সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে, এমন আরও একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে চমকপ্রদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
১০ টাকার ইউনিটপ্রতি আড়াই টাকা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাসুরেন্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত এএএমএল ইউনিট ফান্ড।
এই ফান্ডটি অবশ্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় আর এটি একটি বেমেয়াদি ফান্ড।
১০ কোটি টাকার এই ফান্ডটি ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৪৩ পয়সা আয় করেছে।
এই আয় গত বছরের তুলনায় ৫ গুণের বেশি। গত বছর ইউনিটপ্রতি ৫৯ পয়সা আয় করেছিল ফান্ডটি।
গত ৩০ জুন যাদের হাতে ইউনিটটি ছিল, তারাই এই লভ্যাংশ পাবে।
গত ৩০ জুন ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১৬ টাকা ৬২ পয়সা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফান্ডগুলোর বেশির ভাগ সম্পদমূল্যের কমে লেনদেন হলেও অতালিকাভুক্তগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পদমূল্যে বা অল্প কিছু ডিসকাউন্ডে লেনদেন হয়।
অর্থাৎ ১৬ টাকা ৬২ পয়সা বিনিয়োগ করে একজন বিনিয়োগকারী যে লভ্যাংশ পাচ্ছেন, তা দেশে যেকোনো সঞ্চয়ী হিসাব, সঞ্চয়পত্রের আয়ের চেয়ে বেশি। আবার ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশে কোনো আয়করও কাটা হবে না।
এই ফান্ডের ইউনিটধারীরা এবার লভ্যাংশ পেয়েছেন ইউনিটমূল্যের ১৫.০৪ শতাংশ।
বেমেয়াদি অন্যগুলোরও আকর্ষণীয় মুনাফা
এখন পর্যন্ত জুন ক্লোজিং বেমেয়াদি বেশ কিছু ফান্ড যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার প্রতিটিই এবার ব্যাপক আয় করেছে। শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত শান্তা ফার্স্ট ইনকাম প্রোপার্টি ফান্ড গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৮৮ পয়সা আয় করে ২ টাকা ৫ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৯ পয়সা লোকসান ছিল।
আইডিএলসি ব্যালেন্সড ফান্ডের আয় আরও বেশি হয়েছে। ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ১৭ পয়সা আয় হয়েছে তাদের। আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ১৮ পয়সা লোকসান ছিল তাদের।
৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে যারা ফান্ডের ইউনিট ধরে রেখেছিলেন, তারা ইউনিটপ্রতি দেড় টাকা করে পাবেন। গত বছর লোকসানের জন্য তারা কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।
ফান্ডটির প্রসপেকটাসে মুনাফার ৭০ শতাংশ নগদে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করার কথা বলা আছে। তবে এবার আয়ের ৪৭ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে দেবে তারা। গত বছরের লোকসানের সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ হবে বাকি অর্থ।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তগুলোও ভালো লভ্যাংশের ইঙ্গিত দিচ্ছে
গত বছরের জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে যে উত্থান দেখা দিয়েছে, তাতে ফুলেফেঁপে উঠছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোও। চলতি বছর এখন পর্যন্ত যে কয়টি ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, সেগুলো এর আগে কখনও এত বেশি আয় করতে পারেনি।
আর ৩০টি ফান্ডের অর্থবছর শেষ হয়েছে জুনে। এখন হিসাব-নিকাশ করে ঘোষণা হবে লভ্যাংশ।
২০২০ সালের জুন থেকে প্রথম প্রান্তিকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ে ৯৭৭ পয়েন্ট। সে সময় দু-একটি ফান্ড ইউনিটপ্রতি ২ টাকারও বেশি আয় করেছে। বেশ কয়েকটির আয় দেড় টাকার বেশি বা আশপাশে দেখা গেছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সূচক বাড়ে আরও ৫৪০ পয়েন্ট। এই সময়েও ফান্ডগুলো ইউনিটপ্রতি বেশ ভালো মুনাফা করে। আগের প্রান্তিকের চেয়ে কম হলেও এই সময়েও কোনো কোনো ফান্ড ইউনিটপ্রতি দেড় বা ২ টাকা মুনাফা করে।
তবে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাজারে ছন্দপতন ঘটে। এই প্রান্তিকে সূচক পড়ে ৩৪০ পয়েন্ট।
তবে বাজারে পতন হলেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো লোকসান দিয়েছে এমন নয়। এই প্রান্তিকে ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে মুনাফা করে ২৭টি। বাকি ১০টির মধ্যে দুটি ফান্ড চলতি অর্থবছরের হিসাব দেয়নি। অন্য আটটির মধ্যে ইউনিটপ্রতি ১ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ পয়সা লোকসান করে। তবে আগের দুই প্রান্তিকে বিপুল পরিমাণ মুনাফার কারণে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে বেশ ভালো অঙ্কের আয় করায় এবার লোভনীয় লভ্যাংশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সব মিলিয়ে চতুর্থ প্রান্তিকে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে প্রথম প্রান্তিকের কাছাকাছি, ৮৮০ পয়েন্ট। ফলে ফান্ডগুলো প্রথম প্রান্তিকের কাছাকাছি আয় করলে এবার যে চূড়ান্ত মুনাফা আসতে পারে, সেটি চমকে দিতে পারে বিনিয়োগকারীদের।
চলতি বছর যারা লভ্যাংশ দিল তাদের হিসাব-নিকাশ
যে পাঁচটি ফান্ড এখন পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার প্রতিটিই এবার ব্যাপক মুনাফা করেছে। সর্বনিম্ন মুনাফা করা ফান্ডও ইউনিটপ্রতি ৭৭ পয়সার বেশি আয় করেছে।
১০ টাকার নিচে দাম এমন ফান্ডও ১ টাকার বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আর একটি ফান্ড ১ টাকা ৬২ পয়সা আয় করেও কেবল ১৬ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যদিও এটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের নীতিমালার পরিপন্থি।
এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড ১ টাকা ৮৩ পয়সা আয় করে ইউনিটপ্রতি ১ টাকা সাড়ে ২২ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আগের বছর ইউনিটপ্রতি ৬২ পয়সা লোকসানের কারণে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি ফান্ডটি।
এমবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৯৫ পয়সা মুনাফা করে এবার লভ্যাংশ দিয়েছে ১ টাকা ১৫ পয়সা। গত বছর ইউনিটপ্রতি ৯৭ পয়সা লোকসানের কারণে তারা কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্স ফান্ড ইউনিটপ্রতি আয় (ইপিইউ) করেছে ১ টাকা ৬৮ পয়সা। আগের বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৮০ পয়সা লোকসান দিয়েছিল।
১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে এনসিসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ১২ পয়সা আয় করে সাড়ে ৭২ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে। আগের বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি লোকসান দিয়েছিল ৪৮ পয়সা।
প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে ইউনিটপ্রতি ৭৭ পয়সা আয় করে লভ্যাংশ দিয়েছে ৭০ পয়সা। এই ফান্ডটি তার অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পুঁজিবাজারে ধসের কারণে লোকসান দিয়েছিল। বাকি ছয় মাসে তারা আয় করেছে ব্যাপক।
সম্পদমূল্যও বেড়েছে ব্যাপক
নিউজবাংলা হিসাব করে দেখেছে, গত এক বছরে পুঁজিবাজারের ফান্ডগুলোর পাঁচটির সম্পদমূল্য বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। একটির বেড়েছে ৫০ শতাংশ। ৪০ শতাংশের বেশি ও ৫০ শতাংশের কম বেড়েছে পাঁচটির।
৩০ শতাংশের বেশি ও ৪০ শতাংশের কম বেড়েছে ১১টি ফান্ডের সম্পদমূল্য। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে ১০টি ফান্ডের সম্পদমূল্য। আর চারটি ফান্ডের সম্পদমূল্য বেড়েছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ।