গত এক দশকে ভারতের সঙ্গে করা একাধিক চুক্তিতে বাংলাদেশের ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত মিলেছে কেবল ৭৩ কোটি ডলার।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে আরও বেশি অর্থ ছাড়ের আশা করছে ঢাকা।
দুই দিনের সফরে শুক্রবার ঢাকায় আসছেন মোদি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু দেশটির সরকারপ্রধানের সফরের প্রধান উপলক্ষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে রাষ্ট্রীয় আয়োজন। তবে এর বাইরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত ও দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও হবে। সেখানে নতুন সমঝোতার পাশাপাশি আগের করা চুক্তি ও সমঝোতা নিয়েও আলোচনা হবে।
গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পেও ভারত বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সড়ক, রেল, নৌ-যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতের অবকাঠামোখাতে প্রায় তিন ডজন প্রকল্প দেশটির ঋণে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় প্রথম চুক্তি হয়েছিল প্রায় এক যুগ আগে।
২০১০ সালে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়। পরে এর মধ্যে কিছু অংশ ভারত অনুদান হিসেবে ঘোষণার পর ঋণ দাঁড়ায় ৮৬ কোটি ডলার।
২০১৫ সালের দ্বিতীয়বার আরও ২০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয়।
সবশেষ ২০১৭ সালের ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয়।
সব মিলিয়ে ভারতের ঋণ ৭৩৬ কোটি ডলার, দেশি মুদ্রায় যা পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ইআরডির সর্বশেষ হিসাব বলছে, বড় অঙ্কের ঋণের বিপরীতে সে হারে অর্থছাড় হয়নি। প্রথম এলওসির প্রায় ১০ বছর পার হলেও পুরো টাকা এখনো মেলেনি, ছাড় হয়েছে প্রায় ৬৩ কোটি ডলার।
পাঁচ বছর আগের দ্বিতীয় এলওসির বিপরীতে সাড়ে ৯ কোটি ডলার এবং প্রায় সাড়ে তিন বছরে তৃতীয় এলওসির বিপরীতে ৬৪ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে। মোট ছাড় হয়েছে প্রায় ৭৩ কোটি ডলার। যা মোট ঋণের ১০ শতাংশ।
মোদির এবার ঢাকা সফরে দুটি প্রকল্পে নতুন করে ৩০ কোটি টাকা অনুদান দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে এখন পর্যন্ত।
তবে এলওসির আওতায় অর্থছাড় ও প্রকল্পে গতি আসবে বলেই আশা করছে সরকার।
সরকারের অথনৈতিক সম্পক বিভাগ, ইআরডির একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেছেন, মোদির সফর সামনে রেখে তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন, যেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তথ্য চাওয়া হলে যথাসময়ে তা সরবরাহ করা যায়। সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য হালনাগাদ করে রাখা হয়েছে।
ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে তিনটি এলওসি সাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম এলওসির আওতায় নেয়া প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাকি দ্বিতীয় ও তৃতীয় আওতাধীন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
‘আশা করি, সামনের দিনগুলোতে এ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড়ে আরও গতি আসবে। একই সঙ্গে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নেও দ্রুতগতি পাবে ‘
কত প্রকল্প
ভারতের টাকায় প্রথম এলওসিতে ১৫টি, দ্বিতীয়টিতে ১৫টি এবং তৃতীয় এলওসির আওতায় ১৬টি প্রকল্প মিলে দিন এলওসির আওতায় মোট ৪৬ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।
এর মধ্যে এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে প্রথম এলওসির আওতায় ১৪টি প্রকল্পের। আটটির কাজ চলমান। বাকিগুলোর কাজ এখনও শুরু হয়নি।
শেষ হওয়া প্রকল্পের মধ্যে ১২টি প্রথম এলওসির এবং দুটি দ্বিতীয় এলওসির। সাতটি প্রকল্পের দরপত্রসংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান এবং আটটি প্রকল্পের ডিপিপি (প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরির কাজ চলছে।
এলওসির আওতায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার কাজ চলমান রয়েছে।
ইআরডির প্রস্তুতি
মোদির সফরে ভারতীয় ঋণের প্রকল্পের বিষয়ে বৈঠক নির্ধারিত না হলেও ইআরডি সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে যেন, অনির্ধারিত বৈঠক হলেও ভারতীয় ঋণের (এলওসি) প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরা যায়।
ইআরডির পর্যালোচন সভার সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
ইআরডি বলছে, এলওসির প্রকল্পের গাতি বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, ইআরডি ও ভারতীয় হাইকমিশন প্রকল্পগুলোকে মনিটরিং করছে। প্রকল্পের অগ্রগতি আনতে ইআরডি সচিব ও ভারতীয় হাইকমিশনারকে প্রধান করে হাই লেভেল কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
অর্থছাড়ে গতি বেড়েছে
গত কয়েক বছরে ভারতীয় ঋণের অর্থছাড় কিছুটা বেড়েছে।
২০১১-১২ অর্থবছরে ১.২৯ কোটি ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭.৫৩ কোটি ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭.৩৩ কোটি ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪.৩৯ কোটি ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮.৪৭ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪.৭ কোটি ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩.৭৭ কোটি ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩.৬৫ কোটি ডলার অর্থছাড় করেছে ভারত।
প্রথম ধাপে ৮০ কোটি ডলারের মধ্যে অর্থছাড় হয়েছে ৬৩ দশমিক ৪ কোটি ডলার বা ৭৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
কেন বিলম্ব
এলওসির আওতায় অর্থছাড়ের বিলম্বেও কারণ সম্পর্কে ইআরডি বলছে, সাধারণত বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো উন্নয়ন সহযোগীরা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির পর বাংলাদেশের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি ভিন্ন।
দেশটি প্রথমে ঠিক করে কোন কোনো প্রকল্পে তারা ঋণ দেবে। সেই প্রকল্পগুলোর বিষয়ে ঋণচুক্তি সই করার পর তারা কাজ শুরু করে। চুক্তির পর তারা ডিপিপি তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজ করে।
স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার তুলনায় চুক্তি সইয়ের পর দু-তিন বছর বেশি সময় লাগে।
প্রথম দুই এলওসির পর তৃতীয় এলওসি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। প্রথম এলওসির ঋণের পর দ্বিতীয় ঋণের অর্থছাড় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবার তৃতীয় ঋণের আওতায় মোট ১৬ প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি প্রকল্প এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুমোদন দিয়েছে।
সামনে তিনটা প্রকল্পের টেন্ডার হবে। ফলে ২০২১ সালের মার্চ থেকে তৃতীয় ঋণে ভারত অর্থছাড় বাড়ার আশা করছে ইআরডি।
৩০ কোটি টাকার অনুদান
শুক্রবার শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দুই প্রকল্পের বিপরীতে ৩০ কোটি টাকার অনুদান চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়ছে।
‘এস্টাবলিশমেন্ট অব স্পোর্টস ফ্যাসিলিটিজ অ্যান্ড রাজশাহী কলেজ ফিল্ড সারাউন্ডিংস এরিয়া’ প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি ৯৩ লাখ অনুদান দেবে ভারত।
প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী কলেজে খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক ও গেম বিল্ডিং এবং সুইমিং পুল নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এম্পলয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার’ নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ২৫ কোটি টাকার অনুদান পাওয়া যাবে।
প্রকল্পের আওতায় আইসিটি ট্রেনিং ইক্যুইপমেন্ট দেবে ভারত। এ জন্য প্রকল্পের আওতায় সরকারের সেবাগুলোকে ই-সেবায় রূপান্তরের মাধ্যমে জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দেয়া এবং সব ক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার বৃদ্ধিকল্পে প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো স্থাপন করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।
আরও পড়ুন:জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, ‘তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করেছিল। আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শনিবার জাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে।
‘নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেয়া হয়েছিল। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কী না সন্দেহ ছিল। তাই নির্বাচনে গিয়েছি।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিল।
‘আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল, তারা সফল হবে না। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে- এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বিএনপি এক কিংবা ১০ লাখ বা এক কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও তাদের আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসেবে দেখতে চায়। তবে তা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল ছিল না এবং আমরা গৃহপালিত বিরোধী দল হতে রাজি নই।’
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
চলমান তাপপ্রবাহে সারা দেশের সঙ্গে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাও। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ নগর জীবন। এ অবস্থায় রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে পানি ছিটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বায়ু দূষণ রোধ ও তীব্র দাবদাহে শহরকে ঠাণ্ডা রাখতে ডিএনসিসির ওয়াটার স্প্রে (পানি ছিটানো) কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘দুটি স্প্রে ক্যানন প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠাণ্ডা রাখা হবে।
‘এছাড়াও ডিএনসিসির পার্কগুলোতে স্প্রে ক্যাননের মতো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে পার্কগুলোতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে চলমান তীব্র দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে সড়কে পানি ছিটানো এবং ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সংবলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করতে পারে।’
চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। তিনি তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কাজগুলো আমাদের সবাইকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন যে চিফ হিট অফিসার সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন। বাস্তবে সিটি করপোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি করপোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই।
‘হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে সাতজন চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করেছে এবং তারা সবাই নারী।’
ওয়াটার স্প্রে পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর বনানীতে মাঝ সড়কে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপনে কাজ করে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, বিকেল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসটি বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসটি অনেক দূর নিয়ে আসে। এতে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতেও আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
মন্তব্য