পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন দুটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ- আইসিবি পরিচালিত ইউনিট ফান্ড ইউনিটপ্রতি ৪২ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
এই ফান্ডটির দাম ২৬১ টাকা। অর্থাৎ তার দামের ১৬ শতাংশ এক বছরের লভ্যাংশ হিসেবেই পাওয়া যাবে, যা দেশের যে কোনো সঞ্চয়ী হিসাবে লভ্যাংশের তুলনায় কয়েক গুণ। এমনকি সঞ্চয়পত্রেও এই হারে মুনাফা পাওয়া যায় না।
বৃহস্পতিবার ফান্ডটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তবে এখন আর এই লভ্যাংশ দেয়ার সুযোগ নেই। গত ৩০ জুন তারিখে যাদের কাছে ফান্ডটির ইউনিট ছিল, তারাই তা পাবেন।
আইসিবি ইউনিট ফান্ডের পুনঃক্রয় মূল্যও নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১ আগস্ট থেকে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের ইউনিট কেনা যাবে নতুন নির্ধারণ করা দামে।
গত বছর এই ফান্ডে ইউনিটপ্রতি ৪০ টাকা মুনাফা পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
অন্যদিকে আর ইবিএল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত ইবিএল এএমএল ফার্স্ট ইউনিট ফান্ড ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২০ পয়সা লভ্যাংশ দেবে। এই ফান্ডের ইউনিট মূল্য ১০ টাকার কিছু বেশি। এই হিসাবে ইউনিট মূল্যের ১২ শতাংশের মতো লভ্যাংশ পাওয়া যাবে।
এই ফান্ডটি গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৭২ পয়সা। গত ৩০ জুন যাদের হাতে ইউনিট ছিল, তারাই এই লভ্যাংশ পাবেন।
সবশেষ হিসাব অনুযায়ী ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য আছে ১০ টাকা ২১ পয়সা। এটির ক্রয় ও বিক্রয়মূল্যও সম পরিমাণ।
ইবিএল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত ইবিএল এএমএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া ছবি
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ আরও এক কারণে লাভজনক। অন্য যে কোনো লভ্যাংশের ওপর শতকরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর কাটে সরকার। কিন্তু মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
চলতি বছর চাঙা পুঁজিবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ব্যাপক মুনাফা করছে বলে প্রতিবেদন এসেছে। তবে ৩০ জুন অর্থবছর শেষ হয়, এমন কোনো ফান্ড এখন পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। ফলে এই ফান্ডগুলো শেষ পর্যন্ত কত মুনাফা করল, সেটি প্রকাশ পায়নি।
তবে আগামী ৫ আগস্ট দুটি এবং ৮ আগস্ট একটি ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণার তারিখ জানিয়েছে।
তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন আরও পাঁচটি ফান্ড যে হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফান্ডের ইউনিটধারীরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে এএএমএল ইউনিট ফান্ড। তারা ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৪৩ টাকা আয় করে আড়াই টাকা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে শান্তা ফার্স্ট ইনকাম প্রোপার্টি ফান্ড ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৮৮ পয়সা আয় করে ২ টাকা ৫ পয়সা আর আইডিএলসি ব্যালেন্সড ফান্ড ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ১৭ পয়সা আয় করে দেড় টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে। এই দুটি ফান্ডই গত বছর লোকসানের কারণে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। আর আইডিএলসির ফান্ডটি গত বছরের লোকসানের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে গিয়ে লভ্যাংশ কমিয়েছে।
অন্যদিকে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ক্যাপিটেক পরিচালিত মেয়াদহীন এই ফান্ড দুটির মধ্যে ক্যাপিটেক পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১৫ শতাংশ আর পদ্মা প্রভিডেন্ট ফান্ড শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড ৭ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
পুঁজিবাজারে বর্তমানে ৩৭টি ফান্ড তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে একটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় লেনদেন আছে ৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে ৩৬টি ফান্ডের অর্থবছর শেষ হয়েছে জুনে।
এই ফান্ডগুলোর সিংহভাগই গত বছর লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তবে এবার সেগুলো ব্যাপক মুনাফা করেছে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে। আর চতুর্থ প্রান্তিকে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ৮৮০ পয়েন্ট। এর সুফলও ফান্ডগুলো পাবে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা অনুযায়ী এগুলো তাদের আয়ের ৭০ শতাংশ নগদে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করবে। তবে আগের বছরের লোকসানের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণের সুযোগ থাকছে। ফলে এখন পর্যন্ত যতটা আয় হয়েছে, তার বিপরীতে লভ্যাংশ কত হবে, তার পূর্বানুমান করা কঠিন।
তবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত যে কয়টি ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, সেগুলো এর আগে কখনও এত বেশি আয় করতে পারেনি।