মোটরসাইকেলে চিকিৎসক, আর গাড়িতে যাচ্ছিলেন উপসচিব। পথে উপসচিবের সরকারি গাড়িতে ধাক্কা লাগা নিয়ে দুই পক্ষের বাদানুবাদ।
একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসে ট্রাফিক পুলিশ। উপসচিব তার ভিজিটিং কার্ড ট্রাফিকের সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর ওই চিকিৎসককে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও থানায় আটকে থাকতে হয় প্রায় দুই ঘণ্টা। এরপর থানা থেকে জানানো হয়, উপসচিবের কোনো অভিযোগ নেই, চিকিৎসক এবার যেতে পারেন।
রাস্তায় হেনস্তা এবং প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখায় ক্ষুব্ধ চিকিৎসক রাইয়ান হাসার পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুকে। আর তাকে আটকে রাখার দায় পুলিশকে দিচ্ছেন মোহাম্মদ গোলাম কবির। তবে পুলিশের দাবি, গোলাম কবিরের নির্দেশনাতেই থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ডা. রাইয়ানকে।
কী হয়েছিল রাস্তায়
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে চিকিৎসক রাইয়ান হাসার ও উপসচিব মোহাম্মদ গোলাম কবিরের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে গত রোববার বিকেলে। পরদিন বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের এই চিকিৎসক।
এই পোস্টে ডা. রাইয়ান দাবি করেন, রাস্তায় তার মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মোহাম্মদ গোলাম কবিরের সরকারি গাড়ির কোনো ক্ষতি না হলেও ঘটনাটির জন্য অযথা তাকে (ডা. রাইয়ান) দায়ী করা হয়।
ডা. রাইয়ান লেখেন, ‘অযাচিতভাবে তিনি গতকাল আমাকে হয়রানি করেছেন। আমি হোন্ডার হর্নেট বাইক চালাই। ল্যাবএইডের সামনের রাস্তায় সিগন্যাল দেয়। ওনার গাড়ি হঠাৎ থামার জন্য আমার বাইকের হ্যান্ডেল তার গাড়িতে আস্তে করে লাগে। আমি তাকিয়ে দেখি কিছু হয়নি। পরে সিগন্যাল ছেড়ে দিলে আমি পাশ দিয়ে বের হই।
‘হঠাৎ পেছন থেকে আমাকে ডাকলেন তিনি। আমি পেছনে আসলাম। উনি গাড়িতে একটা ছোট্ট টোপ দেখিয়ে বললেন এটা আমি করেছি। অথচ সিগন্যালে ৫-৬ মিনিট তার গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকার সময় একবারের জন্যও বের হয়ে কথা বলেননি তিনি। আমি মাপ দিয়ে দেখালাম ওনার টোপ খাওয়া জায়গা আমার বাইকের হ্যান্ডেল থেকে ১০-১২ ইঞ্চি নিচে। উনি মানতে নারাজ। পরে আমি খুবই ভালোভাবে বললাম, আচ্ছা এটা ঠিক করতে ৪০০-৫০০ টাকা লাগবে। আমি দিয়ে দিচ্ছি। নেন। আর আমি দোষ করলে আপনার ডাকে পেছনে আসতাম না। সামনের রাস্তা ফাঁকা আছে। টান দিয়ে চলে যেতাম।’
এরপরেও হয়রানির অভিযোগ তুলে ডা. রাইয়ান লেখেন, ‘পরে তিনি বললেন আমি ম্যাজিস্ট্রেট। এর জন্য আমাকে পানিশমেন্ট পেতে হবে। কী করেন আপনি? আমি বললাম আমি চিকিৎসক। উনি আমার আইডি কার্ড চাইলে আমি দেখালাম। উনি ছবি তুললেন। আমি ওনারটা চাইলে উনি সামনের ট্রাফিক পুলিশের কাছে চলে গেলেন। কী যেন বলে আমার কাছে আসলেন। বললেন স্যরি তো বলতে পারতেন। আমি বললাম এটা আমার জন্য হয়নি। তারপরও আমি স্যরি। আর ওটা ঠিক করতে যা লাগে আমি দিয়ে দিচ্ছি। তারপর উনি কিছু না বলে ট্রাফিকের কাছে নিজের আইডি দিয়ে গাড়িতে করে চলে গেলেন। ট্রাফিক বলল ধানমন্ডি থানা থেকে পুলিশ আসবে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
‘প্রায় ঘণ্টার কাছাকাছি সময়ে পুলিশ আসল। আমি তাদের সব বললাম। তারা বলল আপনাকে থানায় যেতে হবে। আমি বললাম কার অভিযোগের জন্য আমি থানায় যাব? তিনি কই? তাকে ডাকুন। পুলিশ বলল, আমাদের কিছু করার নেই। উনি ম্যাজিস্ট্রেট। আমি শেষে ধানমন্ডি থানায় গেলাম। সেখানেও ঘণ্টাখানেক বসে থাকতে হলো। আমি বললাম, এভাবে আমাকে বসায় রেখে হয়রানি কেন করা হচ্ছে? আমি তো চোর, ডাকাত নই। আমার বাইকের সব কাগজপত্র আছে। আমার আইডি কার্ড আছে। আমি ঐ ম্যাজিস্ট্রেট এর সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি। ট্রাফিক পুলিশ বা আপনাদের কারো সাথেও কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি। এটা ঠিক হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: মুখোমুখি চিকিৎসক-পুলিশ
এর পরের ঘটনা জানিয়ে ডা. রাইয়ান লেখেন, ‘পুলিশ কার সাথে যেন কথা বলে আমাকে এসে বলল আচ্ছা আমি ঐ ম্যাজিস্ট্রেটকে ফোন দিয়ে বলছি আপনি স্যরি বলেছেন। আমার তখন রাগ হলো। আমার ২ ঘণ্টা নষ্ট করেছেন তিনি। আর এখন বলব স্যরি? দোষ না করেও স্যরি বলেছি। ওনার ক্ষমতা আছে। আমাকে থানা পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। এখন তিনি কোন ধারায় কী মামলা করবেন, সেটা জিজ্ঞাসা করুন। আমি কোনো স্যরি বলব না। ওনাকে থানায় ডাকেন। কেন আমাকে থানায় আসতে বাধ্য করল সেই ব্যাখ্যা তাকে দিতে হবে।’
আটকে রাখার পুরোটা সময়ে পুলিশের আচরণ ভালো ছিল জানিয়ে এই চিকিৎসক লেখেন, ‘পুলিশ বলল আপনি ওনার সাথে একবার কথা বলে সব ঠিক করে নেন। আপনারা দুজনই সম্মানিত ব্যক্তি। …তারপর পুলিশ ওনার সাথে কী যেন কথা বলল বের হয়ে। তারপর এসে আমাকে বলল আপনি এখন আসতে পারেন।’
উপসচিব-পুলিশের পাল্টাপাল্টি দায়
ডা. রাইয়ান তার পোস্টে হয়রানির জন্য দায়ী করা সরকারি কর্মকর্তাকে ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে পোস্টে তিনি ওই কর্মকর্তার ভিজিটিং কার্ডের যে ছবি দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, সরকারি গাড়িতে থাকা কর্মকর্তা হলেন প্রধান তথ্য কমিশনারের একান্ত সচিব মোহাম্মদ গোলাম কবির।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মোহাম্মদ গোলাম কবিরের ভিজিটিং কার্ডটি পুরোনো। তিনি এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গোলাম কবির দাবি করছেন, সেদিন সামান্য তর্কতর্কির পর তিনি ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। চিকিৎসককে আটকে রাখার দায়দায়িত্ব পুরোপুরি পুলিশের।
উপসচিব মোহাম্মদ গোলাম কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি (ডা. রাইয়ান) মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমার গাড়িতে একটা ধাক্কা দিয়ে স্পট ফেলে দিয়েছেন। জ্যামের কারণে বেশি দূর যেতে পারেননি। তখন আমার ড্রাইভার ও আমি নেমে তাকে বললাম, ভাই আপনি এমন একটা ধাক্কা দিয়ে চলে যাচ্ছেন একবার সরিও বললেন না!’
গোলাম কবির বলেন, ‘তখন ওই চিকিৎসক বলেন যে, আমি করিনি আগে থাকেই আছে। আমি বললাম, আপনি ধাক্কা দিয়েছেন কি না। তিনি বললেন, হ্যাঁ লাগছে। তাহলে তো একটু সরি বলতে হয়।’
গোলাম কবির জানান, তাদের এই কথার সময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্য নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার গাড়ি তো সরকারি, সেটা স্টিকার লাগানো আছে। ট্রাফিক আমাকে বলল স্যার কী হয়েছে? তখন আমি বললাম আমার গাড়িতে উনি ধাক্কা দিল, আবার তর্কও করছে। ট্রাফিক থেকে আমাকে বলল, স্যার আমি দেখতেছি আপনি যান। আমি বললাম ঠিক আছে দেখেন।
‘তখন ট্রাফিক পুলিশ তার মোটরসাইকেলের কাগজ দেখতে চাইল। এর মধ্যে ট্রাফিক ছেড়ে দিয়েছে। আমার পেছনে অ্যাম্বুলেন্স থাকায় ট্রাফিক পুলিশ আমাকে বলল, আপনি চলে যান, আর আপনার কোনো কন্টাক্ট নম্বর থাকলে দেন। তখন আমি আমার পুরোনো অফিসের কার্ড দিয়েছিলাম।’
গোলাম কবির বলেন, ‘এরপর ঘণ্টাখানেক পরে ধানমন্ডি থানা থেকে আমাকে আজমাইন নামে একজন উপপরিদর্শক কল দেন। আমার গাড়িতে ধাক্কা দিয়েছে এই জন্য চিকিৎসককে আটকে রেখেছি, আপনি একটা লিখিত অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা নেব। উনি ডাক্তার। আমি বলেছি, উনি ডাক্তার মানুষ, উনাকে আটকে রেখেছেন। থাক বাদ দেন। আজমাইন আমাকে বলেন যে উনি সরি বলেছেন। তাই আমি বলেছি যে, ওনাকে ছেড়ে দেন।’
বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তার দাবি, উপসচিবের নির্দেশেই ডা. রাইয়ানকে আটকে রাখা হয়েছিল।
রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি উপসচিবের কথামতো তাকে আটকে রেখেছি। আমি স্যারকে বলেছিলাম যে, স্যার উনাকে (চিকিৎসক) ধমক দিয়ে ছেড়ে দিব না ব্যবস্থা নিব। তখন স্যার বললেন থানায় পাঠাতে।’
ডা. রাইয়ানকে কতক্ষণ পুলিশ বক্সে আটকে রাখা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, দশ-পনেরো মিনিট।
তবে এএসআই রফিকুল ইসলামের দাবি মানছেন না উপসচিব গোলাম কবির। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এমন কিছুই বলিনি। এটা বলার প্রশ্নই আসে না। আমি আমার কার্ড রেখে চলে এসেছি। এরপর আমাকে থানা থেকে ফোন করা হয়।’
পুলিশকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আমি যদি এমন বলেই থাকি ধরে নিলাম, তাহলেও আমার কথামতো কেন আটকে রাখা হবে। আমাকে তো অভিযোগ দিতে বলা হবে।’
অন্যদিকে ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক মো. আজমাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কাউকে আটকে রাখিনি। ওই দিন একটা ঘটনা ঘটলেও সেটা ওখানে মিউচুয়াল হয়ে গেছে। আমি ঘটনা শুনে সচিব স্যারকে ফোন দিলাম। উনি আমাকে বলে দিলেন, একটা ইয়ে হয়েছে আপনি ওনাকে ছেড়ে দেন।’
ডা. রাইয়ানকে কতক্ষণ থানায় রাখা হয়েছিল, জানতে চাইলে আজমাইন বলেন, ‘আমি যত দ্রুত সম্ভব ছেড়ে দিয়েছি। আমি তো উনাকে আটক করিনি। উনাকে জাস্ট উনার কাগজগুলো ঠিক আছে কিনা তা জানতে চেয়েছি।’
এসআই আজমাইন বলেন, ‘আমি উপসচিব স্যারকে ফোন দিলে স্যার ছেড়ে দিতে বলেন। তারপরও ডাক্তার সাহেব হঠাৎ করে কেন এটা করল আমি বুঝতে পারছি না। আমি ওসি স্যারের সঙ্গেও কথা বলেছি। সব পজিটিভ ছিল। উনি হয়তো পুলিশ বক্সে অনেকক্ষণ বসে ছিলেন। আমার কাছে দশ থেকে পনেরো মিনিট ছিলেন। এর বেশি আমার কাছে ছিল না। যত দ্রুত পেরেছি মিউচুয়াল করার চেষ্টা করেছি।’
এদিকে ফেসবুকে নামসহ স্ট্যাটাস দেয়াতে ডা. রাইয়ানের বিষয়ে পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন গোলাম কবির।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সাইবার ক্রাইমে এটি জানিয়েছি। তবে আমি কোনো ঝামেলা করতে চাই না। এটি খুবই সামান্য ব্যাপার। উনি (চিকিৎসক) যদি ওনার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন, তবে আমিও কিছু করব না।’
এ বিষয়ে চিকিৎসক রাইয়ান হাসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা আমি ফেসবুকে বলেছি। আমি কোনো অপরাধ করিনি। উনি (উপসচিব) যদি সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ করেন, তবে সেটি তার ব্যাপার। আমার সঙ্গে যা হয়েছে সেটি আমি আমার সামাজিক মাধ্যমে বলতেই পারি।’
কতক্ষণ আটকে থাকতে হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে রাস্তায় মানে পুলিশ বক্সে প্রায় এক ঘণ্টা ও থানায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। আপনি চাইলে থানার সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পারেন।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায় শিশু হৃদরোগ (কার্ডিয়াক) বিভাগের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) লাগা আগুন পুরোপুরি নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর ওই আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় এক এক ঘণ্টার চেষ্টার পর ২টা ৪০ মিনিটে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নিয়েছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট, সিদ্দিক বাজার থেকে একটি ইউনিট, তেজগাঁও থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ২টা ৪০ মিনিটে আগুন পুরো নিভিয়ে ফেলা হয়।
তবে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে লাগা এই আগুনে রোগীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, রোগীদের সবাইকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েচে। ইউসিইউতে ১৭ জন রোগী ছিলেন আমরা নামিয়ে এনেছি। কারো কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, হাসপাতালের বি ব্লকের ৫ তলার কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে আগুন লেগেছে। আগুনের চেয়ে ধোঁয়া একটু বেশি ছড়িয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে করা হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে আশঙ্কা করছি এসি থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে লাগা আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে একজন মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এদিকে বিকেলে দেখা যায়, আগুন লাগার পর হাসপাপতালের ৫ তলা ও ৪ তলার পুরো ধোঁয়ায় ভরে গেছে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নেন।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে। ওপরে সবকিছু কখন ঠিক হবে তা জানেন না এ রোগী ও স্বজনরা। রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা আশঙ্কা করছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের বাচ্চারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭ দিন আগে শিশু হাসপাতাল আইসিইউতে ভর্তি হয় পাঁচ মাসের শিশু রাইয়ান। আগুন লাগার পর শিশুটির মা আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে শিশুটিকে নিয়ে নিচে নামে আসেন। বাচ্চাকে নিয়ে এই অসহনীয় গরমে অবস্থান নিয়েছেন হাসপাতালের বাইরে।
কয়েকজন শিশুর অভিভাবক জানান, পাঁচতলার আইসিইউতে যেসব বাচ্চা ছিল তাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক বাচ্চাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। তাদের অক্সিজেন ছাড়া নিচে নামানো হয়। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল।
মধ্যসত্ত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ।
শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সজাগ থাকলে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন না।
মন্ত্রী বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য দিতে চায় সরকার। সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুনামগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে বন্যা দুর্যোগ বেশি হয়। খড়াও হয়। জেলা প্রশাসনকে বলেছি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, কৃষিকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ। কৃষকের ধানের মূল্য নির্ধারণ করতে আগামী পরশু মিটিং করব। দাম নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, ১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ধরা আগুন প্রায় এক ঘণ্টা পর নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর মিডিয়া সেল জানায়, শুক্রবার বেলা দুইটা ৩৯ মিনিটে আগুন নেভানো হয়।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা লিমা খানম নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ কেন্দ্রে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে।
আগুনে হতাহতের কোনো কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বার্তায় জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় নৌবাহিনী।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগে শুক্রবার আগুন ধরেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
আসন্ন জুলাইয়ের আগেই পান্থকুঞ্জকে নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার সকালে নগরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের অভ্যন্তরে পান্থপথ বক্স কালভার্টের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মেয়র এ কথা জানান।
মেয়র তাপস বলেন, পান্থকুঞ্জ উদ্যান এই এলাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যান। এটা উন্নয়নের জন্য ২০১৭ সালে মেগা প্রকল্পের আওতায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক কারণে ঢাকা লিমিটেড এক্সপ্রেসওয়ে এদিক দিয়ে নওয়ার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ফলে এই পার্কের উন্নয়ন কাজটা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আলোচনা করেছি, দেন-দরবার করেছি। এর ফলশ্রুতিতে তারা সুনির্দিষ্ট জায়গায় কাজ করবে। বাকি জায়গা আমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। সেই জায়গায় আমরাই কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে এটার অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে।
মেয়র আরও বলেন, আমরা ঢাকাবাসীকে একটি নান্দনিক উদ্যান উপহার দিতে চাই। যদিও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের কারণে উদ্যানের বড় একটা অংশ তাদের কাছে চলে যাবে। তারপরও যতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি তা ঢাকাবাসীর জন্য অচিরেই উন্মুক্ত করে দিতে পারব। পার্কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। জুলাইয়ের আগে পান্থকুঞ্জকে একটি নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে।
নিউমার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, গত বছর কয়েকটি জায়গায় জলাবদ্ধতা হয়েছে বিশেষ করে নিউমার্কেটের সামনে ও শান্তিনগরে। যেসব কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আমরা সেগুলো পরিষ্কার করেছি। আশা করি এবার আর জলাবদ্ধ থাকবে না। নিউমার্কেট এলাকার জন্য নতুন প্রকল্প নিয়েছি।
তিনি বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে পিলখানা ভেতর দিয়ে আগে যে পানি প্রবাহ প্রবাহের নর্দমা ছিল সেগুলো ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য গত বছর সেখানে বড় ধরনের জলবদ্ধতা হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি এবং সম্মতি পেয়েছি। আমরা পিলখানার ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহের বড় নর্দমা করছি। এটা করতে পারলে ওই এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। এভাবে প্রত্যেকটা এলাকায় বিচার-বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঢাকায় বিচ্ছিন্ন কয়েকটি জায়গা ছাড়া তেমন কোন জায়গায় এখন দীর্ঘ সময় জলবদ্ধতা থাকে না উল্লেখ করে মেয়র বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগে সূচি অনুযায়ী বক্স কালভার্ট, খাল ও নর্দমাগুলো পরিষ্কার করে থাকি। কারণ যাতে করে বর্ষার সময় পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া ঢাকা শহরে আমরা ব্যাপকভাবে নর্দমা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রেখেছি।
পরে মেয়র সায়েদাবাদ টার্মিনাল সংলগ্ন সায়েদাবাদ সুপার মার্কেট, গেন্ডারিয়ার জহির রায়হান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র পাঠাগার ও ওয়ারীর তাজউদ্দীন স্মৃতি পাঠাগার পরিদর্শন করেন।
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জামালপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে এ দুর্ঘটনায় পড়ে ট্রেনটি।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার পরিদর্শক ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
দুর্ঘটনার পর ঢাকাগামী ট্রেন আটকে যায়। এ ছাড়া কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং এবং মগবাজারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ফেরদৌস আহমেদ জানান, দ্রুতই উদ্ধারকাজ শুরু হয়। সকাল ১০টার দিকে লাইনচ্যুত বগি ছাড়াই ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। খবর ইউএনবির
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পরবর্তীতে স্থানটির নাম পরিবর্তন করে মুজিবনগর রাখা হয়। প্রথম সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তাজউদ্দীন আহমদকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে মন্ত্রিসভার সদস্য করা হয়। মূল মন্ত্রিসভার সফল নেতৃত্ব সেই বছরের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে নিয়ে যায়।
মন্তব্য