বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিমা খাতে সংশোধন শেষের ইঙ্গিত

  •    
  • ৪ জুলাই, ২০২১ ১৫:৪৯

জুনের মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিবাজারে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ দামে ওঠার পর আবার কমতে শুরু করে। ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ দাম কমে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে যেগুলোর দাম তুলনামূলক কম বেড়েছিল, সেগুলোর দামও কমেছে তুলনামূলক কম। তবে জুন ক্লোজিংয়ের আগে আগে এই শেয়ারগুলো সংশোধন কাটিয়ে আবার দর বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জুনের প্রথম দিন রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ছিল ৭৮ টাকা ৪০ পয়সা। ১৭ জুন সেটি বেড়ে পৌঁছে ১৩৭ টাকায়। সেখান থেকে ২৩ জুন আবার নেমে আসে ৯৫ টাকা ১০ পয়সায়। পরদিন থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। জুনের শেষ দিনে দাম দাঁড়ায় ১১০ টাকা ৮০ পয়সা।

গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের দর ১ জুন ছিল ১০৪ টাকা ২০ পয়সা। ১৭ জুন দাম ওঠে ১৪৯ টাকা ৯০ পয়সা। রিলায়েন্সের মতোই সেদিন থেকেই পতন। পড়তে পড়তে ২৩ জুন নেমে আসে ১০৭ টাকা ৮০ পয়সায়। পরদিন থেকে ঘুরে দাঁড়ায় এই কোম্পানির শেয়ার দরও।

১ জুন পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের দর ছিল ১৪৭ টাকা ৬০ পয়সা। ১৫ জুন দাম ওঠে ২১৫ টাকা ৮০ পয়সা। সেদিনই পড়তে থাকে এখান থেকে। ২৭ জুন দাম নেমে আসে ১৫৪ টাকা ৩০ পয়সায়। জুনের শেষ দিন দাম কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১৬০ টাকা ৪০ পয়সা।

এই তিনটি কোম্পানির মতো বিমা খাতের বেশির ভাগ কোম্পানিই জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দাম হারালেও শেষ সপ্তাহে এসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

জুনের মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিবাজারে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ দামে ওঠার পর আবার কমতে শুরু করে। ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ দাম কমে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে যেগুলোর দাম তুলনামূলক কম বেড়েছিল, সেগুলোর দামও কমেছে তুলনামূলক কম।

তবে জুন ক্লোজিংয়ের আগে আগে এই শেয়ারগুলো সংশোধন কাটিয়ে আবার দর বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা জুনের মাঝামাঝি সময়ে শেয়ার কিনে এখন লোকসানে আছেন, তারা পুঁজি ফিরে পাওয়ার আশা করছেন।

গত বছর করোনা সংক্রমণের পর সাধারণ ছুটি শেষে জুনে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হলে জানুয়ারি পর্যন্ত ঢালাও দাম বেড়েছে বিমা খাতে। এরপর এপ্রিলের শুরু থেকে এভাবে হয় সংশোধন। তখন যতটা দাম বেড়েছিল, সেই বাড়তি দাম থেকে ৫০ শতাংশের মতো কমে আসে।

তবে দর সংশোধনের সময় যারা বিক্রি করেননি, তারা ব্যাপক মুনাফা পান। যেমন পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের দাম গত জানুয়ারিতে ১০০ টাকা অতিক্রম করে আবার ৭০ টাকার নিচে নেমে আসে। আর পরেরবার এখান থেকে বেড়ে আবার ২০০ টাকা ছাড়ায়। এরপর আবার সংশোধন হতে থাকে। পরে জুনের শেষে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে।

একইভাবে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৪৬ টাকার ওঠার পর সেটি কমতে কমতে একপর্যায়ে এপ্রিলের শুরুতে ২৬ টাকায় নেমে আসে। এরপর আবার বাড়তে বাড়তে তা ৪৫ টাকা ছাড়ায়। এর মধ্যে আবার ৩ শতাংশ বোনাস শেয়ার যোগ হয়েছে। সেখান থেকে আবার শেয়ার দর ৯ টাকা কমে আবার সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

রূপালী ইন্স্যুরেন্সেও একই চিত্র। গত জানুয়ারিতে ৪৬ টাকা উঠে সেখান থেকে এপ্রিলে ২৭ টাকায় নেমে আসে। সেখান থেকে আড়াই মাসে দ্বিগুণের বেশি দাম হয়। পরে ৫৫ টাকা থেকে কমে ৩৯ টাকায় নেমে আসে। সেখান থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ায়।

তবে দর সংশোধনে কেউ কেউ অবশ্য শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন লোকসান মেনে। একজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে নিউজবাংলার কথা হয়েছে, যিনি ২১৫ টাকায় পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কিনে ১৯০ টাকায় নেমে আসার পর বিক্রি করে দিয়েছেন। তার লোকসান হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকার মতো। তবে তিনি সেদিন বিক্রি না করে দিলে এখন তিন গুণের বেশি লোকসান গুনতে হতো।

পুঁজিবাজারে কোনো খাতে বা কোনো কোম্পানির শেয়ারে উল্লম্ফন দেখা দিলেও সেটি ধাপে ধাপে কেবল বেড়ে যাবে এমন নয়। কিছুদূর পর্যন্ত বেড়ে আবার দাম কমে। একে বলে সংশোধন। এরপর আবার দাম বাড়তে থাকে একপর্যায়ে।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের সাবেক গবেষণা প্রধান দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমা খাতের উত্থানের পর মূল্য সংশোধন হয়েছে। খাতভিত্তিক বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এখন এই খাতে। আর বিনিয়োগকারীরাও সচেতন হয়েছেন। ফলে লোকসানে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা কমেছে। এ কারণে দর সংশোধন তুলনামূলক কম হয়েছে।’

এখনও অতিমূল্যায়িত?

তবে বিমা খাতের অনেক কোম্পানির শেয়ার দর সংশোধনের পরেও অতিমূল্যায়িত অবস্থায় আছে বলে ধারণা করেন কেউ কেউ।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমা খাতের শেয়ার নিয়ে অনেক আগে থেকেই আলোচনা। এই আলোচনার মধ্যেই এ খাতের প্রায় সব শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত হয়েছে। অতিরঞ্জিত দরে যারা শেয়ার কিনেছেন তাদের কোম্পানির ফান্ডমেন্টাল বিবেচনা করে কেনা উচিত ছিল। তাহলে এখন যে হতাশার কথা বলা হচ্ছে, সেটি থাকত না।’

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখন শুধু বিমা খাত নয়, সব খাতের শেয়ারেরই দর বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করলেও এই বাজার থেকেও ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিভিন্ন খাতের উত্থান-পতন থাকবেই। তবে এই উত্থান-পতনের মধ্যেই ফান্ডামেন্টাল বিবেচনা করে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’

কোন কোম্পানির কত সংশোধন

ঢাকা ইন্স্যুরেন্স

৪ এপ্রিল থেকে বিমা কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়তে শুরু করে। তখন শেয়ারপ্রতি দর ছিল ৩৮ টাকা ৯০ পয়সা। এ উত্থান শেষ হয় ৩ মে, যখন শেয়ারপ্রতি দর ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। এরপর শেয়ার দরে সংশোধন হয়। তিন কার্যদিবস মূল্য সংশোধন হয়ে দর নেমে আসে ৭০ টাকা ৫০ পয়সায়।

এরপর আবার উত্থান। যা শেষ হয় ৮ জুন। শেয়ার দর উঠে ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। শেয়ার দর দাঁড়ায় ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। সেখানে থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত শেয়ার দর সংশোধনে হয় ৮২ টাকা ১০ পয়সা। এরপর ইউটার্ন। দর বেড়ে হয় ৮৬ টাকা ৯০ পয়সা।

সোনারবাংলা

সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বাড়ছে ৪ এপ্রিল থেকে। তখন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দর ছিল ৪২ টাকা ৮০ পয়সা। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শেয়ার দর বেড়ে ৯ জুন হয় ১২১ টাকা ৮০ পয়সা।

এরপর ৯ কার্যদিবস ধারাবাহিকভাবে কমে ২৩ জুন হয় ৮৫ টাকা। সেখান থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ায় কোম্পানিটি। ৩০ জুন দর ছিল ৯৩ টাকা ৮০ পয়সা।

রূপালী

গত ৪ এপ্রিল কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ২৭ টাকা ৫০ পয়সা। সেখান থেকে বেড়ে ৯ জুন দাম পৌঁছায় ৫৫ টাকায়। সেদিনই দাম কমে যায়। পরে ৩৯ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে আসে গত ২৭ জুন। এরপর তিন কার্যদিবস আবার দাম বাড়ে। ৩০ জুন দাম ৯.৮২ শতাংশ বেড়ে হয় ৪৩ টাকা ৬০ পয়সা।

ইস্টল্যান্ড

এই কোম্পানির শেয়ার দর গত ১৬ মে থেকে বাড়তে থাকে। সেদিন দাম ছিল ৩১ টাকা ৯০ পয়সা। একপর্যায়ে ৯ জুন দাম ৪৫ টাকা ৫০ পয়সায় উঠে যায়। কিন্তু সেদিনই শুরু হয় সংশোধন। আর পড়তে পড়তে ৩৬ টাকা ১০ পয়সায় নেমে আসে ২৯ জুন। অর্থবছরের শেষ দিন বাড়ে ২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৬.৬৫ শতাংশ।

ইস্টার্ন

এই কোম্পানির শেয়ারে এখন পর্যন্ত দুবার মূল্য সংশোধন হয়েছে। এর প্রথম উত্থান হয় গত বছরের ১৪ অক্টোবর, যখন শেয়ারপ্রতি দর ছিল ৭৪ টাকা ১০ পয়সা।

এখান থেকে এক মাসের কম ব্যবধানে শেয়ার দর বেড়ে হয় ১১৭ টাকা ১০ পয়সা। এরপর দীর্ঘ সংশোধনে যায় কোম্পানিটি। শেয়ার দর চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি নেমে আসে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। সেখানে থকে আবার উত্থানে দিকে যাত্রা। এই টানে শেয়ার দর ওঠে আসে ১৩১ টাকা ৪০ পয়সা। যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দর।

৪ মের পর শুরু হয় কোম্পানির সংশোধন। ধাপে ধাপে শেয়ার দর কমে ২১ জুন হয় ১১৫ টাকা ২০ পয়সা। সেখানেই থেকেই আবার শেয়ার দর বেড়ে ৩০ জুন হয় ১২০ টাকা ৬০ পয়সা।

বিএনআইসিএল

কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়তে শুরু করে। তখন শেয়ারপ্রতি দর ছিল ৪৬ টাকা ১০ পয়সা। সেখান থেকে শেয়ার দর পর্যায়ক্রমে বেড়ে গত ১৬ মে হয় ১৪৯ টাকা ৩০ পয়সা। এরপর মূল্য সংশোধনে যায় কোম্পানিটি। ২২ জুন পর্যন্ত শেয়ার দর কমে হয় ১১৯ টাকা।

আবার ঘুরে দাঁড়ানো। পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১১৯ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ জুন দাঁড়ায় ১২৭ টাকা ৪০ পয়সা।

প্রগতি লাইফ

চলতি বছরের ২৩ মে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৮৮ টাকা ৩০ পয়সা। ৯ জুন দর দাঁড়ায় ১৩৭ টাকা ৪০ পয়সা। সেখানে থেকে সংশোধনে যায় কোম্পানিটি। ২৯ জুন পর্যন্ত এই সংশোধনে শেয়ার দর নেমে আসে ১১০ টাকা ১০ পয়সায়। তবে ৩০ জুন দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫ টাকা ৩০ পয়সা।

পদ্মা লাইফ

কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ছে ৪ এপ্রিল থেকে। সেদিন দাম ছিল ১৬ টাকা ১০ পয়সা। এরপর শেয়ারপ্রতি ২০ পয়সা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেয়ার পর ৩০ মে ৩৩ টাকা ৯০ পয়সায় ওঠে।

তারপর সেখান থেকে মূল্য সংশোধন, যা ২৭ জুন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। শেয়ার দর কমে হয় ২৯ টাকা ৮০ পয়সা। তারপর তিন কার্যদিবসে শেয়ার দরে আবারও উত্থানে ফিরে হয় ৩২ টাকা ৬০ পয়সা।

এ বিভাগের আরো খবর