প্রথম দুই ম্যাচ হেরে অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের দৌড় থেকে খানিকটা পিছিয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। তবে তার পর থেকে যেন হারতে ভুলেই গেছে ক্যাঙ্গারু বাহিনী।
আজও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ রানের জয় পেয়েছে প্যাট কামিন্সের দল। এর ফলে পরপর চার ম্যাচই জিতল তারা। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় পরাজয়ের স্বরদ পেল নিউজিল্যান্ড। ফলে চার জয়ে আট পয়েন্ট নিয়ে দুই দলেরই পয়েন্ট এখন সমান। তবে নেট রান রেটে কিছুটা এগিয়ে থেকে এখনও পয়েন্ট টেবিলের চারে অবস্থান করছে কিউইরা।
৩৮৯ রানের লক্ষ্য দিয়েও ম্যাচ হাত ফসকে বের হয়ে যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার। এদিন ব্যাট হাতে নিউজিল্যান্ডের যিনি এসেছেন, তিনিই রান তোলায় মনোযোগী হয়েছেন।
পাহাড়সম লক্ষ টপকাতে মারকুটে শুরু করে নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী দুই ব্যাটার। ডেভন কনওয়ে ১৭ বলে ২৮ রান করে ফিরলে ৭১ রানেও উদ্বোধনী জুটি ভাঙে। এর কিছুক্ষণ পর ফিরে যান আরেক ওপেনার উইল ইয়ংও। সাবধানী চালে ব্যাট করতে থাকা ইয়ং ফেরেন ৩৭ বলে ৩২ রান করে। এই দুই ব্যাটারকেই ফেরান জস হ্যাজলউড।
এর তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯৬ রানের জুটি গড়েন রাচিন রবীন্দ্র ও ডেরিল মিচেল। মিচেল ৫১ বলে ৫৪ রান করে ফিরে গেলে রবীন্দ্রকে ভালো সঙ্গ দেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। চতুর্থ উইকেট জুটিতে এই দুজনের ব্যাট থেকে আসে আরও ৫৪ রান।
ল্যাথাম ২২ বলে ২১ রান করে ফিরে যাওয়ার কয়েক ওভার পর ১৬ বলে ১২ রান করে আউট হন গ্লেন ফিলিপস। এরপর দলকে তিনশ রানের দোরগোড়ায় পৌছে অবশেষে বিদায় নেন রাচিন রবীন্দ্র। তার আগে অবশ্য চলতি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন রাচিন। ৮৯ বলে নয়টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ১১৬ রান করেন তিনি।
রাচিন ফিরে গেলে ৫৮ বলে চার উইকেটে ৯৬ রান তোলার লক্ষ্য দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ডের সামনে। এসময় ব্যাটে ঝড় তোলেন জিমি নিশাম। একপ্রান্ত আগলে রেখে সমানে ব্যাট চালিয়ে যান জিমি। অন্য প্রান্তে রান তোলার গতি না কমিয়েই ব্যাটারদের আসা-যাওয়া চলতে থাকে।
এর মাঝে মিচেল সান্টনার ১২ বলে ১৭, ম্যাট হেনরি আট বলে ৯ ও ট্রেন্ট বোল্ট আট বলে ১০ রান করেন। নিশাম তিনটি ছক্কা ও চারের সাহায্যে ৩৯ বল খেলে ৫৮ রান করেন। তবে পঞ্চাশতম ওভারের পঞ্চম বলে রান আউট হয়ে ফিরলে শেষ বলে জিততে ছক্কা মারার প্রয়োজন ছিল কিউইদের। একাদশ ব্যাটার ওই বলে কোনো রানই নিতে পারেননি। ফলে পাঁচ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয় নিউজিল্যান্ডকে।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি উইকেট নেন অ্যাডাম জ্যাম্পা, দুটি করে উইকেট নেন জস হ্যাজলউড ও প্যাট কামিন্স।
এর আগে ধর্মশালায় টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের দাপটে খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। একসময় মনে হচ্ছিল, অনায়সে সাড়ে চারশ রান করবে অজিরা। কিন্তু যদিও চারশ রান ছোঁয়ার আগেই তারা ৪৯.২ ওভারে ৩৮৮ রান তুলে অলআউট হয়ে যায়।
ওশেনিয়া অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশটির বোলারদের রীতিমতো তুলাধুনা করছেন দুই অজি ওপেনার। আজ ওয়ার্নারের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন ট্রেভিস হেড। দুজন মিলে ১০ ওভারে ১১৮ রান তোলেন এই দুই ব্যাটার।
১৬ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ১৫৫ রান। ৬৫ বলে ৮১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে গ্লেন ফিলিপসের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ওয়ার্নার। এসময় ৬টি ছক্কা ও পাঁচটি চারের মার মারেন তিনি।
দলীয় ২০০ রানে ফিরে যান ট্রেভিস হেড। চলতি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। ৬৭ বলে ১০৯ রান করে ফেরার আগে ১০টি চার ও ৭টি ছক্কার মার মারেন হেড।
হেড ফিলিপসের বলে বোল্ড হওয়ার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া।
১৪ দশমিক পাঁচ ওভারেই দলীয় দেড়শ রান পূরণ করা অস্ট্রেলিয়া পঞ্চাশ ওভারের পুরোটা খেলতে পারেনি।
এর মাঝে মিচেল মার্শ ৫১ বলে ৩৬, স্টিভ স্মিথ ১৭ বলে ১৮ এবং মারনাস ল্যাবুশানে ২৬ বলে ১৮ রান করেন। এরপরে ২৪ বলে ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
এ ছাড়া জস ইংলিস ২৮ বলে ৩৮ এবং প্যাট কামিন্স ১৪ বলে ৩৭ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেললে রান চারশর কাছাকাছি চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার।
ছয় উইকেটে ৩৮৭ রান তুললেও ৩৮৮ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় অজিরা। মাত্র এক রানের ব্যবধানে পড়ে চার উইকেট।
কিউইদের হয়ে গ্লেন ফিলিপস ১০ ওভারে মাত্র ৩৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩টি উইকেট। আর ট্রেন্ট বোল্ট ৩ উইকেট নিতে খরচ করেন ৭৭ রান। এছাড়া দুটি উইকেট নেন মিচেল সান্টনার।
ঝড়ো সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন ট্রেভিস হেড।