তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একের পর এক আয় বৃদ্ধির তথ্য আসলেও ব্যাংক খাত দরপতনের বৃত্তে। ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েও স্থিতিশীল হতে পারছে না বিমা খাত। প্রকৌশল আর ওষুধ খাতও কিছুদিন ধরে দর বৃদ্ধির মধ্যেই আছে। এর মধ্যে দর সংশোধন শেষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিল বস্ত্র খাত।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বলার মতো উত্থান ঘটেছে লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা এই খাতটি। প্রকৌশল খাতেও বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ওষুধ রসায়নেও নামিদামি বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে।
শাটডাউন চলাকালে বুধবার আদেশ আসে, আগামী সপ্তাহে রোব ও বুধবার ব্যাংক বন্ধ থাকবে। ফলে সেই দুই দিন চলবে না পুঁজিবাজারও।
এই আদেশের পর লেনদেন চালু হলে আধা ঘণ্টায় সূচক পড়ে যায়। এরপর উঠানামা করতে করতে শেষ বেলায় ঘটে উত্থান। তবে একেবারে শেষ বেলায় উত্থান হওয়ার কারণে সমন্বয়ের সময় আবার সেটির প্রভাব পড়েনি খুব একটা।
লেনদেন শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট সূচক বাড়লেও শেষ সময়ের সমন্বয়ে এখান থেকে ১০ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন।
তবে এই উত্থানের ফলে গত সোম ও মঙ্গলবার সূচক যতটুকু পড়েছিল তার পুরোটাই উদ্ধার হলো পরের দুই দিনে। আর সপ্তাহের হিসাব করলে ২০ পয়েন্ট যোগ হয়ে শেষ হলো লেনদেন।
সপ্তাহ শুরু হয়েছিল ৬ হাজার ৪০৫ পয়েন্ট নিয়ে, শেষ হয়েছে ৬ হাজার ৫২৫ পয়েন্টে।
লেনদেনের এক তৃতীয়াংশই হয়েছে শেষ আধা ঘণ্টায়। আর এর মধ্য দিয়ে ছয় কর্মদিবস পর তা আবার উঠে দেড় হাজার কোটি টাকার ঘরে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় বন্ধ এগুলো বিনিয়োগকারীদের মনস্তাান্তিক বিষয়। এ সময়ে হয়ত বিনিয়োগাকরীরা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে, বাজার পর্যবেক্ষণ করে।
‘পুঁজিবাজার মাঝে বন্ধ রেখে লেনদেন চললে যারা ডে ট্রেডিং করে তারা শেয়ার কেনার পর বিক্রিতেও সময় বেশি লাগবে। ফলে তারাও বাজার পর্যবেক্ষণ করে বিনিয়োগ করবে, এটাই স্বাভাবিক।’
দিন শেষে খাতওয়ারী সবচেয়ে বেশি চঙা বস্ত্রের ৫৮টির কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭টি কোম্পানির। দাম কমেছে কেবল ৭টির।
প্রকৌশল খাতও ছিল বেশ উজ্জ্বল। এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৭টি কোম্পানির। আর ওষুধ ও রসায়নের ৩০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির।
অন্যদিকে ব্যাংকের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে কেবল ৭টির শেয়ারদর বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ পয়সা। আর আগের দিন চাঙা থাকা বিমা খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে কেবল ১০টির।
উত্থানে বস্ত্র ও প্রকৌশল খাত
ঈদের আগে আগে সংশোধনে যাওয়া বস্ত্র খাতে ঈদের পরের চারটি কর্মদিবসেও দাম কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেন।
তবে দুই দিনের সাপ্তাহিক আর করোনার কারণে একদিনের বাড়তি ছুটিতে যাওয়ার আগের দিন কেবল বেশিরভাগ শেয়ারের দরই বাড়েনি, লেনদেনেও হয়েছে উত্থান।
আগের দিন ৯৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা হাতবদল হলেও আজ তা এক লাফে হয়েছে দ্বিগুণ। হাতবদল হয়েছে ১৮৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
বস্ত্র খাতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মেট্টো স্পিনিংয়ের দাম। ৯.৭৭ শতাংশ বেড়ে শেয়ার দর ১৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯ টাকা ১০ পয়সা।
আলহাজ্ব টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৮ শতাংশ। আর ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দর বেড়েছে ৭.২৭ শতাংশ।
এছাড়া আরগন ডেনিমের দর ৫.১২ শতাংশ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৪.৯৫ শতাংশ।
অন্যদিকে প্রকৌশল খাতের লেনদেন হয়েছে ১৭৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা টাকা, যা আগের দিন ছিল ১২২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
দিনের সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ এই খাতের। ১০ শতাংশ বেড়ে ৩৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে হয়েছে ৩৯ টাকা ৬০ পয়সা।
দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৬৮ শতাংশ, ইয়াকিন পলিমারের দর বেড়েছে ৫.৭১ শতাংশ।
দুদিন আগ্রহের পর দর কমল বিমার
গত দুদিন বিমা খাতের উত্থানের পর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার এ খাতের শেয়ারের দরপতন হয়েছে। তালিকাভুক্ত যে কোনো খাতের তুলনায় এদিন সবচেয়ে বেশি লেনদেন হলেও দর বেড়েছে মাত্র ১০টি কোম্পানির। বাকি ৪১টিরই দর কমেছে।
এদিন সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৫.৩৪ শতাংশ। শেয়ার দর ১২২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২৮ টাকা ৫০ পয়সা।
এ ছাড়া কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের দর ১.৮০ শতাংশ, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের দর ১.৪৩ শতাংশ বেড়েছে। সামান্য বেড়েছে ফেডারেল, সান লাইফ, ফারইস্ট লাইফের দরও।
এই খাতে সবচেয়ে বেশি দর পতন হয়েছে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ৪.৫১ শতাংশ্। এছাড়া ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ৩.৫৯ শতাংশ, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ৩.৫৫ শতাংশ, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ৩.৪৮ শতাংশ, রূপালী লাইফ ও মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৩.১৪ শতাংশ করে।
প্রভাতী, প্রগতি, নিটল, ঢাকা, অগ্রণী, পাইওনিয়ার, প্রগ্রেসিভ লাইফ, গ্রিনডেল্টা, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরও কমেছে।
এই খাতে লেনদেনও কমেছে। আজ হাতবদল হয়েছে ১৯৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ২৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
আগ্রহ তলানীতেই ব্যাংকের
চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস থেকে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগাকরীদের যে অনাগ্রহ তা সপ্তাহের শেষ সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে।
এদিন প্রকাশ পেয়েছে ৮টি ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক হিসাব। এতে দেখা গেছে একটি ছাড়া আয় বাড়াতে পেরেছে সবগুলোই। এর মধ্যে অল্প পরিমাণ দাম বেড়েছে কেবল দুটি ব্যাংকের।
যমুনা ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৬৪ পয়সা, যা গত বছর এই সময়ে ছিল ২ টাকা ৭ পয়সা।
এত ভালো সংবাদের পর ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে ১০ পয়সা।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক অর্ধবার্ষিকে আয় করেছে ৫৫ পয়সা, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪৮ পয়সা।
১৫ শতাংশের বেশি আয় বাড়লেও শেয়ার দরে কোনো প্রভাব পড়েনি। আগের দিনের সমান দামেই হচ্ছে লেনদেন।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আয় কমেছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তাদের আয় হয়েছে ১ টাকা ৮ পয়সা, যা গত বছর এই সময়ে ছিল ১ টাকা ৩৪ পয়সা।
এই খবর প্রকাশের দিন ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ২০ পয়সা।
গত বছর অর্ধবার্ষিকে ২ টাকার জায়গায় এবার ২ টাকা ৪২ পয়সা আয় করা ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১০ পয়সা।
গত বছর অর্ধবার্ষিকে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৪৪ পয়সার জায়গায় এবার ১ টাকা ৮০ পয়সা আয় করা পূবালী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২০ পয়সা।
গত বছর অর্ধবার্ষিকে ৯৩ পয়সা আয় করা ওয়ান ব্যাংক এবার আয় করেছে ১ টাকা ৪৬ পয়সা। আয় ৫০ শাতংশের বেশি বাড়ার তথ্য প্রকাশের দিন ব্যাংকটির শেয়ার দর কমেছে ২০ পয়সা।
আগের বছর অর্ধবার্ষিকে ১ টাকা আয় করা এক্সিম ব্যাংকের আয় এবার কমেছে। এবার আয় হয়েছে ৮৯ পয়সা। এই সংবাদ প্রকাশের দিন কোম্পানির শেয়ার দরে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
গত বছর অর্ধবার্ষিকে ৯০ পয়সা আয় করা প্রিমিয়ার ব্যাংক এবার আয় করেছে ১ টাকা ৫৮ পয়সা। এই সংবাদেও কোম্পানির শেয়ার দরে কোনো হেরফের হয়নি।
সব মিলিয়ে এই খাতে সাতটির কোম্পানির দর বাড়ার বিপরীতে কমেছে ১৪টির দর। আর অপরিবর্তিত ১০টির দর পাল্টায়নি। বাকি ১৪টির দর কমেছে।
সবচেয়ে বেশি কমেছে এনআরবিসির দর। ৪.৩৩ শতাংশ কমে শেয়ার দর ৩০ টাকা থেকে নেমে এসেছে ২৮ টাকা ৭০ পয়সায়।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১.৮৬ শতাংশ কমে হয়েছে ১০ টাকা ৫০ পয়সা।
১.৪০ শতাংশ কমেছে ব্র্যাক ব্যাংকের দরও।
এই খাতে হাতবদল হয়েছে ৮৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ৮৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
অন্যান্য খাতের লেনদেন
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ৫টির দর বেড়েছে, পাল্টায়নি তিনটির। বাকি ১৫টির দর কমেছে।
এই খাতে মোট হয়েছে ৮২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ১০৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৩১টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টির দর বেড়েছে। একটির দর পাল্টায়নি। বাকি ১৪টির দর কমেছে।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ১৭২ কোটি টাকা যা আগের দিন ছিল ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির। দর কমেছে ৮টির। পাল্টায়নি ১৮টির ইউনিটের।
এই খাতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে নয়টির, ছয়টির দর কমেছে আর দর পাল্টায়নি ৮টির।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৪৭ কোটি ৭০ লাখ কোটি টাকা, যা আগের দিন ছিল ৪২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১২টির, কমেছে ৮টির দর।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ১০১ কোটি ৪১ লাখ টাকা যা আগের দিন ছিল ৬২ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
বিবিধ খাতের ১৪টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮টির, কমেছে ৫টির দর। অপরিবর্তিত ছিল আর একটির।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট ১১৩ কোটি টাকা, যা আগের দিন ছিল ৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮ দশমিক ০৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪২৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৪ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০১ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২৭ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৯টির, কমেছে ১৬৭টির আর পাল্টায়নি ৪৮টির।
লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ১৩ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৩৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪১টির, দর কমেছে ১৩৮টির। দর পাল্টায়নি ৩৬টির। লেনদেন হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা।