মোটরযানের বাতিল করা ‘তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা’ (থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স) নতুন করে চালু করতে কাজ করছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। নতুন উদ্যোগে বাড়ানো হচ্ছে প্রিমিয়ামসহ দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত বিমা দাবির পরিমাণও।
এই বিষয়টি কার্যকর হলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার স্বজনরা একটি উল্লেখযোগ্য অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পাবেন। পাশাপাশি বিমা কোম্পানির আয় ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে আশা করছেন এই খাতের কর্তাব্যক্তিরা।
বাতিল হওয়া তৃতীয় পক্ষের যে বিমায় প্রিমিয়াম দিতে হতো ৩০০ টাকা, সেটির বিপরীতে দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে বিমা দাবি পরিশোধ করা হতো সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রচার ও সচেতনতার অভাবে এই দাবির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিষ্পত্ত অবস্থায় থাকত।
আইডিআরএর প্রাথিমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইডিআরএ নতুন উদ্যোগে প্রিমিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রিমিয়াম বাড়লে গাড়ির মালিকরাও সাবধান থাকবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৯৮৩ সালের মোটরযান সংক্রান্ত পুরনো আইনে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা করা বাধ্যতামূলক এবং এর অধীনে দণ্ডের বিধানও ছিল। তবে ২০১৮ সালের নতুন সড়ক পরিবহন আইনে তা বাতিল করা হয়।
তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা আইন বাতিলের ব্যাখায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ জানায়, এই বিমা না থাকলে সংশ্লিষ্ট মোটরযান বা মোটরযানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না পুলিশ।
গত ২০ ডিসেম্বর আইডিআরের চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, ‘দেশের জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান বৃদ্ধি, অর্থনীতিতে বিমা খাতকে প্রবৃদ্ধির অন্যতম খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা, বিমা খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও বিমা পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাতিল করা হলো।’
আইডিআরের সদস্য (আইন) মো. দলিল উদ্দীন সে সময় নিউজবাংলাকে জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের সঙ্গে বিমা আইনের সমন্বয়হীনতা ছিল। এটি দূর করতে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাতিল করা হয়।
এক বছর যেতে না যেতেই আবার বিষয়টি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হলো। আর এখন দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে বিমা দাবি পাঁচ লাখ টাকা, অঙ্গহানি বা বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা হলে দিতে তিন লাখ টাকা দেয়ার বিধান রাখা চিন্তা করা হচ্ছে।
বিমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইডিআরএ গাড়ির তৃতীয় পক্ষের বিমা কীভাবে কার্যকর করা যায়, তার পরিকল্পনা করছে
আইডিআরএ বিষয়টি নিয়ে সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক এস এম শাকিল আক্তার। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোটরযানের তৃতীয়পক্ষের বিমা বিশ্বের সব দেশেই আছে। আমাদের দেশেই সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু সড়কে দুর্ঘটনা থাকবেই। সেখানে পথচারীদের অবশ্যই সুরক্ষাও দিতে হবে। সেদিক বিবেচনায় এ ধরনের একটি আইন থাকা জরুরি।’
কবে নাগাদ আইনটি বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই তা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।’
কী বলছে বিমা কোম্পানিগুলো
আইডিআরএর নতুন এই উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের সচিব মুজিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটাকে শুধু বিমার দিক দিয়ে চিন্তা করলে হবে না। এখানে জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও দেখতে হবে। আমরাও শুনেছি এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
প্রিমিয়াম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা রাস্তায় গাড়ি চালান তাদের মাধ্যমে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে গাড়ির মালিকেরও কিছু দায়বদ্ধতা আছে। কিছু প্রিমিয়াম দিয়ে ইন্স্যুরেন্স করে তিনি সেই দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হতে পারেন। আবার আমাদের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোরও প্রিমিয়ামের পরিপ্রেক্ষিতে আয় বাড়বে।’
পিপলস ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব সারফারাজ হোসেন বলেন, ‘আগে এখানে যে থার্ড পার্টি ছিল, নানা কারণে এ প্রোডাক্টটি গুরুত্বপূর্ণ হয়নি। এখন বিমা কোম্পানি ও গ্রাহক যেন সরাসরি উপকৃত হয়, সেভাবে কিছু করার চেষ্টা চলছে। এটি হলে বিমা কোম্পানি ও গাড়ির মালিক উভয়ের জন্য ভালো হবে।’
তিনিও আশা করছেন, নতুন এই উদ্যোগে বিমা কোম্পানির আয় বাড়বে। বলেন, ‘মোটর ইন্স্যুরেন্স পৃথিবীর সব দেশে আছে। আমাদের এখানে নানা জটিলতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি কার্যকর করা যায়নি। এটি হলে অবশ্যই বিমা কোম্পানিগুলোর আয় বাড়বে।’
তৃতীয় পক্ষের বিমা বাতিলের কী প্রভাব ছিল বিমাখাতে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মোটর ইন্স্যুরেন্স গত এক বছরে অনেক কমে গেছে। নতুন যারা গাড়ি কিনেছে তারাই কেবল ফার্স্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্স করেছে। এছাড়া কেউ এই ইন্স্যুরেন্স করেনি।’