ঘরের মাঠে বাঘের মতো খেললেও পরের মাঠে খেলতে গেলেই খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ব্যাটিং-বোলিং কোনো বিভাগেই জ্বলে উঠতে দেখা যায় না টাইগারদের। এর একটি বড় কারণ, ঘরের মাঠগুলোতে স্লো উইকেটে খেলে অভ্যস্ত বাংলাদেশ। বিশেষ করে মিরপুরের উইকেট নিয়ে অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সমালোচককেও কথা বলতে শোনা যায়।
বিদেশ থেকে পিচ কিনে এনে তা নিজেদের মাঠে বসিয়ে স্পোর্টিং উইকেট বানানোর নজির কম নয় ক্রিকেট বিশ্বে। সম্প্রতি পাকিস্তানও এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন বাংলাদেশ ক্রিকেট।
যদিও ভারতের ব্যাটিং-বান্ধব উইকেট বিবেচনায় বিশ্বকাপের আগে সিলেটে ভালো উইকেট বানিয়ে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ, তবে বিশ্বকাপে কাজে আসেনি তার কিছুই।
ব্যাট হাতে শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই তিন শ’ রান পার করতে পেরেছে টাইগাররা। বল হাতেও নিজেদের গড়া সংগ্রহ ডিফেন্ড করতে ব্যর্থ হয়েছেন বোলাররা। ফলে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে তিনে থেকে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে গেলেও হতাশা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩০৬ রান করেও আট উইকেটে হেরে সেই খেদ ঝরল সাকিবের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করা নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠে।
বিশ্বকাপে যতটা খারাপ পারফর্ম করল বাংলাদেশ, অতটা খারাপ তারা নয় বলে মনে করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘সবাই তো দেখলাম, আসলে আমরা কী অবস্থায় আছি। আমরা যতটা খারাপ ব্যাটিং করেছি, অতটা খারাপ দল আমরা নই- এখনও আমার কাছে এটা মনে হয়। আমাদের প্রস্তুতি ঠিক ছিল, কিন্তু ফলাফল আসেনি।’
স্পোর্টিং উইকেটের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এই তরুণ অধিনায়ক বলেন, ‘সেক্ষেত্রে ব্যাটাররা যেমন ভালো বল মোকাবিলা করে কীভাবে বড় স্কোর গড়তে হয়, সেটি শিখবে, তেমন বোলাররাও বুঝতে পারবে যে, ভালো উইকেটে কীভাবে আমি তিনশ রান ডিফেন্ড করতে পারব।’
বিসিবি এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেবে বলে বিশ্বাস শান্তর। বলেন, ‘আমি আশা করি, বোর্ড অবশ্যই এ নিয়ে চিন্তা করছে। তেমন উইকেটই (সামনে) দেয়া হবে আশা করছি।’
পরবর্তীতে সব ফরম্যাটেই স্পোর্টিং উইকেট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটাই আশা করব, সামনে যখন আমরা সাদা বলের ফরম্যাটে খেলব, ওয়ানডে হোক বা টি-টোয়েন্টি, প্রত্যেকেটা উইকেটই যেন ভালো এবং স্পোর্টিং হয়। আশা করি, তারা (টিম ম্যানেজমেন্ট) আমাদেরকে স্পোর্টিং উইকেট সরবরাহ করবেন।’
এ সময় অধিনায়কত্ব গ্রহণের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ইতিবাচক উত্তর দেন শান্ত।
গত কয়েক মাস ধরে টাইগারদের অধিনায়কত্ব নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। তামিম নিজেকে সরিয়ে নেয়ার পর সাকিবের কাঁধে তুলে দেয়া হয় বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব। সেসময় ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। তবে বিশ্বকাপের পর আর নেতৃত্বের বাড়তি চাপ নিয়ে খেলতে চান না সাকিব।
বিশ্বকাপ শেষে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের পর তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ। এর আগে অধিনায়কের খোঁজে নামতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)
এ সময় দলের দায়িত্ব নেয়ার সুযোগ আসলে সেটা লুফে নিতে চান শান্ত। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই তো (অধিনায়কত্ব) করছি। এ বিষয়ে আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে, আমি প্রস্তুত। যদি সুযোগ আসে তাহলে এটা ভালোভাবে করার জন্যই প্রস্তুত।’
এবারের বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন শান্ত। সাকিবের অনুপস্থিতিতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন তিনি। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এ ছাড়া বয়সভিত্তিক পর্যায়েও নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেয়া দুটি ম্যাচের কোনোটিতেই যদিও জিততে পারেননি, তারপরও অনেক কিছু শেখার ছিল বলে মনে করেন বাঁহাতি এ ব্যাটার। এ বিষয়ে তার বক্তব্য, ‘অধিনায়কত্বের ব্যাপারে যেটা বললেন- দুটো ম্যাচই জিততে পারিনি। কিন্তু অনেক কিছু শেখার ছিল। দুটো বড় দলের বিরুদ্ধে চাপ ছিল। আমার মনে হয়, অনেক কিছু শিখতে পেরেছি এবং এটা ভবিষ্যতে কাজে দেবে।’