পুঁজিবাজার চাঙা হয়ে ওঠার পর ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তার প্রমাণ মিলছে লেনদেনে।
গত ২৯ এপ্রিলের পর লেনদেন কখনো ১ হাজার কোটি টাকার নিচে নামেনি। সেদিন থেকে লেনদেন হয়েছে সব মিলিয়ে ৫৩ কর্মদিবস। আর এর মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে এক দিন ১ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। আর সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
এই ৫৩ দিনের মধ্যে আবার ১৯ কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। আর ১৭ দিন লেনদেন হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে তিন দিন আবার আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি।
২০১০ সালের মহাধসের পর পুঁজিবাজারে লেনদেনে এমন জোয়ার আর দেখা যায়নি। এমনকি গত বছর যখন এক ধাপে উত্থান শুরু হয়, তখনও নয়।
করোনার কারণে ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে ২০২০ সালের ২ জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে দেখা যায় চাঙাভাব। চলে টানা জানুয়ারি পর্যন্ত। তবে ওই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আবার হয় সংশোধন। এরপর ৫ এপ্রিল থেকে চলে উত্থানের দ্বিতীয় পর্ব।
গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৪ কর্মদিবস টানা হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। তখন পাঁচ দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এই সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ২ হাজার ৪৩৭ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট।
এর মধ্যে উত্থানের প্রথম পর্বে গত বছরের ২ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সূচক বাড়ে ১ হাজার ৯২৩ পয়েন্ট।
তবে এরপর ১৫ জানুয়ারি থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সংশোধনে সূচক কমে ৮২১ পয়েন্ট। এরপর উত্থানের দ্বিতীয় পর্বে এখন পর্যন্ত বেড়েছে ১ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট।
এই উত্থানের মধ্যে গত ২০১১ সালের ৩১ জুলাইয়ের পর প্রথমবারের মতো ৬ হাজার ৪০০ পয়েন্টের সীমা অতিক্রম করে।
২০১১ সালের ৩১ জুলাই সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৫৯ পয়েন্ট।
২০২০ সালে মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন আস্থায় জেগে ওঠে বিনিয়োগ পরিবেশ।
কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ গত জানুয়ারির শেষে গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে ৩ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হওয়ার আশা করেছিলেন। পরে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, তারা বন্ড মার্কেটকে চাঙা করার চেষ্টা করছেন। অন্যান্য শেয়ারের পাশাপাশি বন্ডগুলোও বাজারে ট্রেড হলে লেনদেন ৫ হাজার কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লেনদেনে বাড়ছে মানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হচ্ছে। এর মানে এই না যে শুধু বিনিয়োগ হচ্ছে, মুনাফাও হচ্ছে। আর আগে যেটি হতো, মুনাফা হলেই বিনিয়োগকারীরা তা উত্তোলন করে নিয়ে নিতেন।
‘কিন্তু এখন সেটি হচ্ছে না। মুনাফা হলেও বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন। উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ হারিয়ে যাওয়ার যে আতঙ্ক আগে ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে, তা এখন নেই। এমনকি লসে শেয়ার বিক্রির প্রবণতাও অনেকটাই কেটেই গেছে। এর জন্য নতুন কমিশন পুঁজিবাজারের জন্য যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তার প্রতিফলনও এটি।
‘এ ছাড়া আইপিও মার্কেট ছিল বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা নেয়ার প্রধান মাধ্যম। এখন আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টন হওয়ায় আইপিওতেই যারা বিনিয়োগ করতেন, তারা সেখান থেকে বের হচ্ছেন। এ ছাড়া আইপিও আবেদন করার জন্যও যে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে, সে সিদ্ধান্তও পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।’
লেনদেন পরিসংখ্যান
২৯ এপ্রিল পুঁজিবাজারে লেনদেন হয় ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। যদিও এর আগে ২৫ ও ২৬ এপ্রিল যথাক্রমে ১ হাজার ১৮৮ ও ১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এরপর ২৭ ও ২৮ এপ্রিল লেনদেন হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে আসে ৯৪০ কোটি টাকায়।
মূলত ২৯ এপ্রিল থেকে টানা হাজার কোটি টাকা লেনদেনের পথে হাঁটতে শুরু করে পুঁজিবাজার।
এ সময়ে ১১০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে তিন দিন। ২৯ এপ্রিল লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। ৩ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। এই সময়ে সবচেয়ে কম লেনদেন হয়েছে ২৯ জুন ১ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
১২০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এক দিন ১৯ জুলাই। এদিন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা।
১৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে চার দিন। ৪ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। ৫ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ৯ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। ২৮ জুন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা।
১৪০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে আট দিন। ২ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। ৬ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। ১১ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। ১২ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। ১৬ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। ২৩ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। ৩০ জুন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। ৮ জুলাই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।
১৫০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে পাঁচ দিন। এর মধ্যে ১৭ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। ২৪ জুন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। ৫ জুলাই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। ৭ জুলাই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। ১২ জুলাই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা।
১৬০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে তিন দিন। এর মধ্যে ২০ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ১৩ জুন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। ১৪ জুন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা।
১৭০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে সাত দিন। এর মধ্যে ১৮ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। ৩১ মে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। ১৪ জুন ও ২৭ জুন একই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। ৬ ও ১৫ জুলাইও একই ১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ১৮ জুলাই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
১৮০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ২৪ মে। এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। ১৭ জুন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। ২০ জুন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।
১৯০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ১ জুন, এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা।
২ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ১৯ মে ২ হাজার ৯৯ কোটি, ২৫ মে ২ হাজার ৮ কোটি, ৭ জুন ২ হাজার ৮৩ কোটি, ৮ জুন ২ হাজার ৬৫ কোটি, ১৩ জুন ২ হাজার ৬৯ কোটি, ১৫ জুন ২ হাজার ৩২ কোটি, ২১ জুন ২ হাজার ৪৩ কোটি, ২২ ও ২৩ জুন যথাক্রমে ২ হাজার ১৭ কোটি ও ২ হাজার ৩০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
২১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে ৩০ মে, এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। ৩ জুন লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। ১৬ জুন লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
২২০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ২ জুন ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ২৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ২৭ মে, ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। ২৬০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ৬ জুন, ২ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ৯ জুন।