বিমা খাতের অবিশ্বাস্য উত্থান থামছে না। বাজেট পেশের দিন এই খাতের শেয়ারের দর আরও বেড়েছে।
সাধারণ বিমা খাতের ৩৮টি কোম্পানির মধ্যে ১৩টির দাম বাড়ল এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততটাই। আরও ১৩টি কোম্পানির দাম একদিনে বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে কিছুটা নিচে নেমেছে অথবা সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি উঠে কিছুটা কমেছে। কেবল একটির দাম কমেছে শেয়ার প্রতি ৮০ পয়সা, যেটির দাম গত এক বছরে ২২ গুণেরও বেশি বেড়েছে।
গত এক বছর ধরেই বিমা খাতের শেয়ারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির প্রবণতা চলছে। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কিছুটা দর সংশোধন হলেও ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর থেকে আবার শুরু হয় উত্থান।
পুঁজিবাজারে সব সময় জীবন বিমা খাতের তুলনায় সাধারণ বিমার শেয়ারের দাম কম থাকলেও এখন উল্টো চিত্র। জীবন বিমার চেয়ে সাধারণ বিমার শেয়ারের দাম এখন বেশি।
কেবল বিমার শেয়ারের দাম বেড়েছে এমন নয়, সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ২০টি কোম্পানির আটটিই এই এক খাতের ছিল। মোট লেনদেনের তিন ভাগের এক ভাগ এই একটি খাতের।
বিমান এই অবিশ্বাস্য উত্থানে ভর করে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ল ৩৪ পয়েন্ট।
গত রোববার ডিএসইএক্স সোয়া তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ছয় হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছোঁয়ার পর দুই দিন নিচে নেমে আসার পর আবার দুই দিন ছয় হাজার পয়েন্টের ওপরে থাকল।
বিমায় ভর করে আগের দিনও সূচক বেড়েছিল ২৫ পয়েন্ট। আর আজ তা শেষ হয়েছে ছয় হাজার ১৯ পয়েন্ট। আর সপ্তাহ শেষ হলো ছয় হাজার ৫৩ পয়েন্টে।
সাধারণ বিমার এমন উত্থানের দিনে জীবন বিমাও যে পিছিয়ে ছিল এমন নয়। এই খাতের ১২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির। একটির দর কেবল রয়ে যায় অপরিবর্তিত।
সে তুলনায় আবারও দরে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ারে। এদিন তালিকাভুক্ত ৩১টি দর বেড়েছে চারটির। দর পাল্টায় ৬টির। বাকি ২০টি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে।
একই অবস্থা নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। এদিন তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে চারটির। দর পাল্টায়নি চারটির। বাকি ১৫টির দর কমেছে।
বিমায় আগ্রহ তুঙ্গে
দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধিতে ১৩টি কোম্পানির শেয়ারের ছিল না কোনো বিক্রেতা। যার সবগুলোর শেয়ার দর বেড়েছে ১০ শতাংশের আশেপাশে।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া বিমা কোম্পানির তালিকায় ছিল বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স-বিজিআইসি। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ারে দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ৮৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৮ টাকা ১০ পয়সা।
ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ৮৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫ টাকা।
পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ৪২ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬ টাকা ৪০ পয়সা।
গ্লোবার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৬৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৩ টাকা।
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৮৫ বেড়েছে, ইস্টাল্যান্ড ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ করে বেড়েছে।
৮০ পয়সা কমেছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের দর। এই কোম্পানির শেয়ার দর গত এক বছরে বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গত বছর সর্বনিম্ন ২০ টাকায় লেনদেন হওয়া কোম্পানির শেয়ার দর এখন ১৯৪ টাকা ৪০ পয়সা। এটি আবার ১৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়ের পর।
জীবন বিমার মধ্যে সন্ধানীর শেয়ার দর ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ, রূপালী লাইফের ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, প্রগতি লাইফের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
দর হারিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
টানা তিন কার্যদিবস সংশোধনের পর দিনের শুরুতে ব্যাংকের দর বাড়লেও পরে কমতে থাকে। দিন শেষে দিনের শুরু থেকে শেষের দর অনেক কমে যায়।
এই খাতে বেশি দর পতন হয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের, কমেছে ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। শেয়ার দর ১৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা।
ওয়ান ব্যাংকের ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ৩ দশমিক ২২ শতাংশ, যমুনা ব্যাংকের ৩ দশমিক ০৩ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ২ দশমিক ৭০ শতাংশ, এনআরবিসির ২ দশমিক ৪১ শতাংশ দাম কমেছে।
গত তিন দিনের ধারাবাহিকতায় এদিনও ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডাচবাংলার দর। ৩ শতাংশ ৮৪ শতাংশ বা তিন টাকা ২০ পয়সা বেড়েছে এই ব্যাংকের শেয়ার দর।
এর বাইরে এক্সিম ব্যাংকের ১০ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের ২০ পয়সা আর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের দর বেড়েছে ৩০ পয়সা।
একই পরিস্থিতি ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। চারটি কোম্পানির শেয়ার মূল্য বেড়েছে নগণ্য পরিমাণে; ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা।
অন্যদিকে যেগুলোর দর হারিয়েছে, সেগুলো পড়েছে আরও বেশি পরিমাণে।
ইউনাইটেড ফিন্যান্সের ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ফারইস্ট ফিন্যান্সের ২ দশমিক ৫০ শতাংশ, মাইডাস ফিন্যান্সের ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ফিনিক্স ফিন্যান্সের ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, প্রাইম ফিন্যান্সের দর কমেছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
সূচক ও লেনদেন
বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৪ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৩ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৩ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৮ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৩ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে মোট ২ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। লেনদেন কমেছে ১০২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ১০০ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, ‘তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করেছিল। আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শনিবার জাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে।
‘নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেয়া হয়েছিল। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কী না সন্দেহ ছিল। তাই নির্বাচনে গিয়েছি।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিল।
‘আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল, তারা সফল হবে না। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে- এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বিএনপি এক কিংবা ১০ লাখ বা এক কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও তাদের আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসেবে দেখতে চায়। তবে তা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল ছিল না এবং আমরা গৃহপালিত বিরোধী দল হতে রাজি নই।’
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
চলমান তাপপ্রবাহে সারা দেশের সঙ্গে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাও। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ নগর জীবন। এ অবস্থায় রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে পানি ছিটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বায়ু দূষণ রোধ ও তীব্র দাবদাহে শহরকে ঠাণ্ডা রাখতে ডিএনসিসির ওয়াটার স্প্রে (পানি ছিটানো) কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘দুটি স্প্রে ক্যানন প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠাণ্ডা রাখা হবে।
‘এছাড়াও ডিএনসিসির পার্কগুলোতে স্প্রে ক্যাননের মতো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে পার্কগুলোতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে চলমান তীব্র দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে সড়কে পানি ছিটানো এবং ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সংবলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করতে পারে।’
চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। তিনি তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কাজগুলো আমাদের সবাইকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন যে চিফ হিট অফিসার সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন। বাস্তবে সিটি করপোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি করপোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই।
‘হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে সাতজন চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করেছে এবং তারা সবাই নারী।’
ওয়াটার স্প্রে পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর বনানীতে মাঝ সড়কে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপনে কাজ করে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, বিকেল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসটি বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসটি অনেক দূর নিয়ে আসে। এতে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতেও আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
মন্তব্য