বাংলাদেশের নারী ফুটবল সাফল্যের নেপথ্যের সবচেয়ে বড় কারিগর তিনি। জাতীয় দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গোলাম রাব্বানী ছোটনের নাম। দেশের অন্যতম সেরা এ কোচ নাকি কোচিং এ আসতেই চাননি! একরকম জোর করেই তাকে কোচিংয়ে আনা হয়েছে। নিউজবাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজের কোচিং ক্যারিয়ার শুরুর আগের গল্পটা বলেন ছোটন।
১৯৮০-র দশকে ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ও ওয়ারী ক্লাবের হয়ে মাঠ মাতানো ডিফেন্ডার ছিলেন ছোটন। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে তাকে স্থানীয় বড়ভাইদের অনুরোধে একরকম বাধ্য হয়ে শুরু করতে হয় কোচিং।
ছোটন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খেলোয়ার জীবনের পর থেকে আমার কোচিং ক্যারিয়ারে আসা। আমি ওয়ারীতে খেলতাম। সে সময় মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে থাকতাম। ওখানে একটা ক্লাব ছিল (টিঅ্যান্ডটি ক্লাব) ফোর্থ ডিভিশনের। ওয়ারীতে ৩-৪ বছর খেলার পর আমাকে ওই ক্লাবে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদের হয়ে খেলা শুরু করি।‘ক্লাবে খেলা চলাকালীন অবস্থায় আমাকে একরকম জোর করে কোচিংয়ে আনা হয়। তো ওখান থেকেই আসলে আমার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু।’
মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি ক্লাবে খেলোয়াড়-কাম-কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে করতেই ছোটনের ঝোঁক বাড়ে কোচিংয়ের দিকে। পেশাদার খেলা ছাড়ার পর পাকাপাকিভাবে কোচিংয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ছোটন যোগ করেন, ‘আমার আসলে কোচিং করানোর কোনো ইচ্ছা ছিল না। জোর করে আমাকে কোচিংয়ে আনা হয়েছিল, যেখানে আমার খেলাটাই ছিল মূল্য। পরে সেটি শখে পরিণত হয়। সে সময় ওখানকার বড় ভাই ছিলেন টিঅ্যান্ডটি ক্লাবের সেক্রেটারি ফিরোজ ভাই ও বাবুল ভাই। তাদের ইচ্ছাতেই আমি কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করি। পরে যখন ২০০২ সালে যখন খেলা ছাড়লাম তখন কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার তৈরির স্থির করলাম।’
নারী দলের কোচিংয়ে আসার আগে ছেলেদের বয়সভিত্তিক দলে কোচিং করিয়েছেন ছোটন। জাতীয় দলের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমি ছেলেদের টিমের কোচ হিসেবে কাজ করি। বাফুফেতে যোগ দেই ২০০৬ সালে। তখন বিভিন্ন গ্রাসরুট লেভেল ও বয়সভিত্তিক দলের ট্রেনিং করিয়েছি। পরে ২০০৮ সালে সিনিয়র ন্যাশনাল টিমের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।’
২০০৯ সালে ছোটন দায়িত্ব পান মেয়েদের দলের। এরপরই শুরু ইতিহাসের। একে একে সাফল্য আসে অনূর্ধ্ব ১৬, ২১ ও বয়সভিত্তিক অন্য টুর্নামেন্টে। তবে, শুরুতে এই কৃতিত্ব পাননি ছোটন। ‘মেয়েদের কোচ’ হিসেবে কটূ কথাও শুনতে হয়েছে তাকে।
ছোটন অবশ্য সেসব গায়ে মাখেননি। তার মতে, যেহেতু ওই সময় নারী ফুটবলের এতো প্রসার ও প্রচার ছিল না তাই অধিকাংশ মানুষের এ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা ছিল।
ছোটন বলেন, ‘আসলে মেয়েরা তখন খেলতে পারতো না। মেয়েরা খেলতে পারছে না বলেই আমাকে নিয়ে তখন এসব কথা বলত। অনেকেই নারী দল বা মহিলারা ফুটবল খেলবে এই বিষয়টা অনেকে মানতে পারত না।’