বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লোকসানি, বন্ধ কোম্পানির বাড়বাড়ন্ত

  •    
  • ১২ জুলাই, ২০২১ ১৪:১১

২০২০ সালে আকর্ষণীয় মুনাফা ঘোষণা আর চলতি বছর অর্ধবার্ষিকীতে চমকপ্রদ মুনাফা করার পরও ব্যাংক খাতে দরপতন চলছেই। ব্যাংকের দাম কমলেও বেড়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দর। বস্ত্র খাতের প্রবণতা মিশ্র, তবে দুর্বল, লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর লাফাচ্ছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি এবং ওষুধ-রসায়ন খাতে দর বৃদ্ধির চেয়ে কমেছে, এমন কোম্পানির সংখ্যাই বেশি। সব মিলিয়ে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি ও শাটডাউনের কারণে ব্যাংকে অতিরিক্ত এক দিনের ছুটি শেষে সপ্তাহের শুরুটা খুব একটা ভালো হলো না।

তিন দিনের বন্ধ শেষে পুঁজিবাজারে যে ১৯টি কোম্পানির দাম দিনের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে, তার মধ্যে ৯টি কোম্পানি লোকসানি। আর ৩টি কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ দীর্ঘদিন ধরে।

এগুলোর মধ্যে ২টি আবার উৎপাদনে নিয়ে আসতে বোর্ড পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। কিন্তু সেগুলো চালু করা সম্ভব হবে না বলেই মনে করছে বিএসইসি।

গত কয়েক দিন পুঁজিবাজারে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেও সেটি আবার দেখা গেল।

এদিন দিনভর ওঠানামা করে সূচকের অবস্থান আগের দিনের সমান অবস্থানে থাকলেও ব্যাংক, বিমা, বস্ত্রের মতো প্রধান খাতগুলোর বিনিয়োগকারীদের মুখে হাসি নেই।

গত বছরের জুলাই থেকে অস্বাভাবিক উত্থানে থাকা বিমার শেয়ারদর দুই সপ্তাহ ধরে সংশোধনে আছে। নতুন তালিকাভুক্তির পর সার্কিট ব্রেকারের কারণে সেভাবে বাড়তে না পারা সোনালী লাইফের শেয়ারদর মূল্যসীমা না থাকার দিন শেষে বেড়ে হয়েছে পাঁচ গুণের বেশি।

২০২০ সালের জন্য শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ আর ২০ পয়সা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণার পর ১৬ টাকার শেয়ার দিন শুরু করে ৬০ টাকা দিয়ে। একপর্যায়ে দাম ৯০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। দিন শেষে ৮৬ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে আসে।

এ ছাড়া সাধারণ বিমার মধ্যে কেবল স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের দাম বেড়েছে, আর দুই-একটি জীবন বিমা কোম্পানির দাম বেড়েছে। পতন হয়েছে বাকি সবগুলোর।

২০২০ সালে আকর্ষণীয় মুনাফা ঘোষণা আর চলতি বছর অর্ধবার্ষিকীতে চমকপ্রদ মুনাফা করার পরও ব্যাংক খাতে দরপতন চলছেই। প্রতিদিনই অল্প অল্প করে দর হারাচ্ছে প্রায় সব কটি ব্যাংক। এক দিন বাড়লে চার দিন কমে এভাবেই চলছে এই খাত।

ব্যাংকের দাম কমলেও বেড়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থক প্রতিষ্ঠানের দর।

বস্ত্র খাতে প্রবণতা মিশ্র, তবে দুর্বল, লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদরে বাড়বাড়ন্ত অবস্থা। বিদ্যুৎ-জ্বালানি এবং ওষুধ-রসায়ন খাতে দর বৃদ্ধির চেয়ে কমেছে, এমন কোম্পানির সংখ্যাই বেশি।

সব মিলিয়ে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি ও শাটডাউনের কারণে ব্যাংকে অতিরিক্ত এক দিনের ছুটি শেষে সপ্তাহের শুরুটা খুব একটা ভালো হলো না।

দিন শেষে লেনদেন বাড়লেও সামান্য পতন হয়েছে সূচকের।

দুর্বল যেসব কোম্পানির শেয়ারদরে উল্লম্ফন

লোকসানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে তুংহাই, অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজ, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, সমতা লেদার, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, আরএন স্পিনিং, ফ্যামিলি টেক্সটাইল, ফারইস্ট ফিনান্স-এই কোম্পানিগুলোর দাম দিনের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে।

এর মধ্যে সিঅ্যান্ডএ ও ফ্যামিলি টেক্সের বোর্ড পুনর্গঠন করে সেগুলোকে উৎপাদনে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। কিন্তু কোম্পানি দুটি কোম্পানিটি চালু করা সম্ভব হবে কি না সে বিষয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। মালিকদের বিরুদ্ধে মামলার চিন্তার কথা জানিয়েছেন তিনি। আর তুংহাই বিক্রি করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনার গুঞ্জন আছে পুঁজিবাজারে।

এই নয়টি কোম্পানির মধ্যে ওয়েস্ট মেরিন শিপইয়ার্ড ২০২০ সালে লভ্যাংশ ঘোষণার পর আর আয় ব্যয়ের হিসাব দিচ্ছে না। সমতা লেদার ১৯৮৪ সালে তালিকাভুক্তির পর কেবল ২০১৯ সালে ২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে বলে তথ্য আছে। আর এন স্পিনিং সবশেষ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০১৮ সালে।

বিমায় ‘মহামারি’

যে বিমার শেয়ার নিয়ে এত হৈ হুল্লুর সেই বিমার শেয়ার দর পড়ছেই। ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র তিনটির। আর পাল্টায়নি একটির। বাকি ৪৭টি কোম্পানির দর হারিয়েছে।

মাস খানেক আগে এই খাতে দিনে সাতশ থেকে নয়শ কোটি টাকা লেনদেন হলেও সেটি নেমে এসেছে ১৬৯ কোটিতে।

এই খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৬.৩৯ শতাংশ। শেয়ার দর ৪৩ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৪১ টাকা।

ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৬.১০ শতাংশ। ৬০ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৫৬ টাকা ৯০ পয়সা।

রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ১০৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৫.৭৫ শতাংশ কমে হয়েছে ৯৮ টাকা ৩০ পয়সা।

গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ১২০ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৫.৩২ শতাংশ কমে হয়েছে ১১৩ টাকা ৭০ পয়সা।

৫ শতাংশ পর্যন্ত দর কমেছে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ও ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। এদিন চার শতাংশ পর্যন্ত দর কমেছে ১৪টি কোম্পানির। এর মধ্যে ১০টি ছিল বিমা খাতের। এগুলো হচ্ছে পিপলস ইন্স্যুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, নর্দান ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স ও অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স।

তিন শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার দর কমেছে আটটি বিমা কোম্পানির।

উঁকি দিল আর্থিক খাত

সোমবার অনেকটাই মাথা উঁকি দিয়ে দর বৃদ্ধির জানান দিল ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো।

মোট লেনদেন হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা। এখাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দুটির দর কমেছে। আর দুটির দর পাল্টায়নি। বাকি ১৮টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।

বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৪১ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৪৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৩ টাকা ৫০ পয়সা।

ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ৮.৬২ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ৩০ পয়সা।

বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার দর ৮.৩৩ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ টাকা ৮০ পয়সা।

ফাস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর ৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৬.৫৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সা।

দাঁড়াতে পারেনি ব্যাংক

সোমবার ব্যাংক খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র চারটি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে। পাল্টায়নি ৬টির। বাকি ২১টির দর কমেছে।

এই খাতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৪.৩৪ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৮০ পয়সা।

তারপরেই ছিল পূবালী ব্যাংক, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে দশমিক ৮৫ শতাংশ।

পতনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি দর পতন হয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৪.৩০ শতাংশ। এছাড়া মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৩.২৫ শতাংশ, এনআরবিসির ৩.২০ শতাংশ, আইএফআইসির ২.৩২ শতাংশ, ঢাকার ২.১৫ শতাংশ, এবির ২.১৪ শতাংশ, এনসিসি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২.০৬ শতাংশ দর কমেছে।

অন্যান্য খাতের যে অবস্থা

বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে সোমবার দর কমেছে ২৫টির। পাল্টায়নি নয়টির, বেড়েছে ২৪টির। এই খাতে লেনদেন হয়েছে ২৩৯ কোটি টাকা।

এ খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে বন্ধ হয়ে যাওয়া তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং কোম্পানির ১০ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৬ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ৬০ পয়সা।

বোর্ড পুনর্গঠন করা ফ্যামিলি টেক্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৮৯ শতাংশ।

কাট্টালি টেক্সটাইল লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৫৫ শতাংশ।

প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২০টির। দর পাল্টায়নি একটির। বাকি ২১টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।

এ খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা।

তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের ১১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র একটির। বাকি ১০টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। এদিন এ খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি টাকা।

সূচক ও লেনদেন

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২০৮ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৫ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১০ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৫৯ পয়েন্টে।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৯টির, দর কমেছে ১৮৬টির, পাল্টায়নি ২৭টির। লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ৩৮ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪০ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩০টির, দর কমেছে ১৪৭টির। দর পাল্টায়নি ২৯টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৬২ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর