পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটি ছিল প্রতিপত্তি ধরে রাখার, আর ভারতের জন্য এটি ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার। এমন অবস্থায় এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে ভারত।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এশিয়া কাপের এবারের মহারণে শেষ হাসিটা হাসল রোহিত শর্মা বাহিনী। আশা জাগিয়েও পারেনি পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে জয়ের ধারা ধরে রাখা সম্ভব হলো না বাবর আজমদের পক্ষে। ৫ উইকেটের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পাকিস্তানকে।
বাবর-রিজওয়ানদের করা ১৪৭ রানের জবাবে ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে তরি ভেড়ায় ভারত। পাকিস্তানি পেইসারদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে ভারত জয় বাগিয়ে নেয় ২ বল হাতে রেখে।
রান তাড়ায় নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বড় হোঁচট খায় ভারত। রানের খাতা খোলার আগেই নাসিম শাহের শিকার বনে মাঠ ছাড়তে হয় লোকেশ রাহুলকে। এক বল বাদেই দ্বিতীয় স্লিপে জীবন পান বিরাট কোহলি।
জীবন পেয়ে রোহিত শর্মাকে সঙ্গে নিয়ে রানের গতি বাড়ান বাঁহাতি এই ব্যাটার। দলীয় ৫০ রানে ১৮ বলে ১২ রানে বিদায় নেন রোহিত।
স্কোরবোর্ডে ৩ রান যোগ করতেই মোহাম্মদ নেওয়াজের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ইফতেখার আহমেদের হাতে ধরা দেন কোহলি। নিজের শততম টি-টোয়েন্টিতে সাজঘরে ফেরার আগে তিনি করেন ৩৪ বলে ৩৫ রান।
ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন সুরিয়াকুমার যাদবও। ১৮ রানে তাকে মাঠছাড়া করেন নাসিম শাহ।
কিন্তু উইকেট কামড়ে ধরে রানের চাকা সচল রাখেন রবীন্দ্র জাদেজা। সঙ্গে নেন হার্দিক পান্ডিয়াকে। দলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন জয়ের পথে।
ম্যাচের ১৯তম ওভারে এই দুই ব্যাটার নেন ১৪ রান। আর তাতেই জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় দল।
তবে নাটক তখনও শেষ হয়নি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ৭ রান। হাতে ছয় উইকেট। এমন সময় মোহাম্মদ নেওয়াজ বল হাতে এসে প্রথম বলেই তুলে নেন জাদেজার উইকেট।
পরের বলে দীনেশ কার্তিক একটি সিঙ্গেল নেন আর ওভারের তৃতীয় বলটি ডট যায়। ভারতের জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ৩ বলে ৬ রান।
উত্তেজনার এ মুহূর্তে ব্যাটিং প্রান্তে ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। শান্তভাবে হাঁকিয়ে বসেন তিনি বিশাল এক ছক্কা। আর তাতেই দুই বল হাতে থাকতে জয় নিশ্চিত হয় ভারতের।
এর আগে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে ভারতীয় পেইস আক্রমণ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল দুই পাক ওপেনার বাবর আজম ও ফখর জামানের। বল সামাল দিতে বিপাকে পড়লেও রান বের করে আনছিলেন এই দুই ওপেনার। তাদের জুটি বড় হয়নি ভুবনেশ্বর কুমারের কারণে।
ভালো শুরুর পর ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ভুবনেশ্বরের বলে মিস টাইমিংয়ে কুপোকাত হন পাকিস্তান দলপতি বাবর আজম। আর্শদিপ সিংয়ের হাতে ধরা দিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১০ রান।
বাবরের বিদায়ের পর রানের গতি কিছুটা কমে যায় পাকিস্তানের। সেই সুযোগে বলের তেজ বাড়ে ভারতের পেইসারদের। আর্শদিপ, ভুবনেশ্বর ও হার্দিক পান্ডিয়াকে সামলাতে পারেননি ফখর জামান ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে দেখেশুনে এই দুজন এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দলকে।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে এসে মারকুটে ভূমিকায় অবতীর্ণ হন রিজওয়ান। সে ওভারে হতাশায় ডুবিয়ে আবেশ খানের বলে উইকেটের পেছনে দিনেশ কার্তিকের হাতে ধরা দিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ফখরকে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১০ রান।
এরপর ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে হাল ধরেন রিজওয়ান। দলকে ফেরান ট্র্যাকে। কিন্তু ম্যাচের ১৩তম ওভারের প্রথম বলে হার্দিক পান্ডিয়ার বাউন্স ঠিকমতো ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটাতে না পেরে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ইফতিখার। ২৮ রানে এই ব্যাটারের বিদায়ের মধ্য দিয়ে ভাঙে সেই দুর্দান্ত জুটি।
সঙ্গীর বিদায়ের পর বেশিক্ষণ উইকেটে থাকা হয়নি রিজওয়ানের। অর্ধশতক থেকে ৭ রান দূরে থাকতে তাকে থামান হার্দিক পান্ডিয়া। সেই ওভারেই এক বল বাদে ২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন খুশদিল শাহও।
শেষদিকে আর্শদিপ সিং ও ভুবনেশ্বর কুমারের তোপ চললেও দাহানির ঝড়ে দলীয় সংগ্রহ ১৪৭ করতে সক্ষম হয় পাকিস্তান।