টানা ছয় ম্যাচ হারার পর অবশেষে বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার তারা সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে ৩ উইকেটে। এই জয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে সাকিব আল হাসানের দল।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে এ দিন টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ দশমিক ৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৭৯ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪১ দশমিক ১ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে টাইগাররা (২৮২/৭)।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি টাইগার ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। বরাবরের মতো এই ম্যাচেও ব্যর্থ হন তিনি। সাজঘরে ফেরেন ৫ বলে ৯ রান করে।
আরেক ওপেনার লিটন দাসও দুর্দান্ত শুরু করেন। তবে তিনিও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ২২ বলে ২৩ রান করে।
দুই ওপেনারকে হারানোর চাপ সামলে নেন ওয়ানডাউনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। আর তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দ্রুতই ক্রিজে জমে যান তারা। তাদের সাবলীল ব্যাটিংয়ে জয়ের দিকে ধীরে ধীরে এগুতে থাকে বাংলাদেশ।
দুজনই দেখা পান ফিফটির। অর্ধশত পূর্ণ করার পর কিছুটা মারমুখী ভঙ্গিতে ব্যাটিং করতে থাকেন শান্ত ও সাকিব। একপর্যায়ে মনে হয়েছিল সেঞ্চুরির দেখা পাবেন দুজনই। তবে হতাশ করেন তারা। ৬৫ বলে ৮২ রান করে সাকিব আউট হলে ভাঙে ১৬৯ রানের জুটি।
সাকিব ফেরার এক ওভার পরই ৯০ রান করে আউট হন শান্ত। দুই সেট ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর উইকেটে এসে এই চাপ সামলাতে থাকেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম।
ভালো শুরু করলেও ১৩ বলে ১০ রান করে আউট হন মুশফিক। এর একটু পর মাহমুদউল্লাহ আউট হন ২২ রান করে।
শেষদিকে তাওহীদ হৃদয়ের ৭ বলে অপরাজিত ১৫ রানের ক্যামিওর সঙ্গে তানজিম সাকিবের ৬ বলে অপরাজিত ৯ রানে ভর করে জয় পায় বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন দিলশান মাদুশাঙ্কা। আর ২টি করে উইকেট শিকার করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও মাহেশ থিকশানা।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ওপেনার কুশল পেরেরাকে হারায় লঙ্কানরা। দলের ৫ রানের মাথায় ৫ বলে ৪ রান করে আউট হন তিনি। এরপর অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর বিপদ সামাল দেন পাথুম নিশাঙ্কা।
তার সাবলীল ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকে লঙ্কানদের ইনিংস। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি মেন্ডিস। দলের ৬৬ রানের মাথায় ৩০ বলে ১৯ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন লঙ্কান অধিনায়ক। অপরদিকে ফিফটির খুব কাছে গিয়েও হতাশ করেছেন নিশাঙ্কা। ৩৬ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে আউট হন এই লঙ্কান ওপেনার।
এরপর ক্রিজে জমে যান সাদিরা সামারাবিক্রমা এবং চারিথ আসালাঙ্কা। দুজনই ব্যাট হাতে ছিলেন দারুণ সাবলীল। দুজনের জুটি থেকে আসে ৬৩ রান। সামারাবিক্রমাও নিশাঙ্কার মতো আউট হয়ে যান ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে। দলের ১৩৫ রানের মাথায় ৪২ বলে ৪১ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।
এরপর ঘটে ম্যাচের সবচেয়ে মজার ঘটনা। পরের ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ক্রিজে চলে এলেও ঠিক ছিল না তার হেলমেট। এরপর ডাগআউট থেকে কাউকে হেলমেট নিয়ে আসতে বলেন তিনি। কিন্তু ২ মিনিটের বেশি সময় নিয়ে ফেলেন ম্যাথুস। ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো এক ব্যাটার আউট হওয়ার ২ মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটার বল মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত না থাকলে ‘টাইমড আউট’ হিসেবে গণ্য হবেন তিনি।
ম্যাথুসকে সেই নিয়ম অনুযায়ীই আউট করে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব আপিল করলে নিয়ম মেনে তাকে আউট দিয়ে দেন আম্পায়াররা। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘টাইমড আউটে’র দেখা মেলে।
এরপরও মারমুখী ভঙ্গিতে ব্যাটিং চালিয়ে যান আসালাঙ্কা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রানের গতি বাড়াতে থাকেন তিনি। ফিফটি ছুঁয়ে ছুটছিলেন আরও বড় লক্ষ্যের দিকে। মাঝে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এবং মাহিশ থিকশানাও খেলেছেন মাঝারি দুটি ইনিংস। ৩৬ বলে ৩৪ রান করেন ধনঞ্জয়া। অন্যদিকে ৩১ বলে ২২ রান করেন থিকশানা।
শেষ দিকে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলেন আসালাঙ্কা। ১০৫ বলে ১০৮ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন তিনি। অলআউট হওয়ার আগে ২৭৯ রান তুলতে পারে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন তানজিম হাসান সাকিব। এ ছাড়া ২টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান এবং শরিফুল ইসলাম। ১ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।