বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে নিজেদের হিস্যা বাড়ানোর নির্দেশনার মধ্যে একটি বিমা কোম্পানির পরিচালক তার হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএর একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেছেন, এই সময়ে কোনো পরিচালকের সব শেয়ার বিক্রির সুযোগ নেই। তাদের কাছে এর আগে কয়েকজন পরিচালক শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এই ঘটনাটি কীভাবে ঘটল তা তারা খতিয়ে দেখবেন।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের পক্ষ থেকে দেয়া এক সংবাদে জানানো হয়, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা মোজাম্মেল হক তার কাছে থাকা কোম্পানির ৬ লাখ ৯ হাজার ৮৭৮ টি শেয়ারের সবগুলো পাবলিক মার্কেটে বিক্রি করবেন। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে তিনি এই শেয়ার বিক্রি করে দিতে চান।
কোম্পানির একজন পরিচালক শেয়ার কেনার আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন। তবে তিনি কিনতে চেয়েছেন মোজাম্মেলের বিক্রি করার ঘোষণার দশ ভাগের এক ভাগেরও কম। আর তিনি পাবলিক মার্কেট থেকেও শেয়ার কিনবেন না।
পরিচালক খুরশিদা চৌধুরী ব্লক মার্কেট থেকে কিনবেন ৫৭ হাজার ৪৬৯ টি শেয়ার।
এই ঘোষণাটি এমন সময় এসেছে যখন আইডিআরএ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদেরকে শেয়ারের ৬০ শতাংশ ধারণ করতে বলছে।
বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে এমন সিদ্ধান্ত ২০১০ সালের। কিন্ত ২০২১ সালের জানুয়ারিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ নতুন করে সবকটি বিমা কোম্পানির কাছে এটি পাঠালে এ নিয়ে শুরু হয় হুলস্থল।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইডিআরএ উদ্যোক্তা পরিচালকদেরকে কোম্পানির ৬০ শতাংশ শেয়ার কেনার নির্দেশনা দিয়েছে
গত ২০ জুন আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে বলেন, ‘তাদের (উদ্যোক্তা-পরিচালকরা) পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনতে হবে। এজন্য হঠাৎ করে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও জটিলতা আছে। তবে যেহেতু এটি আইনগত বিষয়, তাই জটিলতা থাকলেও আইগনত বিষয়টিকেই আমরা গুরুত্ব দেবো।’
তবে বিধান করার ১০ বছরেও উদ্যোক্তা পরিচালকদের এই শেয়ার কিনতে বাধ্য করা হয়নি। আর শেয়ার না কিনলে বোর্ড পুনর্গঠন বিয়ে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। অথচ গত এক বছরে বিমার শেয়ারে ঊর্ধ্বগতির যেসব কারণ আছে বলে ধারণা করা হয়, তার মধ্যে এই বিষয়টিও আছে বলে ধারণা করা হয়।
১০০ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে আছে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
অর্থাৎ ১০ কোটি ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৯৪টি শেয়ারের মধ্যে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ২ হাজার ৭৪৩টি শেয়ার বর্তমানে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে আছে।
মোজাম্মেল হক তার মালিকানায় থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিলে মালিকদের হাতে শেয়ার থাকবে ৩ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ৮৬৫টি। আর খুরশিদা চৌধুরী শেয়ার কিনলে সেই সংখ্যা দিয়ে দাঁড়াবে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৩৩৪টি।
তখন মোট শেয়ারের ৩২.৭৮ শতাংশ থাকবে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে।
অর্থাৎ আইডিআরএর নির্দেশনা পূরণে তখন উদ্যোক্তা-পরিচালকদেরকে কিনতে হবে শেয়ারের ২৭.২২ শতাংশ অর্থাৎ ২ কোটি ৭২ লাখ ৭১ হাজার ২২৬টি।
যখন শেয়ার বাড়ানোর কথা, তখন উল্টো কমিয়ে বিষয়ে গ্রিনডেল্টার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোম্পানিটির সচিব সৈয়দ মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে আইডিআরএ নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র এস এম শাকিল আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে নূন্যতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। একেবারে সব বিক্রি করে দেয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি সম্পর্কে জেনে জানাতে হবে।’
সম্প্রতি শাকিল নিউজবাংলাকে জানান, কর্তৃপক্ষের অন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক মাসে বিমা কোম্পানির বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা পরিচালক শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য সম্প্রতি ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের একজন পরিচালককে ৮ লাখ ১০ হাজার শেয়ার ব্লক মার্কেটে বিক্রি করার অনুমতি দেয়া হয়েছে
আইডিআরএ যে বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদেরকে ৬০ শতাংশ শেয়ার কিনতে বলছে, সেটি বাস্তবায়নে কোম্পানিগুলোকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সময় দেয়ার কথাও সেদিন জানান তিনি।
আইডিআরএর শর্ত পূরণে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ৮ পরিচালক বাজার থেকে ৬০ লাখেরও বেশি শেয়ার কিনেছেন
সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের আট জন পরিচালক ৬০ শতাংশ শেয়ারের শর্ত পূরণ করতে বাজার থেকে ৬০ লাখ ৪৩ হাজার ১৪৯টি শেয়ার কিনেছেন।
এর ফলে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের অংশের শেয়ার প্রায় ১৩.৯৫ শতাংশ বেড়ে যায়। আর বর্তমানে কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬৫ শতাংশ এখন উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে।
উদ্যোক্তা পরিচালকরা পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কেনার পর এক অভিনব ঘটনা ঘটেছে। গত জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দর সংশোধনে যাওয়া বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর কোনো কোনোটি এই সময়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি দর হারিয়েছে। তবে এর বিপরীতে স্ট্যান্ডার্ডের দর বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।