বিশ্বকাপে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে শনিবার। দিনের শুরুতে যে ম্যাচটি রয়েছে, সেখানে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। এই দুই দলের মধ্যে সেমিফাইনালে খেলার পথে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে কিউইরা। কিন্তু টুর্নামেন্টে যেভাবে শুরুটা রাঙিয়েছিল তারা, সেই রিদমটা কিন্তু ধরে রাখতে পারেনি। তাদের খেলায় ছন্দপতন হয়েছে।
সেই ভারতের কাছে হারের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেননি টম লাথামরা। নিউজিল্যান্ড দলটি যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেটি করতে সক্ষম হয়নি। টানা তিন ম্যাচ হেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এখন দলটি। এর মধ্যে তাদের বেশ কিছু খেলোয়াড় চোটগ্রস্ত হওয়ায় আরও বিপদে পড়েছে তারা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সেরা একাদশের সব খেলোয়াড়কে পুরোপুরি ফিট পাওয়া যাবে কি না- তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এটি তাদের জন্য চিন্তার কারণ। অন্যদিকে, পাকিস্তানের কথা যদি বলি, গত ম্যাচে বাংলাদেশকে যে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে হারিয়েছে তারা, সেই রিদমটা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ তাদের সামনে। সেমিফাইনাল খেলার দৌড়ে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যে কটি ম্যাচ হাতে রয়েছে, সেখানে জয় ছাড়া বিকল্প নেই। ফলে সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে শনিবারের ম্যাচটি ‘নকআউট’ ম্যাচ মনে করেই খেলবেন বাবর আজমরা।
আমার মতে, এই ম্যাচটি দুই দলের জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেমিফাইনালে খেলার পথে বড় প্রভাব ফেলবে এটি। তাই ম্যাচটিতে রোমাঞ্চ ছড়ানো রুদ্ধশ্বাস লড়াই হবে। আর সেখানে ঠান্ডা মাথায় ধীর-স্থির থেকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নিপুণ ক্রিকেট খেলতে পারবে যারা, তাদের মুখেই ম্যাচশেষে হাসি ফুটবে।
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হবে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। দুই দল ধারে-ভারে ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হলেও এই টুর্নামেন্টে দুই দলের ভিন্ন দুই চিত্র দেখা যাচ্ছে। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে পরপর দুই ম্যাচ হারের পর যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া দলে, সেটি তারা বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছে। এখন জয়রথে উড়ছে দলটি। অসাধারণ ক্রিকেট খেলে ফেভারিট দলের মতোই খেলছে অজিরা। এই যে তাদের একটা মোমেন্টাম এলো, এটিই তাদের সেমিফাইনালের পথ মসৃণ করেছে। আরও একটি জয় তাদের সেমিফাইনালে খেলার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে দেবে। আর সেই জয় তুলে নেয়ার অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়ানরা।
তবে তাদের অস্বস্তির জায়গা হলো- গুরুত্বপূর্ণ দুই খেলোয়াড়কে এই ম্যাচে পাবে না তারা। বিস্ফোরক ব্যাটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আচমকা ইনজুরিতে পড়েছেন। মিচেল মার্শকেও পাচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া। ফলে দুই খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতি দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে। কারণ আমরা গত ম্যাচগুলোতে দেখেছি শক্তিমান ম্যাক্সওয়েলের পাওয়ার ব্যাটিং। মাত্র ৪০ বলে তার সেঞ্চুরি হাঁকানোর কীর্তি এই বিশ্বকাপেই হয়েছে। টপ অর্ডারে মার্শও অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ। এই দুইজন খেলতে পারবে না বলে অস্ট্রেলিয়ার বড় ক্ষতি হয়ে গেল। তারপরও দলটি অস্ট্রেলিয়া, সাবেক পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন। তাদের দলের প্রত্যেকেই পারফর্মার এবং ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ফলে ইংল্যান্ডের জন্য অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি বড় পরীক্ষাই হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে এবারের আসরে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের করুণ দশা!
বিশ্বকাপের শুরু থেকে হোঁচট খেতে খেতে মুখ থুবড়ে পড়েছে দলটি। কাগজে-কলমের হিসাবে সেমিফাইনালে ওঠার রেস থেকে ছিটকে না গেলেও সেই স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটেছে তাদের। তবে তাদের সামনে যে তিনটি ম্যাচ রয়েছে, সেগুলোও বেশ গুরুত্ব দিয়েই খেলবে ইংলিশরা। কেননা আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার জন্য ম্যাচগুলো মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিয়ে খেলবে ইংল্যান্ড। কোনো জায়গায় অস্ট্রেলিয়াকে ছাড় দেবে না। এই দুই দলের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো পেস ইউনিট। দুই দলের যে ধারালো ও বিধ্বংসী পেস ইউনিট রয়েছে- তা ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। স্পিনেও দুদল একে অপরকে চ্যালেঞ্জ জানাবে।
তবে ব্যাটিং শক্তিতে দুদল বলীয়ান। তবে সেটি মাঠের লড়াইয়ে দেখাতে হবে। নিজেদের দিনে ব্যাটিংয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে ইংল্যান্ড। তবে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে নিজেদের সেরা ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখাতে পারেনি ইংলিশরা।
আমি মনে করি, সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন মলিন হয়ে গেলেও আজ পূর্ণ শক্তিতে জ্বলে উঠতে পারে ইংল্যান্ড। ফলে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ম্যাচটিতে অন্য মাত্রার লড়াই জমে উঠতে পারে এবং বিশ্বকাপের অন্যতম একটি উপভোগ্য ম্যাচ হতে পারে। এ ম্যাচে যারা মাথা খাটিয়ে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে নৈপুণ্য দেখাতে পারে, কোনো ভুল করবে না, হাফ-চান্সকে ফুল চান্সে রূপান্তর করতে পারবে- তারাই জয়লাভ করবে।