ভারত ও ইংল্যান্ড- বর্তমানে এই দুই দল ভিন্ন দুই মেরুতে অবস্থান করছে। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ভারতকে হারাতে পারেনি কোনো দল। টানা পাঁচ ম্যাচেই অপরাজেয় স্বাগতিকরা। ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে অবস্থান ভারতের।
ভারতের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলা দক্ষিণ আফ্রিকা সমান ১০ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থাকায় টেবিলের শীর্ষে। রোববার জিততে পারলে টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করবে ভারতীয়রা। অপ্রতিরোধ্য দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। সেমিফাইনালের খুব কাছাকাছি অবস্থান এখন ভারতের।
অন্যদিকে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে ইংল্যান্ড শিবিরে। টানা হেরেই চলেছে ইংলিশরা। পাঁচ ম্যাচ খেলে মাত্র একটিতে জয় পাওয়া বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন অনেকটাই মলিন হয়ে গেছে। কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না দলটি।
নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করা ইংল্যান্ডের এমন করুণ দশা হবে, সেটি কেউই ভাবেনি। সেমিফাইনালের রেস থেকে বলতে গেলে ছিটকে পড়া ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ আজ ভারত।
দুই দলের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ম্যাচে আমি ভারতকেই নিরঙ্কুশ ফেভারিট বলব। কেননা যে পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছে ভারত, এই দলটিকে আটকানোটা হবে অনেক দুঃসাধ্য।
এই বিশ্বকাপে আমরা মাঠের লড়াইয়ে ভিন্ন এক ভারতকেই দেখতে পাচ্ছি। দলীয় স্পিরিট, খেলোয়াড়দের ঐক্য, ড্রেসিংরুমের আনন্দঘন পরিবেশ, মাঠে শরীরী ভাষা, লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃঢ় মানসিকতা, জেতার প্রচণ্ড ক্ষুধা, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রবল আত্মবিশ্বাস- এসব কিছু মিলিয়ে তুলনাহীন দলটি।
স্বাগতিকরা বিশ্বকাপ জয়ের যে এক অভিন্ন মিশনে নেমেছে, এখন পর্যন্ত তাদের কক্ষ বিচ্যুত করতে পারেনি কোনো দল। ব্যাটিং বলেন, বোলিং বলেন কিংবা ফিল্ডিং- প্রতিটি বিভাগেই অসাধারণ খেলছে ভারত।
বিশ্বকাপের আগে ইংলিশ বোলার জেমস অ্যান্ডারসন বলেছিলেন, ‘এই ভারত দলটি শিরোপা জয় করতে পারে।’ তার এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণ করতে চলেছে দলটি। অবশ্য শেষ চারটি বিশ্বকাপ আসরের মধ্যে তিনবারই স্বাগতিক দেশ বিশ্বকাপ জিতেছে। এই হিসাবে ভারতকে এগিযে রাখেন অ্যান্ডারসন। তিনি এও বলেছিলেন যে, এই বিশ্বকাপে ভারতকে হারাবে তার দেশ ইংল্যান্ড।
রোববার দুদলের সেই কাঙ্ক্ষিত ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে লক্ষ্ণৌর মাঠে। দেখা যাক, তার এই কথাটির মুল্যায়ন হয় কি না? অবশ্য অ্যান্ডারসন জোর গলায় যে চার দলের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন, এর মধ্যে অন্যতম ফেভারিট ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা যে পারফরম্যান্স শো করেছে, তাতে নিশ্চয় মুখ লুকিয়ে রাখবেন অ্যান্ডারসন!
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে- সেটি হয়তো কোনো ক্রিকেট বিশ্লেষক, গবেষকেরও কল্পনায় ছিল না। উপমহাদেশের দেশে বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার যে মিশন নিয়ে এসেছে ইংলিশরা, সেখানে পদে পদে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- সব জায়গায় হতাশ করছে দলটি। যে কারণে আফগানিস্তানের মতো দলের কাছে ধরাশায়ী হতে হয়েছে তাদের। এই ‘শোক’ কাটিয়ে না উঠতেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বিশাল রানের লজ্জার হার মেনে নিতে হয়েছে।
সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে তো সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন বলতে গেলে শেষ! আমি মনে করি, উপর্যুপরি হারে এ অবস্থায় এখন ‘আহত সিংহ’-এর মতো হয়ে গেছে ইংল্যান্ড। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সামনে এগুনো ছাড়া আর কোনো গতি থাকে না- দলটির অবস্থান অনেকটা এরকমই।
ফলে অপ্রতিরোধ্য থাকা ভারতের বিপক্ষে কিছু একটা করে দেখালেও দেখাতে পারে ইংলিশরা। বড় দলগুলোকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে দেখা যায়। ভারতকে হারিয়ে ইংল্যান্ড জয়ে ফিরলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে বেশ কিছু দিন বিশ্রামের সুযোগ পেয়েছেন ভারতের খেলোয়াড়রা। গত পাঁচ ম্যাচ খেলার যে ক্লান্তি, এক ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুতে ভ্রমণের ধকল- এসব কাটিয়ে বেশ সতেজ হয়ে মাঠে নামবে তারা। এটি তাদের জন্য দারুণ ইতিবাচক দিক।
তবে ভারতীয় দলের হয়ে আজকের ম্যাচে হার্দিক পান্ডিয়ার খেলতে না পারাটা খুবই হতাশার। এই অলরাউন্ডার দলে না থাকলে ব্যালান্সড একাদশ গড়তে কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ে যায় ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
তবে একটা বিষয় ভারতকে সব সময় এগিয়ে রাখছে আর সেটি হলো তাদের দলের সবাই পারফর্মার। সাইড বেঞ্চে বসে থাকা খেলোয়াড় একাদশে সুযোগ পেলেই ম্যাচসেরা পারফরম্যান্স দেখান। বোলার মোহাম্মদ শামির কথাই যদি বলি, টানা ম্যাচে একাদশের বাইরে সময় কেটেছে তার। কিন্তু নিউজিল্যান্ড ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেয়েই ৫ উইকেট শিকার করে সব আলো কেড়ে নেন এই ডানহাতি পেসার।
শুধু বোলিং নয়, ব্যাটিংয়েও কাকে রেখে কাকে একাদশে সুযোগ দেবে টিম ম্যানেজমেন্ট, এ নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়ে ভারত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফিল্ডিং। এ বিভাগেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন রোহিত-কোহলিরা। একটি দল যখন সব দিক থেকে ভালো খেলে, তখন তাদের আটকানো কঠিন হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ভারতও সেই রকম একটি শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য দলে পরিণত হয়েছে। এই দলটি বহুদূর যাবে।