চলতি বিশ্বকাপে দুই দলেরই সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে আগেই। এখন টানা হারে দুই দলের নাজেহাল অবস্থা। কঠিন অবস্থায় থাকা বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা সোমবার পরস্পরের বিপক্ষে মাঠে নামবে।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় দুই দলের ম্যাচটি শুরু হবে। এ ম্যাচের চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা সাতটি করে ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে দুটি জয়ে শ্রীলঙ্কার অর্জন ৪ পয়েন্ট। অন্যদিকে একটি জয়ে বাংলাদেশের অর্জন ২ পয়েন্ট। বিশ্বকাপে আজ দুই দল আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচে মুখোমুখি হলেও ম্যাচটির গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক গুণ বাড়ছে অন্য কারণে।
আগামী বছর যে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি রয়েছে, সেই টুর্নামেন্টে খেলতে হলে হাতে থাকা দুটি ম্যাচে জয় পেতেই হবে বাংলাদেশকে। টানা ছয় ম্যাচে হারের বৃত্তে ঘুরপাক খেলেও জয়ের অভিন্ন লক্ষ্য থাকবে টাইগারদের। অন্যদিকে জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে শ্রীলঙ্কাও। ফলে দুই দলের ম্যাচটি দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। এরপর থেকে একের পর এক ম্যাচে হেরে বিপর্যস্ত অবস্থায় এখন সাকিব আল হাসান বাহিনী। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের কাছে ১৩৭ রানে হেরে হতাশার রাজ্যে যাত্রা করে তারা। এরপর শক্তিশালী ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে বাংলাদেশ।
বাছাই পর্বে খেলে আসা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টাইগাররা। ডাচদের কাছে ৮৭ রানে হেরে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের রেস থেকে সরে যায় বাংলাদেশ। পরে পাকিস্তানের বিপক্ষেও হতাশার গল্প রচনা হয়।
হতাশার সাগরে ডুব দেয়া বাংলাদেশের সামনে আজ শ্রীলঙ্কা। হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এ ম্যাচকে পাখির চোখ করেছেন সাকিবরা, তবে জয়ে ফিরতে হলে হতাশা কাটিয়ে উঠতে হলে প্রবল আত্মবিশ্বাস দরকার। মানসিকভাবে ইতিবাচক থেকে মাঠের লড়াইয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে শ্রীলঙ্কাকে হারানো সম্ভব।
লঙ্কানদের হারাতে পারলে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি গড়তে পারবে বাংলাদেশ। তা না হলে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করে দেশে ফিরতে হবে।
অন্যদিকে টানা হারের মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কাও। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে বিপাকে পড়ে দলটি, তবে এ অবস্থা থেকে নেদারল্যান্ডসকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। এ জয়ে পাওয়া আত্মবিশ্বাস পুঁজি করে পরের ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে লঙ্কানরা, কিন্তু আফগানিস্তানের কাছে হেরে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের।
আফগানদের কাছে সাত উইকেটে শোচনীয় পরাজয়ের হতাশা কাটিয়ে না উঠতেই ভারতের কাছে ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে যায় লঙ্কানরা। ওই ম্যাচে মাত্র ৫৫ রানে অলআউট হওয়ার বড় লজ্জায় ডুবেছে অর্জুনা রানাতুঙ্গা, সনাৎ জয়সুরিয়াদের উত্তরসূরিরা।
ভারতের সামনে বিধ্বস্ত হওয়া শ্রীলঙ্কাও চাইবে ঘুরে দাঁড়াতে, স্বরূপে ফিরতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে জয়ের খোঁজে থাকবে তারা। ফলে দুই দলের ম্যাচটি ভালো জমবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
দিল্লির বায়ুদূষণও খেলায় বড় প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দল স্টেডিয়ামে গিয়ে অনুশীলনে সমস্যায় পড়েছে। ভয়াবহ বায়ুদূষণের কারণে শারীরিকভাবে খেলোয়াড়দের অসুস্থ্ হওয়ার শঙ্কা প্রবল।
এর আগে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ম্যাচ হলেও সে সময় বায়ুদূষণের মাত্রা অতিরিক্ত পর্যায়ে ছিল না, কিন্তু পুরোপুরি প্রতিকূল পরিবেশ। লম্বা সময় ব্যাটিং করলে ব্যাটাররা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। পেস বোলারদেরও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে, যে কারণে দুই দলই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে বৈরী পরিবেশও দুই দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এখানেও দুই দলকে লড়াই করে জিততে হবে। এ ছাড়া দিল্লির উইকেটে রান হয়। এ মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪২৮ রানের রেকর্ড স্কোর গড়েছিল। ব্যাটিং-স্বর্গ উইকেটে ব্যাটারদের প্রমাণ করতে হবে।
এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা মোট চারবার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে, কিন্তু কোনো ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ সালের আসরে টানা জিতেছে লঙ্কানরা। গত আসরে (২০১৯) দুই দলের ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল। ফলে বিশ্বকাপের অপরাজেয় খেতাব ধরে রাখবে শ্রীলঙ্কা নাকি প্রথম জয়ের নতুন ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ, সেটিই এখন দেখার বিষয়।