কোম্পানি বন্ধ থাকায় মূল বাজার থেকে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেটে পাঠানো ইউনাইটেড এয়ারের শেয়ারদর লাফ দিয়েছে। এই মার্কেটে শেয়ার কেনাবেচায় নানা জটিলতা থাকলেও পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের খবরে এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে গেছে।
যদিও নতুন পরিচালনা পর্ষদ এখনও কোম্পানি চালুর বিষয়ে প্রাথমিক কাজও শুরু করতে পারেনি। বরং তারা নানা জটিলতার বিষয়টি নিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক করেছে।
গত ১৩ জানুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটিকে জেড ক্যাটাগরি থেকে ওটিসিতে স্থানান্তর করে। তারপর একের পর এক আসতে থাকে কোম্পানির শেয়ার বিক্রির আদেশ।
২৮ ফ্রেবুয়ারি পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রায় ৭৮ লাখ শেয়ার বিক্রির আদেশ আসে। কিন্তু ক্রেতা ছিল না।
এরপরই কোম্পানিটি পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের খবর আসে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। তারপর চিত্র পালটে যায়।
পৌনে এক কোটি শেয়ার বিক্রির অর্ডার দুই-তিন দিনেই শেষ হয়ে যায়। এখন ক্রেতারা আগের চেয়ে বেশি দাম চাইছেন শেয়ারের জন্য।
মূল বাজার থেকে ইউনাইটেডকে যেদিন ওটিসিতে পাঠানো হয়, সেদিন কোম্পানিটির দাম ছিল ১ টাকা ৯০ পয়সা।
সার্কিট ব্রেকার অনুযায়ী কোনো কোম্পানির শেয়ারদর এক দিনে ১০ শতাংশ বাড়তে বা কমতে পারে। কিন্তু এই বাড়া-কমার কিছুই ১০ পয়সার হিসাবের বাইরে হবে না।
ইউনাইটেডের শেয়াররদর এ কারণে সর্বোচ্চ ১০ পয়সা বাড়ানো বা কমার সুযোগ ছিল। আর সর্বোচ্চ পরিমাণে কমিয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সায় বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির অর্ডার আসে। কেউ কেউ অর্ডার দেন ১ টাকা ৯০ পয়সায়।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ক্রেতা না থাকলেও বোর্ড পুনর্গঠনের খবরে ৩ মার্চ ৭৮ লাখ শেয়ারের সবগুলা বিক্রি হয়ে যায়। গড় দাম ছিল ১ টাকা ৮৪ পয়সা।
এরপর প্রায় ২ লাখ শেয়ার বিক্রির আদেশ আসে। হাতবদল হয় ২ টাকা থেকে ২ টাকা ১০ পয়সায়।
এরপর ১৮ লাখ শেয়ার বিক্রির অর্ডার আসে ১০ ও ১১ মার্চ। এই শেয়ারের বিক্রেতারা দাম চাইছেন ২ টাকা ৩০ পয়সা করে।
দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববার এই শেয়ার কেনার সুযোগ আসবে।
ওটিসির অন্য কোম্পানির কী অবস্থা
ওটিসি মার্কেটে বর্তমানে ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৮টি শেয়ার বিক্রির অর্ডার আছে। এর মধ্যে মগ ইন্টারন্যাশনালের ৮০০ শেয়ার বিক্রির অর্ডার দেয়া হয়েছে ২০০৯ সালের অক্টোবরে। ৩৭ টাকা দরে শেয়ার বিক্রির অর্ডার দেয়া হলেও এখনও তা বিক্রি হয়নি।
একই সময়ে ঈগল স্টারের ৫০টি শেয়ার ৬৬ টাকায় বিক্রির অর্ডার দেয়া হলেও ক্রেতা পাওয়া যায়নি।
পর্ষদ পুনর্গঠনে কোম্পানিতে
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসি ইউনাইটেড এয়ারের পর্ষদ ভেঙে স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে।
এর অংশ হিসেবে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে পুনর্গঠন করা পর্ষদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কাজী ওয়াহিদুল আলমকে।
ওয়াহিদুলের এভিয়েশন ব্যবসায় বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে। তিনি বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি তিনি পর্যটন ও এভিয়েশন-বিষয়ক একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
নতুন পর্ষদে রয়েছেন এম সাদিকুল ইসলাম, মাসকুদুর রহমান সরকার, এটিএম নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূইয়া, মুহাম্মদ ইউনুস ও মুহাম্মদ শাহ নেওয়াজ।
এই সিদ্ধান্তে পাঁচ বছর ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়া হাজার হাজার মানুষ তাদের নাই হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরে পাওয়ার আশা ফিরে পেল।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মোট শেয়ারের সবচেয়ে বেশি শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। ওটিসিতে যখন নেয়া হলো তখন আতঙ্কে সবাই শেয়ার বিক্রি শুরু করে দিল।
‘কোম্পানিটিকে আবার চালুর করার উদ্যোগের কারণেই ওটিসিতেও শেয়ারের চাহিদা বেড়েছে। তবে এটি ওটিসিতে না নিয়ে যদি মূল মার্কেটে রেখে বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে দর আরও বেশি বাড়ত। তাতে বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হতো।’
আর্থিক আশ্বাস ও বেবিচকের কাছে চিঠি বিএসইসির
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পুনরায় চালুর জন্য গঠন করা নতুন বোর্ড শুরুতেই তহবিল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএসইসির কাছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিএসইসির সহায়তা চেয়েছে নতুন পর্ষদ।
একই সঙ্গে পুনর্গঠিত পর্ষদকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।
চিঠিতে ইউনাইটেড এয়ারকে আবার আকাশপথে সেবা দেয়ার লক্ষ্যে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে বেবিচকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এর আগে পুনর্গঠিত বোর্ড বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে কোম্পাটিকে চালু করতে যে আর্থিক সংকট রয়েছে তা তুলে ধরা হয়।
এ বিষয়ে কমিশনের কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোম্পানিটির নতুন বোর্ড আমাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। আমরা তাদের সব ধরনের আইনকানুন সম্পর্কে অবহিত করেছি। তাদের বক্তব্যও আমরা শুনেছি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি কোম্পানি চালু করতে কিছু সমস্যা থাকবেই। যেকোনো সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের সহযোগিতা তাদের করা হবে।’
কোম্পানির আর্থিক অবস্থা
২০১০ সালে পুঁজিবাজার যখন চাঙা, তখন কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। শুরুর দিকে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। তবে ২০১৫ সালের পর খারাপ অবস্থায় যেতে থাকে কোম্পানিটি। একপর্যায়ে উদ্যোক্তা পরিচালকরা তাদের হাতে থাকা প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানিটিই বন্ধ করে দেন।
৮২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির ৮২ কোটি শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে আছে মাত্র আড়াই শতাংশ শেয়ার। অথচ বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে কথা উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের পর কোম্পানিটির আর কোনো আর্থিক বিবরণী তৈরি হয়নি। সেখানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির কোনো আয় নেই। তবে ২০১৬ সালের রেভিনিউ দেখানো হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:২০২৫-২৬ অর্থবছরের আয়কর নির্দেশিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ৪২টি ভাতা বা আয়ের উৎস করমুক্ত ঘোষণা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস করযোগ্য আয়ের আওতায় থাকবে।
এনবিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক হলেও, নির্দিষ্ট কিছু আয়ের ওপর তাদের কর দিতে হবে না। এসব করমুক্ত আয় মূলত কর্ম-সম্পর্কিত বিভিন্ন ভাতা ও ভ্রমণ সুবিধা।
করমুক্ত ঘোষিত ৪২টি আয়ের ধরন হলো- চিকিৎসা ভাতা, নববর্ষ ভাতা, বাড়িভাড়া ভাতা, শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা, শিক্ষাসহায়ক ভাতা, কার্যভার ভাতা, পাহাড়ি ভাতা, ভ্রমণ ভাতা, যাতায়াত ভাতা, টিফিন ভাতা, পোশাক ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, ধোলাই ভাতা, বিশেষ ভাতা, প্রেষণ ভাতা, প্রশিক্ষণ প্রেষণ ভাতা, জুডিশিয়াল ভাতা, চৌকি ভাতা, ডোমেস্টিক এইড অ্যালাউয়েন্স, ঝুঁকি ভাতা, অ্যাকটিং অ্যালাউয়েন্স, মোটরসাইকেল ভাতা, আর্মরার অ্যালাউয়েন্স, নিঃশর্ত যাতায়াত ভাতা, টেলিকম অ্যালাউয়েন্স, ক্লিনার ও ড্রাইভার অ্যালাউয়েন্স, মাউন্টেড পুলিশ, পিবিএক্স, সশস্ত্র শাখা, বিউগলার ও নার্সিং ভাতা, দৈনিক/খোরাকি ভাতা, ট্রাফিক অ্যালাউয়েন্স, রেশন মানি, সীমান্ত ভাতা, ব্যাটম্যান ভাতা, ইন্সট্রাকশনাল অ্যালাউয়েন্স, নিযুক্তি ও আউটফিট ভাতা এবং গার্ড পুলিশ ভাতা।
করযোগ্য আয়, মূল বেতন, উৎসব ভাতা, বোনাস এসব আয়ের ওপর আয়কর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হারে কর দিতে হবে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে ৬৩.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি হবে বাংলাদেশ থেকে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এ ঘোষণা দেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সমাপ্ত অর্থবছর ২০২৪-২৫ এ বাংলাদেশ পণ্য খাতে ৫০.০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৭% এবং পূর্ববর্তী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৮.৫৮% বেশী।
সেবা খাতের লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫০ বিলিয়নের বিপরীতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৫.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.১৩% বেশী।
অর্থবছরে রপ্তানি খাতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির গতিধারা, পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ, বিশ্ব বাণিজ্যের সাম্প্রতিক গতিধারা, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব, দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অংশীজনদের মতামত, বিগত অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা এবং লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জনের হার ও পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ইত্যাদি পর্যালোচনাপূর্বক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর পরিদর্শনে গিয়ে বস্ত্র ও নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘সরকার বিভিন্ন স্থলবন্দর প্রাইভেট সেক্টরের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করছে। একই সঙ্গে, যেসব স্থলবন্দর থেকে সরকার কোনো রাজস্ব আহরণ করতে পারছে না, সেগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
শনিবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর পরিদর্শনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে, যার মধ্যে ইতোমধ্যে চারটি স্থলবন্দর বন্ধ করা হয়েছে। আরো চারটি অলাভজনক স্থলবন্দর বন্ধের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়নশীল স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং ধাপে ধাপে এসব বন্দরের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
হিলি স্থলবন্দর সভাকক্ষে কাস্টমস, বন্দরের কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যবসায়ীরা রাস্তা-ঘাট সংস্কার, ওয়্যারহাউজ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে দ্রুত সেসব সমাধানের অনুরোধ করেন।
উপদেষ্টা হিলি স্থলবন্দর ও কাস্টমস বিভাগের বিভিন্ন অবকাঠামো ঘুরে দেখেন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, রংপুর কাস্টমসের বিভাগীয় কমিশনার অরুন কুমার বিশ্বাস, হিলি কাস্টমসের সহকারী কমিশনার এ এস এম আকরামসহ আরো অনেকেই।
স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যাদি (ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডাল) বিক্রয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীতে ৬০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে আজ (১০ আগস্ট) হতে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
শনিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে টিসিবি।
টিসিবির উপপরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন (শুক্রবার ছাড়া) এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৫টি, গাজীপুর মহানগরীতে ছয়টি, কুমিল্লা মহানগরীতে তিনটি এবং ঢাকা জেলায় আটটি, কুমিল্লা জেলায় ১২টি, ফরিদপুর জেলায় চারটি, পটুয়াখালী জেলায় পাঁচটি ও বাগেরহাট জেলায় পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ১০ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৯ দিন (শুক্রবার ছাড়া) টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। দৈনিক ট্রাক প্রতি ৫০০ জন সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্যাদি (ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডাল) বিক্রয় কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। যে কোনো ভোক্তা ট্রাক থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।
ভোক্তা প্রতি ভোজ্যতেল দুই লিটার ২৩০ টাকা, চিনি এক কেজি ৮০ টাকা এবং মসর ডাল দুই কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হবে। স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারীর কাছে বিক্রয় মূল্য আগের ন্যায় বহাল থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিকৃত বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে এই সময়ের আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে তোলা পণ্য নতুন শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছে। এ সুবিধা কাজে লাগাতে আগাম পণ্য পাঠিয়ে রফতানিকারকরা জোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, এই রফতানিতে জোয়ারের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, রফতানিকারকদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ায় প্রতিদিন অতিরিক্ত ৮০০ কনটেইনার রফতানি হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের ১৯টি ডিপোতে জমা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০টি ২০ ফুট এককের রফতানি কনটেইনার। যার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রমুখী।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ৭ আগস্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য পাঠাতে অনেকেই চেষ্টা করেছেন। তবে যারা আগাম উৎপাদন সম্পন্ন করেছিলেন, তারা ১ আগস্টের আগেই রফতানি নিশ্চিত করেছেন। ফলে জুলাই মাসে রফতানিতে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
চট্টগ্রামের এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম জানান, জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে, যার মধ্যে ৮২ কোটি ডলারের পোশাক গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এর ৬০ শতাংশ রফতানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন। পরবর্তীতে ৩১ জুলাই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের তৃতীয় দফা আলোচনার পর চুক্তির ভিত্তিতে পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামানো হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশের বেশি শুল্ক কার্যকর ছিল, ফলে মোট শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৩৫ শতাংশের বেশি। তৈরি পোশাকে আগে শুল্ক ছিল প্রায় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, শুল্ক কার্যকরের ক্ষেত্রে বন্দর থেকে পণ্য ছাড়কাল থেকেই সময় গণনা করা হয়। এপ্রিলেও একই পদ্ধতিতে ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর হয়।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহারে পাল্টা শুল্ক ছাড় থাকায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কারণ পোশাক খাত তুলানির্ভর এবং বাংলাদেশের আমদানিকৃত তুলার বড় অংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে রফতানিকারকরা আগেভাগেই কনটেইনার পাঠিয়েছেন ডিপোতে। এর প্রভাবে আগস্টেও ডিপো থেকে আমেরিকামুখী রফতানি বেশি হবে।
তিনি জানান, প্রতি মাসে গড়ে ৬০-৬৫ হাজার কনটেইনার রফতানি হলেও জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজারে; যার মধ্যে ৮১ হাজার কনটেইনার ইতোমধ্যে রফতানি হয়েছে।
গত বছরের রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের পর অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহে বড় ধরনের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে এই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশে নিট এফডিআই প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ৮৬৪.৬৩ মিলিয়ন ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ১১৪.৩১ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে বিনিয়োগ ছিল ৪০৩.৪৪ মিলিয়ন ডলার।
এই বিনিয়োগ প্রবাহ ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায়ও ৭৬.৩১ শতাংশ বেশি। তখন নিট এফডিআই ছিল ৪৯০.৪০ মিলিয়ন ডলার।
ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট বা মূলধনী বিনিয়োগেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে এটি দাঁড়ায় ৩০৪.৩৮ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৮৮.৪৩ মিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের ‘আস্থার প্রতীক’। যদিও দেশ এখনো মুদ্রা অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক ঋণের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বাসসকে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ এখনো প্রত্যাশার তুলনায় কম। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান খুবই কঠিন।
বাসসর সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, উচ্চ-প্রভাবসম্পন্ন বিনিয়োগ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের সমস্যার সমাধান এবং বড় বিনিয়োগের একটি শক্তিশালী পাইপলাইন তৈরি করা এই চারটি প্রধান অগ্রাধিকারের ওপর জোর দিচ্ছে বিডা ও বেজা।
বিডা প্রধান সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট -২০২৫’ এর সাফল্য তুলে ধরে বলেন, ৭ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ৫০টি দেশের ৪১৫ জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেন এবং এতে প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পান এবং বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত এবং লাভজনক হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, বেজা নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, যাতে বিনিয়োগ প্রক্রিয়াগুলোর বাস্তব অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায়।
ভারসাম্যপূর্ণ শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) একটি ‘জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো তিন ধাপে বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।
জাতীয় মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে ২০৪৬ সালের মধ্যে ২০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে । যা সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে কৌশলগতভাবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রস্তুত হওয়া এই মাস্টার প্ল্যানটি ভূমি অধিগ্রহণ, অবকাঠামো প্রস্তুতি এবং বিনিয়োগকারীর আস্থার মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রথম পর্যায়ে, অর্থবছর ২৫ থেকে অর্থবছর ৩০ পর্যন্ত যেগুলোর উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বা পরিকল্পনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এমন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এদিকে, দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) তাদের নতুনভাবে ডিজাইন করা ওয়েবসাইট চালু করেছে। যা বিনিয়োগ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নতুন এই প্ল্যাটফর্মে বিডার এফডিআই হিটম্যাপ অনুযায়ী সম্ভাবনাময় খাতগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, নীতিমালা, এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ফোকাল পয়েন্ট সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিডার লোগোও নতুনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
বিডা তাদের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) পোর্টালেরও হালনাগাদ সংস্করণ চালু করেছে, যার উদ্দেশ্য হলো দেশি ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য সেবার গুণগতমান বৃদ্ধি।
এই ওএসএস পোর্টালটি ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চালু করা হয় এবং বর্তমানে ৩৫টি সরকারি সংস্থা, ১২টি ব্যাংক ও ৫টি চেম্বার সংস্থার ১৩৩টি সেবা একত্রে প্রদান করে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. মনজুর হোসেন বলেন, ‘আগামী মাসগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ বজায় থাকলে বিনিয়োগ প্রবাহ আরও বাড়বে।’
এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের পথে বাধাগুলি মোকাবেলা করতে বিডা এবং বেজা কয়েক মাস ধরে আরও বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য কিছু সফল ইভেন্টের আয়োজন করেছে। এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ব্যবস্থা আরও সহজ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক আবু সাইয়েদ মো. আনোয়ার পারভেজ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেপজার ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো মেশিনারি, নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য মূলধনী খাতে (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ছাড়া) ২৯২.৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
আনোয়ার পারভেজ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৩টি নতুন বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা বেপজার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
তিনি বলেন, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ থেকে আগত বিনিয়োগকারীরা শিল্প কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে এসব চুক্তিতে সই করেছেন।
পারভেজ বলেন, ‘এই চুক্তির আওতায় মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৯৭.৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সম্ভাব্য ৫৯ হাজার ৪০৮ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করবে, যার মধ্যে রয়েছে: তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, কৃষিভিত্তিক পণ্য, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, প্যাকেজিং সামগ্রী, তাঁবু, কৃত্রিম চুল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, খেলনা এবং কম্পোজিট আইটেম।
তিনি আরও বলেন, এই বিনিয়োগগুলো চালু হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রকৃত বিনিয়োগ প্রবাহ আরও গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার পতনের পর দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ করল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সময়ে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, রপ্তানি আয়ের উন্নতি এবং অর্থপাচার রোধে দৃশ্যমান উদ্যোগের ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে শক্তিশালী অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার মান ডলারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে, কারণ নিয়মিতভাবে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে, যার ফলে ডলারের বিনিময় হার কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৯ জুলাই থেকে ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচ দিনে আন্তঃব্যাংকে ডলারের বিক্রয়মূল্য ২ টাকা ২০ পয়সা কমে ১২২.৩ টাকা থেকে ১২০.১ টাকায় দাঁড়ায়। ওই দিন ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ১১৯.৫ টাকা।
বিনিময় হার বেশি ওঠানামা না করে স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করেছে এবং এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকার মান বেড়ে গেলে দেশে মূল্যস্ফীতি কমানো সহজ হয়, তবে ডলারের মান খুব দ্রুত পড়ে গেলে রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয়কারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের ফলে ৩ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত ডলারের আন্তঃব্যাংক বিক্রয়মূল্য ১২২.৮৯ টাকায় দাঁড়ায়।
২০২২ সালে কোভিড-পরবর্তী বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে টাকার মান পড়তে শুরু করে। ওই বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত টাকার মান ৩০ শতাংশ কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকার মান সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে বেড়েছে, তা সম্ভব হয়েছে কয়েকটি কারণে: প্রবাসী আয় বেড়ে ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, অবৈধ অর্থ লেনদেন ও মানি লন্ডারিং কমেছে, বহুপাক্ষিক দাতা সংস্থাগুলোর ঋণ সহায়তা এসেছে।
২০২৫ সালের মে মাসে আইএমএফ-এর শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হারকে আরও নমনীয় করে। ব্যাংকারদের মধ্যে ভয় ছিল এতে ডলারের দর আরও বাড়বে, তবে বাস্তবে বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যদিও আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, নেট রিজার্ভ ২৪.৯৯ বিলিয়ন ডলার।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রবাসী আয় বাড়ছে, অর্থপ্রবাহে ভারসাম্য এসেছে এবং ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি বলেন, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। এটি উদ্বেগের কারণ হয়নি, বরং টাকার ওপর আস্থা বেড়েছে।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, এখন প্রবাসীরা বৈধ পথে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, কারণ ডলারের দামের আকস্মিক পরিবর্তনের গুজব আর নেই।
পরিকল্পনা কমিশনের জিইডি সদস্য ড. মনজুর হোসেন বলেন, জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের শুরু পর্যন্ত ডলারের বিনিময় হার ১২২.৪৫ থেকে ১২২.৭০ টাকার মধ্যে স্থির ছিল। এই স্থিতিশীলতা ব্যবসা ও বাণিজ্য পরিকল্পনায় সহায়ক।
তিনি বলেন, দেশের বহিঃবাণিজ্য খাত এখন ভালো করছে, নীতিগতভাবে ভালো ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এবং রপ্তানি বৈচিত্র্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ডলারের দাম অতিরিক্ত পড়ে যাওয়াও ভালো নয়, এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল থাকুক। বেশি বাড়া বা কমা- দুটোই খারাপ।’
২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় ৮.৫৮ শতাংশ বেড়ে ৪৮.২৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয় এবং টাকার মানকে শক্তিশালী করেছে।
শুধু ২০২৫ সালের জুলাই মাসে, বাংলাদেশ ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে, যা গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকেই এসেছে ৩.৯৬ বিলিয়ন ডলার, যা এ খাতে ধারাবাহিক ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখায়।
আরিফ হোসেন খান বলেন, এক বছর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে এবং অর্থনীতি, প্রশাসন ও নীতিগত সংস্কারে বড় পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
এফবিসিসিআই’র প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আগের সময়ের মতো এলসি খোলার জটিলতা এখন নেই। ডলার ও বিনিময় হার নিয়ে এখন আর কোনো সংকট নেই, যা আমদানিকারকদের জন্য ভালো সংবাদ।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুল কাইউম চৌধুরী বলেন, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে প্রবাসী আয়ের ধারা অব্যাহতভাবে বেড়েছে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক স্বস্তি এনেছে।
মন্তব্য