বরগুনার বাসিন্দাদের হতাশ করেছে এবারের বাজেট। বহুল প্রতীক্ষিত এই বাজেটে নেই বরগুনার বিষখালী-পায়রা নদীর ওপর বহুল প্রতিশ্রুত দুই সেতু প্রকল্প। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন বরগুনার বাসিন্দারা।
সেই সঙ্গে সেতুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটি রক্ষা না করাকে উপকূলীয় এ জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে এক প্রকার প্রতারণার শামিল বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
বেকারদের কর্মসংস্থানে নেয়া প্রকল্প ন্যাশনাল সার্ভিস উদ্বোধন উপলক্ষে ২০১১ সালের ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরগুনায় আসেন। বরগুনাবাসীর উন্নয়নে ৪২ দফা দাবি পেশ করে জেলা আওয়ামী লীগ। ওই ৪২ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল বরগুনা-আমতলী রুটের পায়রা সেতু।
২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর বুধবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর দায়িত্ব চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, চীন সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে নবম ও দশম মৈত্রী সেতু নিয়ে যে কথাবার্তা চলছে, তার মধ্যেই রয়েছে বরগুনা-আমতলী রুটের পায়রা সেতু।
এ সময় সেতুমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশে আরও নতুন দুটি সেতু (নবম ও দশম মৈত্রী সেতু) নির্মাণে চীন সরকার সহায়তা করবে। সম্ভাব্য ওই সেতু দুটিই নির্মিত হবে বরগুনার আমতলী ও পটুয়াখালীর গলাচিপায়।
২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন বরগুনা বিষখালী নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি জানান।
২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জানা যায়, ওই বছরের আগস্ট মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সেতু বিভাগের সচিব রশিদুল হাসান, সেতু বিভাগের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব ড. মো মনিরুজ্জামান, বরগুনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালক মো. তোফাজ্জেল হোসেন ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান সম্ভাব্য সেতুর প্রকল্প স্থানসমূহ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে সার্কিট হাউসে সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, সেতুর নাম হবে ‘শেখ হাসিনা পায়রা ব্রিজ’। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পায়রা নদীতে পটুয়াখালীর লেবুখালী ও মির্জাগঞ্জ এবং বরগুনা-আমতলী তিনটি সেতুই নির্মিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, মির্জাগঞ্জ ও বরগুনার দুই সেতুর ডিজাইনসহ দাপ্তরিক কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য স্টুপ কনসালট্যান্টস লিমিটেড (ভারত), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট লিমিটেড ও ফিএন্ডই লিমিটেড কাজ করছে। ওই সমীক্ষা টিম পায়রা নদীর আমতলী-বরগুনার ৩-৪টি হার্ট পয়েন্টে ইতিমধ্যে সমীক্ষা শেষ করেছে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলাব্যাপী আনন্দ মিছিলও হয়।
সেতু বিভাগের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা- কাকচিরা সড়কে (জ-৮৮০) পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে যার দৈর্ঘ্য দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৫৫০ মিটার। প্রকল্পের অবস্থান দেখানো হয়েছে আমতলী ফেরিঘাট, আমতলী উপজেলা, বরগুনা।
ব্রিজের সম্ভাব্য স্থানের একটি ম্যাপ ও প্রাক্কলিত ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। নির্মাণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, আমতলী ও বরগুনা সদর উপজেলার সঙ্গে বরগুনা জেলা শহর এবং বরিশাল বিভাগীয় শহরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা যা যোগাযোগব্যবস্থাকে সহজ করবে।
এ ছাড়াও সেতুর অর্থনৈতিক প্রভাব হিসেবে বলা হয়েছে, এটি বরিশাল শহর ও বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে সড়ক সংযোগব্যবস্থা উন্নত করবে; সঙ্গে সঙ্গে যাতায়াতের সময়, খরচ, যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ, যাতায়াতের ধরন ও যাতায়াতের নিরাপত্তা উন্নত করবে এবং জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ ছাড়াও সেতু বিভাগের ওয়েবসাইটে ১৮ আগস্ট ২০২০ সালের তথ্যে পটুয়াখালী- আমতলী-বরগুনা-কাকচিরা সড়কে (জ-৮৮০) বিষখালী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন দেখিয়ে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন দেয়া আছে।
ওয়েবসাইটের আরও তথ্য, (সবশেষ ২২ মার্চ ২০২১ হালনাগাদ) চলমান প্রকল্পের পাশাপাশি পাঁচ সেতু সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তালিকায় ১ ও ৫ ক্রমিকে পটুয়াখালী- আমতলী-বরগুনা-কাকচিরা সড়কে (জ-৮৮০) বিষখালী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ । পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা-কাকচিরা সড়কে (জ-৮৮০) পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প দেখানো হয়েছে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সংসদের অধিবেশনে ২০২১-২০২২ সালের পেশ করা বাজেটের মেগা প্রকল্পের মধ্যে এই দুটি সেতুর কথা উল্লেখ না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।
পাবলিক পলিসি ফোরাম বরগুনার আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘আমাদের বরগুনার পায়রা ও বিষখালী ব্রিজের বিষয়টি বাজেটে না থাকায় আমরা চরম হতাশ। বর্তমান সরকারের সেতুমন্ত্রী সেতু দুটি নির্মাণের কথা জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া সমীক্ষার দলও বরগুনা এসেছিল।
‘অথচ, বর্তমান বাজেটে আমাদের দুটি সেতুর অস্তিত্বই নেই। তাহলে আমরা কি মনে করব এটা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা ছিল?’
তিনি আরও বলেন, ’৭০-এর নির্বাচন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সমস্ত চড়াই-উতরাইয়ে বরগুনাবাসী সঙ্গে ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে আমাদের কাছে যে প্রত্যাশা ছিল, তার সিকিভাগও আমরা বাস্তবে দেখছি না। হয়তো আমাদের কথা তার মনেই নেই।’
যোগাযোগ করা হলে বরগুনা-১-আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু বলেন, ‘আমাদের জন্য এই দুটি সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বরগুনার উন্নয়নের যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে পায়রা ও বিষখালী সেতু। এ নিয়ে আমি একাধিকবার মাননীয় সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প দিয়েছেন। আমাদের সেতুর বিষয়টিও বর্তমান সরকারের গুরুত্ব বিবেচনায় রয়েছে। মূলত সেতু দুটি নির্মাণ হবে বৈদেশিক অর্থে, তাই হয়তো বর্তমান বাজেটে রাখা হয়নি। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি, এ সরকারের আমলেই সেতুর কাজ শুরু হবে।’
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান ও সোনাহাট স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করেছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক।
বৃহস্পতিবার সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজে পৌঁছান তিনি। সেখানে বিশ্রাম ও দুপুরের খাবারের পর জেলা শহরের কাছে ধরলা সেতুর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত প্রস্তাবিত ভুটান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন।
দুপুর ১টা ২০ মিনিটে সেখানে পৌঁছান তিনি। সেখানে প্রায় ২০মিনিট অবস্থান করে সবকিছু দেখেন এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে রাজা স্থান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ সময় তিনি এলাকাটি ঘুরে দেখেন এবং সবার সঙ্গে ছবি তোলেন। পরিদর্শনকালে জোন এলাকাটি তার পছন্দ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়াও ইকোনোমিক জোন এলাকায় অ্যাগ্রোবেজড ও ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ হওয়ার সম্ভাবনার রয়েছে বলে তিনি আভাস দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ভুটানের বিনিয়োগকারী এবং বাংলাদেশের স্থানীয়দের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে ইকোনোমিক জোনে কী ধরনের শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে। পরে জোন এলাকা থেকে তিনি ১টা ৪০ মিনিটে সোনাহাট স্থলবন্দরের উদ্দেশে সড়কপথে যাত্রা করেন।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী এম এ আরাফাত, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার, সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ ও পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক বলেন, ‘জায়গাটি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আমি কাজ শুরু হলে আবারও এখানে আসব।’
এরপর বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তিনি সোনাহাট স্থলবন্দর এলাকায় পৌঁছান। সেখানে ২০ মিনিট অবস্থানের পর তিনি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের গোলকগঞ্জ দিয়ে ভুটানের উদ্দেশে ভারতে প্রবেশ করেন। সোনাহাট থেকে সড়ক পথে ভুটানের দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার।
সফর শেষে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘উনি শতভাগ সন্তষ্ট। জায়গা দেখেছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখেছেন। সবকিছু মিলিয়ে উনি সন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে কী ধরনের কার্যক্রম হতে পারে, সে বিষয়ে রাজা জানিয়েছেন, এখানকার স্থানীয় লোকজনের কী ধরনের চাহিদা রয়েছে এবং ভুটানের বিনিয়োগকারী লোকজনের কী চাহিদা রয়েছে- তার ওপর ভিত্তি করে এখানে কী ধরনের শিল্পকারখানা হবে তা নির্ধারণ করা হবে। তবে কৃষিনির্ভর ও ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১০/২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই সফরের মধ্য দিয়ে অনুন্নত কুড়িগ্রাম উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে। ২০১৬ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক জোনের জন্য জায়গা খুঁজতে বলেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমরা সফলতার মুখ দেখছি।
‘এটি বাস্তবায়ন হলে এলাকার বেকার মানুষ কাজ পাবে। সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে পিছিয়ে পড়া এই জেলা।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পতেঙ্গা থানাধীন ১৫ নম্বর ঘাটে নোঙর করা একটি ফিশিং বোটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন- ৫৫ বছর বয়সী জামাল উদ্দিন, ৪৫ বছর বয়সী মাহমুদুল করিম ও মফিজুর রহমান এবং ২৮ বছর বয়সী এমরান। এদের মধ্যে প্রথম তিনজনের শরীরের ৮০-৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছে। অন্যজনের শরীর পুড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ।
চমেক হাসপাতালে বার্ন ও ক্যাজুয়ালটি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের বড় ধরনের বার্ন হয়েছে। এই ধরনের রোগীদের অবস্থা ভালো থাকে না।’
চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ-থানার ওসি একরাম উল্লাহ বলেন, ‘মাছ ধরার ট্রলারে ইঞ্জিন থেকে সৃষ্ট আগুনে ৪ জন দগ্ধ হয়েছে। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
মোটা অংকের বেতনের প্রলোভনে লিবিয়ায় নিয়ে চট্টগ্রামের চার তরুণকে জিম্মি করেছে একটি চক্র। সেখানে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। আর সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছে চাওয়া হয়েছে মুক্তিপণ। এ নিয়ে দেশে স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জিম্মিদের অভিভাবকরা এ ঘটনা বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
লিবিয়ায় মানব পাচার চক্রের হাতে জিম্মি চার তরুণ হলেন- আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে ওয়াসিম, একই এলাকার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন, আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন। এদের বয়স ১৯ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
অপহৃতদের স্বজনরা জানান, রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম লিবিয়ায় নিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রতি ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। ওই তরুণরা ১৬ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ায় পৌঁছেন। লিবিয়ায় তাদের সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা দাবি করে তাদের নির্যাতন করা শুরু হয়। মানব পাচার চক্র এরপর নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো শুরু করে পরিবারের সদস্যদের কাছে।
স্বজনরা জানান, চট্টগ্রামের জহিরুল ভুক্তভোগীদের টুরিস্ট ভিসায় প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার বাসিন্দা মো. মিজান নামে এক লোকের হাতে ওদেরকে তুলে দেয়া হয়। মিজান তিনদিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিজের কাছে নিয়ে নেয়। সাতদিন পর দুবাই থেকে মিসর হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে মিজান ওই চার তরুণকে অন্য দালালের হাতে তুলে দেয়।
এদিকে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) স্বজনদের কাছে কয়েকটি নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও অডিও বার্তা পাঠায় দালাল চক্রের সদস্যরা। ভিডিও বার্তায় জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। আর ওই টাকা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখার একটি হিসাব নম্বরও দেয় তারা।
হুমকি দেয়া হয়, মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হবে চার জিম্মিকে। এজন্য বেঁধে দেয়া হয় সময়ও। বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে যতটা পারে তত টাকা দিতেও বলা হয়। টাকা না দিলে এক এক করে লাশ পাঠাবে বলে স্বজনদের জানিয়েছে দালালরা।
অপহৃত ওয়াসিমের মামা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে চারজনের জন্য চার লাখ টাকা পাঠাতে বলেছে। বিকেল থেকে মোবাইল ফোনে ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করেছে টাকার জন্য। তাদের নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজও পাঠাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
জাবেদুর রহিমের বাবা আবদুর রহিম বলেন, ‘টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার যা ছিল সব বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। সেখানে ছেলে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এখন ১০ লাখ টাকা দিলে ছেলেকে ফেরত দেবে বলে জানিয়েছে অপরণকারীরা। এই মুহূর্তে এত টাকা কই পাব আমি?’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন জানান, অপহৃতদের স্বজনদের কাছ থেকে তারা লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে লালপুর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে দুর্নীতি করার ঘোষণা দেন এ সংসদ সদস্য।
তার বক্তব্যের অংশবিশেষের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রকাশিত ওই ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘পাঁচটা বছর (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না; আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলব। যেভাবেই হোক তুলবই। এতটুক অনিয়ম আমি করবই। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’
প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আখতার। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। উনার বক্তব্য উনি বলেছেন, এখানে আমার কোনো কথা নেই।’
বক্তব্যর বিষয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার বক্তব্যে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে, অনেকেই এরকম করে। আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য খুব দুর্ভাগ্যজনক। সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে তার সহকারী এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা দুর্নীতিতে উৎসাহিত হবেন। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথের লংঘন, অন্যদিকে নির্বাচনি বিধিরও লংঘন।
‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারকাজে একজন সংসদ সদস্য ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না।’
সংসদ সদস্যের কাছে গঠনমূলক বক্তব্যেরও প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ শহরের প্রবেশপথে যানজট নিরসনে ও পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক ও ফুটপাত থেকে শতাধিক হকার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করা হয়।
প্যানেল মেয়র তসলিম মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্থায়ী কিছু ব্যবসায়ীরা ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে ব্যবসা করে আসছেন। এতে করে শহরে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পথচারীদের সুবিধার্থে যানজট দূর করতেই এই উচ্ছেদ অভিযান।
উচ্ছেদ অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ মো. তসলিম মিয়া ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানাসহ থানা পুলিশ ও পৌরসভার কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠির রাজাপুরে নদীর তীর থেকে এক ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো যুবকের মামুন হোসেন, যার বয়স ২৫ বছর। তিনি রাজাপুরের পশ্চিম সাতুরিয়া গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে।
ভ্যানচালক মামুন দুই দিন আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন জানিয়ে রাজাপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে সাতুরিয়া গ্রামের ইদুরবাড়ি এলাকায় কচা নদীর তীর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। লাশের ময়নাতদন্তসহ পরবর্তী সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে এটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা, সেটি তদন্তে বের হবে।’
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পূর্ব পূয়ালী গ্রামের আব্দুর রহিম হাওলাদারের একমাত্র ছেলে রাব্বি হাওলাদার।
২৫ বছর বয়সী রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট। ডাক্তারের পরামর্শ তার কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। বর্তমানে তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
রাব্বির কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য এতো টাকা লাগবে শোনার পর থেকেই তার কৃষক বাবা সাহায্যের জন্য ছুটছেন চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় বিত্তবানদের কাছে। কেন না তার সবকিছুই বিক্রি করে দিলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি জোগাড় করার সামর্থ্য হচ্ছে না।
রাব্বি বর্তমানে ঢাকার মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এমন অবস্থায় কৃষক বাবা তার সন্তানকে বাঁচাতে দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। দেশের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেই হয়ত বেঁচে যাবে তার সন্তান।
রাব্বির পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাব্বি হাওলাদার কয়েক মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (সেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যান তার পরিবার। সেখানে চিকিৎসক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল রাব্বির, কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরই মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ওপরে শুধু হাসপাতাল ও ওষুধের বিল দিতে হয়েছে। দরিদ্র এই পরিবারটি আত্মীয়স্বজনসহ সবার সহায়তায় ওই বিল দেয়া সম্ভব হয়।
রাব্বির মা রেভা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এভাবে আর কয়দিন চিকিৎসা করাতে পারব জানি না। কারণ আমাদের সামর্থ্য শেষ হয়ে এসেছে। শুধু টাকার অভাবে তাকে ভালো কোনো হাসপাতালেও নিতে পারছি না, কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপারেশনের ধকল সহ্য করার মতো সুস্থ অবস্থায় আনা খুব জরুরি।’
রাব্বির বাবা আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে আপনাদের ভালোবাসা ও সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন। কারণ শুধু টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার একমাত্র ছেলে অকালে ঝরে যাবে তা আমার জীবন থাকতে মানতে পারছি না।’
তাকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে ০১৯৯৭-২২৮৯৭৫ ও ০১৯৮৭-৩৬৬৫৬৮ (বিকাশ-পার্সোনাল) নাম্বারে পাঠাতে পারেন ও যোগাযোগ করতে পারেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য