বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তুমুল আগ্রহের রবি আর জ্বলেনি

  •    
  • ৭ আগস্ট, ২০২১ ১৬:৪৭

তালিকাভুক্তির পর তোলপাড় ফেলে দেয়া মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি রবির শেয়ারে উচ্চ দরে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ লোকসানে বিনিয়োগকারীরা। সর্বোচ্চ দরে যারা শেয়ারটি কিনেছেন, তারা ৪৪ শতাংশের মতো টাকা হারিয়ে হতাশ।

পুঁজিবাজারে আসার আগে থেকেই উচ্ছ্বাস। লেনদেন শুরুর পর থেকে রীতিমতো উড়তে থাকা। দিনের পর দিন দাম বাড়তে থাকে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।

এভাবে টানা বাড়তে বাড়তে ১৬ কর্মদিবসে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার হয়ে যায় ৭০ টাকা ১০ পয়সা। তবে ১৭তম দিনে গিয়েই খায় হোঁচট। যদিও দিনের শুরুতে আবারও দিনের সর্বোচ্চ দাম ৭৭ টাকা ১০ পয়সা উঠে যায়। তবে সেদিনই নেমে আসে ৬৪ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ ১৭ জানুয়ারি যারা সর্বোচ্চ দামে শেয়ারটি কিনেছিলেন, সেদিনই তারা প্রতিটিতে ১২ টাকা ৬০ পয়সা লোকসানে আছেন।

এরপর দিনে দিনে লোকসান কেবল বেড়েছেই। এখন দাম ৪৩ টাকা ১০ পয়সা। এর মাঝে বহুজন বিপুল পরিমাণ লোকসান দিয়ে শেয়ার বিক্রি করে বের হয়েছেন, যারা এখনও ধরে রেখেছেন, তারা আশায় আছেন হয়তো আবার দাম বেড়ে উঠবে, তাদের লোকসান কমবে।

২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৩৩ পয়সা আয় করে কোনো লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ধাক্কা খান বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও অনেকটা চমকে যায় তাদের সিদ্ধান্তে। ডেকে আনা হয় প্রতিনিধিদের। বিনিয়োগকারীদের পুষিয়ে দেয়ার অনুরোধ করে তারা।

পরে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের হিসাব বিবরণী প্রকাশের দিন ৩ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ৩০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ দেয় পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু কোম্পানিতে আগ্রহ আর ফেরেনি।

তালিকাভুক্তির পর এক দিনে যেখানে ৬ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার লেনদেনের ইতিহাস আছে, সেখানে গত এক মাসে এক দিনে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড আছে ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৯টি। আর সর্বনিম্ন ৬৪৫টি।

এই পরিমাণ লেনদেন নিঃসন্দেহে খারাপ না। কিন্তু কোম্পানির ৫২৩ কোটিরও বেশি শেয়ারের মধ্যে ৫০ কোটিওর বেশি শেয়ার লেনদেনের যোগ্য থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে একে নগণ্য না বলা ছাড়া উপায় থাকে না।

সর্বোচ্চ দরে ওঠার পর আর এই দরে যায়নি রবির শেয়ার। শুধু ৭৭ টাকা নয়, এই দর থেকে কমে যখন ৪৩ টাকা ১০ পয়সা হয়েছে, তখনও যারা শেয়ার কিনেছেন তারাও এখন লোকসানে বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অংশ হলে আটকে আছে বিনিয়োগ। সর্বোচ্চ দরে যারা শেয়ার কিনে আটকে আছেন, এই ‍মুহূর্তে প্রতি ১০০ টাকায় ৪৪ টাকা খুইয়ে বসে আছেন তারা।

এখন যে দাম, সেটিও অবশ্য কিছুটা বেশি দেখাচ্ছে। কারণ একপর্যায়ে দাম ৩৬ টাকা ৮০ পয়সাতেও নেমে গিয়েছিল।

গত ১০ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত রবির শেয়ার সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৪৪ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করছে।

বিনিয়োগকারীদের ধারণা ছিল গ্রামীণফোনের মতো আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দেবে রবি। ছবি: নিউজবাংলা

কেন ছিল আগ্রহ

দেশের টেলিকম খাতে ব্যবসা করছে চারটি কোম্পানি। গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি-এয়ারটেল ও সরকরি খাতের টেলিটক।

এর মধ্যে গ্রামীণ ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ৭০ টাকা অভিহিত মূল্যে শেয়ার বিক্রি করেছে কোম্পানিটি। আর গত বছর শেয়ারপ্রতি ২৭ টাকা ৫০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। গত ৬ বছরে সর্বনিম্ন লভ্যাংশ দিয়েছে শেয়ারপ্রতি ১৪ টাকা। আর এরপর থেকে প্রতিবছরই বাড়ছে লভ্যাংশের পরিমাণ।

চলতি বছর অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের দিনও শেয়ারপ্রতি সাড়ে ১২ টাকা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তারা।

গ্রামীণফোনের শেয়ার ধরে রেখে বিনিয়োগকারীরা প্রতিবছর ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার পাশাপাশি শেয়ারদরও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। এখন দাম ৩৬৯ টাকা ১০ পয়সা।

গ্রামীণের মতোই রবিও বহুজাতিক কোম্পানি আর তাদেরও এই মার্কেটে হিস্যার পরিমাণ কম নয়। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা ধারণা করে আসছিলেন, রবিও এভাবে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দেবে।

তবে তারা যে হিসাবে ভুল করেছেন, সেটা হলো রবির শেয়ারপ্রতি আয়ের দিক থেকে গ্রামীণের সঙ্গে এই কোম্পানির তুলনাই হতে পারে না।

গত বছর রবি যেখানে শেয়ারপ্রতি ৩৩ পয়সা আয় করেছে, সেখানে গ্রামীণের আয় ছিল ২৭ টাকা ৫৪ পয়সা।

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে গ্রামীণ যেখানে শেয়ারপ্রতি ১২ টাকা ৮৯ পয়সা আয় করেছে, সেখানে রবির আয় মাত্র ১৫ পয়সা।

এই আয় বাড়বে বলে আশা করা হলেও আসলে কমেছে। গত বছর প্রথম ৬ মাসে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছিল ১৬ পয়সা।

রবি ও গ্রামীণের শেয়ারপ্রতি আয়ে এত পার্থক্যের কারণ মোট আয়ের পার্থক্যের পাশাপাশি শেয়ার সংখ্যায় বিপুল ব্যবধানের। গ্রামীণফোন আর রবির মোট আয় সমান হলেও শেয়ারপ্রতি আয়ে বিশাল পার্থক্য থেকেই যাবে।

গ্রামীণ যেখানে ১৩৫ কোটি ৩ লাখ ২২টি শেয়ারে বিভক্ত, সেখানে রবির শেয়ারসংখ্যা ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৫টি।

অর্থাৎ যদি গ্রামীণ আর রবির আয় সমানও হয়, তার পরেও শেয়ারপ্রতি আয়ের পার্থক্য থেকে যাবে ৪:১ হারে।

তবে এখন সমান আয়ের বিষয়টি আলোচনাতেই আসছে না এ কারণে যে, রবি গত বছর কেবল আয় করেছে ১৭২ কোটি ২৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, আর গ্রামীণ করেছে ৩ হাজার ৭১৮ কোটি ৭২ লাখ ৬২ হাজার ৬০৫ টাকা।

এই বিষয়টি বিচার বিবেচনা না করেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারমূল্য ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশায় শেয়ারে হুমড়ি খেয়ে এখন টাকা খুইয়েছেন। বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির আদেশ থাকলেও এখন ক্রয়াদেশ থাকে কমই।

লোকসানের পোর্টফোলিও রবির

গত ১৪ জানুয়ারি রবির শেয়ারদর ছিল ৭১ টাকা ১০ পয়সা। দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির পর ১৭ জানুয়ারি তা ওঠে ৭৭ টাকা ১০ পয়সায়।

১৩ জানুয়ারি শেয়ারদর ছিল ৬৩ টাকা ৮০ পয়সা। এদিন রবির সর্বোচ্চ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার। তার পরদিন ১৪ জানুয়ারি লেনদেন হয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪ হাজার ৬৩৬টি শেয়ার।

১৭ জানুয়ারি লেনদেন হয় ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬২৩টি শেয়ার।

১৮ জানুয়ারি ৫৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ৮৭৭টি শেয়ার লেনদেন হয়।

১৯ জানুয়ারি ৫৭ টাকা ৪০ পয়সা দরে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৭২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

২০ জানুয়ারি ৬৩ টাকা ১০ পয়সায় ২ কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৯৬টি শেয়ার লেনদেন হয়।

২১ জানুয়ারি ২ কোটি ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৩৪৯টি শেয়ার ৬১ টাকা ৭০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।

২৪ জানুয়ারি ১ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার ১৩৬টি শেয়ার ৫৭ টাকা ৩০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।

২৫ জানুয়ারি ৫৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে ১ কোটি ৬২ লাখ ৭৬ হাজার ১২৩টি শেয়ার লেনদেন হয়।

২৬ জানুয়ারি ৫৬ টাকা ৪০ পয়সা দরে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ৫৫১টি শেয়ার লেনদেন হয়।

২৭ জানুয়ারি দরপতনের শীর্ষে ছিল রবি। এদিন শেয়ারপ্রতি সাড়ে ৫ টাকার বেশি দর পতন হয়। শেয়ারদর দাঁড়ায় ৫১ টাকা ১০ পয়সা। এদিন মোট ১ কোটি ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ১৫টি শেয়ার লেনদেন হয়।

২৮ জানুয়ারি আবারও দর বাড়ে রবির। শেয়ারপ্রতি দর ৫৩ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয় ১ কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার ৭৫৫টি শেয়ার।

দুই দিন সরকারি ছুটির পর ৩১ জানুয়ারি লেনদেন হয় রবির। ৫২ টাকা ৪০ পয়সা দরে এদিন লেনদেন হয় ১ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার ৬৮৩টি শেয়ার।

মূলত এদিন যারা শেয়ার কিনেছেন তারাই পরবর্তী সময়ে এই দরেই শেয়ার বিক্রির সুযোগ পেয়েছিলেন। এর আগে যারা শেয়ার কিনেছেন তারা সবাই হয় লোকসানে শেয়ার ছেড়েছেন, নয়তো লোকসান দিয়ে পোর্টফোলিওতে রেখে দিয়েছেন।

বেশি দামে বেচে এখন কম দামে কিনছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে শেয়ারের হিস্যার যে হিসাব দেয়া থাকে, সেটি অনুসারে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে রবির মোট শেয়ারের ৯০.০৫ শতাংশ শেয়ার ছিল উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল ২.৪২ শতাংশ শেয়ার। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ছিল ৭.৫৩ শতাংশ শেয়ার।

৩০ এপ্রিল উদ্যোক্তা পরিচালকদের অংশ অপরিবর্তিত থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের হাতে থাকা শেয়ারের একটি বড় অংশ বিক্রি করে দেয়। সে সময় তাদের হাতে মোট শেয়ারের ১.৭৭ শতাংশ থাকে আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকে বাকি ৮.১৮ শতাংশ।

তবে মে মাসে কম দামে শেয়ার কিনে নিজেদের হিস্যা বাড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। ওই মাসে মোট শেয়ারে তাদের মালিকানা বেড়ে হয় ২.০৫ শতাংশে। আর রবিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা কমে হয় ৭.৯০ শতাংশ শেয়ার।

তবে জুন ও জুলাই শেষে শেয়ারের হিস্যার হিসাব এখনও প্রকাশ পায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর