কেউ থাকেন লঞ্চঘাটে বা বাস টার্মিনালে, কেউ জনবহুল এলাকায়, আবার কারো অবস্থান সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকের কক্ষের সামনে। অন্যদের কাছে নিজেদের পরিচয় দেন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ। সখ্যতা গড়ে তোলার পর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মহাবিশারদ হিসেবেও জাহির করেন অনেকে।
বরিশাল নগরীতে এসব মানুষ পরিচিত ‘রোগীর দালাল’ হিসেবে। বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীদের বুঝিয়ে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে প্রতারণা করাই তাদের কাজ।
বরিশালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর অনেক রোগী ও স্বজনই এসব দালালের খপ্পরে পড়েন। এরপর চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষার নামে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল নগরীতে আসা রোগীদের টার্গেট করে থাকেন এসব দালালরা। তাদের সংখ্যা ৩০০ এর বেশি।
তারা রোগীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে প্রতারণা করে থাকেন। এর জন্য ওই সব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকদের কাছ থেকে রোগীপ্রতি নির্দিষ্ট কমিশন পান তারা।
অভিযোগ, এসব দালালদের কোনো সমস্যা হলে সমাধান করেন স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও কথিত সাংবাদিকরা। পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাও এর সঙ্গে জড়িত।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়লেই এদের পরিচয় জানা যায়। তবে জরিমানা বা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পাওয়ার পর আবার শুরু করেন একই কাজ।
স্থানীয়রা জানান, নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনাল, বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ এবং লঞ্চঘাটে যারা রোগী জন্য অপেক্ষা করেন তাদের বলা হয় ‘হ্যান্ডেল ম্যান’। দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের সঙ্গে তারা প্রথমে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরপর জানতে চান কোন চিকিৎসকের কাছে এসেছেন?
রোগী বা স্বজনরা যে চিকিৎসকের কথা বলেন সেই চিকিৎসক বরিশালে নেই বা নানা মিথ্যা তথ্য নিয়ে নির্দিষ্ট চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তারা।
এসব দালালদের অধিকাংশই থাকেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে। পরিপাটি পোশাক ও হাতে ব্রিফকেস নিয়ে দুই হাসপাতালে প্রায় ২০০ মতো দালাল চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ঘোরাঘুরি করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসক দেখানোর পর কারো কোনো পরীক্ষা করাতে হলেই তারা সুযোগ নেন। ভালো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কথা বলে রোগীদের নিয়ে যান নামসর্বস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। অভিযোগ, এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন হাসপাতালের কর্মচারীরাও।
নগরীর জনবহুল এলাকা সদর রোড, এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক, বিবির পুকুর পাড় এবং ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালের সামনেও থাকেন অনেকে।
নগরীর বাটার গলিতে থাকা এমন দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরীক্ষার জন্য যে টাকা নেয়া হয় তার ৩০ ভাগ পান তারা। কোনো চিকিৎসকের কাছে রোগী পাঠানো হলে সেই চিকিৎসকের ফি ৮০০ টাকা হলে দালাল পায় ৩০০ টাকা।
লঞ্চঘাট ও বাস টার্মিনালে থাকা দালালদের কৌশলও জানান তারা। বলেন, এসব ব্যক্তিরা প্রথমে ফুঁসলিয়ে রোগীর কাছ থেকে ফোন নিয়ে কৌশলে আউটগোয়িং কল বন্ধ করে দেন। এরপর তারা যে চিকিৎসকের কাছে এসেছেস তাদের দাদি নানি কেউ মারা গেছেন বা অন্য কোনো মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেদের ঠিক করা রিকশায় চুক্তিবদ্ধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকের কাছে পাঠায় দেন।
যে চিকিৎসকের কাছে পাঠান, তারা সব বিষয়ে পারদর্শী। নাক, কান, গলা সব রোগের সমাধানই থাকে তাদের কাছে। এরপর তারা একটার পর একটা টেস্ট দিতে থাকেন রোগীদের। গরীব রোগীদের সব টাকা হাতানো শেষে শান্ত হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ।
বরগুনার বেতাগীর বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, ‘২০১৮ সালের দিকে শারীরিক সমস্যা নিয়ে ডাক্তার অসীত ভূষণ দাস স্যারের কাছে যাওয়ার জন্য বরিশালে এসেছিলাম। কিন্তু রুপাতলী বাস টার্মিনালে নামার পরে একজন লোক আমার সঙ্গে বেশ ভালোভাবে কথা বলতে থাকে। পোষাকও ভালো ছিল।
‘এক সময় সে জিজ্ঞাসা করে কোন ডাক্তারকে দেখাবেন? আমি বলি, অসীত ভূষণ দাসকে দেখাব। এরপর ওই লোক বলে ডাক্তার অসীত ভূষণ তো মারা গেছেন। তার জায়গায় নতুন আরও একজন ডাক্তার এসেছেন। সে অনেক ভালো ডাক্তার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমনভাবে সে বুঝিয়েছে যে শেষ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। যার কাছে নিয়ে গিয়েছিল তার নাম ছিল ডাক্তার মাহফুজ। এর মধ্যে আমার ভাই আমাকে ফোন করলে পুরো বিষয়টি তাকে বলি।
‘সে আমাকে সেখান থেকে বের হয়ে যেতে বলে এবং আমি দালালের খপ্পরে পড়েছি বলে জানায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, অসীত ভূষণ স্যার জীবিত রয়েছেন। তার মিথ্যা মৃত্যুর কথা ছড়িয়ে আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর এলাকার বাসিন্দা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘গত বছরের শেষ দিকে আমার মায়ের নিউরোর সমস্যা নিয়ে বরিশালের বেলভিউ ডায়াগনস্টিকে ডা. অমিতাভ সরকারের কাছে আসার উদ্দেশে বরিশালে আসি।
‘বেলভিউ ডায়াগনস্টিকের গলির মাথায় দুজন লোক নানা ছলে-বলে কথা শুরু করে এবং অমিতাভ সরকার ভারতে রয়েছেন বলে জানায়।
তিনি আরও জানান, ‘জেনারেল হাসপাতালের সামনে ভালো ডাক্তার বসে জানিয়ে আমাদের নিয়ে যায়। এরপর অনেক টেস্ট দেয়। সেগুলো করানোর পর বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করে এদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারি।’
এসব দালালদের সঙ্গে চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে দাঁতের চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন নগরীর কাশিপুর এলাকার তোহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এসেছিলাম দাঁতের ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু নিজেকে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ পরিচয় দেয়া এক যুবক অনেক জোরাজুরি করে আমাকে হাসপাতালের সামনের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়।
‘এই নিয়ে তর্কাতর্কি হওয়ার পর ওই যুবক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। ঝামেলায় জড়ানো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজনও নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেন। বিষয়টি নিয়ে আমার খটকা লাগলে খোঁজ খবর নিয়ে দেখি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কার্ড বানিয়ে এরা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেয়।’
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন নার্স জানান, ‘এ হাসপাতালে যারা থাকেন তারা বেশ ফিটফাটভাবে চলাচল করেন। দেখলে বোঝার উপায় নেই, এরা রোগীর দালাল।’
সম্প্রতি নগরীর সদর রোডের সাউথ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় এমনই এক রোগীকে। খাদিজা বেগম নামের ওই রোগী নগরীর শুভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. ভাস্কর সাহাকে দেখাতে আসলেও প্রতারণা করে তাকে সাউথ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিকের ডা. সুমন্তর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
নানা পরীক্ষার নামে পরে ওই রোগীর সব টাকা রেখে দেয়া হয়। অভিযোগ করলে পুলিশ তার টাকা উদ্ধার করে দেয়।
বরিশালের গবেষক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, ‘রোগীর দালাল হিসেবে যারা পরিচিত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। গ্রাম থেকে মানুষ শহরে চিকিৎসার জন্য কষ্টের টাকা নিয়ে আসে। সেই টাকা প্রতারণার মাধ্যমে নিয়ে যায় এই চক্রগুলো।
‘এদের যারা ব্যাকআপ দিয়ে থাকে বা যাদের ইন্ধনে এরা এসব কাজ করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘রোগীদের ভুল বুঝিয়ে প্রতারণা করছে যারা তাদের বিরুদ্ধে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পতেঙ্গা থানাধীন ১৫ নম্বর ঘাটে নোঙর করা একটি ফিশিং বোটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন- ৫৫ বছর বয়সী জামাল উদ্দিন, ৪৫ বছর বয়সী মাহমুদুল করিম ও মফিজুর রহমান এবং ২৮ বছর বয়সী এমরান। এদের মধ্যে প্রথম তিনজনের শরীরের ৮০-৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছে। অন্যজনের শরীর পুড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ।
চমেক হাসপাতালে বার্ন ও ক্যাজুয়ালটি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের বড় ধরনের বার্ন হয়েছে। এই ধরনের রোগীদের অবস্থা ভালো থাকে না।’
চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ-থানার ওসি একরাম উল্লাহ বলেন, ‘মাছ ধরার ট্রলারে ইঞ্জিন থেকে সৃষ্ট আগুনে ৪ জন দগ্ধ হয়েছে। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে লালপুর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে দুর্নীতি করার ঘোষণা দেন এ সংসদ সদস্য।
তার বক্তব্যের অংশবিশেষের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রকাশিত ওই ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘পাঁচটা বছর (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না; আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলব। যেভাবেই হোক তুলবই। এতটুক অনিয়ম আমি করবই। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’
প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আখতার। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। উনার বক্তব্য উনি বলেছেন, এখানে আমার কোনো কথা নেই।’
বক্তব্যর বিষয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার বক্তব্যে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে, অনেকেই এরকম করে। আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য খুব দুর্ভাগ্যজনক। সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে তার সহকারী এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা দুর্নীতিতে উৎসাহিত হবেন। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথের লংঘন, অন্যদিকে নির্বাচনি বিধিরও লংঘন।
‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারকাজে একজন সংসদ সদস্য ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না।’
সংসদ সদস্যের কাছে গঠনমূলক বক্তব্যেরও প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ শহরের প্রবেশপথে যানজট নিরসনে ও পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক ও ফুটপাত থেকে শতাধিক হকার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করা হয়।
প্যানেল মেয়র তসলিম মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্থায়ী কিছু ব্যবসায়ীরা ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে ব্যবসা করে আসছেন। এতে করে শহরে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পথচারীদের সুবিধার্থে যানজট দূর করতেই এই উচ্ছেদ অভিযান।
উচ্ছেদ অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ মো. তসলিম মিয়া ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানাসহ থানা পুলিশ ও পৌরসভার কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠির রাজাপুরে নদীর তীর থেকে এক ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো যুবকের মামুন হোসেন, যার বয়স ২৫ বছর। তিনি রাজাপুরের পশ্চিম সাতুরিয়া গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে।
ভ্যানচালক মামুন দুই দিন আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন জানিয়ে রাজাপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে সাতুরিয়া গ্রামের ইদুরবাড়ি এলাকায় কচা নদীর তীর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। লাশের ময়নাতদন্তসহ পরবর্তী সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে এটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা, সেটি তদন্তে বের হবে।’
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পূর্ব পূয়ালী গ্রামের আব্দুর রহিম হাওলাদারের একমাত্র ছেলে রাব্বি হাওলাদার।
২৫ বছর বয়সী রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট। ডাক্তারের পরামর্শ তার কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। বর্তমানে তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
রাব্বির কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য এতো টাকা লাগবে শোনার পর থেকেই তার কৃষক বাবা সাহায্যের জন্য ছুটছেন চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় বিত্তবানদের কাছে। কেন না তার সবকিছুই বিক্রি করে দিলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি জোগাড় করার সামর্থ্য হচ্ছে না।
রাব্বি বর্তমানে ঢাকার মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এমন অবস্থায় কৃষক বাবা তার সন্তানকে বাঁচাতে দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। দেশের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেই হয়ত বেঁচে যাবে তার সন্তান।
রাব্বির পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাব্বি হাওলাদার কয়েক মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (সেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যান তার পরিবার। সেখানে চিকিৎসক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল রাব্বির, কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরই মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ওপরে শুধু হাসপাতাল ও ওষুধের বিল দিতে হয়েছে। দরিদ্র এই পরিবারটি আত্মীয়স্বজনসহ সবার সহায়তায় ওই বিল দেয়া সম্ভব হয়।
রাব্বির মা রেভা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এভাবে আর কয়দিন চিকিৎসা করাতে পারব জানি না। কারণ আমাদের সামর্থ্য শেষ হয়ে এসেছে। শুধু টাকার অভাবে তাকে ভালো কোনো হাসপাতালেও নিতে পারছি না, কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপারেশনের ধকল সহ্য করার মতো সুস্থ অবস্থায় আনা খুব জরুরি।’
রাব্বির বাবা আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে আপনাদের ভালোবাসা ও সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন। কারণ শুধু টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার একমাত্র ছেলে অকালে ঝরে যাবে তা আমার জীবন থাকতে মানতে পারছি না।’
তাকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে ০১৯৯৭-২২৮৯৭৫ ও ০১৯৮৭-৩৬৬৫৬৮ (বিকাশ-পার্সোনাল) নাম্বারে পাঠাতে পারেন ও যোগাযোগ করতে পারেন।
আরও পড়ুন:ফরিদপুর সদরে যৌনপল্লি থেকে দুই তরুণীকে উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই পল্লির এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার রাতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত পারুল বেগম ওরফে পারু (৪৮) জেলার রথখোলা যৌনপল্লির বাসিন্দা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন আপন (৩০), জহির (৩০) ও ববি (৩৮)।
গ্রেপ্তার না হওয়া এ তিনজনের মধ্যে ববি যৌনপল্লির সর্দারনি হিসেবে পরিচিত। আপন ও জহিরের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুরের কচুয়া থানা এলাকা থেকে এক তরুণীকে গত ১০ মার্চ ঢাকায় নিয়ে আসেন আপন। দুই দিন সেখানে রেখে তাকে (তরুণী) তিন ব্যক্তির হাতে তুলে দেন তিনি। ওই তিন ব্যক্তি ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় তরুণীকে রথখোলা যৌনপল্লিতে এনে পারুর কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। পরের দিন একটি সাদা কাগজে তরুণীর স্বাক্ষর নিয়ে জানানো হয়, এখন থেকে তিনি যৌনপল্লির লাইসেন্সধারী সদস্য।
এতে আরও বলা হয়, মেয়েটিকে পারুর বাসায় রেখে ববি ও অন্যদের মাধ্যমে জোর করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। এর মাঝে মেয়েটি বাড়িতে যোগাযোগের জন্য একজন খদ্দেরকে তার ছোট বোনের মোবাইল নম্বর দেন। পরে ওই খদ্দেরের মোবাইল কলের মাধ্যমে মেয়েটির সন্ধান পায় তার পরিবার। এরপর তার মা ও ফুফা রথখোলায় এসে তাকে দেখতে পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশকে জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ যৌনপল্লিতে অভিযান চালানোর পর ফেনীর পূর্ব ছাগলনাইয়ার আরেক তরুণীও তাকে উদ্ধারে পুলিশের সাহায্য চান। ওই তরুণী জানান, তাকেও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ঢাকার মিরপুরের একটি বাসায় এক রাত রেখে রথখোলা যৌনপল্লিতে এনে পারুর কাছে বিক্রি করা হয়।
কোতোয়ালি থানার ওসি হাসানুজ্জামান জানান, যৌনপল্লিতে তরুণীকে নেয়ার ঘটনায় তার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহিম ফয়সাল মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে অভিযান চালিয়ে পারুল বেগম ওরফে পারুকে গ্রেপ্তার করে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।
নোয়াখালীর কবিরহাটে পুকুরের পানিতে ডুবে সহোদর দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের রামেশ্বপুর গ্রামের ছর আলী মাঝি বাড়ির পুকুরে বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুই শিশু হলো সাত বছর বয়সী বিবি ফাতেমা বেগম ও তার চার বছরের ভাই আবিদ হোসেন। শিশুদ্বয় ছর আলী মাঝি বাড়ির আবদুল হাইয়ের সন্তান।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি হুমায়ন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দুই ভাই-বোন সকালে ঘরের পাশে পুকুরে দাঁত ব্রাশ করতে যায়। এ সময় হাত-মুখ ধোয়ার সময় একজন পুকুরে পড়ে গেলে আরেকজন উদ্ধার করতে পানিতে নামে।
‘পরে দুজনই পানিতে ডুবে যায়। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা দুজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত বলে জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘মরদেহ স্বজনরা নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য