মহামারির বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর সিংহভাগের আয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় বিস্ময়ের মধ্যে তুমুল আলোচিত বিমা খাতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয়ে তেমন কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করা না গেলেও জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো কোম্পানির আয় বেড়ে নয় গুণ, কোনোটির তিন গুণ বা তার কাছাকাছি হয়ে গেছে।
তবে শেয়ার প্রতি আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রিলায়েন্স আর তৃতীয় অবস্থানে প্রগতি ইন্স্যুরেন্স।
গত এক বছরে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি উত্থান হয়েছে এই খাতটির। এই দরবৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু বিষয় কাজ করছিল। এজেন্টের কমিশন কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ, গাড়ির তৃতীয় পক্ষের বিমা বাতিল করে প্রথম পক্ষের বিমা চালু হলে আয় বাড়বে, লভ্যাংশ বাড়বে, এমন কথা বলাবলি হয়।
এরপর আলোচনায় আসে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো বড় বড় প্রকল্প বিমার আওতায় আসছে। এগুলোর ঝুঁকি একেবারেই কম; কোম্পানির লাভ হবে ভালো। তবে পরে জানানো হয়, মেট্রোরেল সরকারি সাধারণ বিমা করপোরেশনের আওতায় থাকবে। এটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়।
আবার ১০ বছর আগে করা একটি বিধান সামনে আনা হয়, যেখানে বলা ছিল, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ থাকতে হবে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এমনটি হলে বিমা কোম্পানির শেয়ার মালিকদেরই কিনতে হবে।
কিন্তু আয় বা লভ্যাংশ বাড়ার আশা সত্য প্রমাণ হয়নি ২০২০ সালে। পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ নিজেদের হাতে রাখার যে আইন করা হয়েছে, সেটিও কার্যকর হয়নি। তবে একটি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৬০ লাখেরও বেশি শেয়ার কিনে পরিশোধিত মূলধনের ৬৫ শতাংশ এখন ধারণ করে আছেন।
এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ৩৮টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মধ্যে ১৬টি অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে কেবল দুটির আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে, বেড়েছে বাকি সবগুলোর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের সচিব কাউসার মুন্সি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা খাতের জন্য যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় সব বিমা কোম্পানির ব্যয় আগের তুলনায় কমেছে। এ জন্য আয় বেড়েছে।’
পুঁজিবাজার উত্থানে কারণে এখানে বিনিয়োগ থেকে মুনাফাও কোম্পানির আয় বাড়ার কারণ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে করোনাভাইরাসের এই সময়ে প্রায় সব সাধারণ বিমা কোম্পানির আয় বেড়েছে, ব্যবসা ভালো হয়েছে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহামারির সময়ে সাধারণ বিমা কোম্পানির আয় বাড়তে পারে। কারণ, এ সময়ে আমদানি রপ্তানির কার্যক্রম সচল ছিল, ফলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। তবে জীবন বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর ব্যবসা কিছুটা খারাপ হয়েছে।’
কোন কোম্পানির আয় কত বাড়ল
এখন পর্যন্ত যেসব কোম্পানি তাদের প্রান্তিক ঘোষণা করেছ, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৫৮ পয়সা আয় করেছে। ২০২০ সালের অর্ধবার্ষিকে কোম্পানিটির আয় ছিল ২৬ পয়সা। শতকরা হিসেবে আয় বেড়েছে ৮৮৪.৫৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থান সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের। এই কোম্পানিটি গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৮১ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল ৫৬ পয়সা। শতকরা হিসেবে আয় বেড়েছে ২২৪ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধিতে তৃতীয় অবস্থানে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স। ছয় মাসে তারা শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৭৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৩১ পয়সা। এই সময়ে কোম্পানির আয় বেড়েছে ৪৪ পয়সা বা ১৪১.৯ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধিতে চতুর্থ অবস্থানে থাকলেও শেয়ার প্রতি আয় সবচেয়ে বেশি গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের। এই কোম্পানিটি ছয় মাসে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৩ টাকা ৮৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৬৩ পয়সা। আয় বেড়েছে ২ টাকা ২৪ পয়সা বা ১৩৭.৪ শতাংশ।
গত এক বছরে ১০ গুণেরও বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স ছয় মাসে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৮২ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৯৪ পয়সা। আয় বেড়েছে ৮৮ পয়সা বা ৯৩.৬২ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধিতে ষষ্ঠ অবস্থানে আর টাকার অঙ্কে শেয়ার প্রতি আয়ের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ছয় মাসে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ১১ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ২ টাকা ৫ পয়সা। আয় বেড়েছে ১ টাকা ৬ পয়সা বা ৫১.৭১ শতাংশ।
পিপলস ইন্স্যুরেন্স এই সময়ে আয় করেছে ১ টাকা ১৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৮১ পয়সা। আয় বেড়েছে ৩৩ পয়সা বা ৪০.৭৪ শতাংশ।
জনতা ইন্স্যুরেন্স শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৯৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৭০ পয়সা। আয় বেড়েছে ২৮ পয়সা বা ৪০ শতাংশ।
স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ছয় মাসে জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৪০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৭ পয়সা। এই সময়ে কোম্পানির আয় বেড়েছে ৩৩ পয়সা বা ৩৪.৫৭ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধিতে খুব বেশি এগিয়ে না থাকলেও শেয়ার প্রতি আয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস ৩ টাকা ৩১ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ২ টাকা ৪৯ পয়সা। আয় বেড়েছে ৮২ পয়সা বা ৩২.৯৩ শতাংশ।
এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৯৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৫১ পয়সা। আয় বেড়েছে ৪৬ পয়সা বা ৩০.৪৬ শতাংশ।
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১ টাকা ১৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৯৯ পয়সা। আয় বেড়েছে ১৮ পয়সা বা ১৮.১৮ শতাংশ।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৮১ পয়সা আয় করেছে। গত বছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ১ পয়সা ৫৭ ছিল। শতকরা হিসেবে আয় বেড়েছে ১৫.২৮ শতাংশ।
রূপালী ইন্স্যুরেন্স শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৯৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৫ পয়সা। এই সময়ে কোম্পানির আয় বেড়েছে ১ পয়সা বা ১.০৫ শতাংশ।
যেগুলোর আয় কমেছে
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ছয় মাসে জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৭৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৯৩ পয়সা। কোম্পানির আয় কমেছে ১৮ পয়সা বা ১৯.৩৫ শতাংশ।
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ছয় মাসে জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১ টাকা ০৯ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ২৫ পয়সা। এই সময়ে কোম্পানির আয় কমেছে ১৬ পয়সা বা ১২.৮ শতাংশ।