটরিয়ামে এই সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিজেআইএমের আহ্বায়ক স্যাম জাহান ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী মাজেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ আফটার দ্য মনসুন আপরাইজিং : দ্য মিডিয়া ল্যান্ডস্ক্যাপ’ শীর্ষক এই সিম্পোজিয়ামটি তিনটি সেশনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম সেশনে বিজেআইএম প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর অর্জনের একটি সারসংক্ষেপ ও পরিকল্পনার রূপরেখা উপস্থাপন করা হবে।
দ্বিতীয় সেশনে বিজেআইএমের একজন সদস্যের পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে একটি উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, রাজনীতি, কূটনীতি, ভবিষ্যৎ, আমলাতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে যে কোনো প্রশ্ন করা যাবে।
তৃতীয় সেশনে দেশের নেতৃত্বস্থানীয় সাংবাদিক, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনা হবে। এতে অংশ নেবেন- প্রথম আলোর ইংরেজি বিভাগের প্রধান আয়েশা কবির, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর প্রতিনিধি সেলিম সামাদ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রধান প্রতিবেদক আব্বাস উদ্দিন, ইরাবতী ইংরেজির প্রতিবেদক মুক্তাদির রশিদ, ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাইমা ইসলাম, বাংলাদেশ সরকার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান গবেষক এম আবুল কালাম আজাদ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওমর ফারুক।
সিম্পোজিয়ামে সাংবাদিক, গবেষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ সর্বসাধারণ মানুষের যে কেউ অংশ নিতে পারবে। তবে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় আগ্রহীদের দ্রুত নাম, বয়স, পেশা ও যোগাযোগ নম্বরসহ [email protected]এ প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে।
‘মানবিক করিডর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কক্সবাজার হয়ে জাতিসংঘের ‘মানবিক করিডর’-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, সরকার তথাকথিত মানবিক করিডর নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।”
শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের অবস্থান হলো, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে।’
তিনি জানান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে তীব্র মানবিক সংকট চলছে।
দুর্যোগকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশকে সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে মিয়ানমারকে সহায়তা প্রদান করা।
প্রেস সচিব সতর্ক করে বলেন, ‘এছাড়াও, আমরা উদ্বিগ্ন যে এ ধরনের মানবিক সংকট দীর্ঘ হলে রাখাইন থেকে আরও মানুষের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমরা সামাল দিতে পারব না।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বাস করে যে জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর বাস্তবসম্মত একমাত্র পথ হলো বাংলাদেশ।
শফিকুল আলম বলেন, এই রুট ব্যবহার করে সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে লজিস্টিক সহায়তা প্রদানে সম্মত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তবে, রাখাইনে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যথাসময়ে আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করব।’
বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিশ্বের বড় কোনো শক্তি এই করিডরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যে প্রতিবেদন করা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রপাগান্ডা বলে তিনি দাবি করেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘বিগত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে একের পর এক বিদ্বেষপূর্ণ বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে আমরা দেখেছি, যা এখনো চলছে। এ ধরণের প্রচারণাও তার ব্যতিক্রম নয়।’
আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করি যেখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি না রাখাটা আত্মঘাতী। এ মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমান বাহিনীর বীর উত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে ছিল বার্ষিক মহড়া। ‘আকাশ বিজয়’ নামে হয় এ বছরের বাৎসরিক মহড়া। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি যুদ্ধবিরোধী মানুষ। পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক এটা আমরা কামনা করি না। যুদ্ধ প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। কাজেই যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়েও একটা ঘোরতর আপত্তি। কিন্তু এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। তো সেখানে প্রস্তুতি না নিয়ে থাকা এটা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
‘কাজেই এই পরিস্থিতির মধ্যে যুদ্ধের প্রস্তুতি না নেয়াটা আত্মঘাতী। প্রস্তুতি নিতে হলে আধা-আধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’ বলেন তিনি।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে বিমান বাহিনী। সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তৎপর থাকতে হবে। দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আত্মনির্ভরতার প্রমাণ দিয়েছে বিমান বাহিনী। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য সরকার সহযোগিতা করছে বাহিনীটিকে। পেশাগত কারিগরি সক্ষমতা বজায় রাখতে হবে।
দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যুগোপযোগী বিমান বাহিনী গড়ে তুলতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, সকালে প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেয়া এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার বন্যাকবলিত পরিবারের মাঝে পুনর্বাসনকৃত ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়।
লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাকে আনতে বিএনপির অনুরোধে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরত আনতে বিএনপির পক্ষ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অনুরোধ নিয়ে কাজ করছে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত করা হচ্ছে। জানা যায়, খালেদা জিয়াকে লন্ডন থেকে দেশে ফেরাতে কাতারের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের আয়োজন করতে গত সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে চিঠি লিখেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, তবে ‘আশঙ্কামুক্ত’ নয়। তথাপি তিনি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দেশে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় চিকিৎসক বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে দেশে ফেরাতে পরামর্শ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিএনপির মহাসচিবের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লন্ডন ও দোহার বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফেরাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। কভিড-১৯ মহামারির সময় বিগত সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দীনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করেছেন খালেদা জিয়া। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাবন্দি অবস্থায় চারটি ঈদ কেটেছে কারাগারে ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
বর্তমানে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর সামরিক জবাবদিহির বিষয়ে সেনাবাহিনীকে ‘পদ্ধতি, লক্ষ্য ও সময় নির্ধারণে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে এনডিটিভি গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও প্রতিরক্ষাপ্রধান জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে বৈঠকে এই বার্তা দিয়েছেন মোদি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি আবারও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক জবাব দেওয়াই আমাদের জাতীয় সংকল্প’ এবং তিনি ভারতের সেনাবাহিনীর প্রতি ‘সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা’ রাখেন।
এই বৈঠকের কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও ভারতীয় জনতা পার্টির আদর্শিক অভিভাবক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভগবত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছন।
সূত্রের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের সবুজ সংকেত দিয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা হামলার পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। তখন ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ পরিচালিত প্রশিক্ষণশিবিরে নিখুঁত বিমান হামলা চালিয়েছিল।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিচালিত সেই শিবিরগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
ছয় বছর পর এই হামলার সঙ্গে আবারও পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তাদেরই ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
এদিকে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও বলেছে, প্রাপ্ত প্রমাণ আবারও পাকিস্তানকেই ইঙ্গিত করছে।
এই প্রমাণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপান ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের প্রতিনিধিদের দেখানো হয়েছে।
ভারত ইতোমধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রথম ধাপে নয়াদিল্লি পাকিস্তানিদের জন্য জারি করা ভিসা বাতিল করে দিয়েছে। তবে পাকিস্তানি হিন্দু ও দীর্ঘমেয়াদি অনুমোদনপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য নয়। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেওয়া ভিসাও বাতিল করা হয়েছে।
গত রোববার সব কার্যকর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে, বিশেষ করে বিখ্যাত আটারি-ওয়াঘা চেকপয়েন্টে পাকিস্তানি নাগরিকদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। সেদিন থেকে প্রায় এক হাজার পাকিস্তানি নাগরিক ভারত ছেড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ব্যক্তিগতভাবে রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও কূটনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ভারত ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দাস পানি চুক্তিও স্থগিত করেছে। এই পানি বণ্টন চুক্তির অধীনে পাকিস্তান তার প্রাপ্য মোট পানির প্রায় ৮৫ শতাংশ পেত। এই চুক্তি স্থগিত করাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদ ভারতের সব ভিসা বাতিল করেছে ও শত শত ভারতীয়কে বহিষ্কার করেছে। পাকিস্তান আরও কিছু দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, যেমন ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিও স্থগিত রেখেছে।
এরই মধ্যে পাকিস্তানের এক শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সম্ভাবনার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া এক মন্তব্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেন, আগামী কয়েক দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পেহেলগামে হামলা নিয়ে নিজের প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তার সরকার সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহ পরিকল্পনাকে সফল হতে দেবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘এবার সময় এসেছে সন্ত্রাসের আখ্যানের শেষ চিহ্নও মুছে ফেলার। ১৪০ কোটি মানুষের ইচ্ছাশক্তি সন্ত্রাসের প্রভুদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে।’
এরপর তিনি একাধিক শক্ত বার্তা দিয়েছেন, যাতে তিনি বলেন, ভারত সন্ত্রাসকে ভয় পায় না এবং এই ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনাকারীসহ প্রত্যেক জড়িত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
সূত্র: এনডিটিভি
মন্তব্য