করোনার প্রথম বছরে ২০২০ সালে আয় কমে গেলেও দ্বিতীয় বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএফআইসি ব্যাংক। অর্ধবার্ষিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি আয় করতে পেরেছে তারা।
মঙ্গলবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হিসাবে দেখা যায় এই ব্যাংকটি গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে শেয়ার প্রতি ৯১ পয়সা আয় করেছে। গত বছর এই সময়ে আয় ছিল ৭১ পয়সা। আয় বেড়েছে ২০ পয়সা বা ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।
এই আয়ের প্রবৃদ্ধির বেশিরভাগ হয়েছে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে। এই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪৭ পয়সা। গত বছর যা ছিল ৯ পয়সা। অর্থাৎ এই সময়ে তাদের আয় বেড়েছে ৯ গুণেরও বেশি।
করোনাকালে ২০২০ সালে বেশিরভাগ ব্যাংকের আয় বাড়লেও ব্যতিক্রম ছিল আইএফআইসি। মুনাফা তলানিতে নামার পর লভ্যাংশও কমায় তারা।
ওই বছর শেয়ার প্রতি ৭০ পয়সা আয় করে ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয় আইএফআইসি। আগের বছর এই ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি আয় করে ১ টাকা ৯২ পয়সা।
তবে মহামারির দ্বিতীয় বছরে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় প্রথম প্রান্তিকেই। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি ৪৬ পয়সা আয় করেছিল। পরে ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়ের পর তা দাঁড়ায় ৪৪ পয়সা।
করোনার দ্বিতীয় বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো এখন পর্যন্ত যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে অর্ধবার্ষিকে কেবল একটি ব্যাংকের আয় কমেছে। বাকিগুলোর মধ্যে একটির আয় প্রায় চারগুণ, একটির তিন গুণের বেশি, তিনটির দ্বিগুণের বেশি, একটির দেড় গুণের বেশি, একটির ৭০ শতাংশের বেশি আয় করেছে।
কোন ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় কত
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চলতি বছরের অর্ধবার্ষিকে গত বছরের প্রায় চার গুণ আয় করেছে। গত বছরের প্রথম ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি ৬ পয়সা আয় করলেও এবার তারা আয় করেছে ২৩ পয়সা।
প্রাইম ব্যাংক এবার অর্ধবার্ষিকীতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন গুণের বেশি আয় করেছে।
ব্যাংকটি গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৮১ পয়সা। আগের বছর এই আয় ছিল ৫৫ পয়সা ছিল।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ১১ পয়সা আয় করেছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ২০২০ সালে একই সময়ে এই আয় ছিল ৪৯ পয়সা। শতকরা হিসেবে আয় বেড়েছে ১২৬ শতাংশ।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ১০৮ শতাংশ। অর্ধবার্ষিকীতে এই ব্যাংকে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ২ পয়সা, যা গত বছর একই সময় ছিল ৯৯ পয়সা।
সিটি ব্যাংকে আয় বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। অর্ধবার্ষিকীতে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২ টাকা ৬ পয়সা। গত বছর এই আয় ছিল ১ টাকা।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এই ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৭২ পয়সা আয় করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।
ইস্টার্ন ব্যাংক এবার ৬ মাসে গত বছরের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি আয় করেছে। অর্ধবার্ষিকীতে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৫৬ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ১ টাকা ৬৫ পয়সা।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল বা ইউসিবি ব্যাংক বছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ৭২ পয়সা। অর্থাৎ ব্যাংকটির আয় বেড়েছে ৪১ শতাংশ।
উত্তরা ব্যাংক ব্যাংকটি বছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৭৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ১ টাকা ৪৪ পয়সা। শতকরা হিসেবে আয় বেড়েছে ২৪ শতাংশের কিছু বেশি।
এনসিসি ব্যাংক এই ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৪৩ পয়সা আয় করেছে, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ১ টাকা ১৭ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ২২ শতাংশের কিছু বেশি।
মহামারির বছরে আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করে চমক দেখায় ব্যাংকিং খাত। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো এবার বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে অনেকটাই আশাতীত। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা নগদে দিয়েছে তারা বিনিয়োগকারীদের।
ব্যাংক খাতে সুবাতাসের মধ্যে ভালো করতে পারেনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৫৪ পয়সা। আগের বছর এই আয় ছিল ৮২ পয়সা ছিল। অর্থাৎ এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ৩৪ শতাংশ।
হতাশার বৃত্তেই আইসিবি ইসলামী ব্যাংকও। লোকসানি ব্যাংকটি এবারও তার বৃত্ত ভাঙতে পারেনি। গত বছরের মতোই চলতি বছরও অর্ধবার্ষিকীতে শেয়ারপ্রতি ৩২ পয়সা লোকসান দিয়েছে ব্যাংকটি।