করোনাভাইরাস অতিমারির প্রভাব মোকাবিলায় শিল্পখাতে দেয়া সরকারের প্রণোদনার টাকার সিংহভাগ পুঁজিবাজারে চলে গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান।
তিনি দাবি করেছেন, প্রণোদনার কোনো টাকা পুঁজিবাজারে আসেনি। রোববার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এই দাবি করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, অনেক দিন পর সবার সম্মিলিত চেষ্টায় দেশের পুঁজিবাজার যখন স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে, তখন এই ধরনের বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন ও দুঃখজনক।
তিনি এই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন এতে বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত না হন।
রকিবুর বলেন, মুদ্রাবাজার ও পুঁজিবাজার গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত পুঁজিবাজার বিষয়ে নেতিবাচক কোনো মন্তব্য না করা।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বর্তমান কমিশনের নানামুখী উদ্যোগের ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। ফাইল ছবি
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান গতিশীলতা প্রণোদনার টাকার কারণে হয়নি। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বর্তমান কমিশনের নানামুখী উদ্যোগের ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে।
‘ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার কমতে কমতে ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তাই ব্যাংকে আমানত রাখা আর লাভজনক নয়। তাই অসংখ্য মানুষ ব্যাংকে মেয়াদী আমানত না রেখে সেই টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন।’
অন্যদিকে নানা ধরনের বিধিনিষেধের কারণে এখন চাইলেও নির্দিষ্ট সীমার বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ সংকোচিত হয়ে আসায় উদ্বৃত্ত সঞ্চয় পুঁজিবাজারমুখী হয়েছে বলে মত দিয়েছেন রকিবুর রহমান।
ডিএসইর সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রতিবেদনে প্রণোদনার টাকা পুঁজিবাজারে এসেছে বলে উল্লেখ করেছে, সেখানে কতগুলো প্রতিষ্ঠানের টাকা এসেছে, কত টাকা এসেছে তার কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, যদি প্রণোদনার কিছু টাকা পুঁজিবাজারে এসেও থাকে, তাহলে তার দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের। তাদের মনিটরিং ফাঁকি দিয়ে পুঁজিবাজারে টাকা স্থানান্তরের কোনো সুযোগ থাকার কথা নয়। যথাসময়ে মনিটরিং না করে এতদিন পর এমন দাবি করার বিষয়টি নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার সামিল।
রকিবুর রহমান বলেন, পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর অজুহাতে বাংলাদেশ ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বোনাস দিতে উৎসাহ যুগিয়ে গেছে। এতে কিছু সুযোগসন্ধানী অসাধু ব্যাংকের উদ্যোক্তা ক্রমাগত বোনাস দিতে দিতে মূলধনের আকার অস্বাভাবিকরকম বাড়িয়ে ফেলেছে।
ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। শিল্প-উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে নয়, শিল্পকারখানার জন্য দীর্ঘমেয়াদী অর্থ পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করবে। আর এটি করার জন্য একটি স্থিতিশীল ও গতিময় পুঁজিবাজার দরকার।