মোটরসাইকেলে চিকিৎসক, আর গাড়িতে যাচ্ছিলেন উপসচিব। পথে উপসচিবের সরকারি গাড়িতে ধাক্কা লাগা নিয়ে দুই পক্ষের বাদানুবাদ।
একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসে ট্রাফিক পুলিশ। উপসচিব তার ভিজিটিং কার্ড ট্রাফিকের সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর ওই চিকিৎসককে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও থানায় আটকে থাকতে হয় প্রায় দুই ঘণ্টা। এরপর থানা থেকে জানানো হয়, উপসচিবের কোনো অভিযোগ নেই, চিকিৎসক এবার যেতে পারেন।
রাস্তায় হেনস্তা এবং প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখায় ক্ষুব্ধ চিকিৎসক রাইয়ান হাসার পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুকে। আর তাকে আটকে রাখার দায় পুলিশকে দিচ্ছেন মোহাম্মদ গোলাম কবির। তবে পুলিশের দাবি, গোলাম কবিরের নির্দেশনাতেই থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ডা. রাইয়ানকে।
কী হয়েছিল রাস্তায়
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে চিকিৎসক রাইয়ান হাসার ও উপসচিব মোহাম্মদ গোলাম কবিরের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে গত রোববার বিকেলে। পরদিন বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের এই চিকিৎসক।
এই পোস্টে ডা. রাইয়ান দাবি করেন, রাস্তায় তার মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মোহাম্মদ গোলাম কবিরের সরকারি গাড়ির কোনো ক্ষতি না হলেও ঘটনাটির জন্য অযথা তাকে (ডা. রাইয়ান) দায়ী করা হয়।
ডা. রাইয়ান লেখেন, ‘অযাচিতভাবে তিনি গতকাল আমাকে হয়রানি করেছেন। আমি হোন্ডার হর্নেট বাইক চালাই। ল্যাবএইডের সামনের রাস্তায় সিগন্যাল দেয়। ওনার গাড়ি হঠাৎ থামার জন্য আমার বাইকের হ্যান্ডেল তার গাড়িতে আস্তে করে লাগে। আমি তাকিয়ে দেখি কিছু হয়নি। পরে সিগন্যাল ছেড়ে দিলে আমি পাশ দিয়ে বের হই।
‘হঠাৎ পেছন থেকে আমাকে ডাকলেন তিনি। আমি পেছনে আসলাম। উনি গাড়িতে একটা ছোট্ট টোপ দেখিয়ে বললেন এটা আমি করেছি। অথচ সিগন্যালে ৫-৬ মিনিট তার গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকার সময় একবারের জন্যও বের হয়ে কথা বলেননি তিনি। আমি মাপ দিয়ে দেখালাম ওনার টোপ খাওয়া জায়গা আমার বাইকের হ্যান্ডেল থেকে ১০-১২ ইঞ্চি নিচে। উনি মানতে নারাজ। পরে আমি খুবই ভালোভাবে বললাম, আচ্ছা এটা ঠিক করতে ৪০০-৫০০ টাকা লাগবে। আমি দিয়ে দিচ্ছি। নেন। আর আমি দোষ করলে আপনার ডাকে পেছনে আসতাম না। সামনের রাস্তা ফাঁকা আছে। টান দিয়ে চলে যেতাম।’
এরপরেও হয়রানির অভিযোগ তুলে ডা. রাইয়ান লেখেন, ‘পরে তিনি বললেন আমি ম্যাজিস্ট্রেট। এর জন্য আমাকে পানিশমেন্ট পেতে হবে। কী করেন আপনি? আমি বললাম আমি চিকিৎসক। উনি আমার আইডি কার্ড চাইলে আমি দেখালাম। উনি ছবি তুললেন। আমি ওনারটা চাইলে উনি সামনের ট্রাফিক পুলিশের কাছে চলে গেলেন। কী যেন বলে আমার কাছে আসলেন। বললেন স্যরি তো বলতে পারতেন। আমি বললাম এটা আমার জন্য হয়নি। তারপরও আমি স্যরি। আর ওটা ঠিক করতে যা লাগে আমি দিয়ে দিচ্ছি। তারপর উনি কিছু না বলে ট্রাফিকের কাছে নিজের আইডি দিয়ে গাড়িতে করে চলে গেলেন। ট্রাফিক বলল ধানমন্ডি থানা থেকে পুলিশ আসবে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
‘প্রায় ঘণ্টার কাছাকাছি সময়ে পুলিশ আসল। আমি তাদের সব বললাম। তারা বলল আপনাকে থানায় যেতে হবে। আমি বললাম কার অভিযোগের জন্য আমি থানায় যাব? তিনি কই? তাকে ডাকুন। পুলিশ বলল, আমাদের কিছু করার নেই। উনি ম্যাজিস্ট্রেট। আমি শেষে ধানমন্ডি থানায় গেলাম। সেখানেও ঘণ্টাখানেক বসে থাকতে হলো। আমি বললাম, এভাবে আমাকে বসায় রেখে হয়রানি কেন করা হচ্ছে? আমি তো চোর, ডাকাত নই। আমার বাইকের সব কাগজপত্র আছে। আমার আইডি কার্ড আছে। আমি ঐ ম্যাজিস্ট্রেট এর সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি। ট্রাফিক পুলিশ বা আপনাদের কারো সাথেও কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি। এটা ঠিক হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: মুখোমুখি চিকিৎসক-পুলিশ
এর পরের ঘটনা জানিয়ে ডা. রাইয়ান লেখেন, ‘পুলিশ কার সাথে যেন কথা বলে আমাকে এসে বলল আচ্ছা আমি ঐ ম্যাজিস্ট্রেটকে ফোন দিয়ে বলছি আপনি স্যরি বলেছেন। আমার তখন রাগ হলো। আমার ২ ঘণ্টা নষ্ট করেছেন তিনি। আর এখন বলব স্যরি? দোষ না করেও স্যরি বলেছি। ওনার ক্ষমতা আছে। আমাকে থানা পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। এখন তিনি কোন ধারায় কী মামলা করবেন, সেটা জিজ্ঞাসা করুন। আমি কোনো স্যরি বলব না। ওনাকে থানায় ডাকেন। কেন আমাকে থানায় আসতে বাধ্য করল সেই ব্যাখ্যা তাকে দিতে হবে।’
আটকে রাখার পুরোটা সময়ে পুলিশের আচরণ ভালো ছিল জানিয়ে এই চিকিৎসক লেখেন, ‘পুলিশ বলল আপনি ওনার সাথে একবার কথা বলে সব ঠিক করে নেন। আপনারা দুজনই সম্মানিত ব্যক্তি। …তারপর পুলিশ ওনার সাথে কী যেন কথা বলল বের হয়ে। তারপর এসে আমাকে বলল আপনি এখন আসতে পারেন।’
উপসচিব-পুলিশের পাল্টাপাল্টি দায়
ডা. রাইয়ান তার পোস্টে হয়রানির জন্য দায়ী করা সরকারি কর্মকর্তাকে ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে পোস্টে তিনি ওই কর্মকর্তার ভিজিটিং কার্ডের যে ছবি দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, সরকারি গাড়িতে থাকা কর্মকর্তা হলেন প্রধান তথ্য কমিশনারের একান্ত সচিব মোহাম্মদ গোলাম কবির।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মোহাম্মদ গোলাম কবিরের ভিজিটিং কার্ডটি পুরোনো। তিনি এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গোলাম কবির দাবি করছেন, সেদিন সামান্য তর্কতর্কির পর তিনি ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। চিকিৎসককে আটকে রাখার দায়দায়িত্ব পুরোপুরি পুলিশের।
উপসচিব মোহাম্মদ গোলাম কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি (ডা. রাইয়ান) মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমার গাড়িতে একটা ধাক্কা দিয়ে স্পট ফেলে দিয়েছেন। জ্যামের কারণে বেশি দূর যেতে পারেননি। তখন আমার ড্রাইভার ও আমি নেমে তাকে বললাম, ভাই আপনি এমন একটা ধাক্কা দিয়ে চলে যাচ্ছেন একবার সরিও বললেন না!’
গোলাম কবির বলেন, ‘তখন ওই চিকিৎসক বলেন যে, আমি করিনি আগে থাকেই আছে। আমি বললাম, আপনি ধাক্কা দিয়েছেন কি না। তিনি বললেন, হ্যাঁ লাগছে। তাহলে তো একটু সরি বলতে হয়।’
গোলাম কবির জানান, তাদের এই কথার সময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্য নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার গাড়ি তো সরকারি, সেটা স্টিকার লাগানো আছে। ট্রাফিক আমাকে বলল স্যার কী হয়েছে? তখন আমি বললাম আমার গাড়িতে উনি ধাক্কা দিল, আবার তর্কও করছে। ট্রাফিক থেকে আমাকে বলল, স্যার আমি দেখতেছি আপনি যান। আমি বললাম ঠিক আছে দেখেন।
‘তখন ট্রাফিক পুলিশ তার মোটরসাইকেলের কাগজ দেখতে চাইল। এর মধ্যে ট্রাফিক ছেড়ে দিয়েছে। আমার পেছনে অ্যাম্বুলেন্স থাকায় ট্রাফিক পুলিশ আমাকে বলল, আপনি চলে যান, আর আপনার কোনো কন্টাক্ট নম্বর থাকলে দেন। তখন আমি আমার পুরোনো অফিসের কার্ড দিয়েছিলাম।’
গোলাম কবির বলেন, ‘এরপর ঘণ্টাখানেক পরে ধানমন্ডি থানা থেকে আমাকে আজমাইন নামে একজন উপপরিদর্শক কল দেন। আমার গাড়িতে ধাক্কা দিয়েছে এই জন্য চিকিৎসককে আটকে রেখেছি, আপনি একটা লিখিত অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা নেব। উনি ডাক্তার। আমি বলেছি, উনি ডাক্তার মানুষ, উনাকে আটকে রেখেছেন। থাক বাদ দেন। আজমাইন আমাকে বলেন যে উনি সরি বলেছেন। তাই আমি বলেছি যে, ওনাকে ছেড়ে দেন।’
বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তার দাবি, উপসচিবের নির্দেশেই ডা. রাইয়ানকে আটকে রাখা হয়েছিল।
রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি উপসচিবের কথামতো তাকে আটকে রেখেছি। আমি স্যারকে বলেছিলাম যে, স্যার উনাকে (চিকিৎসক) ধমক দিয়ে ছেড়ে দিব না ব্যবস্থা নিব। তখন স্যার বললেন থানায় পাঠাতে।’
ডা. রাইয়ানকে কতক্ষণ পুলিশ বক্সে আটকে রাখা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, দশ-পনেরো মিনিট।
তবে এএসআই রফিকুল ইসলামের দাবি মানছেন না উপসচিব গোলাম কবির। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এমন কিছুই বলিনি। এটা বলার প্রশ্নই আসে না। আমি আমার কার্ড রেখে চলে এসেছি। এরপর আমাকে থানা থেকে ফোন করা হয়।’
পুলিশকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আমি যদি এমন বলেই থাকি ধরে নিলাম, তাহলেও আমার কথামতো কেন আটকে রাখা হবে। আমাকে তো অভিযোগ দিতে বলা হবে।’
অন্যদিকে ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক মো. আজমাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কাউকে আটকে রাখিনি। ওই দিন একটা ঘটনা ঘটলেও সেটা ওখানে মিউচুয়াল হয়ে গেছে। আমি ঘটনা শুনে সচিব স্যারকে ফোন দিলাম। উনি আমাকে বলে দিলেন, একটা ইয়ে হয়েছে আপনি ওনাকে ছেড়ে দেন।’
ডা. রাইয়ানকে কতক্ষণ থানায় রাখা হয়েছিল, জানতে চাইলে আজমাইন বলেন, ‘আমি যত দ্রুত সম্ভব ছেড়ে দিয়েছি। আমি তো উনাকে আটক করিনি। উনাকে জাস্ট উনার কাগজগুলো ঠিক আছে কিনা তা জানতে চেয়েছি।’
এসআই আজমাইন বলেন, ‘আমি উপসচিব স্যারকে ফোন দিলে স্যার ছেড়ে দিতে বলেন। তারপরও ডাক্তার সাহেব হঠাৎ করে কেন এটা করল আমি বুঝতে পারছি না। আমি ওসি স্যারের সঙ্গেও কথা বলেছি। সব পজিটিভ ছিল। উনি হয়তো পুলিশ বক্সে অনেকক্ষণ বসে ছিলেন। আমার কাছে দশ থেকে পনেরো মিনিট ছিলেন। এর বেশি আমার কাছে ছিল না। যত দ্রুত পেরেছি মিউচুয়াল করার চেষ্টা করেছি।’
এদিকে ফেসবুকে নামসহ স্ট্যাটাস দেয়াতে ডা. রাইয়ানের বিষয়ে পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন গোলাম কবির।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সাইবার ক্রাইমে এটি জানিয়েছি। তবে আমি কোনো ঝামেলা করতে চাই না। এটি খুবই সামান্য ব্যাপার। উনি (চিকিৎসক) যদি ওনার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন, তবে আমিও কিছু করব না।’
এ বিষয়ে চিকিৎসক রাইয়ান হাসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা আমি ফেসবুকে বলেছি। আমি কোনো অপরাধ করিনি। উনি (উপসচিব) যদি সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ করেন, তবে সেটি তার ব্যাপার। আমার সঙ্গে যা হয়েছে সেটি আমি আমার সামাজিক মাধ্যমে বলতেই পারি।’
কতক্ষণ আটকে থাকতে হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে রাস্তায় মানে পুলিশ বক্সে প্রায় এক ঘণ্টা ও থানায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। আপনি চাইলে থানার সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পারেন।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আবারও তিন ঘণ্টার কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে কাফনের কাপড় পরে এই কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
এর আগে শনিবার (২১ জুন) এ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় এনবিআর কর্মকর্তাদের সংগঠন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
কাউন্সিলের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাসান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার এবং সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত কর কমিশনার সহেলা সিদ্দিকা পুনরায় এনবিআরে ‘যুক্তিসংগত সংস্কার’ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
তারা বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, কারণ তার নেতৃত্ব সংস্কার প্রক্রিয়া শুধু বিলম্বিত হয়েছে।
এর আগেই তাকে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
গত ১৯ জুন গঠিত এনবিআর সংস্কার কমিটি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তারা।
এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, এ কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা পর্যন্ত করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ১২ মে জারি করা এক অধ্যাদেশে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বাতিল করে সরকার রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করে।
এরপর থেকেই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআর কর্মকর্তারা নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ সংশোধনের ঘোষণা দেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার নতুন এই কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, শিশুমেলা থেকে এনবিআর কার্যালয় পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রবিবার থেকে কার্যকর হওয়া নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সব কক্ষের তালা খুলে দেওয়া হবে। তবে প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষ তালাবদ্ধই থাকবে।
গতকাল রোববার দুপুরে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, নাগরিক সেবার স্বার্থে আঞ্চলিক অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো চালু রাখা এবং কর্মরতদের নিজ নিজ দফতরে ফিরে গিয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। একই সঙ্গে নাগরিক সেবা নির্বিঘ্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ না করিয়ে আদালত ও সংবিধান লঙ্ঘন করায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার অপসারণ দাবি করছি।’
মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভাণ্ডার ও ক্রয়, হিসাব ও অডিট, সমাজ কল্যাণ, আইন, রাজস্ব, সম্পত্তি, পরিবহন, বিদ্যুৎ, যান্ত্রিক, সংস্থাপন, নিরাপত্তা, জনসংযোগ, আইসিটি সেল, নগর পরিকল্পনা বিভাগ এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দফতরে থেকে জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়নপত্র, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ এবং সড়কবাতি সচল রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোনও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, সাবেক সরকারের দোসর বা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর নগরভবন বা আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। দেখামাত্র প্রতিহত করা হবে। কোনও কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে নগর ভবনের বেশ কিছু কক্ষে শিকল দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তালা খুললেও প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষ বন্ধই থাকবে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, নতুন করে কেউ নিয়োগ দিতে চাইলে সেটিও প্রতিহত করা হবে।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশগ্রহণ করা সব প্রার্থীকে সনদ প্রদানের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
রবিবার (২২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর ফলে ওই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ বারবার সরে যেতে বললেও স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে সাড়ে ১১টার দিকে তাদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ এবং প্রেসক্লাব ফাঁড়িতে বসেই তাদের কথা হবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভাইভায় রেকর্ড ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থীকে ইচ্ছে করে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তাদের দাবি, ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করে ভাইভায় অংশ নেওয়া সবাইকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন তারা এনটিআরসির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আগামীকাল রবিবার (২২ জুন) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। শনিবার (২১ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘শেরেবাংলা নগর থানার অন্তর্গত শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডে অবস্থিত এনবিআর কার্যালয় (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড), বিডা কার্যালয় (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ও আশেপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।’
ডিএমপি জানিয়েছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী রবিবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে সই করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।
টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করছেন সরকারি কর্মচারীরা। অধ্যাদেশটি বাতিল না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। পরে সচিবালয়ের ভিতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যাননুরুল ইসলাম জানান, চাকরি অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। । এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
সারা দেশে লঘুচাপের প্রভাবে গত দুদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে বাতাসে দূষণের উপস্থিতিও কমে এসেছে অনেকটা। গত দুদিনের মতো আজও ঢাকার বায়ুমান ‘ভালো’র কাছাকাছি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল ৯টায় ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ৬৪। এই সূচক ‘মাঝারি’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত, যেকোনো প্রকার অস্বাস্থ্যকার শ্রেণি থেকে যা অনেক দূরে।
কণা দূষণের একিউআই সূচক যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
ফলে আজ সকালে রাজধানী ঢাকার বাতাস দূষণ থেকে দূরে এবং ‘ভালো’র একপ্রকার কাছাকাছি বলা চলে।
এই সময়ে ১৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহর ছিল পাকিস্তানের লাহোর। সূচক ১৫২, ১৩৯, ১৩৭ ও ১৩৫ নিয়ে তারপরই ছিল যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা, চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো, ফিলিপাইনের ম্যানিলা এবং কুয়েত সিটি।
এ ছাড়াও ৯৯ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে ছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শহর দিল্লি। তবে দূষণের মাত্রা কম থাকায় একই সময়ে ঢাকার অবস্থান ছিল অনেক নিচে; ৫৪ নম্বরে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে ঢাকা। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়। বর্ষার শুরুতেই অবশ্য এই আভাস মিলতে শুরু করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে মানি এক্সচেঞ্জে ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার পর আসামিদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সূত্র ধরেই অস্ত্রসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-চক্রের হোতা মো. জলিল মোল্লা (৫২), মো. জাফর (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২), মো. সোহাগ হাসান (৩৪) ও পলাশ আহমেদ (২৬)। এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, তিনটি মোটরসাইকেল, পিস্তল, গুলি, জাল টাকা ও লুণ্ঠিত টাকা-বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়েছে।
পেশাদার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে টাকা ও স্বর্ণালংকার ডাকাতি করে আসছিল। চক্রটি দীর্ঘদিন মানি এক্সচেঞ্জের মালিকের ওপর নজরদারি করে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিন্টুরোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান যুগ্ম-কমিশনার ডিবি (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গত ২৭ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর-১১ সি-ব্লকের বাসা থেকে ২১ লাখ টাকা ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা নিয়ে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বরের অফিসে যাচ্ছিলেন। শেরে বাংলা স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝামাঝি গলির মুখে পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে ওত পেতে থাকা ৭ থেকে ৮ জন মুখোশধারী ছিনতাইকারী তাদের গতিরোধ করে। তাদের একজন পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিলে আরেকজন গুলি ছোড়ে এবং একজন ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় জাহিদুল রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ডাকাতরা চারটি মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার ভিডিও একজন পথচারী মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় আহত জাহিদুল হক চৌধুরী বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন। ঘটনার পরপরই ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ডিবির একাধিক টিম মাঠে নামে। গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি প্রথমে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস শনাক্ত করে। মাইক্রোবাসের চালক জাফরকে (৩৩) গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর ছিনতাইয়ের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে তথ্য বিশ্লেষণ করে একযোগে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোরে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ চক্রের আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে ডাকাতির ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা, ১০৬টি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ২ লাখ ১২ হাজার টাকার জাল নোট, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এ চক্র আগেও ভয়াবহ কয়েকটি ঘটনায় জড়িত ছিল। গত ২৪ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গুলি করে ৫০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই এবং ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডে গুলি চালিয়ে ৫২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এ চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আসামিরা।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাতি চালাতে এ চক্র আধুনিক প্রযুক্তি, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিভিন্ন ছদ্মবেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত সম্পদ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে যুগ্ম-কমিশনার ডিবি (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
মন্তব্য