আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এলিমিনেটর ম্যাচ হওয়ার কথা থাকলেও অলিখিত এলিমিনেটর ম্যাচ খেলতে নেমেছিল খুলনা টাইগার্স আর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। কারণ এই ম্যাচেই নির্ধারিত হবে দুই দলের প্লে-অফের ভাগ্য।
চট্টগ্রাম হারলেই শঙ্কা তৈরি হবে বিদায়ের। আর খুলনা হারলে তাদের বিদায়টা নিশ্চিতই। এমন কঠিন সমীকরণের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে অবশ্য নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি খুলনা টাইগার্স। চট্টগ্রামের বিপক্ষে হেরেছে ৬৫ রানের বড় ব্যবধানে। গত আসরের মতো এবারও শেষ মুহূর্তে এসে চমক দেখাল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
এই ম্যাচের আগে ১০ ম্যাচ খেলে খুলনার পয়েন্ট ছিল ১০। অন্যদিকে ১১ ম্যাচ খেলে চট্টগ্রামের পয়েন্ট ছিল ১২। তাই এই ম্যাচটা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ম্যাচে যদি খুলনা টাইগার্স জয় পেত, তাহলে ১১ ম্যাচ থেকে তাদের পয়েন্ট হতো ১২। শেষ ম্যাচ জিতলে তাদের পয়েন্ট হতো ১৪। অন্যদিকে ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে বরিশালের চেয়ে রানরেট কম থাকায় প্লে-অফ থেকে বাদ পড়ে যেত চট্টগ্রাম।
কিন্তু চট্টগ্রাম জেতায় বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত শুরু করা খুলনা টাইগার্সের। খাতা-কলমে কিছুটা আশা বেঁচে থাকলেও মেলাতে হবে কঠিন সমীকরণ। ১১ ম্যাচ থেকে বিজয়দের পয়েন্ট এখন ১০। শেষ ম্যাচে যদি সিলেটের সঙ্গে জয় পায় তাহলে তাদের পয়েন্ট হবে ১২। শেষ ম্যাচে কুমিল্লার বিপক্ষে বরিশাল জয় পেলে তাদের পয়েন্ট হবে ১৪। সে ক্ষেত্রে আর কোনো সমীকরণই অবশিষ্ট থাকবে না খুলনার জন্য।
কিন্তু রংপুর হারলে আর খুলনা জিতলে দুই দলেরই পয়েন্ট থাকবে ১২। যদিও এ ক্ষেত্রে খুলনা রানরেটে অনেকটা পিছিয়ে থাকায় শেষ ম্যাচে তাদের জিততে হবে বড় ব্যবধানে। আর বরিশালকে হারতে হবে বড় ব্যবধানে। তাই বলা যায় খুলনার বিদায়ঘণ্টা বেজেই গেছে।
খুলনাকে এই হারের তেতো স্বাদ দেওয়ার পেছনে বড় অবদানটা তরুণ তানজিদ হাসান তামিমের। এমন কঠিন ম্যাচে দক্ষ নাবিকের মতো চট্টগ্রামের হাল ধরেছিলেন তরুণ তানজিদ হাসান তামিম। ৫৮ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পাশাপাশি খেলেছেন, এবারের আসরের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। তানজিদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই খুলনাকে ভাসিয়েছিল রানের সমুদ্রে। যেখান থেকে ফিরে আসতে, শক্ত হাতে হাল ধরতে পারেনি খুলনার কোনো ব্যাটার। এরপর বল হাতে বিজয়দের তুফানের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক শুভাগত হোম।
বিপিএলের মাঝপথে এসে বিদেশি রিক্রুটরা বিদায় নেওয়ার পর থেকেই হতাশার সাগরে ডুবে মরেছে খুলনা। তাদের রিপ্লেস খুঁজে পায়নি দলটি। যে কারণে টুর্নামেন্টে ভালো শুরুর পরও শেষটা রাঙাতে পারেনি খুলনা। অন্যদিকে বিপিএলের শুরুর দিকে চট্টগ্রামকে নেতৃত্ব দিয়েছে বিদেশিরা (সঙ্গে কিছু দেশি ক্রিকেটাররাও পারফর্ম করেছে)। আর শেষদিকে এসে পথ চিনিয়েছে দেশি ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে শেষ দুই ম্যাচে তানজিদ তামিম একাই দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছে। তানজিদের এই পারফরম্যান্স যেমন চট্টগ্রামের জন্য আশাজাগানিয়া, তেমনি জাতীয় দলের জন্যও।
দ্বিতীয় ম্যাচটা ছিল স্রেফ নিয়ম রক্ষার। কারণ এই ম্যাচে জয়-পরাজয়ে কোনো লাভ-ক্ষতি নেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কিংবা রংপুর রাইডার্সের। কারণ দুই দলেরই প্লে-অফ নিশ্চিত হয়ে গেছে। তবে কুমিল্লা যদি একটু বড় ব্যবধানে হারে সে ক্ষেত্রে পয়েন্ট টেবিলের ৩ নম্বরে থেকে প্লে-অফ খেলতে হবে তাদের। যেটা কিছুটা অস্বস্তির।
তবে পরপর দুই ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং ব্যর্থতা একটা বড় চিন্তার কারণ তাদের জন্য। গত ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে ব্যাটিং পিচেও ব্যর্থ ছিল রংপুরের বেশির ভাগ ব্যাটার। শেষ দিকে এসে বোলাররা জিতিয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ। আবার গতকাল কুমিল্লার বিপক্ষেও একই চিত্র দেখা গেছে রংপুরের ব্যাটারদের। পুরো করতে পেরেছে মাত্র ১৫০ রান। যার মধ্যে ৬ রান এসেছিল অতিরিক্ত থেকে। আর একাই ৫৯ রান করেছিলেন জিম্মি নিশাম। আর বাকিরা ছিল মোটা দাগে ব্যর্থ। প্লে-অফে ভুল করার কোনো সুযোগ নেই। তাই সেখানেও যদি এমন পারফরম্যান্স করে, সে ক্ষেত্রে হয়তো ফাইনাল খেলা নাও হতে পারে রংপুরের।
অন্যদিকে কুমিল্লার স্বস্তির খবর হলো লিটন, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, আন্দ্রে রাসেলদের রানে ফেরা।
তবে শেষে এসে রাসেলের ছক্কাবৃষ্টি ভুলতে কষ্ট হবে রংপুর রাইডার্সের সমর্থকদের। যে তাণ্ডব তিনি চালালেন সেটা আসলে ভোলারও কথা নয়। ৩৫০-এর ওপরে স্ট্রাইকরেটে খেলা ইনিংসে রাসেল চার হাঁকিয়েছেন ৪টা, ছক্কাও সমান ৪টা। ১২ বল থেকে করেছেন ৪২ রান। এই ম্যাচে আরেকটা পারফরম্যান্স আছে রাসেলের। বল হাতেও অবদান রেখেছিলেন রংপুরের ব্যাটিং ইনিংসে ধস নামাতে। মাত্র ২০ রানেই শিকার করেছিলেন ৩ উইকেট।
ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়েই গ্রুপ পর্ব শেষ করল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। অন্যদিকে শেষ দুই ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতার দুঃসহ স্মৃতি নিয়েই গ্রুপ পর্ব শেষ করল সাকিব আল হাসানের রংপুর।