বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুকুক বন্ড: ১ লাখে ৫ বছরে ৭৮ হাজার টাকা মুনাফা সম্ভব

  •    
  • ২২ আগস্ট, ২০২১ ১৮:২০

বেক্সিমকোর এই বন্ডে বিনিয়োগ করলে প্রতি বছর ২০ শতাংশ অর্থ তুলে নেয়া যাবে বা এর বিপরীতে শেয়ার নেয়া যাবে। আর সেই শেয়ার পাওয়া যাবে বাজার মূল্যের ২৫ শতাংশ কমে। আর কেউ যদি বছর বছর তার অবশিষ্ট টাকার ২০ শতাংশে শেয়ার নেন, তাহলে ৫ বছর শেষে সেই শেয়ার বিক্রি করে তার মুনাফা হবে ৩৩ হাজার টাকা। আর বছর বছর মূল টাকা কমে যাবে বলে পাঁচ বছরে মোট মুনাফা থাকবে ৩০ হাজার ২৫৪ টাকা। আর কেউ যদি পুরো টাকাটা ৫ বছর ব্যবহার করে মেয়াদ শেষে একবারে শেয়ার নেন, তাহলে তিনি মুনাফা হিসেবে পাবেন মোট ৪৫ হাজার টাকা। আর শেয়ার বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা পাবেন ৩৩ হাজার টাকা।

পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো সুকুক বন্ড ছেড়ে বেক্সিমকো লিমিটেড যে টাকা তুলতে যাচ্ছে, তাতে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে ৫ বছরে ৬৩ হাজার থেকে ৭৮ হাজার টাকা মুনাফা করার সুযোগ থাকছে। আর এই বন্ডের আয় পুরোটাই করমুক্ত বলে প্রকৃত আয় আসলে আরও বেশি।

যদিও কোম্পানির পক্ষ থেকে বছরে ৯ শতাংশ মুনাফার কথা জানানো হয়েছে। এই হিসাবে মুনাফা হওয়ার কথা ৪৫ হাজার টাকা।

এই আয় কার্যত ৫০ হাজার টাকার সমান। কারণ, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে লভ্যাংশ হিসেবে যে অর্থ পাওয়া যায়, তা থেকে ১০ শতাংশ কর কেটে রাখা হয়। ফলে কেউ ৫০ হাজার টাকা লভ্যাংশ পেলেই কেবল তার ব্যাংকে যাবে ৪৫ হাজার টাকা।

এই মুনাফার বাইরে বাড়তি ১৮ বা ৩৩ হাজার টাকা মুনাফা কোত্থেকে আসবে?

এই বাড়তি মুনাফার কারণ এই বন্ডের আরও কিছু শর্ত। বছর শেষে একজন বিনিয়োগকারী তার মোট বিনিয়োগের ২০ শতাংশ টাকা তুলে নিতে পারবেন, অথবা এর বিনিময়ে কোম্পানির শেয়ার নিতে পারবেন। আর এই কেউ যদি শেয়ার নেন, তাহলে একটি বিশেষ শর্তের কারণে তিনি বাড়তি মুনাফা পাবেন।

কোম্পানির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কেউ যদি বছর শেষে ২০ শতাংশ টাকা না নিয়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নেন, তাহলে তিনি শেয়ারটি পাবেন বাজার মূল্যের ২৫ শতাংশ কম দামে। আর তিনি যখন শেয়ারটি বিক্রি করবেন, তখন তা নিশ্চয় বাজার মূল্যেই বেচবেন। কিন্তু মাঝে একটি মুনাফা হয়ে যাবে তার।

বেক্সিমকো এই শেয়ার দেবে রেকর্ড ডেটের আগের দুই মাসের ভরিত গড়ের সমান দামে। যদি শেয়ার মূল্য ১০০ টাকা হয়, তাহলে তিনি পাবেন ৭৫ টাকায়। যদি শেয়ার মূল্য ২০০ টাকা হয়, তাহলে তিনি পাবেন ১৫০ টাকায়, আর যদি শেয়ার মূল্য ৫০ টাকায় হয়, তিনি পাবেন ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা।

অর্থাৎ শেয়ার মূল্য যতই হোক না কেন, বন্ডধারীর মুনাফা এবং শেয়ার বিক্রি করে অর্থে কোনো হেরফের হবে না।

কেউ যদি বছর বছর তার অবশিষ্ট টাকার ২০ শতাংশ টাকার শেয়ার নেন, তাহলে ৫ বছর শেষে সেই শেয়ার বিক্রি করে তার মুনাফা হবে ৩৩ হাজার টাকা।

আর বছর বছর মূল টাকা কমে যাবে বলে পাঁচ বছরে মোট মুনাফা থাকবে ৩০ হাজার ২৫৪ টাকা।

আর কেউ যদি পুরো টাকাটা ৫ বছর ব্যবহার করে মেয়াদ শেষে একবারে শেয়ার নেন, তাহলে তিনি মুনাফা হিসেবে পাবেন মোট ৪৫ হাজার টাকা। আর শেয়ার বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা পাবেন ৩৩ হাজার টাকা।

দেশের পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো এই বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে মোট ৩ হাজার কোটি টাকা তুলবে বেক্সিমকো লিমিটেড। এই অর্থের সিংহভাগ দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করবে কোম্পানিটি।

প্রথম বছর শেষে আয় কত

কেউ এক লাখ টাকার বন্ড নিলে এক বছর পরে নিশ্চিতভাবেই ৯ হাজার টাকা পেয়ে যাবেন। তিনি যদি মনে করেন, ২০ হাজার টাকা ভাঙিয়ে শেয়ার নেবেন, তাহলে তিনি কতগুলো শেয়ার পাবেন, সেটি বাজার মূল্যের ওপর নির্ভর করবে।

যদি শেয়ার মূল্য ১০০ টাকা হয়, তাহলে তিনি শেয়ার পাবেন ৭৫ টাকায়। ২০ হাজার টাকায় তিনি নিতে পারবেন ২৬৬টি। যদি শেয়ার মূল্য ২০০ টাকা হয়, তাহলে তিনি পাবেন ১৩৩টি আর যদি শেয়ার মূল্য ৫০ টাকা হয়, তাহলে তিনি পাবেন ৫৩৪টি। শেয়ার মূল্য যদি ১০ টাকা থাকে, তাহলে তিনি পাবেন ২ হাজার ৬৬টি শেয়ার।

শেয়ার পেয়ে তিনি যদি সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে দেন, তাহলে এ ক্ষেত্রে তার মুনাফা হবে ৬ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ এক বছর মুনাফা হবে মোট ১৫ হাজার ৬০০ টাকা। আর তিনি ২০ হাজার টাকাও তুলে নিতে পারবেন শেয়ার বিক্রি করে।

দ্বিতীয় বছর শেষে আয়

পরের বছর তিনি ৮০ হাজার টাকায় ৯ শতাংশ হিসেবে ৭ হাজার ২০০ টাকা মুনাফা পাবেন নিশ্চিত। তখন আরও ২০ শতাংশ হিসেবে ১৬ হাজার টাকা তুলে নিতে পারবেন, বা শেয়ার নিতে পারবেন।

তখন তিনি শেয়ার নিলে তা বিক্রি করে মুনাফা পাবেন ৫ হাজার ৩০০ টাকা। অর্থাৎ দ্বিতীয় বছরে ৮০ হাজার টাকায় তার মুনাফা দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। ওই বছরও মুনাফা গিয়ে দাঁড়াবে ১৫.৬ শতাংশ।

তৃতীয় বছর শেষে আয়

২০ শতাংশ হিসেবে ১৬ হাজার তুলে নিলে তৃতীয় বছর শেষে আসল টাকা থাকে ৬৪ হাজার টাকা। এই টাকার ৯ শতাংশ হিসেবে মুনাফা আসবে ৫ হাজার ৭৬০ টাকা।

এর ২০ শতাংশ হিসেবে ১২ হাজার ৮০০ টাকা তিনি তুলে নিতে পারবেন, বা শেয়ার নিতে পারবেন। ২৫ শতাংশ কম দামে পাবেন বলে এবার শেয়ার বিক্রি করে তার বাড়তি মুনাফা হবে ৪ হাজার ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে ৬৪ হাজার টাকায় বছর শেষে মুনাফা থাকবে ৯ হাজার ৯৬০ টাকা যা মোট টাকার ১৫.৫৬ শতাংশ।

চতুর্থ বছর শেষে আয়

চতুর্থ বছর বন্ডে মূল টাকা থাকবে ৫১ হাজার ২০০ টাকা। এই অর্থের ৯ শতাংশ হিসেবে মুনাফা পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৬০৮ টাকা। আর ওই বছর ২০ শতাংশ হিসেবে তোলা যাবে ১০ হাজার ২৪০ টাকা। এই টাকা না তুলে শেয়ার নিলে বাড়তি মুনাফা হবে ৩ হাজার ৪১৩ টাকা।

অর্থাৎ চতুর্থ বছরে মুনাফা পাওয়া যাবে ৮ হাজার ২১ টাকা। তখনও শতকরা হিসেবে মুনাফা থাকবে ১৫.৬৬ শতাংশ।

পঞ্চম বছর শেষে

পঞ্চম বছর বন্ডের এক লাখ টাকার মধ্যে বাকি থাকবে ৪০ হাজার ৯৬০ টাকা। ৯ শতাংশ হারে তখন মুনাফা পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৬৮৬ টাকা। ওই বছর বাকি সব টাকা তুলে নেয়া যাবে। আর কেউ শেয়ার কিনলে ২৫ শতাংশ কম দামে তার মুনাফা হবে ১৩ হাজার ৬৫৩ টাকা।

সব মিলিয়ে পঞ্চম বছরে তার মুনাফা হবে ১৭ হাজার ৩৪০ টাকার মতো।

পঞ্চম বছরে একসঙ্গে শেয়ার নিলে

কেউ যদি বছর বছর কেবল মুনাফার ৯ শতাংশ তুলে পঞ্চম বছরে এসে এক লাখ টাকার শেয়ার নেন, তাহলে এই পর্যায়ে এসে তার মুনাফা হবে ৩৩ হাজার টাকা।

ধরা যাক, তখন শেয়ারের দর ১০০ টাকা। কিন্তু বন্ডে বিনিয়োগকারী তা পাবেন ৭৫ টাকায়। ১ লাখ টাকার বিপরীতে তখন তিনি পাবেন এক হাজার ৩৩টি শেয়ার।

১০০ টাকা করে বিক্রি করলে এই শেয়ারের দাম হয় এক লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

শেয়ারদর সে সময় যতই থাকুক না, কেন, ২৫ শতাংশ কম দামে পাওয়া যাবে বলে এই পরিমাণ মুনাফা হবেই।

অর্থাৎ ৫ বছর শেষে তার প্রকৃত মুনাফা হবে ৭৮ হাজার টাকা।

নগদ মুনাফা আরও বেশিও হতে পারে

অবশ্য কেউ যদি ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে, বছর শেষে তিনি ৯ হাজার টাকাই যে মুনাফা পাবেন, এমনটা নয়। এই ৯ হাজার টাকা তাকে দিতেই হবে। বেশি পাওয়ার সুযোগ আছে অন্য একটি কারণে।

বন্ডের শর্ত অনুযায়ী বেক্সিমকো লিমিটেডের লভ্যাংশ ১০ শতাংশের বেশি হলে যতটুকু বেশি হবে, তার ১০ শতাংশ পাবেন বন্ডধারী।

যদি বেক্সিমকোর লভ্যাংশ ১৫ শতাংশ হয়, তাহলে সুকুকধারীরা বাড়তি ৫ শতাংশের ১০ শতাংশ আর যদি লভ্যাংশ ২০ শতাংশ হয়, তাহলে বাড়তি ১০ শতাংশের ১০ শতাংশ যোগ হবে সুকুকের মুনাফায়।

বন্ডে বিনিয়োগ কীভাবে

বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ প্রাথমিকভাবে কোম্পানির শেয়ারধারীদের জন্য রাখা হয়েছে।

এ জন্য রেকর্ড ডেট ছিল গত ১৯ জুলাই। অর্থাৎ এই সময়ে যেসব বিনিয়োগকারীদের কাছে বেক্সিমকোর শেয়ার ছিল কেবল তারাই পরবর্তীতে সুকুক বন্ড কিনতে পারবে।

বিনিয়োগকারীদের সুকুক বন্ড বুঝিয়ে দেওয়া হবে ৩১ আগস্ট। এজন্য দুই মেয়াদে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হয়।

প্রাইভেট প্লেসমেন্ট, সাধারণ ও বর্তমানে শেয়ারহোল্ডারদের আবেদন গ্রহণ শুরু হয় ২৫ জুলাই থেকে। চলবে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত।

শেয়ারধারী ছাড়া যারা বন্ড কিনতে চান, তাদের জন্যও সুযোগ আছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে ১৭ আগস্ট থেকে, চলবে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত।

সুকুকটির প্রতিটি ইউনিটের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। বন্ডটির ন্যূনতম লট হবে ৫০টি ইউনিটে। একজন বিনিয়োগকারী ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন এ বন্ডে।

সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত আবেদন ফরম দেয়া আছে। ফরম পূরণ করে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের জন্য আবেদন করা যাবে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিজ নিজ ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সুকুক বন্ডের আবেদন করতে পারবে।

বেক্সিমকোর এই সুকুকের ইস্যু ম্যানেজার, অ্যারেঞ্জার ও অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড এবং অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আর ট্রাস্টি হিসেবে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

কেউ যদি এই সময়ের মধ্যে বন্ড কিনতে না পারেন, তার জন্য সুযোগ একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এই বন্ড শেয়ারের মতোই পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে। ফলে যে কেউ এটি যে কোনো সময়, যে কোনো পরিমাণে কিনতে পারবেন।

এ বিভাগের আরো খবর