বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে আরও একটি কোম্পানিকে উৎপাদনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সফল হতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
মালিকদের বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া এমারেল্ড অয়েলের কারখানা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হবে বলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে এই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ১০ টাকা করে অভিহিত মূল্যে দুই কোটি শেয়ার বিক্রি করে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে পুঁজিবাজার থেকে। কোম্পানিটি ধানের কুঁড়া থেকে তেল উৎপাদন করত এবং সে সময় বাজারে তাদের ব্র্যান্ড স্পন্দন বেশ সাড়া জাগিয়েছিল।
তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই বছর পর রাষ্ট্রায়াত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মামলার কারণে ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটি। মামলার আসামি হয়ে মালিকপক্ষ উধাও হয়ে গেছে।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বিএসইসি এ রকম রুগ্ন বেশ কিছু কোম্পানিকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পর্ষদ পুনর্গঠন করে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের পর এরই মধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে আলহাজ্ব টেক্সটাইলে, ডুবে যাওয়া রিংসাইন টেক্সটাইলেও শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন।
এমারেল্ড উৎপাদনে এলে এটা হবে তৃতীয় কোম্পানি, যেটিকে ডুবে যাওয়া থেকে টেনে তোলা হয়েছে।
গত ৩ মার্চ সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হককে চেয়ারম্যান করে নতুন বোর্ড করা হয়। পর্ষদের অন্যান্য স্বাধীন পরিচালকরা হচ্ছেন বিআইবিএমের প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম সারওয়ার, সজিব হোসেইন ও সন্তোষ কুমার দেব।
তবে এই বোর্ড নয়, কোম্পানিটিকে চালু করতে যাচ্ছে মিনোরি বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানি। এটি জাপানি মালিকানাধীন একটি কোম্পানি যার বিনিয়োগ আছে বাংলাদেশে।
২০১৯ সালেই মিনোরি বাংলাদেশ এমারেল্ডের অয়েলের ৮ শতাংশ মালিকানা কিনেও কোম্পানিটি চালু করতে পারেনি। কারণ, বেসিক ব্যাংক তখন আগের মালিকদের সুদ মওকুফের বিষয়ে আবেদনে সাড়া দেয়নি।
তবে এবার নতুন বোর্ড গঠনের পর মিনোরি বাংলাদেশ নতুন করে এই চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা আশা করছে এবার তাদের চেষ্টা সফল হবে।
এবার কোম্পানিটিকে উৎপাদনে আনার লক্ষ্যে এরই মধ্যে আফজাল হোসেন নামে একজনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
কোম্পানিটি প্রতি দিন ৩৩০ মেট্রিকটন কুঁড়া এবং ৪৮ মেট্রিকটন তেল উৎপাদন করতে পারবে। আর ২৮২ মেট্রিকটন মিহি কুঁড়া উৎপাদন করবে।
আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে কোম্পানির আট শতাংশের বেশি শেয়ার আছে। পর্যায়ক্রমে শেয়ার বাড়ানো হবে। তবে এক্ষেত্রে বিএসইসি ও সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘আগের মালিকদের যে শেয়ার ছিল, কোম্পানির ঋণ আত্মীকরণ করে সেই শেয়ার তারা অধিগ্রহণ করতে আগ্রহী। ব্যাংক ঋণ ও শেয়ার ট্রান্সফারের বিষয়টি দ্রুততম সময়ের করা সম্ভব হলে উৎপাদন কার্যক্রমও আরও গতিশীল হবে।’
উৎপাদন শুরুর ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি প্লান্টই চালু করব। তবে একটি থেকে আরেকটির হয়ত আট/দশদিনের ব্যবধান থাকবে।’
পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদনে সমস্যা হবে কি না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্লান্ট ও লেবার সবই রেডি আছে।’
মিনোরি বাংলাদেশের পরিচালক আশরাফ হোসেন জানান কোম্পানিটির দুটি ইউনিট চালু করতে ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে তারা হিসাব করছেন।
বন্ধ কোম্পানি অধিগ্রহণ করতে কেন আগ্রহী-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নতুন করে একটি কোম্পানি রিফর্ম করা খুবই জটিল। এছাড়া সেটিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসাও দীর্ঘ সময়ের বিষয়। এজন্য আমরা এই কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ আগ্রহী হয়েছি।’
মিনোরির বিনিয়োগ বাংলাদেশের আছে আগে থেকেই। সাতক্ষীরায় চিংড়ি ও সাদা মাছ নিয়ে তাদের ব্যবসা আছে, যাতে অর্থ লগ্নি হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
জাপানে তারা ধানের কুঁড়ার তেল বাজারজাত করে। এমারেল্ডের তেলও সে দেশে রপ্তানির পরিকল্পনা আছে তাদের।