বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাঙা পুঁজিবাজার টানতে পারছে না বিদেশিদের

  •    
  • ৪ জুলাই, ২০২১ ২২:৫৪

১১ মাসে পুঁজিবাজারে মোট যে বিনিয়োগ হয়েছে, তার চেয়ে ২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার (বর্তমান বাজারদরে ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা) দেশে নিয়ে গেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অর্থাৎ, নিট এফডিআই দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণাত্মক।

বেশ কিছুদিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ করছেন না; উল্টো আগে যে বিনিয়োগ করেছিলেন ভালো মুনাফা পাওয়ায় তার একটি বড় অংশ তুলে নিয়ে গেছেন।

তারপরও চড়ছে বাজার। করেনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও ফরফুরে মেজাজে আছেন দেশি বিনিয়োগকারীরা।

‘বাজার আরও ভালো হবে’ বলে আশ্বাস দিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এরই মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ নিয়ে ফিরে আসবেন বলে প্রত্যাশা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার পুঁজিাবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, চলে গেছে তার চেয়ে বেশি।

এই ১১ মাসে পুঁজিবাজারে মোট যে বিনিয়োগ হয়েছে, তার চেয়ে ২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার (বর্তমান বাজারদরে ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা) দেশে নিয়ে গেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অর্থাৎ, নিট এফডিআই দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণাত্মক।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল পুঁজিবাজারে; পুরো বছরে এসেছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

তার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসেছিল ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

চাঙ্গা পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের এই করুণ দশা নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশকিছুদিন ধরে আমাদের বাজার ভালো যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে; তারা ভালো মুনাফা পাচ্ছেন। বেশিরভাগ শেয়ারের দাম এখন চড়া। এই চড়া বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ করছেন না। বরং মুনাফা তুলে নিতে হাতে থাকা শেয়ারগুলোই বিক্রি করে দিচ্ছেন। সে কারণে নিট বিনিয়োগ নেগেটিভ হয়েছে।‘

আন্তর্জাতিক বড় বড় বাজারের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসলে অনেক কিছু চিন্তা করে বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অডিটসহ স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, স্টক এক্সচেঞ্জের পারফর্মমেন্স ইত্যাদি। করোনার কারণে গত বছর আমাদের পুঁজিবাজার দুই মাসের বেশি বন্ধ ছিল। এটা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পছন্দ করেনি।

‘মূলত সে সময়ের পর থেকেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নতুন করে কেউ বিনিয়োগ করেনি।’

তবে, এখনও কয়েকটি ভালো কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে বলে জানান শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী।

তিনি বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, আমাদের বাজার আস্তে আস্তে স্থিতিশীল বাজারে পরিণত হচ্ছে। বাজারের প্রতি দেশি-বিদেশি উভয় বিনিয়োগারীর আস্থা বেড়েছে। এই বাজারে অবশ্যই বিদেশি বিনিয়োগকারী আসবে। তারা এখন অপেক্ষা করছে; নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আমার বিশ্বাস, খুব শিগগিরই বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ নিয়ে আসবেন। তখন বাজার আরও ভালো হবে।’

পুঁজিবাজারে এক দশকের হতাশা দূর হওয়ার আভাস পাওয়ায় উৎফুল্ল বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে কোনো পুঁজিবাজারে ৪ থেকে ৫ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ থাকা ভালো। ২০০৯-১০ সালে বাজারে বড় ধসের পর ৪/৫ বছর বিদেশি বিনিয়োগ ছিল না বললেই চলে। ২০১৫ সাল থেকে কিছুটা আসতে শুরু করে।

‘মাঝে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভালোই বিনিয়োগ করেছিল তারা। ২০২০ সালে বাজারে যে একটা ধস হয়েছে সে আতঙ্কে অনেকে চলে গেছে। আর আসেনি। এখন সামান্য যে বিদেশি বিনিয়োগ আছে, সেটা আগে বিনিয়োগ করা।’

বাজার সুস্থ-স্বাভাবিক থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অব্শ্যই আসবে বলে আশার কথা শোনান মির্জ্জা আজিজ।

২০১০ সালের মহাধসের এক দশক পর গত বছর করোনা পরিস্থিতির কঠিন সময়ে শিবলী রুবাইয়াতকে প্রধান করে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়।

২০২০ সালের ১৭ মে গঠন করা নতুন কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন সাবেক শিল্পসচিব আব্দুল হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন্স সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।

তারা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ পুঁজিবাজারও ছিল বন্ধ। ছুটি শেষে ৫ জুলাই থেকে চালু হয় পুঁজিবাজার। এরপর এক বছরে পুঁজিবাজারে ভেঙেছে একের পর এক রেকর্ড।

এই এক বছরে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ২ হাজার ১৬৯ পয়েন্ট। আর লেনদেন বেড়েছে বহুগুণ।

সাধারণ ছুটি শেষে ২০২০ সালের ৫ জুন প্রথম কর্মদিবসে লেনদেন ছিল ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে অর্থবছরের শেষ দিন গত ৩০ জুন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।

তবে কেবল দুই দিনের লেনদেনের পার্থক্যই পুরো কথাটা বলে না। মাঝে লেনদেন এক দিন ছাড়িয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি টাকার আশপাশে লেনদেন হয়েছে একাধিক দিন। টানা ‍দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে নিয়মিতই। শাটডাউনকে ঘিরে গত সপ্তাহে সেটি দুই হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছে।

গত বছরের ১৭ মে শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বে বিএসইসি গঠনের পর ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার

তবে এই এক বছরেও অস্থিরতা যে হয়নি, তা নয়। গত জানুয়ারিতে মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১২ শতাংশ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে টানা কয়েক মাস পুঁজিবাজার ছিল টালমাটাল। এর মধ্যে আবার গত ৫ এপ্রিল লকডাউন দেয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় আতঙ্ক। ধস নামে পুঁজিবাজারে।

তবে আগের কমিশনের মতো বর্তমান কমিশন করোনায় পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার পক্ষে না। আর লকডাউনে ব্যাংক খোলা রাখার পর পুঁজিবাজারেও লেনদেন চালু রাখার ঘোষণা দেয় তারা। ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। বিধিনিষেধের দুই মাসে পুঁজিবাজার ওঠে নতুন উচ্চতায়। সূচক বাড়ে এক হাজার পয়েন্টের বেশি, যেটি এখন ৪০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে।

পুঁজিবাজারের অবস্থান এখন ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন বাজারের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২০৫ পয়েন্ট।

বাজারের এই উত্তাল পরিস্থিতিতে শনিবার বিনিয়োগকারীদের প্রতি নতুন বার্তা দিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

‘বাজার আরও ভালো হবে’- এই আশ্বাস দিয়ে তিনি লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, নানা সময় আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করার কারণেই বাজারে পতন দেখা দেয়।ও

‘সম্মানিত বিনিয়োগকারীদের এখানে বুঝতে হবে যে আমি যখন পেনিকড হয়ে শেয়ার বিক্রি করি তার ক্রেতাটা কে? …ক্রেতা যেহেতু আছে, তাহলে আমি কেন বিক্রি করছি লস করে? আমাকে তো লস করে এক্ষুনি বিক্রি করার দরকার নেই।…এখানে কিন্তু ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ইনশাল্লাহ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কেট অনেক সুস্থ হবে ও অনেক ভালো হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর