করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে। অস্বাভাবিক বিক্রি বাড়ায় এই রেকর্ড গড়ছে ‘সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবে পরিচিত এই খাতে বিনিয়োগ। আর এতে বাড়ছে সরকারের ঋণের বোঝা।
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট ৮৬ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই ৯ মাসে এত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি।
৯ মাসের বিক্রির এই অঙ্ক ২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুন-জুলাই) চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি।
শুধু তা-ই নয়, একক মাস হিসাবেও সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে গত মার্চ মাসে। এই মাসে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর আগে কখনো এক মাসে এত বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেননি ক্রেতারা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বুধবার সঞ্চয়পত্র বিক্রির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত) ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে।
এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকা।
মার্চে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৬ হাজার ৮৭১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা মহামারিতে মানুষের আয় কমে গেছে। তা ছাড়া মুনাফার ওপর করের হার বৃদ্ধি এবং নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কেন এই উল্লম্ফন- অর্থনীতিবিদরা তার সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে। আমার কাছে এটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এই মহাসংকটের সময়ে কেন বাড়ছে, তা আমি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি না।
‘মহামারিতে মানুষের আয়-উপার্জন কমে গেছে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। এর মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সত্যিই বিস্ময়কর।’
সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ায় সরকারের জন্য একটি বিপদ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিক্রির এই উল্লম্ফনের ফলে সরকারকে গ্রাহকদের প্রচুর সুদ দিতে হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা। এই “বোঝা” কমাতে সরকার নানা সময়ে নানা উদ্যোগ ও কড়াকড়ি আরোপ করলেও সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।’
জায়েদ বখত বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে একটি মত আছে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। এটি কমানো ছাড়া বিক্রি কমানো যাবে না। পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য সব সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখনই কমানো উচিত বলে আমি মনে করি। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কোনোভাবেই কমানো যাবে না।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে মানুষ টাকা পাচ্ছে কোথায়? বুঝতে পারছি না।’
তবে এর দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন মনসুর। বলেন, প্রথমত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের একটি অংশ দিয়ে মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনছে। আগেও কিনত। তবে এখন রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় এই অঙ্ক বেড়েছে। এ ছাড়া অন্য যেকোনো সঞ্চয় প্রকল্পের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার যেহেতু বেশি, সবাই এখানেই বিনিয়োগ করছে।
সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার এখন জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করেছে। তা ছাড়া ব্যাংক হিসাব ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না।
এখন আর কেউ ভুয়া নামে বা একই ব্যক্তি বিভিন্ন নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম; ৩ থেকে ৫ শতাংশের মতো। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদ মিলছে ১১ থেকে ১২ শতাংশ।
পুঁজিবাজারে কিছুদিন ধরে তেজিভাব দেখা দিলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি।
সব মিলিয়ে বেশি মুনাফার কারণেই সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করেন আহসান মনসুর ও জায়েদ বখত।
বিক্রির চাপ কমাতে গত বছরের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ফলে কমতে শুরু করে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি।
কিন্তু এই অর্থবছরের শুরু থেকেই তা আবার বাড়ছে তো বাড়ছেই।
বিক্রি কমাতে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ নামের একটি সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার।
এখন থেকে কোনো ব্যাংকের শাখা বা ডাকঘর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ কেনা যাবে না। শুধু জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরো থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। তার আগের অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৩৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার; যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি।
আহসান মনসুর বলেন, বিক্রি যেভাবে বাড়ছে, এটা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে এবার মোট বিক্রি ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৮ হাজার ৭০৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আগস্টে বিক্রি হয় ৮ হাজার ৮৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ১০ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬২ লাখ টাকায় ওঠে।
এর পরের তিন মাস অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বিক্রি হয় যথাক্রমে ৯ হাজার ২৪৯ কোটি ৮৬ লাখ, ৯ হাজার ৫৪৭ কোটি ৬২ লাখ এবং ৮ হাজার ২৩৩ কোটি ১৭ লাখ টাকার।
জানুয়ারিতে বিক্রি হয় ১০ হাজার ৬৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, এক মাসের হিসাবে যা ছিল এত দিন সবচেয়ে বেশি বিক্রি।
ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হয় ৯ হাজার ৬০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। সর্বশেষ মার্চে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় উঠেছে।
লক্ষ্যের ৬৫ শতাংশ বেশি ঋণ
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের এই ৯ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়ে ১২৯ শতাংশ বেশি। আর বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে বেশি ৬৫ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
সঞ্চয় অধিদপ্তর ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মোট লক্ষ্য ধরেছে ৮৬ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার। এর মধ্যে সুদ-আসল বাবদ শোধ করতে হবে ৬৬ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার এই ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেবে।
হিসাব-নিকাশ করে দেখা যাচ্ছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার ৬৫ শতাংশ ঋণ ৯ মাসেই নিয়ে ফেলেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। বিক্রি কমায় বছরের মাঝামাঝিতে এসে সেই লক্ষ্য কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
কিন্তু গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে হঠাৎ করেই বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অর্থবছর শেষে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে।
কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা বাংলাদেশে লাগতে শুরু করার পর গত বছরের এপ্রিলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি তলানিতে নেমে আসে। ওই মাসে মোট ৬৬১ কোটি ৭৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। সুদ-আসল বাবদ শোধ করা হয় তার প্রায় দ্বিগুণ ১ হাজার ২৮৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। নিট বিক্রি ছিল ৬২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ঋণাত্মক (-)।
অর্থাৎ এপ্রিল মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল তার থেকে ৬২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বেশি গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদে শোধ করা হয়েছিল।
মে মাসে ৩ হাজার ২২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ শোধ করা হয় ২ হাজার ৭৯৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৩০ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
জুনে মোট বিক্রি মে মাসের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেড়ে ৯ হাজার ৩২২ কোটি ৮০ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
বর্তমানে দেশে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র প্রচলিত আছে। এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
২০১৫ সালের ২৩ মে থেকে এ হার কার্যকর রয়েছে। তার আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।
আরও পড়ুন:অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরীক্ষক এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যখন একটি দেশের ব্যবসা পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পান, তখন তারা সেই অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।’
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং সামিট’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংক এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শাসনে এফআরসি’র ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সৌলেমানে কুলিবালি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, দেশীয় ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা প্রতিবেদন স্বচ্ছভাবে এবং যথাযথ তথ্যসহ উপস্থাপন করা উচিত।
তিনি বলেন, একটি সুদৃঢ়, সহনশীল ও ভবিষ্যতমুখী আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব ব্যাংকে রিস্ক-বেসড সুপারভিশন (আরবিএস) চালু করা হবে।
মূল প্রবন্ধে এফআরসি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ যখন একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল একটি সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করছে যা আর্থিক প্রতিবেদন, নিরীক্ষা, মূল্যায়ন এবং সঠিক মানদণ্ডে সততা, শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।’
তিনি আরও বলেন, এফআরসি চায় সব পক্ষ যেন পূর্ণ প্রকাশসহ সত্য আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে, যাতে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকৃত ও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব—আয়কর ও ভ্যাট—সংগ্রহ করতে পারে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ভুয়া বা মিথ্যা আর্থিক প্রতিবেদনই কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর প্রধান হাতিয়ার।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ব বাণিজ্য প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন (আঙ্কটাড) অর্থনীতিবিদ আলেসান্দ্রো নিকিতা এএফপিকে জানিয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধ সত্ত্বেও ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রায় ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে ‘নীতিগত অনিশ্চয়তা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হ্রাসের ইঙ্গিত, এইসব বিষয় ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাণিজ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে ওই বিবৃতিতে জানিয়েছে আঙ্কটাড।
নিকিতা বলেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো ৫ এপ্রিল শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে পণ্যের মজুত করে ফেলায় আমদানির বড় এই বৃদ্ধিটি ঘটেছে।
আঙ্কটাডর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেবা বাণিজ্যই ছিল প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রায় ১.৫ শতাংশ বেড়েছে এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা ২ শতাংশে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে উন্নত অর্থনীতি উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভালো করেছে। যা সাম্প্রতিক সময়ে গ্লোবাল সাউথের পক্ষে থাকা প্রবণতাকে উল্টে দিয়েছে।’
এই পরিবর্তনের পেছনে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানিতে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি ভূমিকা রেখেছে।’ তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আমদানি দুই শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ট্রাম্প তার ব্যাপক শুল্ক আরোপের কারণ হিসাবে যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা উল্লেখ করেছেন, তা ‘গত চার প্রান্তিকে আরও গভীর হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তর ঘাটতি রয়েছে এবং চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রমবর্ধমান উদ্বৃত্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক বাণিজ্য বিভাজনের ঝুঁকি বাড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে আঙ্কটাড জানিয়েছে এখনও স্থিতিস্থাপকতার লক্ষণ রয়ে গেছে। যদিও তা ‘নীতিগত স্পষ্টতা, ভূ-অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সরবরাহ লাইনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে।
হঠাৎ করে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একগুচ্ছ ‘শুল্ক চিঠি’ প্রকাশ করে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (০৭ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুরে প্রকাশিত এসব চিঠিতে জানানো হয়, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে।
চিঠি প্রকাশের পরপরই এর প্রভাব পড়ে বিশ্ববাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে দেখা দেয় বড় ধস। ডাও জোন্স সূচক পড়ে যায় ৪২২ পয়েন্ট, আর নাসডাক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক যথাক্রমে ০.৯ শতাংশ ও ০.৮ শতাংশ কমে যায়।
বিশ্ববাজারেও এর প্রভাব পড়ে। টয়োটা, নিসান, হোন্ডা, এলজি ও এসকে টেলিকম-এর মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম তাৎক্ষণিকভাবে কমে যায়। কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার ৭ শতাংশ পর্যন্ত দরপতনের মুখে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ কৌশলবিদ রস মেফিল্ড সিএনএনকে বলেন, প্রস্তাবিত শুল্কের হার বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।
শুল্ক ঘোষণার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের বাজারেও চাপ পড়ে। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়ায়।
ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ব্রিকস জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর ওপরও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তার দাবি, এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণ করছে এবং তার শুল্কনীতির অযৌক্তিক সমালোচনা করছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইউএস ডলার ইনডেক্স বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এর ফলে জাপানি ইয়েন, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকান র্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি প্রধান মুদ্রা ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ে।
তবে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে এশিয়ার কিছু শেয়ারবাজারে সাময়িক চাঙাভাব দেখা গেছে, এবং সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও কিছুটা উত্থান দেখা দিতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি শুধু বাণিজ্য সম্পর্কেই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির ভারসাম্যেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা নিষ্পত্তিহীন পণ্য দ্রুত নিলাম, বিলিবন্দেজ বা ধ্বংসের মাধ্যমে সরানোর জন্য একটি ‘নিলাম কমিটি’ গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষ আদেশে গঠিত এ কমিটি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত যানবাহন ব্যতীত ফেলে রাখা সব পণ্য নিষ্পত্তির মাধ্যমে সরিয়ে ইয়ার্ড খালি করবে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ শফিউদ্দিন এক অফিস আদেশে জানান, নিলাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞা। সদস্য হিসেবে রয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মো. রুহুল আমিনসহ কাস্টম হাউসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন নিলাম শাখার উপ বা সহকারী কমিশনার।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, কাস্টমস আইন মেনে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা অখালাসকৃত, বাজেয়াপ্ত অথবা অনিষ্পন্ন পণ্য দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়রোধই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। এই কমিটি দ্রুত নিলাম ও ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কন্টেইনার জট নিরসন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পণ্যের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শেয়ারট্রিপ ও মনিটরের যৌথ উদ্যোগে এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার-২০২৪ শীর্ষক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদকসহ মোট ৫ টি পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক পথে ফ্লাইট পরিচালনা, ইকোনমি ক্লাসে শ্রেষ্ঠ ইনফ্লাইট খাবার, বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ব্র্যান্ডস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদক পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়াও বেস্ট ইম্প্রুভড এয়ারলাইন্স ও অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইট পরিচালনায় যথাক্রমে সিলভার ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। এর আগে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছিলেন তিনি, সেই তুলনায় এবার ২ শতাংশ কম। তবে রপ্তানি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের তুলনায় এটি অনেক বেশি। কারণ ভিয়েতনামের পণ্যে এই শুল্কারোপ হয়েছে ২০ শতাংশ।
স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) নিজের ট্রুথ সোশ্যালে এই ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৩৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এ সম্পর্কিত একটি চিঠিও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। একই ধরনের চিঠি তিনি অন্যান্য দেশের নেতাদের কাছেও তিনি পাঠিয়েছেন, যেখানে তাদের জন্য নির্ধারিত শুল্কহার উল্লেখ ছিল।
আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা ওই চিঠি থেকেই জানা গেছে।
এর আগে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন আগ্রাসী এই শুল্কহার কার্যকর করার আগে সময় দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। এরপর বাড়তি এই শুল্ক কার্যকরের আগে তিন মাস সময় দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই তিন মাসের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে সোমবার তা আরও বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত করেছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যে শুল্ক হবে ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার পণ্যে ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় ৩০ শতাংশ এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার পণ্যে বসবে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক। এ ছাড়াও আরও কিছু চিঠি আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
যেসব দেশের ওপর শুল্কারোপ করেছেন, যদি এই দেশগুলো তাদের পক্ষ থেকে পাল্টা শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর আরও শুল্ক চাপাবে বলেও সতর্ক করেছেন ট্রাম্প।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যদি কোনো কারণে আপনি আপনার শুল্ক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আপনি যে পরিমাণ শুল্ক বাড়াবেন, তা আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ওপর যোগ করা হবে।’
অন্যদিকে, বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল শেষ মুহূর্তের আলোচনা চালিয়ে যেতে এখনও ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। তবে আপাতত ট্রাম্পের ঘোষণা চূড়ান্ত বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
যদিও চিঠিতে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমালে বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করা যেতে পারে। চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি।’
ট্রাম্প তার চিরাচরিত কৌশলেই চিঠিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে পরে সেগুলো ডাকযোগে পাঠাবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এই চিঠিগুলো কোনো পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি নয়, বরং ট্রাম্প নিজেই এসব শুল্কহার নির্ধারণ করেছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি বলে এপির প্রতিবদেনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এপির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গেই পূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের সঙ্গে আংশিক চুক্তি হয়েছে, আর ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি শিগগিরই হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সরাসরি প্রতিযোগী এই দুই দেশ।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, নতুন চুক্তি অনুযায়ী ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা এর আগে ঘোষিত ৪৬ শতাংশ থেকে অনেক কম। এই ২০ শতাংশ শুল্ক আগামী ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
ভিয়েতনাম তাদের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— এ কারণেই এই দেশটির ওপর কম শুল্কারোপ করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে সরকারি হিসাবমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্য থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বাংলাদেশ।
শুল্ক বা ট্যারিফ হলো আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত কর, যা আমদানিকারককে দিতে হয়। এতে বিদেশি পণ্যের দাম বাড়ে, ফলে সেগুলো স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, যদি আমদানিকারকরা বাড়তি শুল্ক দিতে না চান, তবে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের বাধ্য হয়ে দাম কমাতে হতে পারে।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ।
জুলাই মাসের প্রথম ৬ দিনে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে ১৫.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) সোমবার (০৭ জুলাই) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত বছরের একই সময়ে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ৩৭১ মিলিয়ন ডলার।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ।
এটি পূর্ববর্তী অর্থবছরের (অর্থবছর ২০২৩-২৪) প্রাপ্ত ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৬.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্তব্য