টানা দুই দিনের পতনের ভিড়ে লেনদেনের শেষ বেলায় ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিল ব্যাংক খাত। লেনদেনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দর যতটা পড়েছিল, তার বেশ খানিকটা ফিরে পাওয়ার মধ্য দিয়ে এই বিষয়টি বোঝা গেল।
বস্ত্রখাতেও সেই একই চিত্র। শেষ বেলায় বেশিরভাগ কোম্পানির দর বৃদ্ধি হলো এই খাতেও। আর বিমা খাতের শেয়ারগুলোর দাম টানা তৃতীয় দিন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হওয়া সংশোধন শেষের ইঙ্গিত আরও স্পষ্ট হলো।
মঙ্গলবার ব্যাংকের দল বেঁধে দাম বৃদ্ধির পর বুধবার চারটি ছাড়া কমেছিল বাকি সবগুলোর। আজও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এক পর্যায়ে এই খাতে দ্বিতীয় দিনের পতন ছিল আরও বেশি। শেষ সময়ে দর ফিরে পেতে থাকে ব্যাংকগুলো। দিনের সর্বনিম্ন দরের চেয়ে বেশি দরে লেনদেন শেষ করেছে প্রায় সব কটি কোম্পানি।
ব্যাংকের তুলনায় বস্ত্রের নিজেকে ফিরে পাওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে আরও বেশি। সর্বনিম্ন দরের চেয়ে কেবল বেশিতে লেনদেন শেষ করেনি, বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর।
বিমা খাতের শেয়ারধারীরা টানা দুই মাস ধরে যে উদ্বেগের মধ্যে ছিল, সেখান থেকে বের হয়ে কিছুটা স্বস্তিতে ফিরেছেন। পরপর তিন দিন দর বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের লোকসান কিছুটা কমেছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে আত্মবিশ্বাস।
বুধবার ১৫ পয়েন্টের পর বৃহস্পতিবার সূচক কমল ১১ পয়েন্ট যদিও এক পর্যায়ে কমে গিয়েছিল ৪৭ পয়েন্ট।
পর পর দুই দিন কমল লেনদেন। আগের দিনের চেয়ে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার শেয়ার কম কেনাবেচা হয়েছে আজ।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন
টানা বাড়তে থাকা পুঁজিবাজারে পর পর দুই দিন সূচক কমলেও বিনিয়োগকারীরা তাতে নাখোশ-এটা বলার সুযোগ নেই। কারণ, উত্থানের পর ছোটখাটো সংশোধন যে হতে পারে, সেটা আলোচনাতেই ছিল। আর সংশোধনে সূচকের ছোটখাটো পতন বরং স্বস্তিতেই রেখেছে তাদের।
বিমার লেনদেন বেড়েছে ১১৫ শতাংশ
মঙ্গলবার থেকেই বিমার শেয়ারের দাম বাড়ছে। জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সংশোধনে যাওয়া এই খাতের শেয়ারদর মাঝেমধ্যে এক দুই দিন বাড়লেও পরে তা আবার হয় পতনমুখি। তবে এবার তৃতীয় দিনে এসেও দর বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেন বাড়তে থাকায় স্পষ্ট হয়েছে যে, বিনিয়োগকারীরা আবার এই খাতে ফিরেছেন।
মঙ্গলবার এই খাতে লেনদেন ছিল ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দিনে শেয়ারদর বাড়লেও লেনদেন কমে দাঁড়ায় ১৬৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। তবে আজ এক লাফে বেড়ে লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৩৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
বুধবারের তুলনায় এই খাতে লেনদেন বেড়েছে ১১৫.২৬ শতাংশ।
এই খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৫টির দর কমেছে। বাকি ৪৬টি কোম্পানির দর বেড়েছে।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যেও এই খাতের প্রাধান্য দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির ৪টি আর ২০টি কোম্পানির ৬টি ছিল বিমা খাতের।
বৃহস্পতিবার বিমা খাতের শেয়ারধারীরা সবচেয়ে বেশি স্বস্তিতে ছিলেন। এরপর ছিল বস্ত্র খাত
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের, ৯.৯২ শতাংশ। আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর ছিল ৪০ টাকা ৩০ পয়সা। দিন শেষে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ৩০ পয়সা।
তারপরেই আছে কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার দর ৪০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৯.৮০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৪ টাকা ৮০ পয়সা।
সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৪০ শতাংশ। দর ৪৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৭ টাকা ৭০ পয়সা।
জনতা ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৯.০৬ শতাংশ। ৪০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৪ টাকা ৫০ পয়সা।
দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৪৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৭.০৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫১ টাকা ৩০ পয়সা।
রূপালী ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৫.০৬ শতাংশ। ৪১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৩ টাকা ৬০ পয়সা।
ব্যাংকে পতন ঘটলেও দিন শেষে দর ফিরে পাওয়া
এবি ব্যাংকের শেয়ারদর ২০ পয়সা কমেছে আজ। তবে এক পর্যায়ে কমে গিয়েছিল ৫০ পয়সা। এই ৩০ পয়সা ফিরে পাওয়া গেছে লেনদেনের শেষ ভাগে।
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এক পর্যায়ে দর হারিয়েছিল ৯০ পয়সা। সেখান থেকে ৬০ পয়সা ফিরে পেয়ে লেনদেন শেষ করে আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়সা কমে।
রূপালী ব্যাংকের শেয়ারদর পড়ে গিয়েছিল ১ টাকা ২০ পয়সা, তবে দিন শেষে সেখান থেকে বাড়ে ৫০ পয়সা।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর পড়ে গিয়েছিল ১ টাকা। সেখান থেকে ফিরে পাওয়া যায় ৭০ পয়সা।
মার্কেন্টাইলের শেয়ারদর পড়ে গিয়েছিল ৫০ পয়সা, তবে এখান থেকে ৩০ পয়সা ফিরে পেয়ে শেষ করে লেনদেন।
ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারদর পড়ে গিয়েছিল ৩০ পয়সা, তবে দিন শেষে লেনদেন শেষ হয়েছে আগের দিনের সমান দামে।
সিটি ব্যাংকের শেয়ারদর পড়ে গিয়েছিল ৫০ পয়সা, তবে দিন শেষে বেড়েছে ১০ পয়সা।
ঢাকা ব্যাংকের শেয়ারদর পড়ে গিয়েছিল ৩০ পয়সা, তবে দিন শেষে বেড়েছে ২০ পয়সা।
আইএফআইসির শেয়ার দর পড়ে গিয়েছিল ৫০ পয়সা, তবে দিন শেষে বেড়েছে ২০ পয়সা।
দিন শেষে ৩২টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ২৪টির পতন আর তিনটির দাম অপরিবর্তিত থাকার মধ্যেও শেয়ারধারীরা কিছুটা স্বস্তি শেষ বেলায় কিছুটা হলেও দর ফিরে পাওয়ায়।
পরপর দুই দিন শেয়ারদর পতনের মধ্যে লেনদেনও ক্রমেই কমেছে।
সংশোধনের দ্বিতীয় দিনে লেনদেন কমেছে প্রধান প্রায় সব খাতেই
মঙ্গলবার লেনদেন ছিল ৪৫২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বুধবার কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৩৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আজ তা আরও ৭১ কোটি টাকা লেনদেন কমে হয়েছে ২৬৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
সদ্য তালিকাভুক্ত সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ছাড়া দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধির তালিকায় কোনো ব্যাংক ছিল না। এই ব্যাংকটির দাম পর পর ৬ দিন সর্বোচ্চ পরিমাণে বেড়েছে।
ব্যাংক খাতে এরই মধ্যে ১৫টি ব্যাংকের শেয়ারদরকে ছাড়িয়ে গেল এই কোম্পানিটি। দিন শেষে দাম দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৬০ পয়সা।
সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার দর অল্প বাড়ার বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৩.৯০ শতাংশ কমেছে ব্যাংক এশিয়ার দর।
এ ছাড়া যমুনা ব্যাংকের ৫০ পয়সা, স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের ৩০ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের পূবালী ব্যাংকের শেয়ারদর পড়েছে ৫০ পয়সা।
লেনদেন কমলেও উত্থানে বস্ত্র খাত
আগের দিনের তুলনায় বস্ত্র খাতের লেনদেনও কমেছে। এদিন বস্ত্র খাতের লেনদেনে ৩০টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। কমেছে ২২টির। আর দর পাল্টায়নি ৬টির।
বুধবার বস্ত্র খাতের মোট লেনদেন হয়েছিল ৩৩৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ২৯৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ফলে একদিনের ব্যবধানে বস্ত্র খাতের লেনদেন কমেছে ৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
লেনদেন দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া বস্ত্র খাতের কোম্পানি ছিল মেট্রো স্পিনিং। কোম্পানির শেয়ার দর ৯.২০ শতাংশ বেড়েছে। ২৫ টাকা থেকে হয়েছে ২৭ টাকা ৩০ পয়সা।
অনালিমা ইয়ার্নের দর বেড়েছে ৬.৬২ শতাং। ৬৯ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৯ টাকা ৯০ পয়সা।
ম্যাকসন স্পিনিংয়ের ৫.৭০ শতাংশ, ঢাকা ডাইংয়ের ৫.৬৫ শতাংশ, দুলামিয়া কটনের দর বেড়েছে ৫.২৬ শতাংশ।
অন্যান্য খাতের লেনদেন
ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে ১৭০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৭টির। দর কমেছে ১৪টির। অপরিবর্তিত ছিল আর দুটির।
আগের দিন এ খাতের লেনদেন ছিল ২২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
মিউচ্যয়াল ফান্ড খাতের লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮টির। দর কমেছে ২০টির। পাল্টায়নি ১০টির।
প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ১৫৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২০১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
লেনদেন হওয়া ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৫টির, কমেছে ২৫টির। অপরিবর্তিত ছিল দুটির।
ওষুধ ও রসায়ন খাতেও লেনদেন কমেছে। হাতবদল হয়েছে ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৪১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
লেনদেনে ১০টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। দর কমেছে ২০টি কোম্পানির। একটির লেনদেন দীর্ঘদিন ধরেই অপরিবর্তিত।
বিবিধ খাতের ১৪টি কোম্পানির মধ্যে দাম বমেছে ৮টির, বেড়েছে ৬টির। লেনদেন হয়েছে ২০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেক্মিমকো লিমিটেডের একার অংশগ্রহণই ১৫৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
আগের দিন এই খাতে লেনদেন ছিল ১৭৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১১ দশমিক ২২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৬০ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৪ দশমিক ৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬১ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩.২৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪২৩ পয়েন্টে।
ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই)প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ৩৯ দশমিক ১১ পযেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৭০৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৮৮ কোটি টাকা।