সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নতুন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের পর সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম বৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা গেছে, লাভেলো আইসক্রিমের (লেনদেন হচ্ছে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে) ক্ষেত্রেও সেটি দেখা যাচ্ছে।
প্রথম দিন আইপিও দামের ৫০ শতাংশ বেশিতে ১৫ টাকায় বিক্রেতা ছিল না বললেই চলে। প্রথম দিন লেনদেন হয় ১৭ হাজারের মতো শেয়ার।
দ্বিতীয় দিন আরও ৫০ শতাংশ বেশি দরে ২২ টাকা ৫০ পয়সাতেও খুব বেশি বিক্রেতা পাওয়া যায়নি। তবে প্রথম দিনের তুলনায় বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে সর্বোচ্চ দামে। ৫০ হাজার ১৯১টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
সর্বোচ্চ দামে এক কোটি ৬০ লাখ শেয়ার কেনার আদেশ ছিল সকালে।
রোববার থেকে স্বাভাবিক নিয়মে ১০ শতাংশ বাড়তে অথবা কমতে পারবে কোম্পানিটির শেয়ার। এ হিসাবে সর্বোচ্চ দাম হতে পারবে ২৪ টাকা ৭০ পয়সা। আর সর্বোচ্চ কমলে দাম হবে ২০ টাকা ৩০ পয়সা।
নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দরে লাগাম টানতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এই শেয়ারেও সার্কিট ব্রেকার বসিয়েছে। এমনিতে একটি শেয়ারের দর দাম ভেদে দিনে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
তবে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো আইপিও দরের চেয়ে প্রথম দুই কার্যদিবসে ৫০ শতাংশ করে বাড়তে বা কমতে পারে। তবে এর পর থেকে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ ১০ শতাংশ উঠানামা করতে পারবে।
এই নিয়ম প্রবর্তন হওয়ার আগে প্রথম দিন কোনো সীমা ছিল না দামের। এমন দেখা গেছে আইপিও দরের ১৬ গুণ দামে বিক্রি হয়েছে শেয়ার।
নতুন শেয়ার উচ্চমূল্যে কিনে বিনিয়োগকারীরা যেন লোকসানে না পড়েন, সে জন্য সার্কিট ব্রেকার বসানোর পরেও খুব একটা লাভ হয়েছে এমন নয়।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলে এটা বোঝা গেছে, তাদের বহুজন ভাবেন প্রথম দুই দিন ৫০ শতাংশ করে দাম বাড়বে। আর এই সুযোগে কারসাজির চেষ্টা হয়।
গত ডিসেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে ক্রমাগতভাবে বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দরে ঘটে উল্লম্ফন। এক পর্যায়ে গত ৩০ জানুয়ারি বিএসইসি তিন হাজার কোটি টাকা লেনদেনের আশা প্রকাশ করে।
কিন্তু এর পরের কার্যদিবস থেকে কমতে থাকে লেনদেন। কদিন আগেও যে বাজারে টানা ১০ দিন গড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, সেই বাজারে বৃহস্পতিবার এক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে ১১ কার্যদিবস পরে। তাও আবার দুটি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। এগুলো বাদ দিলে লেনদেন ছিল ছয়শ কোটি টাকা মাত্র।
লেনদেন কেন এত কমল- সেই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে সদ্য তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রবি, এনার্জিপ্যাক ও মীর আকতারের শেয়ারেই ১৪০০ কোটি টাকার বেশি টাকা আটকে গেছে বিনিয়োগকারীদের।
একইভাবে সদ্য তালিকাভুক্ত ডমিনোস, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের লোকসানও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিনিয়োগকারীরা। এগুলোতেও বিপুল পরিমাণ অর্থ হয় আটকে আছে, নয় ক্ষতি স্বীকার করে বিক্রি করে বের হয়েছেন তারা।
নানা সময় দেখা যায়, নতুন শেয়ার এলেই কোম্পানির মৌলভিত্তি, শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ও আয়, লভ্যাংশ দেওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা না করেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন অনেক বিনিয়োগকারী। আর এই হুলুস্থুল শেষে দাম কমে এলে তাদের অর্থ আটকে যায় দীর্ঘদিনের জন্য। কেউ কেউ বড় লোকসান দিয়ে বের হন।
বিনিয়োগকারী নজরুল বলেন, ‘সম্প্রতি বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের শুরুর প্রথম কয়েকদিন আইপিওতে প্রাপ্ত কেউ শেয়ার বিক্রি করতে চান না। দর বেড়ে যখন অতিমূল্যায়িত হয়ে যায় তখন বিক্রি করা হয়, আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেগুলো ক্রয় করে লোকসানে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘না বুঝে শেয়ার কেনার পর যখন ক্রমাগত দর কমতে থাকে, তখন তারা হতাশ হয়। এজন্য শেয়ারের দর যখন অতিমূলায়িত হয়ে যায় তখন না কেনাই শ্রেয়।’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নতুন কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে এবং কখন শেয়ার কিনতে হবে সেটা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কেনা উচিত।’
নতুন শেয়ারে সবচেয়ে বেশি ধরা রবিতে
গত ২৪ ডিসেম্বর বহুজাতিক কোম্পানি রবির শেয়ার লেনদেন শুরু হলে তৈরি হয় হুলস্থুল। ১৪ কার্যদিবস টানা সর্বোচ্চ বেড়ে দাম দাঁড়ায় ৭৭ টাকা। সেদিনই আবার দাম কমে হয় ৭১ টাকায়। সেই শেয়ারই এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা ৮০ পয়সা।
সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয় গত ১২ জানুয়ারি। সেদিন লেনদেন হয় ছয় কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার। সেদিন দাম ছিল ৬৩ টাকা ২০ পয়সা।
এই দামে যারা শেয়ার কিনেছেন, তারা প্রতি শেয়ারে লোকসানে আছেন প্রায় ২০ টাকা। সাড়ে ছয় কোটি শেয়ারে লোকসান দাঁড়ায় ১৩০ কোটি টাকার বেশি।
১৪ জানুয়ারি ৭০ টাকায় লেনদেন হয়েছে এক কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬টি শেয়ার।
সেদিন যারা শেয়ার কিনেছেন, তারা লোকসানে আছেন ২৬ টাকার মতো। তাদের আটকে আছে ৫০ কোটি টাকার মতো।
১৭ জানুয়ারি তিন কোটি ৯৯ লাখ ৯৮ হাজার ৬২৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৪ টাকা ৫০ পয়সায়। সেদিন যারা কিনেছেন, তারা শেয়ার প্রতি ২০ টাকার মতো লোকসানে আছেন।
এই হিসাবে প্রায় ৮০ কোটি টাকা আটকে আছে সেদিনের বিনিয়োগকারীদের।
১৮ জানুয়ারি ৫৮ টাকা ৫০ পয়সায় তিন কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ৮৭৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সেদিন যারা কিনেছেন, তারা লোকসানে আছেন ১৪ টাকা দরে।
সেদিনের বিনিয়োগকারীদের আটকে গেছে ৫৫ কোটি টাকার মতো।
১৯ জানুয়ারি দুই কোটি ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৭২টি শেয়ার লেনদেন হয় ৫৭ টাকা ৪০ পয়সায়।
১৩ টাকা করে লোকসানের হিসাবে সেদিনের বিনিয়োগকারীদের আটকে দেখে ৩০ কোটি টাকার বেশি।
২০ জানুয়ারি দুই কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৯৬টি শেয়ার বিক্রি হয়। সেদিন ক্লোজিং দাম ছিল ৬৩ টাকা ১০ পয়সা।
১৯ টাকা করে লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীদের আটকে গেছে ৪২ কোটি টাকার বেশি।
এই কয় দিনেই রবির শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন ৫২০ কোটি টাকার বেশি, অথবা তাদের বিনিয়োগ আটকে গেছে।
এর আগে পরের কয়েকটিদের লেনদেন হিসাব করলে টাকার অংকটা যে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে, সেটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
এনার্জিপ্যাকও হাওয়া করেছে ৫০০ কোটি টাকার বেশি
বড় লোকসানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এনার্জি প্যাকের শেয়ারেও। ৩১ টাকায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার গত ১৯ জানুয়ারি লেনদেন শুরু করে। মূল্য টানা বেড়ে এক পর্যায়ে উঠে যায় ১০১ টাকায়। সময় লাগে মাত্র পাঁচ কার্যদিবস।
এরপর কমতে কমতে শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ৫১ টাকা ৭০ পয়সায়।
এই কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ২৬ জানুয়ারি। সেদিন হাতবদল হয় এক কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার ৫৭৬টি। সেদিন দাম ক্লোজ হয় ৮৩ টাকা ৪০ পয়সা।
সেদিন যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের প্রায় ৪০ টাকা করে হাওয়া হয়ে গেছে। এদের আটকে গেছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
সেদিনের পর সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ জানুয়ারি, হাতবদল হয় ৪৭ লাখ চার হাজার ৫৭০টি শেয়ার। সেদিন দাম ছিল ৭৬ টাকা ৪০ পয়সা।
সেদিন যারা কিনেছেন, তাদের শেয়ার প্রতি ২৫ টাকা করে হাওয়া হয়ে গেছে। তাদের আটকে গেছে ১২০ কোটি টাকার বেশি।
২৮ জানুয়ারি লেনদেন হয় ৩৪ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৬টি শেয়ার, দাম ছিল ৭১ টাকা ৭০ পয়সা।
সেদিন যারা কিনেছেন, তারা লোকসানে আছেন ২০ টাকা করে। তাদের আটকে গেছে ৬৮ কোটি টাকার বেশি।
৩১ জানুয়ারি লেনদেন হয় ৪৬ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮৯টি শেয়ার। দাম ছিল ৬৬ টাকা ৪০ পয়সা।
সেদিন যারা কিনেছেন, তারা লোকসানে আছে ১৫ টাকা করে। তাদের আটকে গেছে ৭০ কোটি টাকার মতো।
এই কয়দিনের লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের লোকসান হয়েছে ৪৩৫ কোটি টাকার বেশি। এই অর্থটাও আটকে গেছে।
এর আগে পরের লেনদেন হিসাব করলে হাওয়া হয়ে যাওয়া টাকার পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
মীর আকতারে কদিনেই লোকসান শত কোটি টাকার বেশি
গত ২ ফেব্রুয়ারি তালিকাভুক্ত হওয়া মীর আকতারের শেয়ারেও শত কোটি কারা বেশি লোকসানে বিনিয়োগকারীরা আট কার্যদিবসেই।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ার পেয়েছেন ৫৪ টাকায়। প্রথম দিন ৮১ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তে পারত। আর বেড়েছেও।
দ্বিতীয় দিন বাড়ার সুযোগ ছিল ১২১ টাকা ৫০ পয়সা। লেনদেন শুরুর আগেই সেই দামে ক্রয়াদেশ দেখে সন্দেহ হয় বিএসইসির। তারা দুটি বিও হিসাবের বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করে। তখন সেই ক্রয়াদেশ তুলে নেয়া হয়। আর সেদিন পরে লেনদেন হয় ৯৫ থেকে ১১৭ টাকায়। দিন শেষে ক্লোজ হয় ১০০ টাকায়।
পরের দুই কার্যদিবসে দাম ১০ শতাংশ করে কমে আবার ৮১ টাকায় দাঁড়ায়। এরপর দুই দিন উঠানামা করে বৃহস্পতিবার দর দাঁড়িয়েছে ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা।
অর্থাৎ যারা দ্বিতীয় দিন ৯৫ থেকে ১১৭ টাকায় শেয়ার কিনেছে, তারা এরই মধ্যে বড় লোকসানে আছেন।
এই কোম্পানির সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩ জানুয়ারি। সেদিন হাতবদল হয় ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯১টি শেয়ার। সেদিন যাকা কিনেছেন, তারা প্রতি শেয়ারে সর্বনিম্ন সাত টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৯ টাকা লোকসানে আছেন।
এই শেয়ারে বিনিয়োগকারীরাও সব মিলিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা লোকসানে আছেন।
কী শিক্ষা নিল লাভেলো কেনায় আগ্রহীরা
তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে লেনদেন শুরু করা কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হয়েছে ১০ টাকায়।
বুধবার প্রথম দিনের লেনদেনে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা হতে পারত দাম। হয়েছেও তাই।
দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার দাম সর্বোচ্চ হতে পারত ২২ টাকা ৫০ পয়সা। হয়েছেও তাই।
এই শেয়ারের ভবিষ্যত দর কোথায় দাঁড়ায় তা এখন বলার সুযোগ নেই।
জুন ক্লোজিং এই কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য আইপিওর আগে ছিল ১২ টাকা ৭৫ পয়সা, যা আইপিওর পরে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির আয় আইপিও পূর্ববর্তী শেয়ারের বিবেচনায় শেয়ারপ্রতি ছিল ৫০ পয়সা, যা আইপিওর পরে দাঁড়িয়েছে ৩২ পয়সা।
বৃহস্পতিবার যে দর দাঁড়িয়েছে তাতে প্রাইস আর্নিং রেশিও বা পিই দাঁড়ায় ২২.৫। অর্থাৎ এই হারে আয় করলে আগামী ২২ বছরে বিনিয়োগ উঠবে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কমপক্ষে ৬০টি প্রতিষ্ঠান আছে, যার পিই ১০ এর কম। এমনকি দুই এর কমেও আছে কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ডের।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য