কেউ থাকেন লঞ্চঘাটে বা বাস টার্মিনালে, কেউ জনবহুল এলাকায়, আবার কারো অবস্থান সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকের কক্ষের সামনে। অন্যদের কাছে নিজেদের পরিচয় দেন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ। সখ্যতা গড়ে তোলার পর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মহাবিশারদ হিসেবেও জাহির করেন অনেকে।
বরিশাল নগরীতে এসব মানুষ পরিচিত ‘রোগীর দালাল’ হিসেবে। বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীদের বুঝিয়ে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে প্রতারণা করাই তাদের কাজ।
বরিশালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর অনেক রোগী ও স্বজনই এসব দালালের খপ্পরে পড়েন। এরপর চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষার নামে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল নগরীতে আসা রোগীদের টার্গেট করে থাকেন এসব দালালরা। তাদের সংখ্যা ৩০০ এর বেশি।
তারা রোগীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে প্রতারণা করে থাকেন। এর জন্য ওই সব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকদের কাছ থেকে রোগীপ্রতি নির্দিষ্ট কমিশন পান তারা।
অভিযোগ, এসব দালালদের কোনো সমস্যা হলে সমাধান করেন স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও কথিত সাংবাদিকরা। পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাও এর সঙ্গে জড়িত।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়লেই এদের পরিচয় জানা যায়। তবে জরিমানা বা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পাওয়ার পর আবার শুরু করেন একই কাজ।
স্থানীয়রা জানান, নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনাল, বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ এবং লঞ্চঘাটে যারা রোগী জন্য অপেক্ষা করেন তাদের বলা হয় ‘হ্যান্ডেল ম্যান’। দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের সঙ্গে তারা প্রথমে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরপর জানতে চান কোন চিকিৎসকের কাছে এসেছেন?
রোগী বা স্বজনরা যে চিকিৎসকের কথা বলেন সেই চিকিৎসক বরিশালে নেই বা নানা মিথ্যা তথ্য নিয়ে নির্দিষ্ট চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তারা।
এসব দালালদের অধিকাংশই থাকেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে। পরিপাটি পোশাক ও হাতে ব্রিফকেস নিয়ে দুই হাসপাতালে প্রায় ২০০ মতো দালাল চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ঘোরাঘুরি করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসক দেখানোর পর কারো কোনো পরীক্ষা করাতে হলেই তারা সুযোগ নেন। ভালো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কথা বলে রোগীদের নিয়ে যান নামসর্বস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। অভিযোগ, এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন হাসপাতালের কর্মচারীরাও।
নগরীর জনবহুল এলাকা সদর রোড, এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক, বিবির পুকুর পাড় এবং ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালের সামনেও থাকেন অনেকে।
নগরীর বাটার গলিতে থাকা এমন দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরীক্ষার জন্য যে টাকা নেয়া হয় তার ৩০ ভাগ পান তারা। কোনো চিকিৎসকের কাছে রোগী পাঠানো হলে সেই চিকিৎসকের ফি ৮০০ টাকা হলে দালাল পায় ৩০০ টাকা।
লঞ্চঘাট ও বাস টার্মিনালে থাকা দালালদের কৌশলও জানান তারা। বলেন, এসব ব্যক্তিরা প্রথমে ফুঁসলিয়ে রোগীর কাছ থেকে ফোন নিয়ে কৌশলে আউটগোয়িং কল বন্ধ করে দেন। এরপর তারা যে চিকিৎসকের কাছে এসেছেস তাদের দাদি নানি কেউ মারা গেছেন বা অন্য কোনো মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেদের ঠিক করা রিকশায় চুক্তিবদ্ধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকের কাছে পাঠায় দেন।
যে চিকিৎসকের কাছে পাঠান, তারা সব বিষয়ে পারদর্শী। নাক, কান, গলা সব রোগের সমাধানই থাকে তাদের কাছে। এরপর তারা একটার পর একটা টেস্ট দিতে থাকেন রোগীদের। গরীব রোগীদের সব টাকা হাতানো শেষে শান্ত হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ।
বরগুনার বেতাগীর বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, ‘২০১৮ সালের দিকে শারীরিক সমস্যা নিয়ে ডাক্তার অসীত ভূষণ দাস স্যারের কাছে যাওয়ার জন্য বরিশালে এসেছিলাম। কিন্তু রুপাতলী বাস টার্মিনালে নামার পরে একজন লোক আমার সঙ্গে বেশ ভালোভাবে কথা বলতে থাকে। পোষাকও ভালো ছিল।
‘এক সময় সে জিজ্ঞাসা করে কোন ডাক্তারকে দেখাবেন? আমি বলি, অসীত ভূষণ দাসকে দেখাব। এরপর ওই লোক বলে ডাক্তার অসীত ভূষণ তো মারা গেছেন। তার জায়গায় নতুন আরও একজন ডাক্তার এসেছেন। সে অনেক ভালো ডাক্তার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমনভাবে সে বুঝিয়েছে যে শেষ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। যার কাছে নিয়ে গিয়েছিল তার নাম ছিল ডাক্তার মাহফুজ। এর মধ্যে আমার ভাই আমাকে ফোন করলে পুরো বিষয়টি তাকে বলি।
‘সে আমাকে সেখান থেকে বের হয়ে যেতে বলে এবং আমি দালালের খপ্পরে পড়েছি বলে জানায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, অসীত ভূষণ স্যার জীবিত রয়েছেন। তার মিথ্যা মৃত্যুর কথা ছড়িয়ে আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর এলাকার বাসিন্দা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘গত বছরের শেষ দিকে আমার মায়ের নিউরোর সমস্যা নিয়ে বরিশালের বেলভিউ ডায়াগনস্টিকে ডা. অমিতাভ সরকারের কাছে আসার উদ্দেশে বরিশালে আসি।
‘বেলভিউ ডায়াগনস্টিকের গলির মাথায় দুজন লোক নানা ছলে-বলে কথা শুরু করে এবং অমিতাভ সরকার ভারতে রয়েছেন বলে জানায়।
তিনি আরও জানান, ‘জেনারেল হাসপাতালের সামনে ভালো ডাক্তার বসে জানিয়ে আমাদের নিয়ে যায়। এরপর অনেক টেস্ট দেয়। সেগুলো করানোর পর বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করে এদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারি।’
এসব দালালদের সঙ্গে চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে দাঁতের চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন নগরীর কাশিপুর এলাকার তোহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এসেছিলাম দাঁতের ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু নিজেকে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ পরিচয় দেয়া এক যুবক অনেক জোরাজুরি করে আমাকে হাসপাতালের সামনের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়।
‘এই নিয়ে তর্কাতর্কি হওয়ার পর ওই যুবক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। ঝামেলায় জড়ানো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজনও নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেন। বিষয়টি নিয়ে আমার খটকা লাগলে খোঁজ খবর নিয়ে দেখি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কার্ড বানিয়ে এরা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেয়।’
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন নার্স জানান, ‘এ হাসপাতালে যারা থাকেন তারা বেশ ফিটফাটভাবে চলাচল করেন। দেখলে বোঝার উপায় নেই, এরা রোগীর দালাল।’
সম্প্রতি নগরীর সদর রোডের সাউথ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় এমনই এক রোগীকে। খাদিজা বেগম নামের ওই রোগী নগরীর শুভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. ভাস্কর সাহাকে দেখাতে আসলেও প্রতারণা করে তাকে সাউথ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিকের ডা. সুমন্তর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
নানা পরীক্ষার নামে পরে ওই রোগীর সব টাকা রেখে দেয়া হয়। অভিযোগ করলে পুলিশ তার টাকা উদ্ধার করে দেয়।
বরিশালের গবেষক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, ‘রোগীর দালাল হিসেবে যারা পরিচিত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। গ্রাম থেকে মানুষ শহরে চিকিৎসার জন্য কষ্টের টাকা নিয়ে আসে। সেই টাকা প্রতারণার মাধ্যমে নিয়ে যায় এই চক্রগুলো।
‘এদের যারা ব্যাকআপ দিয়ে থাকে বা যাদের ইন্ধনে এরা এসব কাজ করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘রোগীদের ভুল বুঝিয়ে প্রতারণা করছে যারা তাদের বিরুদ্ধে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে শনিবার দুপুরে জানান অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার আবু জাফর ও ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পুরো বিষয়টির তদন্ত করছে। দলটির প্রধান হলেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের শুক্রবার বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই কোথাও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না জেলাবাসী। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক চালক হারেজ আলী বলেন, ‘কঠিন তাপ পড়চি। সূর্য মনে হচ্চি মাতার উপর চলি এসিচে। আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে বাইরি বের হয়িচি। মাজে মাজে রাস্তার পাশের দুকান থেকি শরবত খেয়ি ঠান্ডা হচ্চি।’
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম; নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
মৌসুমের প্রায় সময়জুড়েই উত্তপ্ত থাকে চুয়াডাঙ্গা। এবারও চৈত্রের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়া তাপমাত্রার এমন দাপট বৈশাখের আবহাওয়াকে জটিল করে তুলছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা অনুভব করছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ মাসের শেষের কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য