পৌরসভা নির্বাচনের পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট শেষ হলো।
আগের চার দফার মতোই এবারও সকাল থেকে কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যায়। আবার কোনো কেন্দ্রে ভোটার ছিল একেবারেই কম।
কোথাও ভোট নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ নেই, আবার কোথাও আছে বিস্তর অভিযোগ। সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে।
২৯ পৌরসভায় রোববার সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরুর পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা কোনো রকম সহিংসতা ছাড়া নির্বিঘ্নেই কাটে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটতে থাকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভোট বর্জন।
নীলফামারীর সৈয়দপুর, জামালপুর, ঝিনাইদহের মহেশপুর, রাজশাহীর চারঘাট ও জয়পুরহাটে ভোট বর্জন হয়েছে।
রাজশাহীর চারঘাট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কেন্দ্রের বাইরে হয়েছে ককটেল বিস্ফোরণ। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে। নীলফামারীতে নির্বাচনি সহিংসতায় একজন নিহত হয়েছেন।
এর আগে প্রথম দফায় গত ২৮ ডিসেম্বর, দ্বিতীয় দফায় ১৬ জানুয়ারি, তৃতীয় দফায় ৩০ জানুয়ারি ও চতুর্থ দফায় ভোট হয়েছে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি।
নীলফামারী
নীলফামারীর সৈয়দপুরে পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে বাধা প্রদান, কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম।
সৈয়দপুরে জাতীয় পার্টির প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর বেলা সোয়া ১টার দিকে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন।
সৈয়দপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহতের নাম ছোটন অধিকারী। তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলামের সমর্থক ছিলেন বলে জানা গেছে।
জামালপুর
জামালপুর পৌরসভায় ভোট বর্জন করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন।
শহরের সরদারপাড়ায় নিজ কার্যালয়ে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে পুনরায় ভোট নেয়ার দাবি জানান।
ওয়ারেছ আলী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘পৌরসভার সব কয়টি কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটাররা নিজের ভোট নিজে দিতে পারছেন না। তাই ভোট বর্জন করলাম।’
ঝিনাইদহ
কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী আমিরুল ইসলাম খান চুন্নু। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তার কাছে আসেনি।
চুন্নু বলেন, ‘ভোট শুরুর পর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকরা নির্দিষ্ট প্রতীকে জোরপূর্বক ভোট নিচ্ছেন। শুরু থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্ট বের করে দিয়েছেন।’
কালীগঞ্জ পৌরসভায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উভয় পক্ষের অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর প্রার্থী মেহেদী হাসান সজল ও আরিফুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দুই প্রার্থীর সমর্থকরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু করে।
পুলিশ ও বিজিবি তাদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি, ভোটও স্বাভাবিকভাবে চলছে বলে জানান কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
পৌর এলাকার সরকারি কলেজ ভোটকেন্দ্রের পাশের সড়কে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রইছ জানান, ককটেল বিস্ফোরণের কোনো খবর তিনি পাননি। তার দাবি, সব ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
রাজশাহী
রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভার বিএনপির প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বিকুল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
মিঞাপুরের নিজ বাড়িতে রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নির্বাচন বর্জন করেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার প্রহসনের নির্বাচন করছে। সব কেন্দ্র থেকে আমার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থক ও ভোটারদের আঙুলের ছাপ নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।’
এর আগে সারদা থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুটি ককটেলের মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়। অন্যটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় ছিল। পরে পুলিশ সেটি নিষ্ক্রিয় করে।
ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণের এই ঘটনার জন্য প্রধান দুই প্রার্থী একে অন্যকে দুষছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী একরামুল হক বলেন, ‘এটা বিএনপি ও জামায়াত ক্যাডারদের কাজ। তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতেই এ হামলা ঘটিয়েছে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:বৃহত্তর চট্টগ্রামে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।
বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত ও অপর একজন আহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক ও হাটহাজারী পৌরসভার প্রশাসক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু শনিবার বলেন, ‘কয়েক দিনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আমাদের তিনটি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো ও সড়কে নৈরাজ্যের প্রতিবাদসহ চার দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল (রোববার) সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলায় এই ধর্মঘট পালিত হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে সোমবার বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হন। এর প্রতিবাদে ওইদিন থেকেই ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাসে আগুন দেয়া হয়।
বুধবার ওই বাসের চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা শান্ত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। যদিও জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সে সঙ্গে দাবি আদায়ে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আশড়ন্ড গ্রামের আম চাষি রবিউল ইসলাম ১০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছেন। গত কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আমের গুটি ঝড়ে পড়েছে। পানি ও ওষুধ স্প্রে করেও মিলছে না সুফল।
শুধু রবিউল নয়, নওগাঁর সব আম বাগানগুলোতে বর্তমানে একই অবস্থা।
আমের নতুন রাজধানী হিসেবে খ্যাত নওগাঁর আম চাষিরা জানান, টানা দুই সপ্তাহ ধরে গরম ও তাপপ্রবাহে কারণে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। পানি সেচসহ নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও ঝরে পড়া থেকে ঠেকানো যাচ্ছে না আমের গুটি। তাই চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
এমন অবস্থায় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন বাড়তি যত্ন নিলে গুটি পড়া রোধ অনেকটাই সম্ভব।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩০০ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৪ দশমিক ২৪ টন হিসেবে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, এবার আশানুরূপভাবে আমের দেখা নেই। আমের গুটি ঝরে পড়ে আছে রোদের তীব্রতায়।
চাষিরা জানান, খরা দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে গুটিও ঝরতে থাকবে।
বৈশাখের শুরু থেকে তাপদাহে পুড়ছে নওগাঁ। শনিবার বেলা ১১টায় নওগাঁয় তাপমাত্রার পারদ উঠে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানায় জেলার বদলগাছী স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
আম চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘১২ বিঘা জমিতে আমের বাগান আছে আমার। এবার সব গাছে মুকুল কম এসেছিল। যেটুকু ছিল, তা নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে তীব্র গরমে অধিকাংশ গাছের গুটি ঝরে গেছে। অনেক গাছ গুটিশূন্য হয়ে আছে। এতে উৎপাদন অনেক কম হবে বলে ধারণা করছি।’
পোরশা উপজেলার আম চাষি মোজাম্মেল ইসলাম বলেন, ‘এবার ৩০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। গাছে গুটি কম থাকায় হতাশা ও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। গত বছর প্রচুর আম হয়েছিল। সে তুলনায় এবার অনেক কম পাব। অধিকাংশ গুটি ঝরে গেছে। ফলনে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে বলে মনে করছি।’
নিয়ামতপুর উপজেলার আম চাষি বিজন ঘোষ বলেন, ‘এবার ১৫ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছি। গুটি পড়া রোধে পানি, ওষুধ দেয়ার পরও তীব্র গরম আর রোদের কারণে আমগুলো ঝরে পড়ছে। গাছে আম টেকানো যাচ্ছে না। আবার কালবৈশাখি ঝড় হলে আম নষ্ট হতে পারে মারাত্মকভাবে।’
সাপাহার উপজেলার স্থানীয় বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, ‘এ এলাকা এমনিতেই পানি সংকটাপন্ন এলাকা। এর মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ, কোনো বৃষ্টি নেই। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে যাবে।
‘যে সব বাগানগুলোতে সেচের ব্যবস্থা আছে সে সব বাগানগুলোতে সেচ দেয়া হচ্ছে। আর যে সব বাগানে সেচের ব্যবস্থা নেই, সে সব বাগানগুলো থেকে আম ঝরে যাচ্ছে।’
এমন অবস্থায় তিনি সরকারের কাছে বাগানগুলোতে যেন সেচের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় তার দাবি জানান।
এ বিষয়ে নিয়ে কথা হলে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মেহেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছরই স্বাভাবিকভাবে এমন সময় গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়ে, তবে এই সময়ে গাছে বাড়তি পরিচর্যা করলে অস্বাভাবিকভাবে গুটি ঝরে পড়া বন্ধ হবে।
‘আম গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচের পাশাপাশি প্রয়োজনে গাছের পাতায় পানি স্প্রে করা যেতে পারে। আমরা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের আমের গুটি ঝরা রোধে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ে কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ আমের গুটি ঝরে যাওয়ার পরও যে পরিমাণ আম থাকবে তা দিয়েই আমাদের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব, তবে এমন পরিস্থিতিতে আমরা আম চাষিদের মাঠ পর্যায়ে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:বরিশালের বাকেরগঞ্জে শনিবার পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়ে থাকা তারে স্পৃষ্ট হয়ে দুই শিশু সন্তানসহ এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
বেলা পৌনে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আফজাল হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।
প্রাণ হারানো তিনজন হলো উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের ঢালমারা গ্রামের রিয়াজ মোল্লার স্ত্রী সনিয়া বেগম (২৫), তার ৯ বছর বয়সী ছেলে সালমান ও ১২ বছরের মেয়ে রেজবীনা।
বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, ‘ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে মা ও তার দুই শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে রয়েছি। বিস্তারিত জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘বাগানের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পানির মধ্যে পড়ে রয়েছে। পাশে লেবু গাছ রয়েছে।
‘প্রথমে শিশু ছেলে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়। তাকে রক্ষা করতে মা ও বোন গিয়ে তারাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে।’
ইউএনও জানান, ঘটনাস্থলে তিনিসহ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম রয়েছেন। তারা ঘটনার তদন্ত করছেন। এ ঘটনায় দায়িত্বের অবহেলার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিয়ামতি ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তফা কামাল হাওলাদারের স্ত্রী মমতাজ বেগম জানান, বাড়ির পাশে বাগানের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ডোবায় পড়ে ছিল। দুই ভাই-বোন লেবু ছিঁড়ে খেলছিল। ওই সময় লেবু ডোবায় পড়ে যায়। ওই লেবু আনতে ছেলে নেমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তখন মেয়ের চিৎকারে মা এসে তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তখন মাকে ধরে মেয়েও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়।
তার কীভাবে ছিঁড়ে পড়ে ছিল, তা কেউ জানাতে পারেনি জানিয়ে মমতাজ বেগম বলেন, ‘বিদ্যুতের লোকদের বলা হয়েছিল বাগানের ওপর দিয়ে যাওয়া তার যেকোনো সময় ছিঁড়ে পড়তে পারে, কিন্তু তারা গুরুত্ব দেয়নি।’
পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ বাকেরগঞ্জ জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে পৃথক দুইটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না পেলে বিষয়টি বলতে পারব না।’
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহ সদরে বাসের সঙ্গে সিএনজি চালিত অটোরিকশার ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন।
উপজেলার আলালপুর এলাকা শনিবার বেলা ১১টার দিকে সদরের আলালপুর এলাকায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মাঈন উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জেলার তারাকান্দা থেকে যাত্রীবাহী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছিল। ময়মনসিংহ সদরের আলালপুর এলাকা পর্যন্ত আসতেই বিপরীত দিক থেকে আসা শেরপুরগামী একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যান।’
তিনি জানান, এ সময় আশপাশের লোকজন আহত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
নিহতদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি মাঈন উদ্দিন।
ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বারের সম্পৃক্ততার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় মধুখালীর ঘটনা পরবর্তী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডিসি কামরুল আহসান তালুকদার।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও ওয়ার্ড মেম্বার অজিত কুমার সরকারকে ধরিয়ে দিতে পারলে বা তাদের ধরতে কোনো প্রকার তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা দেন তিনি।
ডিসি বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও মেম্বার এখন পলাতক। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শনাক্ত করতে বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করেছে। বিমানবন্দর ও সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে, যাতে তারা দেশত্যাগ করতে না পারে।
‘এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে যেকোনো প্রকার তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।’
গত ১৮ এপ্রিল রাতে ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্দেহের জেরে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আহত হন আরও পাঁচ শ্রমিক।
পিটুনিতে হতাহতের ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়। এরই মধ্যে তিন মামলায় পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কুমিল্লার ম্যাজিক প্যারাডাইজ পার্কে শুক্রবার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাকসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ কায়সার আলী, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ শাব্বির এবং সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু ছাঈদ মো. ইদ্রিস।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নোয়াখালী জোনপ্রধান এ. এফ. এম আনিছুর রহমান।
সম্মেলনে ব্যাংকের কুমিল্লা জোনপ্রধান মুনিরুল ইসলাম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট খালেদ মাহমুদ রায়হান, এফসিসিএসহ প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, নোয়াখালী জোনের অধীন শাখাগুলোর প্রধান, উপশাখা ইনচার্জ, সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য