বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মহানগর পুলিশের বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠছে।
নেতা-কর্মীদের হেনস্তা অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভায় পুলিশের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন মেয়র সাদিক।
তিনি বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার মানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা।’
বরিশালের পুলিশ প্রশাসন বাইরের কোনো গোষ্ঠীর টার্গেট পূরণে ব্যস্ত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বলছে, মেয়রের মন্তব্যগুলো একান্তই তার ব্যক্তিগত। শুধু সিটি করপোরেশন নয়, পুলিশ সকল সংস্থার সমন্বয়ে নাগরিক সেবা দেয়ার কাজ করছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহানগর পুলিশের সঙ্গে মেয়র সাদিকের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরোধের শুরু এ বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে।
এদিন বরিশাল নগরীর ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ হাওলাদারকে বিসিকের ফরচুন সুজ কোম্পানিতে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে আটকে মারধরের অভিযোগ ওঠে এবং সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিবাদে কাউনিয়া থানা ঘেরাও করেন মেয়র সাদিকের অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
একপর্যায়ে সোহাগকে ছাড়াতে না পেরে তারা বরিশালের বাস, লঞ্চ, থ্রি হুইলার ও রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেন। কয়েক ঘণ্টা পর সোহাগকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
২৯ মার্চ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ড সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সহসভাপতি গোলাম রসূলসহ বেশ কয়েকজনের ওপর হামলা চালানো হয়।
৩০ মার্চ বরিশাল এয়ারপোর্ট থানায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী রিপন মাঝিসহ ছয়জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় ১০ জনের নামে চাঁদাবাজি মামলা করেন গোলাম রসূল। ওই মামলায় ১৬ মে রিপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন সকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
১৭ মে রিপন মাঝিকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে এবং তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবুর নেতৃত্বে দুপুরে মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী মোটরসাইকেল বহর নিয়ে এয়ারপোর্ট থানা ঘেরাও করেন।
রিপনকে মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন তারা।
পরে মেয়রের অনুসারী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নগরীর সোহেল চত্বরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এবং রিপনকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান।
সবশেষ ২৭ মে নগরীর ২১নং ওয়ার্ডের মানু মিয়ার লেনে ৯৯৯-এর কলে বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার টিম।
সেখানে উপস্থিত বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্না পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে পরিদর্শক আনোয়ার হোসেনকে হেনস্তা এবং পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে মান্নার বিরুদ্ধে। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল থেকে মান্না সটকে পড়েন। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এয়ারপোর্ট থানা ঘেরাওয়ের পর শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে নগরীর কালিবাড়ির সেরনিয়াবাত ভবনে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পুলিশকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ার করেন।
তিনি পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বরিশালকে অশান্তির দিকে ডেকে নেবেন না। আমি এখানে ভেসে আসিনি। আগের থেকে বরিশাল আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। এত বড় আওয়ামী লীগকে আপনারা আটকাতে পারবেন না। বরিশালে অশান্তি হলে সে দায়ভার আপনাদেরকেই নিতে হবে।’
মেয়র সাদিক বলেন, ‘যারা সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে আন্দোলন করছে, প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, তাদের পক্ষ নিয়ে আপনারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হেনস্তা করছেন। রাতের আঁধারে তাদের বাড়িতে রেড দিয়ে গ্রেপ্তার করছেন। আর যারা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন।
‘এ অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ তৃণমূলের দল। আমরা পুলিশি ক্ষমতায় চলি না, আমরা তৃণমূলের ক্ষমতায় চলি। আপনারা যা করছেন সেটা দলের জন্য বদনাম।’
২৯ মে সেরনিয়াবাত ভবনে মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ সভায়ও পুলিশের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ জানান মেয়র সাদিক।
ওই সভায় তিনি বলেন, ‘কোনো থানায় কি আমি কখনও কাউকে ছাড়াতে ফোন দিয়েছি? কাউকে মোটরসাইকেলসহ ধরলে আমি কি ফোন দেই ছাড়ানোর জন্য? সমস্যাটা কোথায়?
‘বরিশাল কি আপনাগো সম্পত্তি মনে করতে আছেন আপনারা। কার বিরুদ্ধে কাজ করতেছেন আপনারা। এই সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করতেছেন? আমার বিরুদ্ধে কাজ করতেছেন নাকি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কাজ করতেছেন? আমার বিরুদ্ধে কাজ করা মানেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কাজ করা।’
মেয়র সাদিক বলেন, ‘আমি কাজ করতেছি এইটাই কি অপরাধ আমার। আপনারা উইঠা পইরা লাগছেন আমার পেছনে। আমি তো সব শান্ত কইরা রাখছি, এটাই মনে হয় আমার অপরাধ। প্রশাসন যা করছে সেটা আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ আমাদের অভিভাবক ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানাব।’
তিনি বলেন, ’২১ নম্বর ওয়ার্ডে কী হইছে, মারামারি হইছে? মার্ডার হইছে? কী বড় ঘটনা ঘটছে যে ওইখানে দাঙ্গা পুলিশ নিয়া যাওয়া লাগছে? শুনছি ফোন নিয়া গেছে পুলিশের। ইন্টেলিজেন্সরা তদন্ত করবে বিষয়টা। এইটা একটা ষড়যন্ত্র। আমার না আমার দলের, আমার নেত্রীর ক্ষতি করতে আছে।’
মেয়র সাদিক বলেন, ‘নতুন ডিসি আসছে ভালো কথা। মন্ত্রী মহোদয়রা ইদানীং আসলে সেই চিঠিও পাই না। আমাদের সঙ্গে মন্ত্রী মহোদয়দের কথা হলে কি আপনাদের সমস্যা। এসব ষড়যন্ত্র করতে বারবার মানা করছি আপনাদের। কী কী আলাদা করতে চান আপনারা ক্লিয়ার করেন। আমি তো তদবির করতে যাই না আপনাদের কাছে। কার পারপাস সারভ করেন?
‘আপনাদের ক্ষমতা নিয়ে তো আমি এখানে হই নাই, আমি জনগণের ক্ষমতায় হইছি। জনগণ আমারে ভালোবাসে। আপনাগো পিছনে জনগণ হাঁটে না, সেটা কি আমার দোষ। প্রশাসন আমার গায়ের ওপর লাফাইয়া পড়তে চায় কেন? এটা তো আপনাদের কিছু না। বহুত সহ্য করছি, মনে করেন কি বুঝি না কিছু।’
তিনি বলেন, ‘চার পুরুষের রাজনীতি শরীরে, সবকিছুই বুঝি। আমারে ঠ্যালা দিয়া ফালাইয়া দেয়া এত সহজ না। আমার নেতা-কর্মীদের আমি ফালাইয়া দেব, আবার আমিই কোলে নিব। এর মধ্যে কেউ ওগো পকেটে ভইরা নিয়া যাইবে, সেইটা হইবে না।’
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্র নতুন না। ষড়যন্ত্রকারীরা বারবার ষড়যন্ত্র করে। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে বিতর্কিত করার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সাদিক আব্দুল্লাহ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা আমাদের।’
বিভিন্ন সভায় মেয়রের বক্তব্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খানের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
তিনি বলেন, ‘বরিশালে সন্ত্রাসীদের ঠাঁই নেই। পুলিশের ওপর যে হামলার ঘটনা, সেই ঘটনায় মামলা না হলেও বিষয়টির তদন্ত চলছে। অনুসন্ধান ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে যত বড়ই রাঘববোয়াল থাকুক না কেন তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘মেয়র সমর্থকদের প্রতিপক্ষ পুলিশ নয়। সিটি করপোরেশন জনগণের জন্য কাজ করে, আমরাও কাজ করি জনগণের জন্য। যদি কোনো জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটা আমরা বিচ্ছিন্নভাবেই নিয়েই থাকি।’
তিনি বলেন, ‘মেয়রের ব্যক্তিগত অভিরুচিতে বা মতামতে সেটা তিনি বলতে পারেন, এটা তার ইস্যু। আমরা জনসেবায় নিয়োজিত, এতে সকল সংগঠনের সহযোগিতা চাই। সেখানে যদি কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকে, তাহলে সেটি পূরণের চেষ্টা রয়েছে আমাদের।’
আরও পড়ুন:জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, ‘তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করেছিল। আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শনিবার জাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে।
‘নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেয়া হয়েছিল। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কী না সন্দেহ ছিল। তাই নির্বাচনে গিয়েছি।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিল।
‘আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল, তারা সফল হবে না। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে- এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বিএনপি এক কিংবা ১০ লাখ বা এক কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও তাদের আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসেবে দেখতে চায়। তবে তা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল ছিল না এবং আমরা গৃহপালিত বিরোধী দল হতে রাজি নই।’
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
চলমান তাপপ্রবাহে সারা দেশের সঙ্গে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাও। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ নগর জীবন। এ অবস্থায় রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে পানি ছিটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বায়ু দূষণ রোধ ও তীব্র দাবদাহে শহরকে ঠাণ্ডা রাখতে ডিএনসিসির ওয়াটার স্প্রে (পানি ছিটানো) কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘দুটি স্প্রে ক্যানন প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠাণ্ডা রাখা হবে।
‘এছাড়াও ডিএনসিসির পার্কগুলোতে স্প্রে ক্যাননের মতো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে পার্কগুলোতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে চলমান তীব্র দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে সড়কে পানি ছিটানো এবং ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সংবলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করতে পারে।’
চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। তিনি তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কাজগুলো আমাদের সবাইকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন যে চিফ হিট অফিসার সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন। বাস্তবে সিটি করপোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি করপোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই।
‘হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে সাতজন চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করেছে এবং তারা সবাই নারী।’
ওয়াটার স্প্রে পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর বনানীতে মাঝ সড়কে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপনে কাজ করে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, বিকেল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসটি বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসটি অনেক দূর নিয়ে আসে। এতে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতেও আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
মন্তব্য