বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বড় হচ্ছে স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের স্বপ্ন

  •    
  • ২৫ জুলাই, ২০২১ ০৯:৩২

ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হচ্ছে। এ কারণে এক দশকে লেনদেনের রেকর্ড ভেঙেছে একাধিকবার। ঈদের ছুটির পর ভেঙেছে এক দশকে মূল্যসূচকের রেকর্ডও। বিমা, বস্ত্র, প্রকৌশল, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত এখন চাঙা। ব্যাংক, জ্বালানি এবং ওষুধ খাতে চাঙাভাবের লক্ষণ স্পষ্ট। এই তিনটি খাত এগিয়ে গেলে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ হতাশা দূর হওয়ার আশা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নানা উদ্যোগ আর সিদ্ধান্তের ফল মিলতে শুরু করেছে। বাজারে লেনদেন হচ্ছে নিয়মিত হাজার কোটি টাকার বেশি। সেটি প্রায়ই দেড় বা দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন টানা বাড়লে পরে দর সংশোধনে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও সূচকের সেভাবে পতন হচ্ছে না।

এর কারণ, বাজার বাড়ছে বিভিন্ন খাত ধরে। একটি খাত টানা বেড়ে সূচকের উত্থান হলে সেই খাতের শেয়ারগুলো যখন সংশোধনে যাচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে, অন্য খাতের শেয়ারগুলোর দর বাড়ছে।

আবার সংশোধন কাটিয়ে যখন আবার বাজার উত্থান পর্বে ফিরছে, তখন কয়েকটি খাত একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ায় সূচক আরও বাড়তে শুরু করছে।

২০১০ সালের মহাধসের পর ২০১৩, পরে ২০১৭ সালে পুঁজিবাজারে অল্প কয়েক মাসের জন্য উত্থান হলেও সেটি এবারের মতো স্থায়ী হয়নি। লেনদেনের গতি ধরে রাখতে না পারাই এর কারণ।

কিন্তু এবার লেনদেনের গতি চমৎকার। ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হচ্ছে। এ কারণে এক দশকে লেনদেনের রেকর্ড ভেঙেছে একাধিকবার। ঈদের ছুটির পর ভেঙেছে এক দশকে মূল্যসূচকের রেকর্ডও।

তবে এই উত্থান পর্ব ঘটেছে প্রথমে বিমা, পরে বস্ত্র, এরপর প্রকৌশল ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত দিয়ে। তবে বাজার মূলধনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখা ব্যাংক, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের শেয়ার দরে চাঙাভাব দেখা দেয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও পরে স্থায়ী হয়নি। আর এই তিনটি খাত এখনও বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যদি এই তিনটি খাতে চাঙাভাব দেখা দেয়া খাতের মতো উত্থান হয়, তাহলে পুঁজিবাজারকে নিয়ে দীর্ঘ হতাশা দূর হয়ে যেতেই পারে।

২০২১ সালের লেনদেন শুরু হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্ট দিয়ে। লেনদেন ছিল ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বেশি। তবে জানুয়ারিতে মার্জিন ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয়া নিয়ে টানাপোড়েন, এরপর এপ্রিলের শুরুতে লকডাউনে বাজার খোলা থাকে কি না, এ নিয়ে সংশয়ে তিন মাসের মধ্যে তা ৫ হাজার ৮৮ পয়েন্টে নেমে আসে।

২০২০ সালের জুলাইয়ে উত্থানের প্রথম পর্ব শেষে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় এপ্রিলের শুরু থেকে। একপর্যায়ে ৩৯ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৬ হাজার পয়েন্টে পৌঁছে গত ৩০ মে। এরপর এক মাস সেখানে টিকে থাকার লড়াই করেছে।

জুনের এই মাসটিই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ৬ হাজার পয়েন্টে সূচক টিকে থাকা নিয়ে যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই শুরু হয়েছিল, সেখানে সূচক দু-এক দিনের জন্য নিচে নামলেও পরে আবার তা ওপরে উঠে যায়। এর মধ্যে জুন ক্লোজিং শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে ঈদের আগে তা ৬ হাজার ৪০০ পয়েন্টের ঘর অতিক্রম করে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানের কাছাকাছি।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, করোনায় ব্যাংক খাতকে ঘিরে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল, বিপুল পরিমাণ মুনাফা আর বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার বেশি লভ্যাংশ দিয়ে সেটি দূর করে দিয়েছে এই খাত। ফলে এই খাত ‍ঘুরে দাঁড়ালে সেটির প্রভাব পড়বে গোটা বাজারেই।

আর করোনায় জ্বালানি খাত খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও কেপিসিএলের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে এই খাতও ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করা ওষুধ খাতের বড় কোম্পানিগুলোতে এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীরা যে বিনিয়োগ বাড়াছেন, সেটি স্পষ্ট।

এই তিনটি খাত যদি এগিয়ে যায়, তাহলে পুঁজিবাজারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছা সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ঈদের আগে ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্টের যে আরও একটি মনস্তাত্ত্বিক বাধা ছিল, সেটি অতিক্রম করে যাওয়া ইতিবাচক।

পুঁজিবাজারে ৩৮৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ২২ খাতে বিভক্ত। এর মধ্যে তিন শরও বেশি কোম্পানি মুনাফায়। লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানিগুলোতে সুশাসন ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এমন ভূমিকা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।

যেসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সুশাসন বজায় রাখতে বা কোম্পানিকে মুনাফায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলোকে ডেকে কথা বলছে বিএসইসি। বেশ কিছু কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয়া হয়েছে, আরও কিছু কোম্পানির ক্ষেতে একই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ফলে লোকসানি কোম্পানির সংখ্যাও আগামীতে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া বাজারে তারল্যসংকট কমাতে অবণ্টিত মুনাফা নিয়ে একটি বড় আকারের তহবিল গঠনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে ২১ হাজার কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি অর্থ ও শেয়ার চলে এলে এই তহবিল কাজ শুরু করবে। এর ৪০ শতাংশ শেয়ারে আর ৫০ শতাংশ মার্জিন ঋণে বিনিয়োগ করা হবে।

এই তহবিল বাজারে সংকটকালে সাপোর্ট দেবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি ও তহবিলের ট্রাস্টি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবি। এ ছাড়া এক বিলিয়ন ডলারের একটি বন্ড ছাড়ার চেষ্টা চলছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় খোঁজা হচ্ছে, আর ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তহবিল থেকেও শেয়ার কেনা হচ্ছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভালো কোম্পানির উত্থান হলে সূচক ছয় থেকে সাত হাজারে গেলেও সেটি স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু দুর্বল কোম্পানির হাত ধরে সূচক যতই ওপরে উঠুক, সেটি স্থিতিশীল হবে না।’

কোন কোন খাত এ সময় ভালো ভূমিকা রাখতে পারে, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক আছে, মিউচ্যুয়াল ফান্ড আছে, জ্বালানি ও ওষুধ খাত আছে। এ ছাড়া মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বাড়লে ভালো পুঁজিবাজার পাওয়া কঠিন কিছু হবে না।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘এখন সব খাত মুভিং। সব খাতের অংশগ্রহণেই পুঁজিবাজারের উত্থান হচ্ছে। এ ছাড়া আগামীতে পুঁজিবাজার কোন অবস্থানে যাবে, সেটি বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর নির্ভর করছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশন যেভাবে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কোনো কিছু দেখছি না। তারপরও সব সময় মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে।’

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সূচকের উত্থান-পতন পুঁজিবাজারে থাকবেই। তবে এই সূচক হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক একটি বিষয়। সূচক যদি টানা পতন হয়, তাহলে এমনও বিনিয়োগকারী আছে যারা লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য। কিন্তু সে যদি শেয়ার ধরে রাখে তাহলে একসময় না একসময় সেটি থেকে লাভসহ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।’

তিনি মনে করেন, বাজার অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও পরিপক্বতা এসেছে। তারা কিছু হলেই এখন শেয়ার বিক্রি করে বাজারে আতঙ্ক তৈরি করেন না।

বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামও সম্প্রতি এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, পুঁজিবাজার অনেক ভালো হবে। বিনিয়োগকারীরা যাতে আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি না করেন।

বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের নেতা আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ‘বর্তমান কমিশন যদি এই আস্থা ধরে রাখতে পারে, তাহলে অবশ্যই এই পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগাকরীরা বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ ভালো মুনাফা নিতে পারবে।’

রাজ্জাক সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যেভাবে উত্থান হচ্ছে, তাতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতাই বেশি। ছয় হাজারে সূচক যেহেতু দেড় মাসের বেশি সময় ধরে টিকে আছে, সেহেতু সাত হাজার পয়েন্টে সূচকও প্রত্যাশা করা যায়।’

এ বিভাগের আরো খবর