গত এক দশকে ভারতের সঙ্গে করা একাধিক চুক্তিতে বাংলাদেশের ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত মিলেছে কেবল ৭৩ কোটি ডলার।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে আরও বেশি অর্থ ছাড়ের আশা করছে ঢাকা।
দুই দিনের সফরে শুক্রবার ঢাকায় আসছেন মোদি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু দেশটির সরকারপ্রধানের সফরের প্রধান উপলক্ষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে রাষ্ট্রীয় আয়োজন। তবে এর বাইরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত ও দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও হবে। সেখানে নতুন সমঝোতার পাশাপাশি আগের করা চুক্তি ও সমঝোতা নিয়েও আলোচনা হবে।
গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পেও ভারত বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সড়ক, রেল, নৌ-যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতের অবকাঠামোখাতে প্রায় তিন ডজন প্রকল্প দেশটির ঋণে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় প্রথম চুক্তি হয়েছিল প্রায় এক যুগ আগে।
২০১০ সালে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়। পরে এর মধ্যে কিছু অংশ ভারত অনুদান হিসেবে ঘোষণার পর ঋণ দাঁড়ায় ৮৬ কোটি ডলার।
২০১৫ সালের দ্বিতীয়বার আরও ২০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয়।
সবশেষ ২০১৭ সালের ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয়।
সব মিলিয়ে ভারতের ঋণ ৭৩৬ কোটি ডলার, দেশি মুদ্রায় যা পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ইআরডির সর্বশেষ হিসাব বলছে, বড় অঙ্কের ঋণের বিপরীতে সে হারে অর্থছাড় হয়নি। প্রথম এলওসির প্রায় ১০ বছর পার হলেও পুরো টাকা এখনো মেলেনি, ছাড় হয়েছে প্রায় ৬৩ কোটি ডলার।
পাঁচ বছর আগের দ্বিতীয় এলওসির বিপরীতে সাড়ে ৯ কোটি ডলার এবং প্রায় সাড়ে তিন বছরে তৃতীয় এলওসির বিপরীতে ৬৪ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে। মোট ছাড় হয়েছে প্রায় ৭৩ কোটি ডলার। যা মোট ঋণের ১০ শতাংশ।
মোদির এবার ঢাকা সফরে দুটি প্রকল্পে নতুন করে ৩০ কোটি টাকা অনুদান দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে এখন পর্যন্ত।
তবে এলওসির আওতায় অর্থছাড় ও প্রকল্পে গতি আসবে বলেই আশা করছে সরকার।
সরকারের অথনৈতিক সম্পক বিভাগ, ইআরডির একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেছেন, মোদির সফর সামনে রেখে তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন, যেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তথ্য চাওয়া হলে যথাসময়ে তা সরবরাহ করা যায়। সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য হালনাগাদ করে রাখা হয়েছে।
ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে তিনটি এলওসি সাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম এলওসির আওতায় নেয়া প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাকি দ্বিতীয় ও তৃতীয় আওতাধীন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
‘আশা করি, সামনের দিনগুলোতে এ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড়ে আরও গতি আসবে। একই সঙ্গে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নেও দ্রুতগতি পাবে ‘
কত প্রকল্প
ভারতের টাকায় প্রথম এলওসিতে ১৫টি, দ্বিতীয়টিতে ১৫টি এবং তৃতীয় এলওসির আওতায় ১৬টি প্রকল্প মিলে দিন এলওসির আওতায় মোট ৪৬ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।
এর মধ্যে এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে প্রথম এলওসির আওতায় ১৪টি প্রকল্পের। আটটির কাজ চলমান। বাকিগুলোর কাজ এখনও শুরু হয়নি।
শেষ হওয়া প্রকল্পের মধ্যে ১২টি প্রথম এলওসির এবং দুটি দ্বিতীয় এলওসির। সাতটি প্রকল্পের দরপত্রসংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান এবং আটটি প্রকল্পের ডিপিপি (প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরির কাজ চলছে।
এলওসির আওতায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার কাজ চলমান রয়েছে।
ইআরডির প্রস্তুতি
মোদির সফরে ভারতীয় ঋণের প্রকল্পের বিষয়ে বৈঠক নির্ধারিত না হলেও ইআরডি সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে যেন, অনির্ধারিত বৈঠক হলেও ভারতীয় ঋণের (এলওসি) প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরা যায়।
ইআরডির পর্যালোচন সভার সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
ইআরডি বলছে, এলওসির প্রকল্পের গাতি বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, ইআরডি ও ভারতীয় হাইকমিশন প্রকল্পগুলোকে মনিটরিং করছে। প্রকল্পের অগ্রগতি আনতে ইআরডি সচিব ও ভারতীয় হাইকমিশনারকে প্রধান করে হাই লেভেল কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
অর্থছাড়ে গতি বেড়েছে
গত কয়েক বছরে ভারতীয় ঋণের অর্থছাড় কিছুটা বেড়েছে।
২০১১-১২ অর্থবছরে ১.২৯ কোটি ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭.৫৩ কোটি ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭.৩৩ কোটি ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪.৩৯ কোটি ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮.৪৭ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪.৭ কোটি ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩.৭৭ কোটি ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩.৬৫ কোটি ডলার অর্থছাড় করেছে ভারত।
প্রথম ধাপে ৮০ কোটি ডলারের মধ্যে অর্থছাড় হয়েছে ৬৩ দশমিক ৪ কোটি ডলার বা ৭৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
কেন বিলম্ব
এলওসির আওতায় অর্থছাড়ের বিলম্বেও কারণ সম্পর্কে ইআরডি বলছে, সাধারণত বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো উন্নয়ন সহযোগীরা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির পর বাংলাদেশের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি ভিন্ন।
দেশটি প্রথমে ঠিক করে কোন কোনো প্রকল্পে তারা ঋণ দেবে। সেই প্রকল্পগুলোর বিষয়ে ঋণচুক্তি সই করার পর তারা কাজ শুরু করে। চুক্তির পর তারা ডিপিপি তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজ করে।
স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার তুলনায় চুক্তি সইয়ের পর দু-তিন বছর বেশি সময় লাগে।
প্রথম দুই এলওসির পর তৃতীয় এলওসি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। প্রথম এলওসির ঋণের পর দ্বিতীয় ঋণের অর্থছাড় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবার তৃতীয় ঋণের আওতায় মোট ১৬ প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি প্রকল্প এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুমোদন দিয়েছে।
সামনে তিনটা প্রকল্পের টেন্ডার হবে। ফলে ২০২১ সালের মার্চ থেকে তৃতীয় ঋণে ভারত অর্থছাড় বাড়ার আশা করছে ইআরডি।
৩০ কোটি টাকার অনুদান
শুক্রবার শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দুই প্রকল্পের বিপরীতে ৩০ কোটি টাকার অনুদান চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়ছে।
‘এস্টাবলিশমেন্ট অব স্পোর্টস ফ্যাসিলিটিজ অ্যান্ড রাজশাহী কলেজ ফিল্ড সারাউন্ডিংস এরিয়া’ প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি ৯৩ লাখ অনুদান দেবে ভারত।
প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী কলেজে খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক ও গেম বিল্ডিং এবং সুইমিং পুল নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এম্পলয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার’ নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ২৫ কোটি টাকার অনুদান পাওয়া যাবে।
প্রকল্পের আওতায় আইসিটি ট্রেনিং ইক্যুইপমেন্ট দেবে ভারত। এ জন্য প্রকল্পের আওতায় সরকারের সেবাগুলোকে ই-সেবায় রূপান্তরের মাধ্যমে জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দেয়া এবং সব ক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার বৃদ্ধিকল্পে প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো স্থাপন করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।
আরও পড়ুন:বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি কোনো বিভাজনের রাজনীতি করে না। বিএনপি সব ধর্মের মানুষ, বর্ণের মানুষকে নিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে কোনো বিভাজন করা যাবে না।
গতকাল শনিবার জেএমসেন হলে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ধর্ম সম্মেলন ও সাধু সন্ত ঋষি বৈষ্ণব মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান মানলে অবশ্যই অসাম্প্রদায়িক হতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা পুরোপুরি বলা আছে। সুতরাং অসাম্প্রদায়িক মুখে নয়, প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক হলে দেশে কোনো হানাহানি থাকবে না। একইভাবে সংখ্যালঘু শব্দও আমি মানি না। সংখ্যালঘু বলতে কোনো শব্দ নেই। আমরা সবাই বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি হিসেবে সবার অধিকার নিশ্চিত করা যেকোনো সরকারের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে আমরা একটা জাতি, একটা দেশ, একটা সমাজ। যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে তারা বারবার ধ্বংস হয়েছে, আবার বারবার নতুনভাবে শুরু করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এ দেশের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িকতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। আজকের বাংলাদেশে আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে সবাই। মানুষের মধ্যে অনেক দাবি সৃষ্টি হয়েছে, অনেক প্রত্যাশা জাগ্রত হয়েছে।
“যদি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হয় তবে কোনো বিভাজন করা যাবে না। দেশে সবার ধর্ম থাকবে, সংস্কৃতি থাকবে। সবাই তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করবে। এটার সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সংঘর্ষ থাকতে পারে না। জাতি হিসেবে, রাজনীতিবিদ হিসেবে আমাদের সহনশীল হতে হবে। ধর্ম যেমন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন হয় রাজনৈতিক মতভেদও ভিন্ন ভিন্ন হবে। কিন্তু দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সবাইকে এক হতে হবে।
শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন আর কে দাশ রুপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করেন বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত শ্রীমৎ স্বামী সচিদানন্দ পুরি মহারাজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে পার্থ।
মাচার ওপরে সবুজ পাতা। নিচে ঝুলে আছে কালো রঙের তরমুজ। গাছ থেকে ছিঁড়ে না পড়ে সেজন্য প্রতিটি তরমুজে দেওয়া হয়েছে জালি। এমন দৃশ্য নওগাঁর পত্নীতলা, মহাদেবপুর, রাণীনগর ও সদর উপজেলার মাঠে মাঠে। এসব জমিতে আগে পটল ও করলা চাষ করলেও এখন বর্ষা মৌসুমে 'মার্সেলো’ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন চাষিরা।
মাচায় ও মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড মার্সেলো জাতের তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন নওগাঁর চাষিরা। এই পদ্ধতিতে চাষ করা তরমুজের অধিক ফলনে তারা খুশি।
জানা গেছে, এসব তরমুজ অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি। সঙ্গে লাভও বেশি। লম্বাটে ডিম্বাকৃতির এই তরমুজের ভেতরের অংশ গাঢ় লাল রঙের। মার্সেলো জাতের প্রতিটি তরমুজের ওজন হয়ে থাকে ৩-৫ কেজি। আর প্রতি বিঘায় দেড় থেকে দুই হাজারটি তরমুজ পাওয়া যায়।
এছাড়া মার্সেলো জাতের এই তরমুজ উচ্চমাত্রায় ভাইরাস সহনশীল। প্রতিদিনই আগ্রহী চাষিরা বর্ষাকালীন তরমুজের ক্ষেত দেখতে ভিড় করছেন জমিতে। গত জুন মাসে তরমুজের চারা রোপণ করা হয়েছে। গাছ লাগানোর ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে ফল উঠানো যায়।
রাণীনগরের মার্সেলো তরমুজ চাষি নিরাঞ্জন চন্দ্র প্রামানিক জানান, তিনি প্রতিবছর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে নতুন নতুন ফসল চাষ করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ২৫ শতক জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই বিষমুক্ত মার্সেলো তরমুজ চাষ করেছেন। বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। কম পরিশ্রমে ভালো দাম পেয়ে খুশি তিনি।
তিনি বলেন, আমরা জানি তরমুজ চাষ হয়ে থাকে গ্রীষ্মকালে। কিন্তু আমাদের এ বরেন্দ্র জেলায় বর্ষাকালে তরমুজের চাষ করা দেখে প্রতিদিন তার তরমুজের ক্ষেত দেখতে ও পরামর্শ নিতে আসছেন নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা। তাদের পরামর্শসহ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা কামাল মাহমুদ শিপন বলেন, নিরাঞ্জন দাদার তরমুজের ক্ষেত দেখে খুবই ভালো লাগছে। তার সঙ্গে অনেক কথা হলো এই তরমুজের বিষয়ে। খেয়ে দেখলাম খুব সুস্বাদু ও মিষ্টি। আগামী বছর দুই বিঘা জমিতে এই তরমুজ চাষ করবো আশা করি।
উপজেলার কাশিমপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের দম্পতি আলেক বেগ ও কুলসুম বানু বলেন, আগে আমরা বাজার থেকে তরমুজ কিনে আনতাম। এখন দেখি গ্রীষ্মকালের তরমুজ বর্ষাকালে ধরেছে থোকায় থোকায়। অবাক করা বিষয়। খুব সুন্দর লাগছে দেখে। দুটি তরমুজ কিনলাম ৫০ টাকা কেজি দরে। দুটি তরমুজের ওজন ৮ কেজি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষমুক্ত তরমুজ চাষ করতে মাচায় ও মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল মার্সেলো জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে জেলার ৪টি উপজেলায়। ভেতরে গাঢ় লাল রঙের এ তরমুজের স্বাদ খুব ভালো। কম খরচের পাশাপাশি বর্ষাকালে এই তরমুজ চাষ হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই কৃষকরা বর্ষাকালীন তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাদের আরও উৎসাহ দিতে আমরা কাজ করছি। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। সূত্র: বাসস
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দুদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে দেশীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা করে। সরবরাহের এমন ধারা অব্যাহত থাকলে ও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বাড়লে দাম আরো কমবে বলে দাবি বিক্রেতাদের। এদিকে পেঁয়াজের দাম কমায় খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ।
সরেজমিন হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতিটি দোকানেই আগের তুলনায় দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। সেই সঙ্গে দাম পূর্বের তুলনায় কমতির দিকে রয়েছে। দুদিন পূর্বে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে আগের তুলনায় ক্রেতা সমাগম বেশি, এছাড়া ক্রেতারা পরিমাণে বেশিও কিনছেন।
হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা হায়দায় আলী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। ৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ দাম বাড়তে বাড়তে ৭৫ টাকা কেজিতে উঠে যায়। পেঁয়াজ খুবই জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় হওয়ায় বাধ্য হয়ে এক কেজির জায়গায় হাফ কেজি কিনছিলাম। তবে দুদিন ধরে পেঁয়াজের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে, বর্তমানে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় নেমেছে। হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল হাসনাত বলেন, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ থাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই দাম স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। এতে মোকামে প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ছিল। আর তাই বাজারেও পণ্যটির দাম বাড়ছিল। দাম নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার সোনা মসজিদ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। রোববার থেকে হিলিসহ দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে। এমন খবরে মোকামে যারা দেশীয় পেয়াজ মজুদ করছিল তারা সেসব পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে। এতে সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। দু'দিন আগেও যেখানে মোকামে প্রতি মণ পেঁয়াজ আমাদের কিনতে হয়েছিল ৩ হাজার ২শ টাকা সেটি এখন কমে ২ হাজার ২শ টাকা হয়েছে। আমদানির খবরেই পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ১ হাজার টাকা করে। কমে গেছে। কম দামে কিনতে পারায় আমরাও এখন কম দামে বাজারে বিক্রি করতে পারছি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, কেউ যাতে কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়াতে না পারেন সেজন্য আমরা নিয়মিতভাবে বাজারগুলোয় অভিযান পরিচালনা করছি। তারা কী দামে পণ্য কিনছেন কী দামে বিক্রি করছেন সে সম্পর্কিত তথ্য যাচাইবাছাই করছি। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে।
দেশে প্রতিদিন প্রায় ছয় কোটি ডিম উৎপাদন হলেও তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
পুষ্টি নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে মাথাপিছু গড় মাংস খেতে পারে মাত্র ২০০ গ্রাম। এখনো বহু পরিবার আছে যারা সপ্তাহে বা মাসে একদিন মাংস খায়।”
গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলে নবনির্মিত ছয় তলা একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন ও এসএসসি-২০২৫ সালের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে
বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম আমাদের পুষ্টির উৎস। তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি পুষ্টির দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।'
তিনি বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বহু তরুণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছেন। অনেকে হাত-পা-চোখ হারিয়ে আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের ত্যাগকে স্মরণ রেখে এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষের অধিকার কখনো ক্ষুণ্ণ হবে না।'
তিনি বলেন, “বেগম রোকেয়া মুসলিম মেয়েদের জন্য স্বাধীন পরিবেশ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হতো। কেবল বই পড়া দিয়ে সবকিছু জানা সম্ভব নয়, কারণ ইতিহাস বারবার বিকৃত হয়েছে। তাই শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে দেশ ও জাতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।”
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, 'স্কুলের ভেতরে ও বাইরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ইভটিজিংয়ের কারণে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—নতুন বাংলাদেশে এটা হতে দেওয়া যাবে না।
পরিবেশ সুরক্ষায় শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কুল ও এলাকায় পরিবেশ রক্ষায় কার্যক্রম চালাতে হবে। পাশাপাশি পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে। কারণ এগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।'
নারী শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'নারী নির্যাতন আইন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজকে একসঙ্গে সচেতন হতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আজ পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আংশিকভাবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরুর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিকী।
রবিবার দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দর পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান তিনি।
চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিকী বলেন, 'আমরা আজকে বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল ও সাগরের বুকে নির্মিত হওয়া রানওয়ের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছি। তাতে মনে হয়েছে আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আংশিকভাবে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, 'কত শতাংশ কাজ শেষে তা বলা না গেলেও তবে মাঝামাঝি সময়ে শুরু করা সম্ভব। যার জন্য আমাদের প্রস্তুতি শেষের পথে।
পরিদর্শনকালে কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ইউনূছ ভুঁইয়া, বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের ঘরে এবার বাজতে যাচ্ছে বিয়ের শানাই। তবে বোন সারা টেন্ডুলকার নয়, প্রথমেই আংটি বদল করলেন ছেলে অর্জুন টেন্ডুলকার। ২৫ বছর বয়সেই বাগদান সম্পন্ন করেছেন তিনি। পাত্রী ভেটেরিনারি চিকিৎসক সানিয়া চান্দোক।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, পারিবারিকভাবে সম্পন্ন হওয়া এই বাগদান অনুষ্ঠানে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠজনরা উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই অর্জুন-সানিয়ার সম্পর্ক ছিল। এর আগে একাধিকবার অর্জুনের ম্যাচে দেখা গেছে সানিয়াকে। সারার সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব রয়েছে।
সানিয়া চান্দোক ভারতের খ্যাতনামা ব্যবসায়ী রবি ঘাইয়ের নাতনি। তাদের হোটেল ও আইসক্রিম ব্যবসা রয়েছে। পশু চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি সানিয়া একজন উদ্যোক্তাও। তার নিজস্ব পোষা প্রাণীর স্কিন কেয়ার ও স্পা সেন্টার পরিচালনা করেন তিনি। বয়সে তিনি অর্জুনের চেয়ে এক বছরের বড়।
অর্জুন অবশ্য বাবার মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম করতে পারেননি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি নিয়মিত খেলছেন গোয়ার হয়ে। ২০২৩ সালে আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে অভিষেক হয় বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের। এখনও পর্যন্ত আইপিএলে তিনি খেলেছেন ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৩ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৭ ম্যাচে সংগ্রহ করেছেন ৫৩২ রান ও নিয়েছেন ৩৭ উইকেট। ঘরোয়া ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ম্যাচ সংখ্যা ৪২।
আইপিএল থেকে অর্জুনের আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বর্তমানে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কাছ থেকে তিনি বছরে ৩০ লাখ টাকা পান। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আসে আরও প্রায় ১০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো আয় করেন তিনি।
তবে পারিবারিক সূত্রেই অর্জুনের সম্পদ এখন প্রায় ২২ কোটি টাকা। বর্তমানে তিনি থাকেন মুম্বাইয়ের সেই বাড়িতে, যেটি ২০০৭ সালে শচীন কিনেছিলেন প্রায় ৩৯ কোটি টাকায়। ছোটবেলা থেকেই বিলাসবহুল পরিবেশে বেড়ে ওঠা অর্জুনের জীবনযাত্রা তাই নিজের আয়ের সঙ্গে তুলনামূলক নয় বলেই মনে করছে গণমাধ্যম।
মন্তব্য