২ দশমিক ৯৪ ট্রিলিয়ন ডলার জিডিপির ভারত বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ। ভারতের মোট বাণিজ্যের ১ দশমিক ৭ থেকে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হয় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সঙ্গে। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক জন্মলগ্ন থেকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বাংলাদেশ সব সময়ই কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে থাকে। দুই দেশের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক সম্পর্ক সব সময়ই পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতার ভিত্তিতে আবর্তিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সর্ববৃহৎ সীমান্ত হওয়ায় ট্রানজিট, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও অন্যান্য অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ভারত বাংলাদেশের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল।
করোনা মহামারির ফলে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এক কঠিন সংকট মোকাবিলা করেছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি আবারও খাদের কিনারায় এসে ঠেকেছে। এর মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান গভীর সংকটে পতিত হয়েছে। মালদ্বীপ, ভুটান ও নেপালের অর্থনীতিও আক্রান্ত। রিজার্ভ সংকট ও মূল্যস্ফীতির ফলে এসব দেশে নাগরিকদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা সত্ত্বেও বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, যদিও এ দেশ দুটির অর্থনীতি এ অঞ্চলের অন্য প্রতিবেশীদের চেয়ে অনেকটাই স্থিতিশীল।
দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা
ইউক্রেন যুদ্ধ ভারতসহ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারত ও বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের বাজারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে আকাশছোঁয়া। দুই দেশেরই আমদানি ও রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের অর্ডারের পরিমাণ কমেছে। তবে প্রতিবেশী দেশ দুটির অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের কারণে অর্থনীতি গভীর সংকটে পড়েনি। বিপরীতে শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপের মতো দেশগুলোর অর্থনীতি পর্যটন খাতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকায় মহামারি ও যুদ্ধের ধাক্কায় সেখানকার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের সঙ্গে আবর্তিত হয়ে থাকে। রাশিয়ার সাথে আমদানি-রপ্তানি বিঘ্নিত হওয়ায় এসব দেশের অর্থনীতিতেও মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। ফলে এসব দেশ দক্ষিণ এশিয়া থেকেও আমদানি কমিয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানি হ্রাসের মূল কারণ।
বর্ধিত জনসংখ্যা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ধীরগতির অন্যতম কারণ। সেই সাথে মহামারি ও যুদ্ধে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির ফলে মাথাপিছু আয় কমে আসবে, যা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরবে। যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বাণিজ্যিক অবরোধের ধাক্কায় এ অঞ্চলের আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে, যা কতদিনে শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
যুদ্ধের ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনগোষ্ঠী বিদেশের শ্রমবাজারের ওপর নির্ভরশীল। নেপালের জিডিপির ২৭ শতাংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে। ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী দেশ। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি কমতে থাকায় এসব দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। মহামারির কারণে ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বৈদেশিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৪০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামাঞ্চলগুলো মূলত কৃষিভিত্তিক। মহামারিকালীন কৃষিপণ্যের পরিবহন ও রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি ও এ খাতের ওপর নির্ভরশীল বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। মহামারির ধাক্কায় অনানুষ্ঠানিক খাতও বিপর্যস্ত হয়েছে। সরকার এ খাতের উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নিলেও প্রায় সময়ই এর সমস্যাগুলো উন্নয়ন কার্যক্রমের আড়ালে থেকে যায়। তেলের দাম বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত না হলে অনানুষ্ঠানিক খাত মুখ থুবড়ে পড়বে।
মহামারি খাদ্য পরিবহন ও সাপ্লাই চেইনকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে। পর্যাপ্ত উৎপাদন সত্ত্বেও তা ভোক্তার কাছ পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আন্তঃসীমান্ত পরিবহন বন্ধ থাকায় ও অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থা সীমিত করায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিঘ্নিত হয় এবং একই সঙ্গে স্থানীয় ফুড মার্কেটও স্থবির হয়ে যায়। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বের অন্যতম খাদ্য রপ্তানিকারক দুটি দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খাদ্য রপ্তানি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায়ও সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। খাদ্যসংকট এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে মূল্যস্ফীতির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের উদ্বাস্তু শরণার্থীদের প্রতি পশ্চিমের মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাংলাদেশে বসবাসরত বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী জনগোষ্ঠীর ওপর থেকে মিডিয়ার মনোযোগও সরে গেছে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার উদ্ভূত অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচতে সেখানকার একটি জনগোষ্ঠীর ভারতে আশ্রয় নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেরই আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রয়োজন দুই দেশের সহযোগিতা
বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি সহযোগিতাসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ সেপ্টেম্বর থেকে দিল্লি সফরে আছেন। এর আগে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও সংযোগ বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করেন। চলমান সংকটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান সফরের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে তা দেশ দুটির অর্থনীতির গতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। তারপরও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল ১০ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার, যদিও এ হিসাব করা হয়েছে অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য, আন্ডার ইনভয়েসিং, বাংলাদেশ থেকে ভারতের রেমিট্যান্স এবং ভারতে বাংলাদেশের মেডিক্যাল ও পর্যটনের হিসাবকে বাইরে রেখে। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে দুই দেশকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পণ্য পরিবহনে বিভিন্ন জটিলতা রোধে কাস্টমসের প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজ করতে হবে। পণ্য পরিবহন সহজ করতে বন্দরের অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের প্রথম দিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে ভারত কোনো জরুরি পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করলে তা আগে থেকে জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এতে বাংলাদেশ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।
খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোর মধ্যে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষায় সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মার্চ মাসে জি-৭ সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তা মিশন ঘোষণা করেন, যেখানে তিনি আফ্রিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করার কথা বলেন। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার সাফল্য উন্নত দেশগুলোকে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের খাদ্য ও কৃষিপণ্যের অন্যতম ক্রেতা দেশ ভারত। ভারতের সাথে আমদানি ও রপ্তানির নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখতে পারলে বাংলাদেশের কৃষি খাত লাভবান হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে কুশিয়ারা নদীর ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলনের ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। এ পানি উত্তোলন করতে পারলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে।
নদী শুকিয়ে যাওয়ায় শীতকালে নেপাল ও ভুটান দুই প্রতিবেশী দেশ মারাত্মক বিদ্যুৎ সংকটে পড়ে। ভুটানের সাথে জলবিদ্যুৎ সহযোগিতার চুক্তির জন্য বাংলাদেশ ভারতের সমর্থন প্রত্যাশী। আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ রপ্তানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক রয়েছে। নেপাল ও ভুটানের সাথে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংযোগ তৈরির জন্য ভারতের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট নিতে হবে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটানের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুতের বাজার বিস্তৃত করা সম্ভব, যা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সহযোগিতার সম্পর্কের ওপর নির্ভর করছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভারতের সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠককালে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ফলপ্রসূ সহযোগিতা বৃদ্ধির অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সংযোগ বৃদ্ধি। ট্রানজিট বৃদ্ধির মাধ্যমে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলের মধ্যে টেকসই ও কার্যকরভাবে পণ্যের বিনিময় করা সম্ভব। ২০১৬ সাল থেকে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন সহজ করার জন্য অত্যন্ত কম ট্রানজিট ফিতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ থেকে ট্রানজিট সুবিধা পেলেও ভুটান ও নেপালের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সহজ করার জন্য নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না ভারত। ট্রানজিট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দুই দেশেরই বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে।
সড়ক, রেলপথ ও বন্দর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ভারত বাংলাদেশকে সম্প্রতি ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে বাংলাদেশ ভারত থেকে ঋণ সহযোগিতা পেয়েছে, যার মধ্যে আছে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌপথ সংস্কার ও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্প। বাণিজ্য ও সংযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবিত ভারত-বাংলাদেশ সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সেপা) সইয়ের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নতুন গতি পাবে। সীমান্ত হাট বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি শুল্ক মওকুফ, পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, অবকাঠামোগত উন্নতি প্রভৃতি সেপার অন্যতম লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে সেপা চুক্তি সই হবে তার অন্যতম সফলতা।
বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা দুই দেশের জন্যই ‘উইন উইন সিচুয়েশন’ তৈরি করবে। দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য, যোগাযোগ, জ্বালানি ও খাদ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উভয়ের অর্থনীতিই লাভবান হবে, যা এ অঞ্চলের অন্য অর্থনীতিগুলো থেকে বাংলাদেশ ও ভারতকে ব্যতিক্রমী করে তুলবে।
নিশাত তাসনীম: দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষক।
আরও পড়ুন:
দেশের বাজারে পাঁচ দিনে চতুর্থবারের মতো কমল স্বর্ণের দাম। শনিবার ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমানো হয়েছে। সে হিসাবে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরি দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ১২ হাজার ৯৩১ টাকা।
জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বাজুস এর আগে ২৩, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ২৩ এপ্রিল তিন হাজার ১৩৮ টাকা, ২৪ এপ্রিল দুই হাজার ৯৯ টাকা এবং ২৫ এপ্রিল ৬৩০ টাকা কমানো হয় প্রতি ভরিতে।
এর আগে টানা তিন দফা স্বর্ণের দাম বাড়ায় বাজুস। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল এক হাজার ৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল এক হাজার ৭৫০ টাকা এবং ১৮ এপ্রিল দুই হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নির্ধারিত এই দাম শনিবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট থেকেই কার্যকর হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ এক লাখ ১২ হাজার ৯৩১ টাকা, ২১ ক্যারেট এক লাখ সাত হাজার ৭৯৯ টাকা ও ১৮ ক্যারেট ৯২ হাজার ৪০২ টাকা। তবে সব ধরনের স্বর্ণের দাম কমলেও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম বাড়িয়ে প্রতি ভরি ৭৬ হাজার ৮৪২ টাকা করা হয়েছে।
স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে রুপার দাম। ক্যাটাগরি অনুযায়ী বর্তমানে ২২ ক্যারেটে প্রতি ভরি রুপার দাম দুই হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের দাম দুই হাজার ছয় টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম দুই হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম এক হাজার ২৮৩ টাকা।
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন চেয়ারপারসন নির্বাচিত হলেন ফারুক আহমেদ।
ট্রাস্টি বোর্ডের ৬৬তম সভায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফারুক আহমেদ ২৭ এপ্রিল থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত ফারুক আহমেদের উন্নয়ন খাতে রয়েছে বিস্তৃত অভিজ্ঞতা।
তিনি এক সময় ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন এবং ঢাকায় বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেনেভাভিত্তিক গ্যাভি, দ্যা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (এঅঠও)-এর বোর্ড সদস্য ছিলেন, এছাড়া তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ফারুক আহমেদ সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি) এন্টারপ্রাইজের পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ওয়ার্কিং গ্রুপেরও একজন সদস্য।
ফারুক আহমেদ ২০২০ সালের ১৬ মার্চ থেকে আরডিআরএস-এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আরডিআরএস বিশ্বাস করে, ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে সংস্থাটি দেশজুড়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখতে এবং এ সম্পর্কিত কার্যক্রমকে বেগবান করতে সক্ষম হবে। প্রেস রিলিজ
উৎসবমুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়েছে ১৩৭তম বন্দর দিবস।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বন্দর ভবন চত্বরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
ওই সময় বোর্ড সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর মোহাম্মদ মাহবুবুবর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পতাকা উত্তোলনকালে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত সব জলযান ও জাহাজ থেকে একনাগাড়ে এক মিনিট হুইসেল বাজানো হয়। এরপর বন্দর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বন্দর দিবসের কেক কাটেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ, বন্দরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা।
কর্ণফুলীর মোহনায় ১৩৬ বছর আগে ২৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সালামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়।
১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং নির্মাণ হয়। একই বছরের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। এরপর ১৮৯৯ থেকে ১৯১০ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার এবং আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগ সাধন হয়।
১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে টানা তৃতীয় দিনের মতো কমেছে স্বর্ণের দাম। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে ৬৩০ টাকা। সে হিসাবে স্বর্ণের ভরি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা। আগের দিন বুধবার তা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট থেকে স্বর্ণের নতুন নির্ধারিত দাম কার্যকর হবে।
বাজুস এর আগে চলতি এপ্রিল মাসের ৬, ৮ ও ১৮ তারিখ তিন দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ভালো মানের স্বর্ণের ভরিতে ৬ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা ও ১৮ এপ্রিল দুই হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়। মাঝে ২০ এপ্রিল ভরিতে ৮৪০ টাকা দাম কমানোর পরদিন ২১ এপ্রিল আবার ৬৩০ টাকা বাড়ায় বাজুস।
এবার শুরু হয় দাম কমানোর পালা। সবশেষ দাম বাড়ানোর দু’দিন পর ২৩ এপ্রিল ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে তিন হাজার ১৩৮ টাকা ও ২৪ এপ্রিল দু’হাজার ৯৯ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। আর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ভরিতে ৬৩০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ টানা তিন দিনে স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে পাঁচ হাজার ৮৬৮ টাকা।
সোনার দামে এমন উত্থান-পতনের কারণ জানতে চাইলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন নতুন পদ্ধতি বা পলিসি অনুসরণ করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করি। সেটি হচ্ছে বিশ্ব স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি।
‘এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমত তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত তখন বাড়াতাম।’
তিরি আরও বলেন, ‘এখন আমরা আমাদের স্বর্ণের সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে স্বর্ণের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় উঠা-নামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করে থাকি। সেক্ষেত্রে দিনে দু’বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।’
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সমগ্র বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।
যদিও একটি শ্রেণি বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তবে দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে বারবার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেননি অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গতকাল ফ্লোর প্রাইসমুক্ত সব শেয়ারে একদিনের দর কমার নিম্নসীমা (সার্কিট ব্রেকার) ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপ বাজারকে আবারও টেনে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেহভাজন বেশকিছু লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে। এতে বিশেষ একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও এতে জড়িত রয়েছে। বাজারে অবাঞ্ছিত বিক্রির আদেশ দিয়ে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে একটা শ্রেণি স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু ট্রেডার নিজেদের মধ্যে যোগশাজসের মাধ্যমে প্রথমে কম দরে শেয়ার বিক্রি করত। পরে তাদের দেখাদেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করত তখন তারা আবার কম দরে শেয়ারগুলো কিনে নিত। এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করে প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে ভালো শেয়ারগুলোর দাম কমাত। এই কাজে তাদের বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও সহযোগিতা করত।’
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর কমার কথা নয়। গুটি কয়েক অসাধু ট্রেডারের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী চাচ্ছেন বর্তমান কমিশন বিদায় হয়ে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক, যাতে তারা নতুন করে আরও সুযোগ নিতে পারেন। তারাই বিভিন্ন দুর্বল শেয়ারে কারসাজি করে সুবিধা নিচ্ছেন।
‘ফোর্সড সেলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার তারা কম দরে কিনে নিচ্ছেন। কমিশনের উচিত হবে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, যাতে তারা বারবার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার সাহস না পায়।’
এদিকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দরভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আদেশে জানানো হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের এ সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকের এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ বাজারে কারসাজি রোধ করবে। এটি সন্দেহভাজন লেনদেন বন্ধ করবে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো শেয়ার বর্তমানে আন্ডারভ্যালুতে আছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
সার্কিট ব্রেকার বাজারের দরপতন ফেরাতে ব্যর্থ হলে আবারও ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করছি, আমাদের বাজারে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস দিতে হবে না। শিগগিরই বাজার একটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।’
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম একদিনের ব্যবধানে আরেক দফা কমেছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে দু’হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বলা হয়েছে,
স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন নির্ধারিত দাম বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট থেকে কার্যকর হবে।
বাজুস এর আগের দিন মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়ে ওই দিন থেকে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে দুদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ৫ হাজার ২৭৭ টাকা।
নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৯৫ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ভরি ১ হাজার ৭১৪ টাকা কমিয়ে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা।
অবশ্য স্বর্ণালঙ্কার কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের এর চেয়ে বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সে সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় নূন্যতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৫৮ টাকা।
স্বর্ণের দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার ভরি ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য