পাসপোর্ট তৈরির জন্য মেঘনা উপজেলা থেকে কুমিল্লা সদরে এসেছেন ছালাউদ্দিন আহমেদ। পেশায় রাজমিস্ত্রি। ছবি, ব্যাংক ড্রাফট ও আইডি কর্ডের ফটোকপি এনেছেন পাসপোর্ট অফিসে।
তাকে জানানো হয়েছে, আবেদন ফর্মে প্রচুর ভুল। অন্তত তিনবার সংশোধন করে আনেন তিনি। তবুও ভুল থেকে গেছে। ফর্মের ভুল ঠিক করতে ঘুরতেই থাকেন ছালাউদ্দিন। তিন দিন ঘোরার পরে একজন ‘ভাইয়ের’ (দালাল) দেখা পান তিনি। তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়। সেই ভাই বলেন, সরকারি ফি-এর বাইরে আরও আড়াই হাজার টাকা দিতে হবে। তাহলে কাজ হবে। ছালাউদ্দিন রাজি হন। ওই ভাইয়ের হাতে বাড়তি আড়াই হাজার টাকা দেয়ার পরেই আবেদন জমা হলো। আর কোনো ত্রুটি ধরা পড়েনি ফর্মে।
চৌদ্দগ্রাম থেকে এসেছেন আরিফ হোসেন। জরুরি পাসপোর্ট করবেন। জরুরি পাসপোর্টে সরকারি ফি লাগে ৬ হাজার ৯০০ টাকা। পাবেন ১১ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে। আরিফ খরচ করেন ১৩ হাজার টাকা।
টাকা এত বেশি কেন? এমন প্রশ্নে নিউজবাংলাকে আরিফ জানান, আগে তিনি দালাল না ধরে বড় ভাইয়ের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু নবায়ন প্রক্রিয়া শেষ হতে এত সময় লাগে যে এর মধ্যে ভিসার মেয়াদই শেষ হয়ে যায়। অথচ ভিসার মেয়াদ ছিল কয়েকমাস। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হলে তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার পাসপোর্টের জন্য সরাসরি দালাল ধরেছেন। ঘোরাঘুরি করতে চান না।
পাসপোর্ট অফিসের ভেতর থেকে ডাক আসবে– এ আশায় সকাল থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত বসে আছেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার এক বৃদ্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার কারণে এক দালাল তার পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দিচ্ছে না।
সদর দক্ষিণ উপজেলার কামাল্লা গ্রাম থেকে পাসপোর্ট করতে আসা আবদুল মজিদ জানান, আবেদন ফর্মে সড়ক নম্বর নেই বলে পাসপোর্ট অফিস থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি যতই বলেন, তার বাড়ি গ্রামে, সেখানে সড়ক নম্বর নেই, কে শোনে কার কথা। তিনি তিন দিন ধরে ঘুরছেন।
নগরীর রেসকোর্স এলাকার মাহফুজ আলম শাকিল জানান, তার আবেদন ফর্মে দালালের কোনো সিল নেই। তাই তিনি তার পাসপোর্ট আবেদনটি জমা দিতে পারছেন না। শুধুই ভুল ধরা হচ্ছে।
বোন ও ভাগিনা নিয়ে ঘুরছেন মোকাদ্দেস। দালালের কাছে না যাওয়ায় তার বোন ও ভাগিনার পাসপোর্ট হচ্ছে না।
কুমিল্লার পাসপোর্ট অফিসজুড়ে এরকম অভিযোগের পাহাড়। দালালের দৌরাত্ম্যের হাত থেকে কারও রেহাই নেই।
অফিসের পাশের চা দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে বড় স্যার পর্যন্ত সবার টেহা লাগে। ভাইরে কি কমু পাসপোর্ট অফিসের মাডিও টেহা চায়। না দিলে ঘুরবেন। জুতা ক্ষয় অইব। জুতা ছিঁড়বো – আর কিছু অইতো না।’
পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানায়, সরকারি নিয়মে ২১ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে খরচ হয় ৩ হাজার ৪৫০ টাকা, আর জরুরি প্রয়োজনে ১১ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে খরচ হয় ৬ হাজার ৯শ টাকা।
তবে সরকার নির্ধারিত ফিতে কেউ পাসপোর্ট করতে পেরেছেন এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়নি। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা।
কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসে ঘুরে বিভিন্ন সেবাগ্রহিতার সঙ্গে কথা বলে এমন সব তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে হয়রানির শিকার হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
সেবাগ্রহিতাদের অনেকে বলেছেন, দালাল ছাড়া যদি আবেদনটি জমা হয়েই যায়, তবুও নিষ্কৃতি নেই। অফিসের ভেতরে সার্ভার নষ্ট, অফিসার আসেননি, ছবিতে সমস্যা, জন্ম তারিখ ভুল এমন হাজারও সমস্যা তুলে মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় পাসপোর্ট ডেলিভারি।
ভুক্তভোগী কয়েকজনের অভিযোগ, পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে তৈরি হয় পাসপোর্ট। বাইরে থেকে দালালরা নিয়ন্ত্রণ করে পাসপোর্ট অফিস। দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলে পড়তে হয় হয়রানিতে।
নগরীর ভেতর রেসকোর্স (পুরাতন পাসপোর্ট অফিস), ঝাউতলা, কান্দিরপাড়ে অন্তত ৩০টি এবং পাসপোর্ট অফিসের আশেপাশে আরও অন্তত কুড়িটি দালাল চক্রের হাতে জিম্মি পুরো পাসপোর্ট অফিস।
বিভিন্ন সময় র্যাবের অভিযানে দালালরা ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে আবারও জড়িয়ে পড়েন দালালিতে।
দালাল ধরতে অভিযান পরিচালনা করেছে র্যাব। র্যাব কুমিল্লা-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর তালুকদার নাজমুস সাকিব জানান, গত এক বছরে নগরী ও পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালিয়ে ৫৪২টি পাসপোর্টসহ ৮ দালালকে আটক করা হয়। এ সময় দালালদের কাছ থেকে ভুয়া সিল সনদসহ পাসপোর্ট তৈরির বিভিন্ন অনুষঙ্গ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া নানা অভিযোগে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়। তারপরেও কমছে না দালালদের দৌরাত্ম্য।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক নুরুল হুদা বলেন, প্রিন্টিং সমস্যার কারণে অনেক সময় পাসপোর্ট আসতে দেরি হয়। এ ছাড়া আবেদনে ভুল তথ্য, পুলিশ প্রতিবেদনে বিলম্বসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে মানুষ সঠিক সময়ে পাসপোর্ট পায় না।
আবেদনপত্রে দালালের সিল না থাকলে পাসপোর্ট হয় না, এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ক্যামেরার সামনে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, দালাল নেই এমন না। তবে দালাল আগের চেয়ে কমেছে।
আরও পড়ুন:দেশের তিন জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র এবং পাঁচ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ এবং টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলার পাশাপাশি রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার বেলা তিনটায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ। একই দিনে পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
তাপমাত্রার বিষয়ে অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করায় ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় ‘হাতবোমার’ আঘাতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কানাইপুরে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় দক্ষিণ কানাইপুরের প্রয়াত মালেক সরদারের ছেলে দুবাই প্রবাসী রিপন সরদার বাড়িতে আসেন। এ খবর পেয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ একই এলাকার আনসার হাওলাদারের ছেলে দেলোয়ার হাওলাদার লোকজন নিয়ে রিপনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় ঘরে থাকা মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
এ ঘটনায় পরবর্তীতে গত ২৩ এপ্রিল রিপন সরদারের স্ত্রী রুনিয়া বেগম বাদী হয়ে কালকিনি থানায় ২২ জনের নামে একটি মামলা করেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এরই জেরে শুক্রবার সন্ধ্যায় রিপনের চাচাত ভাই ও আলীনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহীদ পারভেজের সমর্থক জামাল সরদার স্থানীয় বাজারে যান। মাঝপথে সাবেক চেয়ারম্যান মিলন সরদারের কর্মী মহসিন লোকজন নিয়ে কুপিয়ে তাকে জখম করে বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় একাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলাউল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রিপন হাওলাদারের আগের ঘটনার মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন:দাবদাহ আর বৃষ্টিহীনতায় পুড়ছে মাদারীপুরের পাটক্ষেত। বৈশাখের তপ্ত রোদে পাটক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পাটের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেয়ায় যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তেমনি খরায় জমির আগাছা পরিষ্কার করতে পারছেন না কৃষকরা।
এমনটা চলতে থাকলে উৎপাদন অনেকটা হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনের তীব্র দাবদাহে পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতেই মরে যাচ্ছে পাট গাছ। কোথাও শুকিয়ে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে ঘন ঘন সেচ দিয়েও গাছের আশানুরূপ পরিবর্তন আনতে পারছেন না।
অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছের বৃদ্ধি না হওয়ায় জমিতে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে।
কৃষকরা জানান, এবার প্রতি বিঘা পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকার মতো। যা গতবারের চেয়ে অন্তত দুই হাজার বেশি। এরপরে গাছ শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য সেচ দিচ্ছেন তারা। ফলে আরও বাড়তে পারে উৎপাদন ব্যয়।
খোয়াজপুরের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমে মাঠ ফেটে চৌচির। পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। একটুখানি বড় হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন চললে এবার পাট আবাদ ধসে পড়বে। অনেকেই সেচ দিলেও এক দুই দিন পরে আবার শুকিয়ে যায়। এতে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠছে।’
আর মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার ৩৭ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বপন কাজ শেষ হয়েছে এবং অনেক স্থানে চারা বড় হয়ে গেছে, কিন্তু রোগের কারণে পাটের ক্ষতি হওয়ায় চাষিদের বিকেলে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবদুল মতিন বিশ্বাস বলেন, ‘এই গরমে পাটের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে কৃষকদের বলছি, যেন বিকেলে সেচের মাধ্যমে পাট গাছ জীবিত রাখে। এতে গাছ মরবে না।’
মাদারীপুর জেলায় অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পাটের অবস্থান শীর্ষে। গত বছর পাটের মূল্য ভাল পাওয়ায় কৃষকরাও এবার বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মন্তব্য