ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে বিভিন্ন দেশের পতাকায় ছেয়ে গেছে পুরান ঢাকা। বাড়ির ছাদে ছাদে পতাকা উড়ছে। বাদ নেই অলিগলি। সমর্থকদের উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই।
পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারীবাজার, নারিন্দা, ওয়ারি, গেণ্ডারিয়া, বংশাল, চকবাজারসহ পুরো এলাকা ছেয়ে গেছে সমর্থকদের পছন্দের দলের পতাকায়। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের বর্ণিল পতাকা উড়ছে বাড়ির ছাদে ছাদে। অলিতেগলিতে রশির সঙ্গে ঝুলছে বিভিন্ন দলের পতাকা।
লক্ষ্মীবাজারের সাততলা ভবনের মালিক ওয়াজেদ আলী। তার বাড়ির ছাদে উড়ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও জার্মানির পতাকা। বিশাল আকারের পতাকায় ছেয়ে গেছে পুরো ছাদ।
ওয়াজেদ আলী নিউজবাংলাকে জানান, তিনি নিজে জার্মানির সমর্থক হলেও তার বড় ছেলের প্রিয় দল আর্জেন্টিনা। আবার ছোট ছেলে সমর্থন করে ব্রাজিল। পারিবারিক আড্ডায়ও চলে কথার লড়াই। গত সপ্তাহে ছাদে পতাকা টানিয়েছেন তিনজনই। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা আকারে ছোট হলেও জার্মানির পতাকার আকার বেশ বড়। পারিবারিক শান্তিচুক্তির মাধ্যমেই বড় পতাকা লাগানোর ক্ষমতা পেয়েছেন তিনি।
শাঁখারীবাজারের চারতলা ভবনের মালিক দেবাশীষ বিশ্বাস। তার বাড়ির ছাদে উড়ছে ব্রাজিলের বিশাল বড় একটি পতাকা। পাশেই ছোট আকারের অনেক ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকা।
তিনি বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে ব্রাজিলের সমর্থক। বিশ্বকাপের সময় প্রতিবার ব্রাজিলের পতাকা টানাই৷ এবার ২০ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রস্থের পতাকা টানিয়েছি ছাদে। আমার ছেলে মেসিকে পছন্দ করে। তাই আর্জেন্টিনার পতাকাও টানিয়েছি।'
গেণ্ডারিয়ার দশতলা ভবনের মালিক আব্দুর রশিদের বাড়ির ছাদে উড়ছে বিশাল আকারের আর্জেন্টিনার পতাকা। তার পরিবারের সবাই আর্জেন্টিনার সমর্থক। সবাই মিলে বিশাল আকারের পতাকা লাগিয়েছেন। এ ছাড়া তার ভবনে উড়ছে জার্মানি, স্পেন ও ব্রাজিলের পতাকা।
পুরান ঢাকার ভাষায় আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বিচ্ছকাপ আইসা পড়ছে, মাগার এখনো জমতাছে না কেলাই। পতাকা লাগান তো মেলা দিনের ট্রেডিশনও বটে। তাই লাগাইচি। কেঠায় আবার কইব কি...!!!’
তার স্ত্রী শারমিনা বেগম বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই আর্জেন্টিনার সমর্থক। ভাড়াটিয়াদের একেকজন একেক দল সমর্থন করেন। তারাই জার্মানি, স্পেন ও ব্রাজিলের পতাকা লাগিয়েছেন।'
বাড়ির ছাদ ছাড়িয়ে পতাকায় ছেয়ে গেছে পুরান ঢাকার অলিগলিও। বিভিন্ন দলের বাহারি পতাকা উড়ছে বিভিন্ন দোকানেও। পুরান ঢাকায় ছেয়ে যাওয়া তারের সঙ্গেও ঝুলছে বিভিন্ন দেশের পতাকা। ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনার শেষ নেই।
বংশালের মুদি ব্যবসায়ী আরমান মিয়ার ছোট দোকানেই উড়ছে বিশাল আকারের জার্মানির পতাকা। তারা পতাকা দেখতে দোকানের সামনে ভিড় করেছেন।
তিনি বলেন, ‘জার্মানি আমার প্রিয় দল। এর আগের বিশ্বকাপেও পতাকা বানিয়েছিলাম। এবার আরও বড় করে বানিয়েছি। এবারের বিশ্বকাপ জার্মানিই জিতবে।’
পতাকাবাজি থেমে নেই রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটেও। এখানকার দোকানগুলোতেও উড়ছে বিভিন্ন দলের পতাকা। ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে টানিয়েছেন নিজেদের পছন্দের দলের পতাকা।
এদিকে পুরান ঢাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বকাপের উন্মাদনা। বিভিন্ন দেশের পতাকায় রঙিন হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। মূল ফটক থেকে শুরু করে ভাষাশহীদ রফিক ভবন, কাঁঠালতলা, বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরে শোভা পাচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকা। ভাষাশহীদ রফিক ভবনে শোভা পাচ্ছে বিশাল আকারের আর্জেন্টিনার পতাকা। তার দুই পাশেই দুটি বিশাল আকারের ব্রাজিলের পতাকা টানানো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হলও পিছিয়ে নেই পতাকার সাজে। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের ক্যান্টিন সাজানো হয়েছে বিভিন্ন দেশের পতাকা দিয়ে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন ও জার্মানির পতাকা শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন কক্ষে।
ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তুলি আক্তার বলেন, ‘হলের প্রতিটি কক্ষে ছোট ছোট পতাকা লাগানো হয়েছে। ক্যান্টিনেও অনেক পতাকা টানানো। হলের ছাদে বিশাল আকারের পতাকা টানানোর জন্য চাঁদা তোলা হচ্ছে।’