বরগুনার বাসিন্দাদের হতাশ করেছে এবারের বাজেট। বহুল প্রতীক্ষিত এই বাজেটে নেই বরগুনার বিষখালী-পায়রা নদীর ওপর বহুল প্রতিশ্রুত দুই সেতু প্রকল্প। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন বরগুনার বাসিন্দারা।
সেই সঙ্গে সেতুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটি রক্ষা না করাকে উপকূলীয় এ জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে এক প্রকার প্রতারণার শামিল বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
বেকারদের কর্মসংস্থানে নেয়া প্রকল্প ন্যাশনাল সার্ভিস উদ্বোধন উপলক্ষে ২০১১ সালের ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরগুনায় আসেন। বরগুনাবাসীর উন্নয়নে ৪২ দফা দাবি পেশ করে জেলা আওয়ামী লীগ। ওই ৪২ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল বরগুনা-আমতলী রুটের পায়রা সেতু।
২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর বুধবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর দায়িত্ব চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, চীন সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে নবম ও দশম মৈত্রী সেতু নিয়ে যে কথাবার্তা চলছে, তার মধ্যেই রয়েছে বরগুনা-আমতলী রুটের পায়রা সেতু।
এ সময় সেতুমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশে আরও নতুন দুটি সেতু (নবম ও দশম মৈত্রী সেতু) নির্মাণে চীন সরকার সহায়তা করবে। সম্ভাব্য ওই সেতু দুটিই নির্মিত হবে বরগুনার আমতলী ও পটুয়াখালীর গলাচিপায়।
২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন বরগুনা বিষখালী নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি জানান।
২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জানা যায়, ওই বছরের আগস্ট মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সেতু বিভাগের সচিব রশিদুল হাসান, সেতু বিভাগের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব ড. মো মনিরুজ্জামান, বরগুনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালক মো. তোফাজ্জেল হোসেন ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান সম্ভাব্য সেতুর প্রকল্প স্থানসমূহ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে সার্কিট হাউসে সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, সেতুর নাম হবে ‘শেখ হাসিনা পায়রা ব্রিজ’। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পায়রা নদীতে পটুয়াখালীর লেবুখালী ও মির্জাগঞ্জ এবং বরগুনা-আমতলী তিনটি সেতুই নির্মিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, মির্জাগঞ্জ ও বরগুনার দুই সেতুর ডিজাইনসহ দাপ্তরিক কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য স্টুপ কনসালট্যান্টস লিমিটেড (ভারত), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট লিমিটেড ও ফিএন্ডই লিমিটেড কাজ করছে। ওই সমীক্ষা টিম পায়রা নদীর আমতলী-বরগুনার ৩-৪টি হার্ট পয়েন্টে ইতিমধ্যে সমীক্ষা শেষ করেছে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলাব্যাপী আনন্দ মিছিলও হয়।
সেতু বিভাগের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা- কাকচিরা সড়কে (জ-৮৮০) পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে যার দৈর্ঘ্য দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৫৫০ মিটার। প্রকল্পের অবস্থান দেখানো হয়েছে আমতলী ফেরিঘাট, আমতলী উপজেলা, বরগুনা।
ব্রিজের সম্ভাব্য স্থানের একটি ম্যাপ ও প্রাক্কলিত ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। নির্মাণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, আমতলী ও বরগুনা সদর উপজেলার সঙ্গে বরগুনা জেলা শহর এবং বরিশাল বিভাগীয় শহরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা যা যোগাযোগব্যবস্থাকে সহজ করবে।
এ ছাড়াও সেতুর অর্থনৈতিক প্রভাব হিসেবে বলা হয়েছে, এটি বরিশাল শহর ও বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে সড়ক সংযোগব্যবস্থা উন্নত করবে; সঙ্গে সঙ্গে যাতায়াতের সময়, খরচ, যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ, যাতায়াতের ধরন ও যাতায়াতের নিরাপত্তা উন্নত করবে এবং জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ ছাড়াও সেতু বিভাগের ওয়েবসাইটে ১৮ আগস্ট ২০২০ সালের তথ্যে পটুয়াখালী- আমতলী-বরগুনা-কাকচিরা সড়কে (জ-৮৮০) বিষখালী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন দেখিয়ে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন দেয়া আছে।
ওয়েবসাইটের আরও তথ্য, (সবশেষ ২২ মার্চ ২০২১ হালনাগাদ) চলমান প্রকল্পের পাশাপাশি পাঁচ সেতু সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তালিকায় ১ ও ৫ ক্রমিকে পটুয়াখালী- আমতলী-বরগুনা-কাকচিরা সড়কে (জ-৮৮০) বিষখালী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ । পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা-কাকচিরা সড়কে (জ-৮৮০) পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প দেখানো হয়েছে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সংসদের অধিবেশনে ২০২১-২০২২ সালের পেশ করা বাজেটের মেগা প্রকল্পের মধ্যে এই দুটি সেতুর কথা উল্লেখ না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।
পাবলিক পলিসি ফোরাম বরগুনার আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘আমাদের বরগুনার পায়রা ও বিষখালী ব্রিজের বিষয়টি বাজেটে না থাকায় আমরা চরম হতাশ। বর্তমান সরকারের সেতুমন্ত্রী সেতু দুটি নির্মাণের কথা জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া সমীক্ষার দলও বরগুনা এসেছিল।
‘অথচ, বর্তমান বাজেটে আমাদের দুটি সেতুর অস্তিত্বই নেই। তাহলে আমরা কি মনে করব এটা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা ছিল?’
তিনি আরও বলেন, ’৭০-এর নির্বাচন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সমস্ত চড়াই-উতরাইয়ে বরগুনাবাসী সঙ্গে ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে আমাদের কাছে যে প্রত্যাশা ছিল, তার সিকিভাগও আমরা বাস্তবে দেখছি না। হয়তো আমাদের কথা তার মনেই নেই।’
যোগাযোগ করা হলে বরগুনা-১-আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু বলেন, ‘আমাদের জন্য এই দুটি সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বরগুনার উন্নয়নের যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে পায়রা ও বিষখালী সেতু। এ নিয়ে আমি একাধিকবার মাননীয় সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প দিয়েছেন। আমাদের সেতুর বিষয়টিও বর্তমান সরকারের গুরুত্ব বিবেচনায় রয়েছে। মূলত সেতু দুটি নির্মাণ হবে বৈদেশিক অর্থে, তাই হয়তো বর্তমান বাজেটে রাখা হয়নি। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি, এ সরকারের আমলেই সেতুর কাজ শুরু হবে।’
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে শনিবার দুপুরে জানান অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার আবু জাফর ও ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পুরো বিষয়টির তদন্ত করছে। দলটির প্রধান হলেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের শুক্রবার বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই কোথাও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না জেলাবাসী। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক চালক হারেজ আলী বলেন, ‘কঠিন তাপ পড়চি। সূর্য মনে হচ্চি মাতার উপর চলি এসিচে। আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে বাইরি বের হয়িচি। মাজে মাজে রাস্তার পাশের দুকান থেকি শরবত খেয়ি ঠান্ডা হচ্চি।’
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম; নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
মৌসুমের প্রায় সময়জুড়েই উত্তপ্ত থাকে চুয়াডাঙ্গা। এবারও চৈত্রের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়া তাপমাত্রার এমন দাপট বৈশাখের আবহাওয়াকে জটিল করে তুলছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা অনুভব করছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ মাসের শেষের কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য