‘প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে এসেছি। চেয়েছিলাম সৌদি আরব যেন আর্জেন্টিনাকে হারায়, সেটাই হয়েছে।’
কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বিশ্বকাপের ফেবারিট দল আর্জেন্টিনাকে হারানোর পর এভাবেই উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানান সৌদি আরবের এক সমর্থক।
শুধু কাতারে আসা সৌদি সমর্থক নন, গোটা সৌদি আরব জুড়েই চলছে অভাবিত বিজয় উদযাপন। আর্জেন্টিনাকে হারানোর আনন্দ আরও বর্ণিল করতে বুধবার দেশটিতে ঘোষণা করা হয়েছে সরকারি ছুটি।
সৌদি আরবের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে হেরেছে লিওনেল মেসির দল। বিশ্বকাপের আগে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনা হোঁচট খায় এশিয়ান জায়ান্টদের বিপক্ষে। অগোছালো ফুটবল খেলার খেসারত দিয়ে প্রথম ম্যাচেই হারের স্বাদ নিয়েছে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। সৌদি আরবের হয়ে দুটি গোল করেন সালেহ আলসেহরি ও সালেম আল-দাওসারি।
এই জয়ের পর সৌদি আরবে বুধবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। খালিজ টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতীয় দলের বিস্ময়কর জয়ের পর জেদ্দার দোকান, ক্যাফে এবং অফিসগুলোয় সৌদি সঙ্গীত বেজে ওঠে।
কেউ কেউ রাস্তায় উল্লাস শুরু করেন, অনেকে আবার মনের সুখে গাইতে থাকেন গান। জাতীয় পতাকা হাতে মুহূর্তটিকে স্মরণীয় রাখতে একে-অপরকে মিষ্টি খাওয়াতেও দেখা গেছে অনেককে।
জেদ্দার বাসিন্দা আমিরা মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি কাঁদছি... এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার দেখা সেরা ম্যাচ ছিল এটা।’
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচটি একসঙ্গে বসে দেখেছে সৌদির শিক্ষার্থীরা। জয়ের পর জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে তারা।
ফয়সাল আলমরি এক ছাত্র বলেন, ‘আমার দেশ, আমার দল নিয়ে খুব গর্বিত। তারা আর্জেন্টিনার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নের মতো খেলেছে।
‘তারা (সৌদি দল) মেসি বা বিশ্বের চাপে মুচড়ে যায়নি।’
রিয়াদ থেকে কাতারে খেলা দেখতে এসেছিলেন ২৫ বছর বয়সী ফাহাদ আল কানানি। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় গোলের পর ভেবেছিলাম আমরা ৪-১ এ ম্যাচ জিতব। বাকি বন্ধুদের মতো আমি অতোটা উদ্বিগ্ন ছিলাম না। আমাদের কেবল ঠেকানোর দরকার ছিল। সব চাপ আর্জেন্টিনার ওপরেই ছিল।’
একের পর এক শট ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে মূলত চাপে ফেলেন সৌদি গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল-ওয়াইস। ১৫ মিনিটের ইনজুরি টাইমে একাধিক আক্রমণ করেও গোলের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা।
সৌদির দাহরান শহরের বাসিন্দা শাকরি। খেলা শেষে ভীষণ উচ্ছ্বসিত তিনি। শাকরি বলেন, ‘আমরা আমাদের দলকে প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক বেশি সমর্থন করেছি এবং আমরা পুরস্কৃত হয়েছি।’
অন্যদিকে হারের পর দ্রুত মাঠ ছাড়তে দেখা গেছে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের।
দুবাই থেকে আসা ৩১ বছর বয়সী ব্রুনো বলেন, ‘এটা স্রেফ দুঃস্বপ্ন। এমনটা আশা করিনি। এই টুর্নামেন্টটা যেখানে মেসির হওয়ার কথা ছিল, সেখানে আমরা ‘দুর্বল’ দলের কাছে হেরেছি। আমি সত্যিই বিরক্ত।’
৪৮ বছর বয়সী জেমি বলেন, ‘এটি অবিশ্বাস্য, তবে বাস্তব। আমরা সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। এখন আমাদের মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারাতে হবে। এটা মোটেও সহজ হবে না। আমার খারাপ লাগছে... মনে হচ্ছে পরের রাউন্ডে যেতে পারব না।’স্লোভেনিয়ার রেফারি স্লাভকো ভিনসিক লুসাইল শেষ বাঁশি বাজানোর পরই দোহার ফিফা ফ্যান ফেস্টিভ্যাল সাইটে উচ্ছ্বসিত সৌদি ভক্তরা উদযাপনের বন্যা বইয়ে দেন।
২৭ বছর বয়সী মদিনার বাসিন্দা হাসান খালিদ বলেন, ‘যা হয়েছে তা বিশ্বাস করতে পারছি না! স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।’
এই জয়ে গ্রুপ সি-তে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে এখন সৌদি আরব।