ওয়ানডে বিশ্বকাপের দৈন্যদশা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটিতেও ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। হার দিয়ে সিরিজ শুরুর পর লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের হারতে হয়েছে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও।
বাংলাদেশের দেয়া ২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে তরি ভেড়ায় স্বাগতিক কিউইরা। এতে তিন ম্যাচের সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে নিশ্চিত হয়েছে ব্ল্যাক ক্যাপদের।
নেলসনের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে দিনের শুরুটা আগে ব্যাট করলে ভালো কিছু করার কথা থাকলেও বাস্তবিকপক্ষে দেখা গিয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। যেই দাপটটা ধরে রাখার কথা ছিল আনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্তদের, সেখানে দাপট দেখিয়েছে কিউই পেসার জ্যাকব ডিফি, উইলিয়াম অর্কোরেরা।
ইনিংসের পঞ্চম ওভার থেকেই তাদের তোপ আছড়ে পড়তে থাকে টাইগার ব্যাটারদের ওপর। আর সে কারণেই এক অঙ্কের ঘরে আটকে থেকেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে বিজয়, শান্ত ও লিটন কুমার দাসের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের।
উইকেটের একপ্রান্তে যখন আসা যাওয়ার মিছিল চলছিল, সে সময়টাতে অপরপ্রান্ত আগলে ধরে দেখেশুনে খেলে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন সৌম্য সরকার। পথিমধ্যে তার এই সফরে সঙ্গী হন তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানজিম সাকিব।
এই চার ব্যাটার দুই অঙ্কের রান ছুলেও খোলস ছেড়ে বের হতে বেপোরোয়া হয়ে ওঠেন সৌম্য সরকার। দুই বছর পর ওয়ানডেতে রানের দেখা পেলেন সৌম্য, আর সেই ম্যাচেই করলেন ১৬৯ রান। গড়লেন অজস্র রেকর্ড।
২০২১ সালে সর্বশেষ এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই ওয়ানডেতে রানের খাতা খুলেছিলেন সৌম্য। পরের দুই বছর একটি ওয়ানডেতেও পার হতে পারেননি শূন্যের কোঠা। দুই বছর পর সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচেই ভাঙলেন 'ডাকের' বৃত্ত।
ক্রিকেট বিধাতা যেন সৌম্যর নিজেকে প্রমাণের ম্যাচে আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছিলেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার হাঁকাবেন সেঞ্চুরি। হয়তো ক্রিকেট বিধাতারই ইশারায় তিনবার জীবনও পান তিনি।
শুরুটা হয় ফিফটি হাঁকানোর পর। এলবিডব্লুর আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলেও রিভিউ নেন সৌম্য। আর তাতেই বাজিমাত। প্রথমবারের মতো জীবন পান তিনি।
এর পরের দুটোই সৌম্য পেয়েছেন ক্যাচ মিসের সুবাদে। সেঞ্চুরির পথে সবশেষ সৌম্য জীবন পান ৯২ রানে। সেই জীবন পেয়ে আর সেঞ্চুরির জন্য সময় নেননি বাহাতি এই ব্যাটার।
শতক হাকিয়ে আরও বেশি আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বাহাতি এই ওপেনার। চার ছক্কার পসরা সাজিয়ে পূরণ করেন ১৫০ রানের কোঠা। ব্যাট ছোটাতে থাকেন লিটন দাসের করা ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ভাঙ্গার দিকে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। ব্যক্তিগত ১৬৯ রানে মিস টাইমিংয়ের কারণে সাজঘরের পথ ধরতে হয় বিদ্ধংসী এই ব্যাটারকে। এরপর আর কিউই বোলারদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি আর কেউই। যে কারণে ২৯১ রানেই থামতে হয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। কিউইদের প্রথম উইকেট তুলে নিতেই তাদের খেলতে হয় ১০ ওভার।
নেলসনের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে বাংলাদেশের কেবল সৌম্য আর কিছুটা সময় মুশফিক ছাড়া আর দাঁড়াতেই পারেননি কেউই। কিন্তু ভানুমতির খেল বদলে গেল দ্বিতীয় ইনিংসে এসে। বাংলাদেশ না পারলেও নিউজিল্যান্ড ম্যাচের শুরু থেকেই চাপে রাখে সফরকারীদের।
দলীয় ৭৬ রানে রাচীন রবিন্দ্র বিদায় নেওয়ার পর নিউজিল্যান্ডকে চালকের আসনে নিয়ে যান উইল ইয়ং ও হেনরি নিকোলস মিলে। ইয়ংয়ের ৮৯ আর নিকোলসের ৯৫ রানের শক্ত ভীতে ভর দিয়ে ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড।